PAST HISTORY & SOME VALUABLE INFORMATIONS ABOUT DELHI:-
→ প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দিল্লি ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রায় তিন হাজার বছরের পুরাতন এই স্থান। মহাভারতের সময়ে এর নাম ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ। ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কিংবদন্তি রাজা দিল্লুর ( Dillu ) নাম থেকে অথবা প্রাচীন নগরী দিল্লিকা ( Dhillika ) থেকে রূপান্তরিত হয়ে প্রথমে Dilli এবং পরে Delhi নামকরণ হয়। প্রথমে ছিল নগরী, তারপর হলো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ( Union Territory ), আর বর্তমানে এটি ভারতের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য।
এর রাজধানী নিউ দিল্লি ( Capital City is New Delhi )। এই রাজ্যের আয়তন ( Total Area ) হ'ল ১৪৮৪ বর্গ কি. মি. ( ৫৭৩ বর্গ মাইল )। মোট জনসংখ্যা ( Total Population ) ১৬৭৫৩২৩৩ জন। প্রতি ১০০০ পুরুষে নারীর সংখ্যা মাত্র ৮৬৬ জন ( Sex Ratio of Male and Female )। প্রতি বর্গ কিলোমিটার জনঘনত্ব ( Density of Population ) ১১২৯৭ জন। সাক্ষরতার হার ( Percentage of Literacy ) ৮৬.২১%। প্রধান ভাষা হিন্দি ( Main Official Language is Hindi )। এছাড়া, ( Other Languages ) পাঞ্জাবি, উর্দু এবং ইংরেজি ভাষারও বেশ ভালো চল আছে। মাথাপিছু বার্ষিক আয় ( Per Capita / Head Yearly Average Income ) ৩৬৫৫৩০ টাকা।
WHEN SHOULD YOU GO THERE? / BEST TIME TO VISIT OR TRAVEL THIS STATE. AVERAGE WEATHER OR CLIMATE.
অক্টোবর, নভেম্বর, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস এখানে ঘুরতে আসার উপযুক্ত সময়। এই সময়ে শীতও একটু বেশি থাকে। সমগ্র রাজ্যে শীতকালের ব্যাপ্তিও বেশি। শীত থাকে নভেম্বরের শেষ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এই সময়ে তাপমাত্রা ( Temperature ) থাকে ৭° থেকে ২৩° সেলসিয়াসের মধ্যে। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে ৩° থেকে ৪° সেলসিয়াসেও নেমে যায়। সাথে থাকে কনকনে হাওয়া। তাই যথেষ্ট পরিমাণে গরম পোশাক সঙ্গে রাখা দরকার। আবার গরমকালেও গরম পড়ে অস্বাভাবিক রকমের। দিনে ৪১° থেকে ৪৫° সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা থাকে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বর্ষাকাল। সমগ্র দিল্লি জুড়ে প্রচুর ঐতিহাসিক ও আধুনিক দর্শনীয় স্থান আছে। সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে দেখতে-জানতে ( Explore ) গেলে ১০ থেকে ১৫ দিনের সময় নিয়ে ঘুরতে আসা উচিত।
Delhi Government Official Website Portal - https://www.delhi.gov.in
Delhi State Tourism Department Website - http://www.delhitourism.gov.in
→ দয়া করে এই রাজ্যের জেলা, জেলা সদর, সাব ডিভিসন এবং তহশিল এলাকাগুলিকে বন্ধনীতে দেওয়া নাম্বার অনুযায়ী সাজিয়ে পড়ে নিন।
Districts - New Delhi (1), North Delhi (2), North West Delhi (3), West Delhi (4), South West Delhi (5), South Delhi (6), South East Delhi (7), Central Delhi (8), North East Delhi (9), Shahdara (10), East Delhi (11).
Headquarters - Connaught Place (1), Alipur (2), Kanjhawala (3), Rajouri Garden (4), Dwarka (5), Saket (6), Defence Colony (7), Daryaganj (8), Nand Nagri (9), Shahdara (10), Preet Vihar (11).
Sub Division or Tehsils - [ Chanakyapuri, Delhi Cantonment, Vasant Vihar](1), [ Model Town, Narela, Alipur ](2), [ Rohini, Kanjhawala, Saraswati Vihar ](3), [ Patel Nagar, Punjabi Bagh, Rajouri Garden ](4), [ Dwarka, Najafgarh, Kapashera ](5), [ Saket, Mauz Khas, Mehrauli ](6), [ Defence Colony, Kalkaji, Sarita Vihar ](7), [ Kotwali, Civil Lines, Karol Bagh ](8), [ Seelampur, Yamuna Vihar, Karawal Nagar ](9), [ Shahdara, Seemapuri, Vivek Vihar ](10), [ Gandhi Nagar, Preet Vihar, Mayur Vihar ](11).
ALL TOTAL LIST OF 20 VERY BIG, MOST POPULAR OR FAMOUS LOCAL FAIRS & MAJOR FESTIVALS:-
(i) Lohri Festival, (ii) Republic Day Parade, (iii) Army Day, (iv) Kite Flying Fest, (v) Maha Shivratri, (vi) Diwali, (vii) International Trade Fare, (viii) Mango Festival, (ix) Independence Day, (x) Qutub Festival, (xi) Dussehra, (xii) Guru Purab ( Guru Nanak Jayanti, (xiii) Phool Walon Ki Sair, (xiv) Urs Al Hazrat Nizamuddin Aulia's Shrine, (xv) Baisakhi Festival, (xvi) Basant Panchami, (xvii) Beating The Retreat Ceremony, (xviii) Delhi Book Fair, (xix) The Delhi Flower Show, (xx) Garden Tourism Festival.
[ TOP PLACES TO VISIT OR MAJOR TOURIST ATTRACTIONS IN DELHI & NEW DELHI, INDIA WITH PROPER TOUR PLAN ON MAIN TRAVEL DESTINATIONS AND OTHER NEAREST BEAUTIFUL SPOTS. ]
সমস্ত দিল্লি ও নিউ দিল্লি শহর জুড়ে প্রচুর দর্শনীয় স্থান আছে। ভারতের রাজধানী শহর এটি। প্রচুর ঐতিহাসিক নিদর্শন আছে অনেক পুরাতন এই শহরে। সমস্ত ঠিকমতো দেখতে গেলে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় লাগবে। প্রথমেই আসছি বারখাম্বা রোডের FICCI -এর বিল্ডিং -এ স্থিত ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের ( Natural History Museum ) কথায়। এখানে ফসিল, স্টাফড জীবজন্তু, বিশালাকার ডাইনোসর ও নানা ধরনের পাখি রয়েছে। ডিসকভারি ঘরটিও আশ্চর্যজনক জিনিসে ভরা। এখানে ফিল্ম শোয়েরও ব্যাবস্থা রয়েছে। ইন্ডিয়া গেটের কাছে ড: জাকির হোসেন মার্গে জয়পুর হাউসে ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট ( National Gallery of Modern Art, Tel - 23382835 ) যে কোন দিন সকাল ১০ টার পর টিকিট কেটে দেখে নিন। এখানে রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল বসু, যামিনী রায়, অমৃতা শেরগিল সহ বিভিন্ন বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীর ছবির বিশাল ভান্ডার রয়েছে। আর্ট রেফারেন্স লাইব্রেরির ( Art Reference Library ) বই ও পত্রপত্রিকার বৈচিত্রপূর্ণ বিশাল সংগ্রহ যে কোন শিল্প-সাহিত্যরসিককে মুগ্ধ করবেই। এরপর আসছি ন্যাশনাল রেল মিউজিয়ামের ( National Rail Museum, Chanakyapuri ) প্রসঙ্গে। চাণক্যপুরীর ভূটান হাউসের ঠিক পিছনে এই মিউজিয়ামের অবস্থান। সপ্তাহের সোমবার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে টিকিট কেটে দেখে আসুন। ১০ একর জায়গা জুড়ে এই সংগ্রহশালায় অনেকগুলি লোকোমোটিভ ও ক্যারেজের সংগ্রহই শুধু নয়, বরোদা মহারাজার সেলুন কার, সোনা ও হাতির দাঁত বাঁধানো কাঠের তৈরি মহীশূর মহারাজার ক্যারেজ, প্রিন্স অব ওয়েলসের কেবিন, গান্ধীজীর চিতাভস্মবাহিত বগি, আছে ১৮৫৫ সালে তৈরি বিশ্বের প্রাচীনতম বাষ্পীয় ইঞ্জিন ফেয়ারি কুইন। টয় ট্রেনেও চড়ে নিতে পারেন। স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কিছু জিনিসও কিনে নিতে পারেন। এখানে রেস্তোরাঁ ও লাইব্রেরিও আছে।
জোরবাগে তিব্বত হাউসে আছে টিবেট মিউজিয়াম ( Tibet Museum, Tibet House )। সোমবার থেকে শুক্রবার অবধি খোলা থাকে। এখানে চীনের তিব্বত দখলের পর লাসা থেকে ভারতে চলে আসা দলাই লামার সঙ্গে আনা হাতে তৈরি তিব্বতীয় সুন্দর জিনিসের সংগ্রহ। এখান থেকে কেনাকাটা করতেও পারেন। পালাম মার্গে আছে এয়ারফোর্স মিউজিয়াম ( Air Force Museum, Palam, New Delhi )। এটি মঙ্গলবার ছাড়া রোজ খোলা থাকে। ফিলাটেলিক মিউজিয়াম ( National Philatelic Museum, Dak Bhaban, Sardar Patel Chowk, Sansad Marg, New Delhi ) আছে সংসদ মার্গের ডাক ও তার ভবনে। ১৮৫৪ সালে প্রকাশিত প্রথম ডাকটিকিট ও বিভিন্ন সময়ের ভারতীয় ডাকটিকিটের স্মারক, ফার্স্ট ডে কভার দেখতে ও কিনতে পারেন। শনিবার ও রবিবার ছাড়া রোজ খোলা থাকে।
সন্ধ্যাবেলায় ইংরেজি ও হিন্দি ধারাভাষ্যে মোঘল যুগ থেকে ভারতের স্বাধীনতাপ্রাপ্তি পর্যন্ত ঘটনাক্রম দেখুন Son-et Lumiere লালকেল্লায়। সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য ও টিকিট পেয়ে যাবেন ITDC, L Block, Rajib Chowk, Tel - 23412336 থেকে। পারলে লালকেল্লার সামনের চাঁদনি চক, পার্লামেন্ট স্ট্রিট ও কনট সার্কাস পায়ে হেঁটে দেখে নিন। আধুনিক স্থাপত্যের নিদর্শন হয়ে গড়ে উঠেছে চাণক্যপুরী। এই এলাকার বৈচিত্র্যেভরা গঠনশৈলী পর্যটকদের রীতিমতো আকর্ষণ করে। শাহজাহান কন্যা জাহানারা বেগমের হাতে গড়া ইতিহাস প্রসিদ্ধ চাঁদনি চক ( Chandni Chowk ) বর্তমানে দিল্লি শহরের অন্যতম বিশেষ বানিজ্যিক এলাকা। লালকেল্লার কাছেই রয়েছে প্রাচীন দিগম্বর জৈন মন্দির ( Shri Digambar Jain Temple, Opposite Red Fort )। সুুুন্দর কারুকার্য করা এই মন্দিরে ২৩ তম জৈন তীর্থঙ্কর স্বামী পার্শ্বনাথের মূর্তি পূজিত হয়। জুুুতোব্যাগসহ সমস্ত চামড়াজাত জিনিস জমা রেখে এখানে প্রবেশ করতে হয়। এই মন্দিরে একটি পক্ষী হাসপাতাল আছে। দিনরাত পাখিদের সেবা চিকিৎসা চলছে এই হাসপাতালে। কাছেই রয়়েছে শিশগঞ্জ গুরুদ্বারা ( Gurudwara Sis Ganj Sahib ji, Chandni Chowk Road, New Delhi )। গুরু তেগবাহাদুরের স্মারকস্বরূপ এই অনন্য শিখতীর্থ। চাঁদনি চকের কাছে কোতোয়ালী পুলিশ স্টেশন পেরিয়েই আছে সুনেরি মসজিদ ( Sunehri Masjid / Mosque, Nishad Raj Marg, Lal Qila, Old Delhi )। এই মসজিদের ছাদ থেকে নাদির শাহ সৈন্য পরিচালনা করতেন। চাঁদনির এক প্রান্তে রয়েনছে শাহজাহানের হাতে তৈরি ফতেপুরি মসজিদ ( Fatehpuri Masjid / Mosque )। ডানহাতের চার্চ মিশন রোড সোজা দিল্লি জংশন স্টেশন অবধি গিয়েছে। নতুন দিল্লির প্রধান ডাকঘরের কাছে বাবা খড়ক সিং মার্গে পবিত্র বাংলা সাহিব গুরুদ্বারা ( Sri Bangla Sahib Gurudwara, Connaught Place, New Delhi )। প্রচলিত আছে যে, এর জলাশয়ের অমৃতসমান জলে নানা রোগব্যাধির উপশম হয়। লঙ্গরখানার প্রসাদেরও যথেষ্ট সুখ্যাতি আছে। মোঘল দরবারের সাথে ১০ম গুরু গোবিন্দ সিংহর ঐতিহাসিক সাক্ষাতের নিদর্শনরূপে যমুনা পুলিনে হুমায়ুন সমাধির নিকটের দমদমা সাহিব গুরুদ্বারা ( Gurudwara Damdama Sahib, Nizamuddin East, New Delhi )। রিং রোডে মহারানী বাগ কলোনির বিপরীতে গুরুদ্বারা বালা সাহিব ( Gurudwara Bala Sahib )। এছাড়া, কাশ্মীরি গেটে ব্রিটিশের ক্যান্টনমেন্ট ( British Cantonment, Kashmiri Gate ) নগরী, সেন্ট জেমস চার্চ ( St. James Church ), মিউটিনি মেমোরিয়াল ( Mutiny Memorial ), কুদসিয়া গার্ডেন ( Qudsia Bagh, Railway Colony, New Delhi ) ইত্যাদি পর্যটন স্থলগুলি সত্যি দেখার মতো।
কুতুব মিনার ( Qutub Minar ) - কুতুব উদ্দিন আইবকের ভারত বিজয়ের স্মারক সৌধরূপে গড়ে তোলা হয় এই ৭২.৫ মি. উঁচু এই বিজয়স্তম্ভ। শেষ হিন্দু রাজা পৃথ্বীরাজের বিধ্বস্ত দূর্গ কিলা রায় পিথোরাতেই গড়ে ওঠে এই মিনার। ৩৬৭ ধাপের ঘোরানো সিঁড়ি উঠেছে সামান্য হেলে থাকা কুতুবে। গোড়া থেকে ক্রমশঃ সরু হয়ে উঠে গেছে। কোরানের আয়াত ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে। পাঁচ তলার এই স্থাপত্যটি ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ শিরোপায় ভূষিত হয়। লাল বেলেপাথরের প্রথম তলাটি নির্মিত হয় কুতুবউদ্দিন আইবকের হাতে। লাল বেলেপাথরের ২য় ও ৩য় তলা দুটি তৈরি হয়েছে ইলতুৎমিসের সময়ে। বেলেপাথর ও সাধারণ পাথরে ৪র্থ ও ৫ম নির্মাণ করা হয় ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমলে। ১৮০৩ সালের ভূমিকম্পে ৫ম তলার গম্বুজটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে ১৮২৯-এ নতুন করে গম্বুজটি তোলেন ব্রিটিশ মেজর রবার্ট স্মিথ। পরে গম্বুজটিকে নীচে নামিয়ে পাশের বাগানে রাখা হয়। নীচের কম্পিউটার কিয়স্ক ও জায়ান্ট টেলিভিশনের পর্দায় কুতুব মিনারের উপর থেকে চারপাশ দেখার স্বাদ পাওয়া যায়। লোটাস টেম্পল, ছত্তারপুর টেম্পল, আলাই মিনার ধরা পড়ে উপরের ক্যামেরায়। ১৯৮১ সালে একটি প্রানঘাতী মর্মান্তিক দূর্ঘটনার পরে বেশ কিছু বছর স্তম্ভের শীর্ষে ওঠার দরজা বন্ধ ছিল। ২০০৩ সালে আবার তা জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সম্প্রতি সন্ধ্যাবেলায় আলোকসজ্জারও ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এই এলাকায় প্রবেশ করতে গেলে যৎসামান্য টাকার টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। এর ঠিক পাশেই রয়েছে ৪র্থ শতকের রাজা চন্দ্রভার্মার তৈরি লৌহমিনার ( Iron Pillar )। বহুশত বছর পরেও এই পিলারে কোন মরচেই ধরেনি। সম্ভবত বিষ্ণুপাদ পাহাড়ের বিষ্ণু মন্দিরে বিক্রমাদিত্য চন্দ্রগুপ্ত দ্বারা স্থাপিত বিষ্ণুধ্বজ এটি। প্রচলিত আছে, কেউ পিছন ফিরে দুই হাত দিয়ে মিনারটি পুরো জড়িয়ে ধরতে পারলে তিনি রাজা হবেনই। আপনি যদি রাজা হতে চান তাহলে আপনিও গিয়ে একইরকম ভাবে জড়িয়ে ধরুন। যদি সত্যি রাজা হয়ে যান তাহলে বুঝবেন রটনাটি মিথ্যে নয়।
Qutub Minar- এর উত্তর পশ্চিম লাগোয়া এলাকায় আছে কুওয়াত উল ইসলাম মসজিদ ( Quwwat ul Islam Mosque / Masjid ) যেটা কুতুব আইবকের হাতে ১১৯৩ থেকে ১১৯৮ সালের মধ্যে হজরত মহম্মদের মদিনার বাড়ির নকল করে গড়ে উঠেছে। ভাস্কর্যযুক্ত ধনুকের আকারের খিলানে অলঙ্কৃত ১৬ মিটার উঁচু প্রার্থনা হল, ইন্দো-ইসলামিক ধারায় খোদাই করা বেলেপাথরের পর্দা, হাতে লেখা কোরানের আয়াত ও পদ্মে অলঙ্কৃত মক্কামুখী আকর্ষণীয় কুওয়াত। কারুকার্যকরা শতাধিক থাম আনা হয়েছে ২৭ টি হিন্দু ও জৈন মন্দির থেকে। পূবদিকের ঢোকার দরজায় উল্লেখও করা আছে সেকথা। কুতুবউদ্দিনের জামাই শামসুদ্দিন ইলতুৎমিস ও আল্লাহর দূত আলাউদ্দিন খিলজির সময়ে দুই বার এই মসজিদের আকার ও আয়তন বাড়ে।
১৩১১ খ্রিস্টাব্দে কুতুব মিনারের দক্ষিণ পূর্বে আলাউদ্দিনের সময় তৈরি হওয়া আলাই দরওয়াজা ( Alai Darwaza ) অর্থাৎ আলাই মিনারের সুন্দর প্রবেশদ্বারটিও এককথায় অনবদ্য। পুরো স্থাপত্যটিই তৈরি হয়েছে জাফরি ও লাল বেলেপাথর দিয়ে। এটি দিয়ে প্রবেশ করেই পৌঁছে যাবেন আলাউদ্দিনের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন আলাই মিনার ( Alai Minar )। এর উচ্চতা ২৭ মিটার। আলাউদ্দিনের মনের বাসনা ছিল যুদ্ধ জয়ের স্মারক হিসেবে এই আলাই মিনারটি কুতুবের চেয়েও বেশি উঁচু করবেন। কিন্তু, মৃত্যু ও উপযুক্ত উত্তরসূরির অভাবে এই স্বপ্ন একতলাতেই আটকে যায়। এই চত্বরেই ইলতুৎমিস ও আলাউদ্দিনের সমাধি ( Tombs of Iltutamish and Allauddin ) রয়েছে।
মেহেরৌলি গ্রামে আকবরের পালিত ভাই আদম খানের আটহাতি সুন্দর সমাধিস্থল বা ভুলভুলাইয়া ( Tomb of Adam Khan or Bhool Bhulaiya, Mehrauli, New Delhi ) সত্যিই তারিফ করার মতো। শোনা যায়, সেইসময়ে লালকেল্লার সাথে Bhool Bhulaiya - র সুরঙ্গপথে যোগাযোগ ছিল। মেহেরৌলির মোগল বাগিচাটিও ( Mughal Gardens ) অতি মনোরম। এই অঞ্চলের আর এক আকর্ষণ ইলতুৎমিসের নির্মিত আউলিয়া মসজিদ ( Auliya/Aulia Masjid )। এছাড়া আছে জামালি কামালি মসজিদ ( Jamali Kamali Mosque ), শেষ মোঘল সম্রাটের জাফরমহল প্রাসাদ ( Zafar Mahal Palace )। কুতুবের ৫ কি. মি. পশ্চিমে অবস্থিত ভারতের প্রাচীনতম কবর মামুদের সমাধিসৌধ। ১২২৯ সালে হিন্দু ও মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে তৈরি এটি। ইলতুৎমিসের ছেলে মামুদ। আর রয়েছে খিরকী মসজিদ ও বেগমপুরী দরগাহ। এত সুন্দর সুন্দর ঐতিহাসিক নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও সরকারি উদাসীনতায় মেহেরৌলি আজ পুরোপুরি অবহেলিত।
তুঘলকাবাদ দুর্গ ( Tughlakabad Fort on Mehrauli to Badarpur Road, Delhi ) - কনট প্লেস থেকে ১৫ কি. মি. দূরে মেহেরৌলি বদরপুর রোডের উপর তুঘলকাবাদে গিয়াসুদ্দিনের গড়া তারই বংশের নামে নামাঙ্কিত এই ঐতিহাসিক দূর্গটি অবস্থিত। মঙ্গোলীয় আক্রমণের ভয়ে ভীত হয়ে তিনি ১০ থেকে ১৫ মিটার উঁচু ১৩ টি প্রবেশদ্বার যুক্ত এই দূর্গ তথা রাজধানীটি গড়েন। ৬.৫ কি. মি. পরিধির এই সুবিশাল, মজবুত, অনবদ্য গঠনশৈলীর এই স্থাপত্যটি অবশ্য ১৫ বছর পরেই পরিত্যক্ত হয়। সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ঐতিহাসিকরা জলাভাবকেই তুলে ধরেন। গিয়াসুদ্দিনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মহম্মদ বিন তুঘলক এই স্থানের ঠিক ১ কি. মি. দূরে একটি পাহাড়ি টিলার উপরে আদিলাবাদ দূর্গ ( Adilabad Fort ) নির্মাণ করেন। ৫ বছর পরে মহম্মদ বিন তুঘলক এখান থেকে তাঁর রাজ্যপাট দাক্ষিণাত্যের দেবগিরিতে স্থানান্তর করেন। কথিত আছে, গিয়াসুদ্দিনের ধর্মগুরু শেখ নিজামুদ্দিনের অভিশাপে তুঘলক বংশই ধ্বংস হয়। বর্তমানে তুঘলকাবাদ ও আদিলাবাদ দুটি জায়গায় ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। দূর্গের দক্ষিণ দরজার কৃত্রিম জলাশয়ের মধ্যিখানের গম্বুজের উপরে অবস্থিত গিয়াসুদ্দিন, বেগম সাহিবা ও তাঁদের পুত্র মহম্মদ বিন তুঘলকের সুন্দর সমাধি ( Tombs of Ghiyasuddin, Begum Sahiba, Muhammad Bin Tughlaq ) দেখলে আপনি অবশ্যই কল্পনায় তুঘলকি আমলে হারিয়ে যাবেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই দুটি দূর্গ খোলা থাকে। নামমাত্র প্রবেশমূল্যের বিনিময়ে ঢুকতে পারবেন। দিল্লির যন্তরমন্তর থেকে বদরপুরের বাসে অথবা মেহেরৌলি পৌঁছে তারপর এখান থেকে বিভিন্ন বাসে Tughlaqabad এবং Adilabad - এ পৌঁছতে পারবেন।
স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম ( Swaminarayan Akshardham ) - নিউ দিল্লি স্টেশন থেকে NH -24 ধরে ১০ কি. মি. দূরের নয়ডা মোড়ে পৌঁছলেই পৌঁছে যাবেন দিল্লি ভ্রমণের এই নতুন আকর্ষণীয় গন্তব্যে। যমুনা নদীর তীরে প্রায় ১০০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে ভগবান স্বামী নারায়ণের এই সুন্দর মন্দিরটি। এটি ১৪১ ফুট উঁচু, ৩১৬ ফুট চওড়া, ৩৫৬ ফুট লম্বা এই অনিন্দ্যসুন্দর স্থাপত্যটি। ৯ টি গম্বুজ ও ২০ টি চূড়া যুক্ত গোলাপি পাথরে তৈরি এই মন্দিরে সব মিলিয়ে ২০ হাজারেরও বেশি অপরূপ ভাস্কর্য মূর্তি আছে। দশটি কারুকার্যময় প্রবেশ পথ, মন্ডপ, প্রদর্শনকক্ষ, স্বামী নারায়ণের পায়ের ছাপ, মিউজিক্যাল ফোয়ারা, বাগান, জায়েন্ট স্ক্রিন থিয়েটার, বোট রাইডিং সহ নানা আয়োজন রয়েছে। সোমবার ছাড়া অন্যান্য দিন জনসাধারণের জন্য সবকিছু উন্মুক্ত থাকে। তবে সবকিছু দেখতে হয় টিকিট কেটে। আরও বিস্তারিত জানতে - Swaminarayan Akshardham, Akshardham Setu, NH - 24, Noida - 110092, Tel - 22016688/22026688. - এই ঠিকানায় যোগাযোগ করুন।
সূরজ কুন্ড ( Surajkund ) - কুতুব মিনার থেকে মাত্র ১১ কি. মি. দূরে দিল্লি-আগ্রা রোডে হরিয়ানা রাজ্যের ফরিদাবাদ জেলায় সূরজ কুন্ড অবস্থিত। কথিত আছে, দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির জলাভাব মেটাতে ১১ শতকে টোমররাজ সূরজপল এই কুন্ডটি খনন করান। এতে জল না থাকলেও পাশের সূর্য দেবতার মন্দিরটি এখনও রয়েছে। কিছুটা দক্ষিণে সিধা কুন্ড আছে। এখান থেকে ২ কি. মি. দূরে পশ্চিমে আছে অনঙ্গপুর বাঁধ ( Anangpur Dam )। বনে বনে ফুল ফুঁটে ওঠায় মে জুন মাসে চারিদিকের পরিবেশ মনোরম হয়ে ওঠে। প্রতি বছর ১লা থেকে ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এখানে বিশাল মেলা বসে। থাকার জন্য এই স্থানে এবং কাছের ফরিদাবাদ শহরে হোটেল পেয়ে যাবেন। Surajkund থেকে ২২ কি. মি. দূরে আছে আরাবল্লী গল্ফ কোর্স। এখানে থাকার জন্য রয়েছে (1) Aravalli Golf Course, Tel - (0129) 2414810.
লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির ( Sri Laxmi Narayan Mandir or Birla Temple ) - কনট সার্কাসের পশ্চিমে ১৯৩৮ সালে রাজা বলদেও বিড়লা এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এটি বিড়লা মন্দির নামেও একইরকমভাবে বিখ্যাত। এখানকার পূজিত দেবদেবীরা হলেন লক্ষ্মী, নারায়ণ, দূর্গা ও শিব। মন্দির মার্গের এই পবিত্র স্থাপত্যের কারুকার্যও বেশ সুন্দর। এর সমস্ত দেওয়ালে পৌরাণিক আখ্যান চিত্রিত রয়েছে। সর্বধর্ম সমন্বয়ও লক্ষ্য করা যায় লাল গৈরিকরঙা ও শ্বেত পাথরের তৈরি এই মন্দিরে। বৌদ্ধ ও শিখ ফ্রেস্কো, চীনা বুদ্ধিস্ট বেলও জায়গা পেয়েছে এখানে। এই চত্বরের ধর্মশালায় থাকার ব্যবস্থাও আছে। এর পূর্বদিকে বাবা খড়ক সিং মার্গে জয়পুরের মহারাজা জয় সিংহের দ্বারা ১৭২৪ সালে নির্মিত হনুমান মন্দিরটিও ( Hanuman Temple ) দেখার মতো।
কালীবাড়ি ( Kali Bari Temple, Mandir Marg, New Delhi ) - বিড়লা মন্দিরের ঠিক পাশে এই বাঙালি কালীবাড়ি মন্দিরটির এক আলাদা ঐতিহ্য ও গুরুত্ব আছে দিল্লিবাসীর কাছে। এই স্থানের আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য লোকের মুখে মুখে। এই পবিত্রস্থানে একটি গেস্ট হাউস আছে। আপনি চাইলে এখানে দুই এক দিন থাকতে পারেন।
বাহাই মন্দির ( Bahai Mandir / Lotus Temple ) - এই মন্দিরটি মূলতঃ বাহাই ধর্মাবলম্বীদের। মানুষে মানুষে হানাহানি রুখতে এবং একজাতি একপ্রাণ এই মূলমন্ত্রকে বাস্তব রূপ দিতে সুদূর পারস্য দেশে বাহাউল্লাহ নামের এক মহান ধর্মপ্রচারক এই বাহাই ধর্মের প্রবর্তন করেন। ইনি ভারতে ধর্ম প্রচার করতে আসেন ১৮৭২ সালে। ১৯৮৬ সাল নাগাদ কালকাজির বাহাপুরে হিন্দুদের কালকা দেবীর মন্দিরের পাশে এই অনিন্দ্যসুন্দর না ফোঁটা পদ্মের আকারের মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। অনেকে একে লোটাস মন্দির বলে। সুন্দর সাজানো বাগানের মধ্যের ৯টি জলাশয়ের ফোয়ারার মাঝ দিয়ে ৯টি স্বর্গীয় পথ গেছে মূল প্রার্থনা সভায়। ৭০ মি. ব্যাসের হলে ১৩০০ ভক্তের বসার ব্যবস্থা আছে। ধর্মমত নির্বিশেষে সকলের প্রবেশের অধিকার আছে। সোমবার বন্ধ থাকে। কনট প্লেস থেকে বাস যাচ্ছে এখানে। মন্দিরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটি হ'ল - http://www.bahaihouseofworship.in/
ইন্ডিয়া গেট (India Gate) - জনপথ রোডের কাছে ব্রিটিশের পক্ষে মিত্রশক্তির হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং আফগান যুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ ও ভারতীয় সেনাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি ৪২ মিটার উঁচু এই ইন্ডিয়া গেট বা ভারত তোরণ। ১৩৫১৬ জন সেনার নাম খোদিত রয়েছে ওয়ার মেমোরিয়ালে। পাশের খালে বোটিং-এর ব্যবস্থা আছে। রাতের বেলায় আলোকসজ্জায় তোরণটিকে আরও সুন্দর দেখায়। ইন্ডিয়া গেটের নীচে রয়েছে ১৯৭১-এ ভারত-পাক যুদ্ধে নিহত ভারতীয় জওয়ানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ৪ টি শাশ্বত শিখা অমর জওয়ান জ্যোতি ( Amar Jawan Jyoti )। এই চত্বরের চারপাশেই রয়েছে সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং, পার্লামেন্ট ভবন, রাষ্ট্রপতি ভবন, হায়দ্রাবাদ হাউস, বরোদা হাউস, ন্যাশনাল আর্কাইভ, জাতীয় মিউজিয়াম ইত্যাদি।
রাষ্ট্রপতি ভবন ( Rashtrapati Bhawan / President's Estate ) - ইন্ডিয়া গেটের বিপরীতে রায়সিনা পাহাড়তলিতে ৩৩০ একর জমির উপর ৩৪০ ঘর, ৩৫ লবির ৪ তলার এই বিল্ডিংটি গঠিত। কৃত্রিম পাহাড়, বাগান, ঝর্ণা, জলাশয়, মোগল উদ্যানে সজ্জিত হয়ে এই অতি বিশেষ ভবনটি মনোরম দর্শনীয় স্থান হয়েছে। ১৯২১ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে Sir Edwin Lutyens -এর নকশায় ব্রিটিশ ভাইসরয় Lord Hardinge এর বাসভবনরূপে মোগল ও পাশ্চাত্য ধারার স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ ঘটিয়ে এই ইমারতটি নির্মাণ করা হয়। H হরফের মতো তামা দিয়ে তৈরি আকাশি রঙের মূল গম্বুজটি সাঁচীর বৌদ্ধ স্তূপের আকারের, অলিন্দ হয়েছে হিন্দু মন্দিরের আদলে। রঙবেরঙের পাথর দিয়ে তৈরি দরবার হল, অশোক হল সবসময় মহামান্য রাষ্ট্রপতির নানা অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকে। মূল ফটকের পূর্বদিকে জয়পুর মহারাজার দেওয়া ১৪৫ মিটার উঁচু আকাশছোঁয়া জয়পুর থাম আছে। জাতীয় উৎসবের দিনগুলোতে পুরো ভবনচত্বরটি সুন্দর আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে। শীতে ফুলের বাহার দেখার মতো। বিভিন্ন ফলের সংগ্রহও উল্লেখ করার মতো। উড়ে বেড়ানো রঙবেরঙের প্রজাপতি বাগানের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বাগিচা রক্ষনাবেক্ষনে নিযুক্ত আছেন ৪১৮ জন মালি। উটকো পাখি তাড়ানোর জন্য আরো ৫০ জন সদা ব্যস্ত থাকেন। দেখার অনুমতি মেলে কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারির কাছ থেকে। আর বিদেশীরা এই অনুমতি পাবেন Government of India Tourist Office থেকে। সব তথ্য ঠিক থাকলে যেকোন পর্যটকই এই অনুমতি পেতে পারেন। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ এই একমাস সোমবার ছাড়া প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সমস্ত জনসাধারণ এখানে ঢুকতে পারেন। বছরের অন্যান্য সময়ে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। রাজপথ থেকে যেটুকু দেখা যায় সেটুকু দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
সংসদ ভবন ( Parliament House / Parliament of India ) - রাষ্ট্রপতি ভবনের উত্তর-পূর্বে সংসদ মার্গে অর্থাৎ Parliament Street - এ ব্রিটেনের সংসদ ভবনের অনুকরণে চক্রাকার এই সরকারি এই বিশাল ইমারতটি গঠিত হয়। ব্রিটিশের গড়া এই ১৭১মি. ব্যাসের বিল্ডিং-এ কাউন্সিল অব স্টেটস বা রাজ্যসভা এবং অ্যাসেম্বলি বা পিপলস হাউস অথবা লোকসভার সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এখান থেকে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা এবং কানাডা সরকারের দান করা ৪টি ডমিনিয়ন কলামস বা থাম এই জায়গাটির মর্য্যাদা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি শনিবার ১০.৩০টায় রাষ্ট্রপতি ভবন ও সংসদ ভবনের মাঝে জওয়ান প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। সত্যিই দেখার মতো একটি অনুষ্ঠান।
যন্তর মন্তর ( Jantar Mantar, Sansad Marg, New Delhi ) - এই প্রাচীন মানমন্দির বা অতীতের পঞ্জিকাটি তৈরি করান জয়পুরের মহারাজা সওয়াই দ্বিতীয় জয় সিং। এটি ১৭২৪ সালে সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্রের গতিবিধি বোঝা এবং সময় পরিমাপ করার জন্য। বিশাল আকৃতির প্রিন্স ডায়ালটি এক কথায় অনবদ্য। মানমন্দির হিসেবে জয়পুরের পরেই এর স্থান। সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কাছেই আছে একই সময়ে তৈরি ভৈরব মন্দির।
জাতীয় মিউজিয়াম বা জাদুঘর ( National Museum, Janpath Road ) - জনপথ রোডের উপর আর একটি দ্রষ্টব্য স্থান হলো জাতীয় মিউজিয়াম অর্থাৎ জাদুঘর। ১৯৫৫ সালে জাতীয় জওহরলাল নেহেরু এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৬৫ সাল থেকে এই সংগ্রহশালার প্রদর্শন চালু হয়। মহেঞ্জোদরো, হরপ্পা, লোথাল, কালিবঙ্গান সহ অতীত সময়ের বিভিন্ন ঐতিহাসিক সংগ্রহ জায়গা পেয়েছে এই মিউজিয়ামে। ব্রাহ্মণিকাল, জৈন ও বৌদ্ধ স্থাপত্যের নমুনা আছে এখানে। ম্যুরাল ও মিনিয়েচার জাতীয় রঙীন চিত্রকলার Collection রয়েছে। মোগল, রাজপুত, ডেকান ও পাহাড়িশৈলীর ছবির সম্ভার দেখার মতো। গীতগোবিন্দ, সুন্দর অলঙ্কৃত মহাভারত, সোনালী হরফের ভগবৎ গীতা, অষ্টকোণী ছোট কোরান, বাবরের হাতে লেখা বাবরনামার পান্ডুলিপি, জাহাঙ্গীরের হাতে লেখা দিনপঞ্জী, তিন শতকেরও বেশি রকমের বাদ্যযন্ত্র, নানা উপজাতি পোশাক, অ্যান্টিক সামগ্রী মিউজিয়ামের সম্পদ। এখানকার নতুন সংযোজন হলো প্রাচীনযুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অলঙ্কারের ক্রম পরিবর্তনের গ্যালারি। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত এই জাতীয় জাদুঘরটি খোলা থাকে।
নেহেরু মিউজিয়াম ( Nehru Memorial Museum & Library, Teen Murti Bhavan & Marg ) - রাষ্ট্রপতি ভবনের দক্ষিণে তিনমূর্তি রোডে ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ কমান্ডার ইন চিফের বাসভবন ১৯৫৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পরিণত হয়। সেই থেকে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর বাসস্থান হয় এই তিনমূর্তি ভবন। ১৯৬৪ তে তাঁর মৃত্যুর পর এখানে নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম স্থাপিত হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনের ব্যবহৃত এবং প্রধানমন্ত্রীরূপে দেশ বিদেশ থেকে পাওয়া উপহারের সংগ্রহ প্রদর্শিত হয় এখানে। তাঁর কর্মজীবনের আলোকচিত্রের ( Photography ) বিশাল সম্ভারও কম উল্লেখযোগ্য নয়। একটি লাইব্রেরিও আছে। সোমবার বাদে প্রত্যেকদিন সকাল ১০ টা থেকে ৫ টা অবধি জনসাধারণের জন্য খোলা থাকে। এই চত্বরের গোলাপ বাগানটিও খুব সুন্দর। এই বাগানে পাথরে খোদাই করা আছে ১৯৪৭ সালের ১৪ - ১৫ আগস্টের মধ্যরাতের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ জহরজ্যোতি।
ইন্দিরা স্মারক মিউজিয়াম ( Indira Gandhi Memorial Museum, 1, Safdarjung Road, Near Delhi Gymkhana Club, New Delhi ) - ১ নম্বর সফদরজং রোডের বাড়িতে ১৯৮৫ সালের ২৭শে মে ইন্দিরা গান্ধীর স্মৃতিতে একটি সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়েছে। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে অক্টোবর এক দেহরক্ষীর গুলিতে তিনি শহীদের মৃত্যুবরণ করেন। সেই নির্দিষ্ট জায়গাটিকে কাচের একটি বড়ো পাত্র দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগের মুহুর্তে বাগানের যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে এসেছিলেন, সেই পথে চেক প্রজাতন্ত্র সরকারের পাঠানো শ্রদ্ধাঞ্জলি স্বরূপ ইস্পাতের পাতে স্ফটিক দিয়ে গড়া এক বিশাল বড়ো কৃত্রিম জলপ্রবাহ স্থাপিত আছে। মোট ৩ টি ঘর জুড়ে রয়েছে তাঁর জীবদ্দশার নানা আলোকচিত্রের সাথে ওঁনার ব্যবহৃত জিনিসের প্রদর্শনী। এমনকি রক্তাক্ত বস্ত্রখানিও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে প্রদর্শিত হয়েছে। আর দেখতে পারবেন পড়ার ঘর, খাবার ঘর, দেওয়ানি আম ও দেওয়ানি খাসসহ সমস্ত অন্দরমহল। সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
ফিরোজ শাহ কোটলা ( Feroz Shah Kotla Fort, Balmiki Basti, Vikram Nagar, New Delhi ) - যারা খেলাধুলা করে বা ভালোবাসেন তাঁদের কাছে যমুনা ভেলোড্রোম এবং ইন্দ্রপ্রস্থ স্টেডিয়াম অত্যন্ত পরিচিত নাম। স্টেডিয়াম ও মথুরা রোডের মাঝে দিল্লি গেটের দক্ষিণে বাহাদুর শাহ জাফর মার্গে ১৩৫৪ সালে আলাউদ্দিনের সিরি নগরী অর্থাৎ আজকের হজ খাসে অর্ধশত বছর পরে ৫ম নগরী গড়ে তোলেন ফিরোজ শাহ তুঘলক। রিং রোড আছে ফিরোজ শাহ কোটলা ঘেঁষে। অতীতের সিরি নগরী নাম বদলে হয় ফিরোজাবাদ ( Firozabad )। গড়ে ওঠে ফিরোজ শাহ কোটলা নামের একটি দূর্গ। নতুন রাজধানীর আকর্ষণ বাড়াতে ১৩ মি. উঁচু মনোলিথিক বেলেপাথরের অশোক স্থম্ভটি ( Ashokan Pillar ) যমুনা নদীতে ভাসিয়ে আম্বালা থেকে আনিয়ে এখানে পোঁতা হয়। বিশাল সরোবরটি ( Royal Tank / Firoz Shah Kotla Baoli ) খনন করান ফিরোজ শাহ। এই সরোবরের পাড়ে লোধী স্থাপত্যশৈলীতে গড়া ফিরোজের মাদ্রাসার কেন্দ্রস্থলে ছিল ফিরোজ শাহের সমাধি এবং সুলতানা রিজিয়ার সমাধি। শহর থেকে এই ঐতিহাসিক স্থানের দূরত্ব মাত্র ৩.৫ কিলোমিটার।
পুরনো কিল্লা ( Purana Qila ) - কনট সার্কাস থেকে ৪ কি. মি. দূরে ইন্ডিয়া গেটের দক্ষিণ-পূর্বে হুমায়ুনের হাতে শুরু হয়ে শের শাহের হাতে এর নির্মাণ সমাপ্ত হয়। তখন এই দূর্গের নাম হয় শের গড়। তখন এর তিনদিকে পরিখা এবং পূর্ব দিকে যমুনা নদী ছিল। উঁচু প্রাচীরে ঘেরা দূর্গটির প্রবেশপথ তিনটি। উত্তরের তালাকি দরওয়াজা দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে শের মঞ্জিলের লাল বেলেপাথরের অষ্টভূজাকার চূড়া। লাল ধূসর রঙের ধনুকাকৃতি খিলানের শের শাহ গেটটিও সুন্দর। শের মঞ্জিলের ঠিক পিছনে দক্ষিণের হুমায়ুন দরওয়াজায় পুরাতত্ত্বের অমূল্য সম্ভার নিয়ে গড়ে ওঠা ফিল্ড মিউজিয়ামটিও কম আকর্ষণীয় নয়। এখানে খননকার্যের মাধ্যমে পাওয়া মোগল, সুলতান, রাজপুত, গুপ্ত, কুষাণ, সুঙ্গ, মৌর্য এমনকি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের নানান সংগ্রহও স্থান পেয়েছে। ইন্দো-আফগান স্থাপত্যশৈলীতে সাধারণ পাথর ও লাল বেলেপাথরের গড়া শের শাহর কিল্লা-ই-কুহানা মসজিদটিও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এর ডাইনে আছে চিড়িয়াখানা, কাছেই হজরত নিজামউদ্দিন রেল স্টেশন। ইংরেজ সেনাপতি লে হাডসন, বাহাদুর শাহের ছেলে ও অন্যান্য পুরুষ বংশধরদের গুলি করে মেরে ঝুলিয়ে দেয় ফিরোজ শাহ কোটলার দিক থেকে পুরনো কেল্লার প্রধান প্রবেশপথের দ্বিতল বড়ো দরজায়। তারপর থেকে এর নাম হয় খুনি দরওয়াজা ( Khooni Darwaza )। আর কিছুটা গিয়ে মথুরা রোডে আছে খৈরুল মঞ্জিল প্রাসাদ।
এই মথুরা রোডে পুরনো কেল্লার দক্ষিণে অবস্থিত চিড়িয়াখানা ( National Zoological Park, Mathura Road, Pragati Maidan, New Delhi )। ২০০০ রকমের জীবজন্তুর সাথে ভারতের কয়েক প্রজাতির বিরল বন্যপ্রাণীও রয়েছে এই প্রানী উদ্যানে। মণিপুর রাজ্যের স্যাঙ্গাই আছে এখানে। ভারতের প্রথম বাঘদম্পতি রাজা-রানীর বসবাস এখানে। চেনা-অচেনা নানা পাখির দেখা মিলবে এখানে। শুক্রবার চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকে।
শিল্প বানিজ্য জগতে ভারতের প্রগতির প্রদর্শনশালা হলো প্রগতি ময়দান ( Pragati Maidan )। সারা বছরই এখানে বানিজ্য মেলা বা India International Trade Fair বসে। দেশের প্রতিটি রাজ্যের শিল্পের প্রদর্শনী মন্ডপ বসেছে পাকাপাকিভাবে। ভারতীয় সংস্কৃতির উপর আলোকপাত করতে পারে এরকম মিউজিয়ামও বসেছে অনেকগুলি। যেমন, নেহেরু প্যাভিলিয়ন, ইন্দিরা প্যাভিলিয়ন, সনস অফ ইন্ডিয়া প্যাভিলিয়ন, ডিফেন্স প্যাভিলিয়ন, ভিলেজ কমপ্লেক্স, এনার্জি ইজ লাইফ, বিভিন্ন হস্তশিল্পের ২০০০০ নিদর্শন নিয়ে গড়া ক্রাফট মিউজিয়াম ( Craft Museum ) ছাড়াও আছে আরও অনেক মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা এই প্রগতি ময়দানে। প্রত্যেক দিন খোলা থাকে। এর ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থান করছে আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট ( Supreme Court )।
পুরাতন কেল্লার ৩ কি. মি. দক্ষিণে বিখ্যাত লোধি গার্ডেন ( Lodhi Garden, Lodhi Road, Delhi ) অবস্থিত। এই অতি মনোরম বাগিচায় সৈয়দ ও লোধি শাসকদের সমাধি রয়েছে। এই বিশাল ঐতিহাসিক বাগানের মাঝামাঝি আছে বড়া গম্বুজ মসজিদ ( Bada Gumbad Mosque ), কিছুটা উত্তরে কাঁচের শীষ গম্বুজ ( Shish Gumbad ), নীলাভ টালিতে ফুল ও কোরানের আয়াত আঁকা আছে। অল্প দূরে আটকোণা সিকন্দর শাহ লোধির সমাধি ( Sikandar Shah Lodhi Tomb ) আর উত্তর-পূর্বের ১৬ শতকের নির্মিত আঠপুলা সেতু দেখে নিন।
ডলস মিউজিয়াম ( Shankar's International Dolls Museum, ITO, 4, Bahadur Shah Zafar Marg, Beside Central Bank, Nehru House, New Delhi, 110002.
Link - http://www.childrensbooktrust.com ) - সারা বিশ্বের মোট ৮৫ টি দেশ থেকে ৬০০০ - এরও বেশি পুতুলের বিশাল সংগ্রহ জায়গা পেয়েছে এই শঙ্করস ইন্টারন্যাশনাল ডলস মিউজিয়ামে। এই সংগ্রহশালাটি ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানকার জাপানি পুতুলের সম্ভার সত্যিই নজর কাড়ার মতন। সংখ্যার নিরিখে ভারতীয় পুতুলের পরিমাণই বেশি। এগুলো দেখে ভারতীয় সংস্কৃতির ধরন বোঝা যায়। সোমবার বাদে প্রতিদিন ১০ টা থেকে ৫.৩০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই জাদুঘর। আর আছে B. C. Roy Children's Library ও শিশুদের প্লে কর্নার।
রাজ ঘাট ( Raj Ghat, Mahatma Gandhi Was Cremated Here, Behind Red Fort, New Delhi - 110006 ) - জনপথ থেকে ৫ কি. মি. দূরে দিল্লি গেটের কাছে যমুনা নদীর তীরে নতুন ভারতের এই চিরস্মরণীয় জাতীয় মন্দিরটি অবস্থিত। জওহরলাল নেহেরু রোড এসে শেষ হয়েছে এই রাজঘাটের উল্টোদিকে। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর শেষকৃত্য এখানেই সম্পন্ন হয় ১৯৪৮ সালের ৩১শে জানুয়ারি। স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রয়েছে বর্গাকৃতির কালো পাথরের সমাধিবেদি। এই বেদির গায়ে খোদাই করা আছে ওঁনার শেষ উক্তি "হে রাম"। প্রতিদিন দেশীবিদেশী অগনিত পর্যটক আসেন বাপুজিকে শ্রদ্ধা জানাতে। প্রতি শুক্রবার ওঁনার মৃত্যুদিনে উপাসনা করা হয় এই স্থানে। এইখানেই আছে গান্ধী দর্শন ( Gandhi Darshan ), যেখানে ভাস্কর্য ও গান্ধীর বিভিন্ন সময়ের চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। এর ঠিক পাশেই বিরাজ করছে গান্ধী স্মারক সংগ্রহালয় ( Mahatma Gandhi Museum ), যেখানে ব্যক্তি জীবনের ব্যবহার করা অনেক জিনিসের প্রদর্শনী ছাড়াও প্রতি রবিবার বিকেল ৪ ঘটিকায় হিন্দিতে ও ৫ ঘটিকায় ইংরেজিতে সর্বোদয় আন্দোলনের উপর চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। শুধু প্রতি বৃহস্পতিবার এই মিউজিয়াম বন্ধ থাকে। আর এক অবশ্য দ্রষ্টব্য স্থান হ'ল গান্ধী বলিদান স্থল ( Gandhi Smriti, Infront of National Defence College, 5, Tees January Marg Near Birla House, New Delhi, Delhi 110001 ) - এই জায়গাটি তিস জানুয়ারি রোডে ঠিক জাতীয় প্রতিরক্ষা মহাবিদ্যালয়ের সামনে এবং বিড়লা ভবনের কাছে অবস্থিত। ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি বিকেল ৫ টা বেজে ৫ মিনিট নাগাদ বিড়লা ভবনে উপাসনায় যাবার পথে এক সন্ত্রাসী আততায়ীর গুলিতে মহাত্মা গান্ধী ঠিক এখানেই শহীদ হন। তাঁরই স্মৃতিতে বিড়লা ভবনে একটি মিউজিয়াম স্থাপিত হয়েছে। এখানে পুতুল এবং চলচ্চিত্রে গান্ধীচরিত দেখে নিতে পারবেন।
শান্তিবন ( Shantivan Memorial Park ) - রাজঘাটের উত্তরে রয়েছে শান্তিবন। ১৯৬৪ সালের ২৭শে মে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর শেষকৃত্য হয় এই স্থানে। ঠিক সেই স্থানেই নেহেরুজীর সমাধিবেদি গড়ে তোলা হয়েছে। পাশেই রয়েছে ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে সঞ্জয় গান্ধীর স্মৃতিবেদি, যিনি ১৯৮০ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।
বিজয়ঘাট ( Vijay Ghat ) - এটিও রাজঘাটের কাছে অবস্থিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থান। ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর সমাধিবেদি রয়েছে এখানে। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধ জয়ের পর শান্তি সম্মেলনে গিয়ে রাশিয়ার তাসখন্দে মৃত্যু ঘটে শাস্ত্রীজীর। ১৯৬৬ সালে এখানেই ওঁনার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
শক্তিস্থল ( Shakti Sthal Memorial Park ) - রাজঘাট ও শান্তিবনের মাঝে ইন্দিরা গান্ধীর স্মৃতিতে একটি সুন্দর মন্দির এটি। এই মন্দিরটিকে ভারতের জাতীয় সংহতির প্রতীক রূপে বিবেচনা করা হয়। ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর তিনি শহীদের মৃত্যুবরণ করেন আর ৩রা নভেম্বর তাঁর মরদেহ দাহ করা হয় এই স্থানে। স্মৃতি চিহ্নস্বরূপ ধূসর-লাল রঙের একটি মনোলিথিক পাথরের সৌধ রয়েছে। কাছেই ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে ভারতের আর এক বরেণ্য প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর মরদেহ দাহ করা হয় এই বীরভূমিতে। তাঁর স্মৃতিতেও একটি বেদি ও একটি মন্দির রয়েছে। দিল্লি বেড়াতে আসা যেকোন পর্যটকের কাছে এই অঞ্চলটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। লাগোয়া পার্কের প্রতিটি গাছই কোন না কোন বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তির রোপণ করা। সান্ধ্যভ্রমণের পক্ষেও এই জায়গার পরিবেশ অতি মনোরম। এর কাছে যমুনা নদীর তীরে ভারতের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী চরণ সিং-এর স্মৃতিতে কিষাণঘাট ( Kisan Ghat ) নির্মিত হয়েছে। রাজঘাটের বিপরীতে রিং রোডে যমুনা নদীর তীরে আর এক দর্শনীয় স্থান হ'ল জনপ্রিয় দলিত নেতা ভারতের আর এক প্রধানমন্ত্রী বাবু জগজীবন রামের সমাধি মন্দির।
লালকেল্লা ( Red Fort, Netaji Subhash Marg, Lal Qila, Chandni Chowk, New Delhi, Delhi 110006 ) - আগ্রা থেকে দিল্লি আসার পর মোগল সম্রাট শাহজাহান গড়ে তোলেন লাল বেলেপাথরের মোগলি স্থাপত্যশৈলীর এই লালকেল্লা দূর্গটি। ১৬৩৮ সাল থেকে দশ বছর ধরে এর নির্মাণ কাজ চলে। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশরা এর দখল নেন। ৩০০ বছর পরে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ব্রিটিশের ইউনিয়ন জ্যাক পতাকা নামিয়ে স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তারপর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। দূর্গের গঠনশৈলী চোখে পড়ার মতো। প্রায় আটকোণা ২.৫ কি. মি. এলাকা জুড়ে থাকা এই দূর্গের চারপাশে ছিল ১১ মিটার গভীর পরিখা। যমুনার দিকে ১৮ মি. এবং শহরের দিকে ৩৩ মি. উঁচু পাঁচিল ছিল বিদ্যমান। ১৪ টি প্রবেশপথের মধ্যে ১২ টির সাথে পূর্বের পাঁচিলও বর্তমানে লোপ পেয়েছে। বর্তমানে কেবলমাত্র দুটি মূল গেট বা প্রবেশপথ আছে। একটি হ'ল দক্ষিণে দিল্লি গেট এবং অপরটি হলো পশ্চিমের লাহোর গেট। এই দিল্লি গেটের শোভা ১৯০৩ সালে লর্ড কার্জনের গড়া দুটি বিশাল হস্তিমূর্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। লাহোর গেট দিয়ে ঢুকেই আছে মিনা বাজার (Meena Bazar)। এখানে নানারকম অ্যান্টিক জিনিস কেনাবেচা চলে। লাহোরি গেটে অর্ধগোলাকার খিলান ও মার্বেল পাথরের গম্বুজ আছে। এরপরেই রয়েছে গান বাজনার নহবতখানা। এই চত্বরেই আছে আটকোণা বিশালাকার কিল্লা-ই-মুবারক ( Qila-i-Mubarak )। এর শিল্পকর্ম দেখার মতন। এই চত্বর পেরোলেই আছে দেওয়ান ই আম ( Diwan-i-Aam )। এখানেই প্রজারা সম্রাটের কাছে সমস্ত অভাব-অভিযোগ জানাতো। পরে ভাইসরয় লর্ড কার্জন এর সংস্কার করেন। দেওয়ান ই আমের পেছনে পার্সিয়ান চার বাগের ঢঙের ফোয়ারায় সুশোভিত উদ্যান ও ছয় মহলের ধ্বংসস্তুপ আছে।
এই উদ্যানের পিছনে সাদা পাথরের দেওয়ান ই খাস ( Diwan-e-khas ) আর এক বিশেষ আকর্ষণ। এটি হলো বিশেষ অতিথিদের সঙ্গে সম্রাটের মিলনক্ষেত্র। এর কারুকার্য ও স্থাপত্য এককথায় অনবদ্য। রঙবেরঙের রত্নখচিত স্তম্ভ শোভিত দেওয়ান ই খাসের জালির কাজ অতিসুন্দর। সকাল ও সন্ধ্যায় সম্রাট এখানে আসতেন। এখানকার অত্যন্ত দামি সম্পদ ছিল ময়ূর সিংহাসন। এটি নাদির শাহ লুঠ করে নিয়ে যান। এখন এই সিংহাসনটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। কাছে অবস্থিত বেগমদের রংমহলের ( Rang Mahal ) নয়নভুলানো সৌন্দর্য সত্যিই অতুলনীয়। রংমহলের একই স্থাপত্যশৈলীতে গড়া মমতাজ মহলে ( Mumtaz Mahal ) Archaeological Museum স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি শুক্রবার বন্ধ থাকে। অন্যান্য দিন সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই মহলের একদম দক্ষিণে আছে কাঁচে মোড়া মমতাজ বেগমের শিশমহল। রাজস্থানিশৈলীতে রঙীন কাঁচে আঁকা ছবি ও অমূল্য রত্নরাজিতে সজ্জিত এই শিশমহলের তুলনা খুঁজে বের করা মুশকিল। এর স্নানঘর বা হামামটিও অত্যন্ত সুন্দর।
রংমহলের উত্তর দিকে শাহজাহান নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য একটি শ্বেত পাথরের ভবন নির্মাণ করেন। এরই নাম খাসমহল ( Khas Mahal )। শোনা যায় ভিতরের প্রতিটি অংশ অনবদ্য। কিন্তু, ১৮৫৭ সালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির জন্য বর্তমানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ আছে। দেওয়ানি খাসের উত্তর-পশ্চিমে ঔরঙ্গজেবের নির্মিত শ্বেত পাথরের মক্কামুখী মোতি মসজিদ ( Moti Masjid ) কেল্লার আর এক আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য। এটি সম্রাট নিজের ও পরিবারের মহিলা সদস্যাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পাঠের জন্য তৈরি করান। এই মসজিদটি আকারে ছোট হলেও কারুকার্য দেখার মতো। এরই পিছনে আছে মোগল উদ্যান।
লাল কেল্লার আর এক বিশেষ আকর্ষণ সন্ধ্যার শব্দ ও আলোর প্রদর্শনী। একে ইংরেজিতে বলা হয় "Son-et-Lumiere Show"। হিন্দি ও ইংরেজি ধারাভাষ্যে শব্দ ও আলোর প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মোগল যুগ থেকে আরম্ভ করে দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তি পর্যন্ত ৩৩০ বছরের ইতিহাস দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হয়। এই শো-এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। মাত্র ১ ঘন্টার এই প্রদর্শনী টিকিট কেটে দেখতে হয়। তবে, বর্ষাকালে মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকে।
জামা মসজিদ ( Jama Mosque ) - লালকেল্লার বিপরীতে সপ্তদশ শতাব্দীতে ওস্তাদ খলিলের কারিগরী বিদ্যায় মোতি মসজিদের আদলে এই Masjid-i-Jahanuma গঠিত হয়। এর জন্য সম্রাট শাহজাহান ১০ কোটি টাকা খরচ করেন। ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের নয়নের মণি এই জামা বা জুম্মা মসজিদ। এর প্রবেশদ্বার চারটি। এর মাথায় ৪০ মিটার উঁচু দুটি মিনার রয়েছে। টিকিট কেটে দক্ষিণের মিনারের মাথায় উঠে পুরো লালকেল্লা ও তার চারপাশের এলাকা দেখে নিতে পারেন। এর বিশাল চত্বরে একসাথে ২৫০০০ মানুষ উপাসনা করতে পারেন। ৩৫ ধাপ সিঁড়ি উঠে এর মূল উপাসনা কক্ষ। এই কক্ষটি লাল বেলেপাথর ও সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি। এটি তৈরিতে ৫ হাজার শ্রমিকের ৫ বছর সময় লাগে। এশিয়ার বৃহত্তম এই মসজিদে হজরত মহম্মদের দাড়ির একটি চুল, পায়ের চটি, তাঁর ব্যবহৃত কোরানের একটি অধ্যায়, সমাধি সৌধের চাঁদোয়া, পাথরে পায়ের ছাপ সংরক্ষিত আছে। শাহজাহানের নিয়োজিত ইমাম পরিবার বংশ পরম্পরায় এর ইমাম পদটি অলংকৃত করে রেখেছে। নামাজের সময় অন্য ধর্মের মানুষের প্রবেশ নিষেধ। ভিতরে খালি পায়ে, মাথা ঢেকে, লুঙ্গি পরে ঢুকতে হয়। সবই এখানে ভাড়ায় পাওয়া যায়। ছবি এবং ভিডিও তুলতে গেলে আগে থেকে টিকিট কাটতে হয়।
সফদরজং টুম্ব ( Safdarjung Tomb ) - কুতুব মিনারের পথে অরবিন্দ মার্গে সফদরজং টম্ব বা টুম্ব অবস্থিত। অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলা এই হুমায়ুন সৌধের আদলের সমাধিসৌধটি নির্মাণ করেন তাঁর পিতা মির্জা মুকিম আবুল মনসুর খানের সমাধির উপর। মোগল আমলের বাগিচা চারবাগের মাঝে মোগলি স্থাপত্যশৈলীর ৪০ ফুট উঁচু শেষ সমাধিসৌধও এটি। চারপাশে পাথরখচিত চার আজান মিনার এবং সাজানো গোলাপ বাগান রয়েছে।
বুদ্ধজয়ন্তী পার্ক ( Buddha Jayanti Park, Vandemataram Marg, Central Ridge Reserve Forest, New Delhi ) - বুদ্ধদেবের নির্বাণ লাভের ২৫০০ বছর পূর্তির স্মৃতিচিহ্নরূপে বন্দেমাতরম মার্গের পাশে সেন্ট্রাল রিজ সংরক্ষিত অরন্যে গড়ে তোলা সাজানো গোছানো অতি মনোরম বাগান হলো এই বুদ্ধজয়ন্তী পার্ক। সুদূর শ্রীলঙ্কা থেকে আসল বোধিবৃক্ষের একটি শাখা এনে এখানে পোঁতা হয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির সুন্দর সুন্দর ফুল ফুঁটে থাকে এই বাগানে। স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকেরা এখানে এসে ঘুরে, বসে সময় কাটান। চড়ুইভাতি অর্থাৎ পিকনিকের আদর্শ পরিবেশ এটি।
হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া দরগাহ ( Hazrat Nizammudin Aulia Dargah, Boali Gate Rd, Nizammudin West Slum, New Delhi - 110013 ) - লোধি রোডের বিপরীতে পুলিশ স্টেশনের পাশের সরু গলিপথ দিয়ে কিছুটা গেলেই পৌঁছে যাবেন এই বিশেষ ঐতিহাসিক স্থানে। লোধি স্থাপত্যশৈলীতে সাদা পাথরের নির্মিত মাথায় গম্বুজ নিয়ে শত শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে মুসলিমদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া দরগা। প্রধান সমাধিকক্ষটি জাফরির পর্দা ও ধনুকাকৃতি খিলানে সুশোভিত। চিস্তি সম্প্রদায়ের চতুর্থ গুরু শেখ নিজামউদ্দিনের দেহ সমাধিস্থ আছেন এখানে। প্রথম সৌধটি এখন আর নেই। এখনকার সৌধটি ১৫৬২ সালে গড়া। প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যাবেলায় গুরুর সমাধির সামনে কাওয়ালি সঙ্গীতের আসর বসে। এখানে দর্শনীয় অন্যান্য জিনিসের মধ্যে আছে বিশাল একটি জলাশয়, ১৩২৫ সালে আলাউদ্দিন খিলজির গড়া বাইজেন্টাইন শৈলীর জমায়েৎখানা মসজিদ। এছাড়াও রয়েছে উর্দু ভাষার কবি মির্জা গালিব, আমির খসরু, স্থপতি ঈশা খান ও শাহজাহান কন্যা জাহানারার সমাধি। প্রতি বছর উরস পালিত হয় সাড়ম্বরে। মুসলিম সমাজের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী আজমেরে দরগা খাজা সাহেব দর্শনের পরে এই আউলিয়া দরগাহ দর্শন করতে হয়। কাছেই সুফি সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু হজরত ইনায়েৎ খানের সমাধি ( Hazrat Inayat Khan Dargah, 129 Basti Hazrat, Lodhi Rd, Nizamuddin ) অবস্থিত। এটিও এরপরে দেখে নিন।
হুমায়ুনের সমাধি ( Humayun's Tomb, Opposite Mathura Road, Nizamuddin, Delhi 110013 ) - পুরানো কেল্লার ২ কি. মি. দক্ষিণে মথুরা রোডে দ্বিতীয় মোগল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিতে তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর পর আকবরের মা হামিদা বেগম ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে ৪৩ মিটার উঁচু এই আটকোণা সুরম্য সৌধ গড়ে তোলেন। এর মাথায় ৩৮ মি. উচ্চতাবিশিষ্ট পেঁয়াজের আকারের গম্বুজ রয়েছে। পরবর্তী কালে তাঁর বিধবা সহধর্মিনী হাজী বেগম বা হামিদা বেগমও সমাধিস্থ হন এইখানেই। ফোয়ারায় সুশোভিত মোগল উদ্যান চারবাগের মধ্যে পারসীয় স্থাপত্যশৈলীতে হালকা হলদেটে লাল বেলেপাথরের সাথে নানা রঙের পাথর দিয়ে নির্মিত এই সুন্দর ঐতিহাসিক সমাধিসৌধটি সত্যিই মনোমুগ্ধকর। খিলানের জাফরির কাজ অবশ্যই তারিফের যোগ্য। তাজমহলেরও অনেক আগে তৈরি এটি। তাজসহ অনেক সুন্দর মোগল স্থাপত্যের অনুপ্রেরণা এই প্রাচীন সৌধটি। এখানেই সমাধিস্থ রয়েছেন দারাশিকো, সুজা, মুরাদ, নাতি ও পুত্রসহ শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ। পাশেই রয়েছে মদিনার আদলের একটি মসজিদ। UNESCO-এর বিশ্ব হেরিটেজ তালিকাভুক্ত ভারতীয় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। কাছেই নিজামউদ্দিন রেল স্টেশন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি খোলা থাকে। টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয়। তবে শুক্রবার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দর্শন করা যায়। এখান থেকে ৩ থেকে ৩.৫ কিলোমিটার দূরে সম্রাট অশোকের রক এডিক্টও দেখে আসতে পারেন।
দিল্লি সফরের সময় আপনার কেনাকাটা। What are The Things You Should Buy ( Marketing ) While Traveling in Delhi?
একটা কথা প্রচলিত আছে যে, সারা ভারতের এখানে ওখানে যা যা জিনিস পাওয়া যায় তার সবটুকুই আপনি কিনতে পারবেন দিল্লির দোকানপাটে। প্রতিটি দ্রব্য ভারতের অন্যান্য শহর থেকে দামেও কিছুটা সস্তা পড়ে। তবে, পর্যটকমহলে আইভরির নানান জিনিস, চাঁদনি মার্কেটের জুতো, উলের পোশাক ও ইলেকট্রনিক্স গুডস -এর যথেষ্ট বেশি পরিমাণে জনপ্রিয়তা ও চাহিদা আছে। ঝলমলে সাজে আপনার প্রতিক্ষায় রয়েছে কনট প্লেসের গভর্নমেন্ট সেলস এম্পোরিয়াম, পাশেই অবস্থিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পালিকা বাজার। জনপথের সেন্ট্রাল কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজে অথবা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন দোকানপাট থেকেও কেনাকাটা করতে পারবেন। বাবা খড়ক সিং মার্গেও এম্পোরিয়াম তৈরি করেছে আমাদের দেশের নানা রাজ্য সরকার। প্রগতি ময়দানে বিভিন্ন রাজ্য সরকার তাঁদের স্থানীয় হস্তশিল্পসামগ্রী বিক্রি ও প্রদর্শনের জন্য স্থায়ী মন্ডপ গড়েছেন। দামে কিছুটা বেশি হলেও সরকারি দোকানের জিনিসের নির্ভরযোগ্যতা অনেক বেশি। দিল্লি ট্যুরিজম খোলা আকাশের নীচে হস্তশিল্প বাজার গড়ে তুলেছে লক্ষ্মীবাঈ নগরে। দিল্লীর লাড্ডুর স্বাদ নিতে চাইলে চলে যান চাঁদনির শিশগঞ্জ গুরুদ্বারার পাশে ঘন্টেবালার দোকানে। মুসলিম সংস্কৃতির বিভিন্ন সামগ্রী কিনতে হলে যেতে হবে জামা মসজিদ এলাকার মিনাবাজারে। দরিয়াগঞ্জ বিখ্যাত নতুন ও পুরাতন বইয়ের বাজারের জন্য। যেকোনো ধরণের জিনিস এক জায়গা থেকে কিনতে হলে চলে যান নিউ দিল্লি রেল স্টেশনের পশ্চিমে কিছুটা হেঁটে পাহাড়গঞ্জ বাজারে। ঐতিহাসিক বা অ্যান্টিক বস্তু কেনা উচিত হবে ডক্টর জাকির হোসেন রোডে অবস্থিত সুন্দরনগর মার্কেট থেকে। নামমাত্র দামে সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস কিনতে হলে যান লালকেল্লার পিছনের Chori Bazar - এ। এটি প্রতি রবিবার সারাদিন খোলা থাকে। এছাড়াও অনেক ছোট বড়ো নানা বাজার রয়েছে শহর জুড়ে। সমগ্র দিল্লীতে চুল কাটার সেলুন বন্ধ থাকে প্রতি মঙ্গলবার।
কিভাবে যাবেন? How to Reach / Go?
ট্রেনে কিংবা প্লেনে করে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে সহজেই দিল্লী যাওয়া যায়। বিদেশ থেকে যদি আসতে চান তাহলে সোজা বিমানে করে চলে আসুন। জাহাজে চড়ে আসলে প্রথমে মুম্বাই অথবা চেন্নাই পৌঁছে তারপর ট্রেনে অথবা প্লেনে চেপে সোজা দিল্লী যান।
কোথায় থাকবেন? Where to Stay? Fooding & Lodging.
থাকা ও খাওয়ার জন্য সারা শহর জুড়ে বিভিন্ন মানের আর দামের হোটেল, রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তাই আগে থেকে বুকিং না করে আসলেও হবে। আগে থেকে বুকিং করে আসতে চাইলে এই পেজের উপরের দিকে দেওয়া Trusted Website Link-এর মাধ্যমে বুকিং করে আসতে পারেন।
→ প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দিল্লি ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রায় তিন হাজার বছরের পুরাতন এই স্থান। মহাভারতের সময়ে এর নাম ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ। ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কিংবদন্তি রাজা দিল্লুর ( Dillu ) নাম থেকে অথবা প্রাচীন নগরী দিল্লিকা ( Dhillika ) থেকে রূপান্তরিত হয়ে প্রথমে Dilli এবং পরে Delhi নামকরণ হয়। প্রথমে ছিল নগরী, তারপর হলো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ( Union Territory ), আর বর্তমানে এটি ভারতের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য।
এর রাজধানী নিউ দিল্লি ( Capital City is New Delhi )। এই রাজ্যের আয়তন ( Total Area ) হ'ল ১৪৮৪ বর্গ কি. মি. ( ৫৭৩ বর্গ মাইল )। মোট জনসংখ্যা ( Total Population ) ১৬৭৫৩২৩৩ জন। প্রতি ১০০০ পুরুষে নারীর সংখ্যা মাত্র ৮৬৬ জন ( Sex Ratio of Male and Female )। প্রতি বর্গ কিলোমিটার জনঘনত্ব ( Density of Population ) ১১২৯৭ জন। সাক্ষরতার হার ( Percentage of Literacy ) ৮৬.২১%। প্রধান ভাষা হিন্দি ( Main Official Language is Hindi )। এছাড়া, ( Other Languages ) পাঞ্জাবি, উর্দু এবং ইংরেজি ভাষারও বেশ ভালো চল আছে। মাথাপিছু বার্ষিক আয় ( Per Capita / Head Yearly Average Income ) ৩৬৫৫৩০ টাকা।
WHEN SHOULD YOU GO THERE? / BEST TIME TO VISIT OR TRAVEL THIS STATE. AVERAGE WEATHER OR CLIMATE.
অক্টোবর, নভেম্বর, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস এখানে ঘুরতে আসার উপযুক্ত সময়। এই সময়ে শীতও একটু বেশি থাকে। সমগ্র রাজ্যে শীতকালের ব্যাপ্তিও বেশি। শীত থাকে নভেম্বরের শেষ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এই সময়ে তাপমাত্রা ( Temperature ) থাকে ৭° থেকে ২৩° সেলসিয়াসের মধ্যে। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে ৩° থেকে ৪° সেলসিয়াসেও নেমে যায়। সাথে থাকে কনকনে হাওয়া। তাই যথেষ্ট পরিমাণে গরম পোশাক সঙ্গে রাখা দরকার। আবার গরমকালেও গরম পড়ে অস্বাভাবিক রকমের। দিনে ৪১° থেকে ৪৫° সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা থাকে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বর্ষাকাল। সমগ্র দিল্লি জুড়ে প্রচুর ঐতিহাসিক ও আধুনিক দর্শনীয় স্থান আছে। সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে দেখতে-জানতে ( Explore ) গেলে ১০ থেকে ১৫ দিনের সময় নিয়ে ঘুরতে আসা উচিত।
Delhi Government Official Website Portal - https://www.delhi.gov.in
Delhi State Tourism Department Website - http://www.delhitourism.gov.in
→ দয়া করে এই রাজ্যের জেলা, জেলা সদর, সাব ডিভিসন এবং তহশিল এলাকাগুলিকে বন্ধনীতে দেওয়া নাম্বার অনুযায়ী সাজিয়ে পড়ে নিন।
Districts - New Delhi (1), North Delhi (2), North West Delhi (3), West Delhi (4), South West Delhi (5), South Delhi (6), South East Delhi (7), Central Delhi (8), North East Delhi (9), Shahdara (10), East Delhi (11).
Headquarters - Connaught Place (1), Alipur (2), Kanjhawala (3), Rajouri Garden (4), Dwarka (5), Saket (6), Defence Colony (7), Daryaganj (8), Nand Nagri (9), Shahdara (10), Preet Vihar (11).
Sub Division or Tehsils - [ Chanakyapuri, Delhi Cantonment, Vasant Vihar](1), [ Model Town, Narela, Alipur ](2), [ Rohini, Kanjhawala, Saraswati Vihar ](3), [ Patel Nagar, Punjabi Bagh, Rajouri Garden ](4), [ Dwarka, Najafgarh, Kapashera ](5), [ Saket, Mauz Khas, Mehrauli ](6), [ Defence Colony, Kalkaji, Sarita Vihar ](7), [ Kotwali, Civil Lines, Karol Bagh ](8), [ Seelampur, Yamuna Vihar, Karawal Nagar ](9), [ Shahdara, Seemapuri, Vivek Vihar ](10), [ Gandhi Nagar, Preet Vihar, Mayur Vihar ](11).
ALL TOTAL LIST OF 20 VERY BIG, MOST POPULAR OR FAMOUS LOCAL FAIRS & MAJOR FESTIVALS:-
(i) Lohri Festival, (ii) Republic Day Parade, (iii) Army Day, (iv) Kite Flying Fest, (v) Maha Shivratri, (vi) Diwali, (vii) International Trade Fare, (viii) Mango Festival, (ix) Independence Day, (x) Qutub Festival, (xi) Dussehra, (xii) Guru Purab ( Guru Nanak Jayanti, (xiii) Phool Walon Ki Sair, (xiv) Urs Al Hazrat Nizamuddin Aulia's Shrine, (xv) Baisakhi Festival, (xvi) Basant Panchami, (xvii) Beating The Retreat Ceremony, (xviii) Delhi Book Fair, (xix) The Delhi Flower Show, (xx) Garden Tourism Festival.
এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং ভারতের রাজধানী শহরের যেকোন জায়গায় যাওয়া আসা, থাকা খাওয়ার ব্যাপারে আগে থাকতে অনলাইন বুকিং-এর জন্য নীচের বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে এক বা একাধিক ব্যবহার করতে পারেন। [ FOR ONLINE BOOKING OF FOODS / FLIGHTS, TRAIN / RAILWAY RESERVATION, HOUSES ON RENT/ FLATS RENTAL / LODGES / RESORTS / HOMESTAYS / TENTS / HOTELS ROOMS IN ANY PLACE WITH DISCOUNT, CHEAP AIR TICKETS, BUS BOOKING, CAR HIRE ]:-
1. https://www.trivago.in
2. https://www.goibibo.com
3. https://www.makemytrip.com
4. https://www.yatra.com
5. https://www.cleartrip.com
6. https://www.tripadvisor.in
7. https://www.ixigo.com
8. https://www.zomato.com
2. https://www.goibibo.com
3. https://www.makemytrip.com
4. https://www.yatra.com
5. https://www.cleartrip.com
6. https://www.tripadvisor.in
7. https://www.ixigo.com
8. https://www.zomato.com
[ TOP PLACES TO VISIT OR MAJOR TOURIST ATTRACTIONS IN DELHI & NEW DELHI, INDIA WITH PROPER TOUR PLAN ON MAIN TRAVEL DESTINATIONS AND OTHER NEAREST BEAUTIFUL SPOTS. ]
সমস্ত দিল্লি ও নিউ দিল্লি শহর জুড়ে প্রচুর দর্শনীয় স্থান আছে। ভারতের রাজধানী শহর এটি। প্রচুর ঐতিহাসিক নিদর্শন আছে অনেক পুরাতন এই শহরে। সমস্ত ঠিকমতো দেখতে গেলে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় লাগবে। প্রথমেই আসছি বারখাম্বা রোডের FICCI -এর বিল্ডিং -এ স্থিত ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের ( Natural History Museum ) কথায়। এখানে ফসিল, স্টাফড জীবজন্তু, বিশালাকার ডাইনোসর ও নানা ধরনের পাখি রয়েছে। ডিসকভারি ঘরটিও আশ্চর্যজনক জিনিসে ভরা। এখানে ফিল্ম শোয়েরও ব্যাবস্থা রয়েছে। ইন্ডিয়া গেটের কাছে ড: জাকির হোসেন মার্গে জয়পুর হাউসে ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট ( National Gallery of Modern Art, Tel - 23382835 ) যে কোন দিন সকাল ১০ টার পর টিকিট কেটে দেখে নিন। এখানে রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল বসু, যামিনী রায়, অমৃতা শেরগিল সহ বিভিন্ন বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীর ছবির বিশাল ভান্ডার রয়েছে। আর্ট রেফারেন্স লাইব্রেরির ( Art Reference Library ) বই ও পত্রপত্রিকার বৈচিত্রপূর্ণ বিশাল সংগ্রহ যে কোন শিল্প-সাহিত্যরসিককে মুগ্ধ করবেই। এরপর আসছি ন্যাশনাল রেল মিউজিয়ামের ( National Rail Museum, Chanakyapuri ) প্রসঙ্গে। চাণক্যপুরীর ভূটান হাউসের ঠিক পিছনে এই মিউজিয়ামের অবস্থান। সপ্তাহের সোমবার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে টিকিট কেটে দেখে আসুন। ১০ একর জায়গা জুড়ে এই সংগ্রহশালায় অনেকগুলি লোকোমোটিভ ও ক্যারেজের সংগ্রহই শুধু নয়, বরোদা মহারাজার সেলুন কার, সোনা ও হাতির দাঁত বাঁধানো কাঠের তৈরি মহীশূর মহারাজার ক্যারেজ, প্রিন্স অব ওয়েলসের কেবিন, গান্ধীজীর চিতাভস্মবাহিত বগি, আছে ১৮৫৫ সালে তৈরি বিশ্বের প্রাচীনতম বাষ্পীয় ইঞ্জিন ফেয়ারি কুইন। টয় ট্রেনেও চড়ে নিতে পারেন। স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কিছু জিনিসও কিনে নিতে পারেন। এখানে রেস্তোরাঁ ও লাইব্রেরিও আছে।
জোরবাগে তিব্বত হাউসে আছে টিবেট মিউজিয়াম ( Tibet Museum, Tibet House )। সোমবার থেকে শুক্রবার অবধি খোলা থাকে। এখানে চীনের তিব্বত দখলের পর লাসা থেকে ভারতে চলে আসা দলাই লামার সঙ্গে আনা হাতে তৈরি তিব্বতীয় সুন্দর জিনিসের সংগ্রহ। এখান থেকে কেনাকাটা করতেও পারেন। পালাম মার্গে আছে এয়ারফোর্স মিউজিয়াম ( Air Force Museum, Palam, New Delhi )। এটি মঙ্গলবার ছাড়া রোজ খোলা থাকে। ফিলাটেলিক মিউজিয়াম ( National Philatelic Museum, Dak Bhaban, Sardar Patel Chowk, Sansad Marg, New Delhi ) আছে সংসদ মার্গের ডাক ও তার ভবনে। ১৮৫৪ সালে প্রকাশিত প্রথম ডাকটিকিট ও বিভিন্ন সময়ের ভারতীয় ডাকটিকিটের স্মারক, ফার্স্ট ডে কভার দেখতে ও কিনতে পারেন। শনিবার ও রবিবার ছাড়া রোজ খোলা থাকে।
সন্ধ্যাবেলায় ইংরেজি ও হিন্দি ধারাভাষ্যে মোঘল যুগ থেকে ভারতের স্বাধীনতাপ্রাপ্তি পর্যন্ত ঘটনাক্রম দেখুন Son-et Lumiere লালকেল্লায়। সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য ও টিকিট পেয়ে যাবেন ITDC, L Block, Rajib Chowk, Tel - 23412336 থেকে। পারলে লালকেল্লার সামনের চাঁদনি চক, পার্লামেন্ট স্ট্রিট ও কনট সার্কাস পায়ে হেঁটে দেখে নিন। আধুনিক স্থাপত্যের নিদর্শন হয়ে গড়ে উঠেছে চাণক্যপুরী। এই এলাকার বৈচিত্র্যেভরা গঠনশৈলী পর্যটকদের রীতিমতো আকর্ষণ করে। শাহজাহান কন্যা জাহানারা বেগমের হাতে গড়া ইতিহাস প্রসিদ্ধ চাঁদনি চক ( Chandni Chowk ) বর্তমানে দিল্লি শহরের অন্যতম বিশেষ বানিজ্যিক এলাকা। লালকেল্লার কাছেই রয়েছে প্রাচীন দিগম্বর জৈন মন্দির ( Shri Digambar Jain Temple, Opposite Red Fort )। সুুুন্দর কারুকার্য করা এই মন্দিরে ২৩ তম জৈন তীর্থঙ্কর স্বামী পার্শ্বনাথের মূর্তি পূজিত হয়। জুুুতোব্যাগসহ সমস্ত চামড়াজাত জিনিস জমা রেখে এখানে প্রবেশ করতে হয়। এই মন্দিরে একটি পক্ষী হাসপাতাল আছে। দিনরাত পাখিদের সেবা চিকিৎসা চলছে এই হাসপাতালে। কাছেই রয়়েছে শিশগঞ্জ গুরুদ্বারা ( Gurudwara Sis Ganj Sahib ji, Chandni Chowk Road, New Delhi )। গুরু তেগবাহাদুরের স্মারকস্বরূপ এই অনন্য শিখতীর্থ। চাঁদনি চকের কাছে কোতোয়ালী পুলিশ স্টেশন পেরিয়েই আছে সুনেরি মসজিদ ( Sunehri Masjid / Mosque, Nishad Raj Marg, Lal Qila, Old Delhi )। এই মসজিদের ছাদ থেকে নাদির শাহ সৈন্য পরিচালনা করতেন। চাঁদনির এক প্রান্তে রয়েনছে শাহজাহানের হাতে তৈরি ফতেপুরি মসজিদ ( Fatehpuri Masjid / Mosque )। ডানহাতের চার্চ মিশন রোড সোজা দিল্লি জংশন স্টেশন অবধি গিয়েছে। নতুন দিল্লির প্রধান ডাকঘরের কাছে বাবা খড়ক সিং মার্গে পবিত্র বাংলা সাহিব গুরুদ্বারা ( Sri Bangla Sahib Gurudwara, Connaught Place, New Delhi )। প্রচলিত আছে যে, এর জলাশয়ের অমৃতসমান জলে নানা রোগব্যাধির উপশম হয়। লঙ্গরখানার প্রসাদেরও যথেষ্ট সুখ্যাতি আছে। মোঘল দরবারের সাথে ১০ম গুরু গোবিন্দ সিংহর ঐতিহাসিক সাক্ষাতের নিদর্শনরূপে যমুনা পুলিনে হুমায়ুন সমাধির নিকটের দমদমা সাহিব গুরুদ্বারা ( Gurudwara Damdama Sahib, Nizamuddin East, New Delhi )। রিং রোডে মহারানী বাগ কলোনির বিপরীতে গুরুদ্বারা বালা সাহিব ( Gurudwara Bala Sahib )। এছাড়া, কাশ্মীরি গেটে ব্রিটিশের ক্যান্টনমেন্ট ( British Cantonment, Kashmiri Gate ) নগরী, সেন্ট জেমস চার্চ ( St. James Church ), মিউটিনি মেমোরিয়াল ( Mutiny Memorial ), কুদসিয়া গার্ডেন ( Qudsia Bagh, Railway Colony, New Delhi ) ইত্যাদি পর্যটন স্থলগুলি সত্যি দেখার মতো।
কুতুব মিনার ( Qutub Minar ) - কুতুব উদ্দিন আইবকের ভারত বিজয়ের স্মারক সৌধরূপে গড়ে তোলা হয় এই ৭২.৫ মি. উঁচু এই বিজয়স্তম্ভ। শেষ হিন্দু রাজা পৃথ্বীরাজের বিধ্বস্ত দূর্গ কিলা রায় পিথোরাতেই গড়ে ওঠে এই মিনার। ৩৬৭ ধাপের ঘোরানো সিঁড়ি উঠেছে সামান্য হেলে থাকা কুতুবে। গোড়া থেকে ক্রমশঃ সরু হয়ে উঠে গেছে। কোরানের আয়াত ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে। পাঁচ তলার এই স্থাপত্যটি ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ শিরোপায় ভূষিত হয়। লাল বেলেপাথরের প্রথম তলাটি নির্মিত হয় কুতুবউদ্দিন আইবকের হাতে। লাল বেলেপাথরের ২য় ও ৩য় তলা দুটি তৈরি হয়েছে ইলতুৎমিসের সময়ে। বেলেপাথর ও সাধারণ পাথরে ৪র্থ ও ৫ম নির্মাণ করা হয় ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমলে। ১৮০৩ সালের ভূমিকম্পে ৫ম তলার গম্বুজটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে ১৮২৯-এ নতুন করে গম্বুজটি তোলেন ব্রিটিশ মেজর রবার্ট স্মিথ। পরে গম্বুজটিকে নীচে নামিয়ে পাশের বাগানে রাখা হয়। নীচের কম্পিউটার কিয়স্ক ও জায়ান্ট টেলিভিশনের পর্দায় কুতুব মিনারের উপর থেকে চারপাশ দেখার স্বাদ পাওয়া যায়। লোটাস টেম্পল, ছত্তারপুর টেম্পল, আলাই মিনার ধরা পড়ে উপরের ক্যামেরায়। ১৯৮১ সালে একটি প্রানঘাতী মর্মান্তিক দূর্ঘটনার পরে বেশ কিছু বছর স্তম্ভের শীর্ষে ওঠার দরজা বন্ধ ছিল। ২০০৩ সালে আবার তা জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সম্প্রতি সন্ধ্যাবেলায় আলোকসজ্জারও ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এই এলাকায় প্রবেশ করতে গেলে যৎসামান্য টাকার টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। এর ঠিক পাশেই রয়েছে ৪র্থ শতকের রাজা চন্দ্রভার্মার তৈরি লৌহমিনার ( Iron Pillar )। বহুশত বছর পরেও এই পিলারে কোন মরচেই ধরেনি। সম্ভবত বিষ্ণুপাদ পাহাড়ের বিষ্ণু মন্দিরে বিক্রমাদিত্য চন্দ্রগুপ্ত দ্বারা স্থাপিত বিষ্ণুধ্বজ এটি। প্রচলিত আছে, কেউ পিছন ফিরে দুই হাত দিয়ে মিনারটি পুরো জড়িয়ে ধরতে পারলে তিনি রাজা হবেনই। আপনি যদি রাজা হতে চান তাহলে আপনিও গিয়ে একইরকম ভাবে জড়িয়ে ধরুন। যদি সত্যি রাজা হয়ে যান তাহলে বুঝবেন রটনাটি মিথ্যে নয়।
Qutub Minar- এর উত্তর পশ্চিম লাগোয়া এলাকায় আছে কুওয়াত উল ইসলাম মসজিদ ( Quwwat ul Islam Mosque / Masjid ) যেটা কুতুব আইবকের হাতে ১১৯৩ থেকে ১১৯৮ সালের মধ্যে হজরত মহম্মদের মদিনার বাড়ির নকল করে গড়ে উঠেছে। ভাস্কর্যযুক্ত ধনুকের আকারের খিলানে অলঙ্কৃত ১৬ মিটার উঁচু প্রার্থনা হল, ইন্দো-ইসলামিক ধারায় খোদাই করা বেলেপাথরের পর্দা, হাতে লেখা কোরানের আয়াত ও পদ্মে অলঙ্কৃত মক্কামুখী আকর্ষণীয় কুওয়াত। কারুকার্যকরা শতাধিক থাম আনা হয়েছে ২৭ টি হিন্দু ও জৈন মন্দির থেকে। পূবদিকের ঢোকার দরজায় উল্লেখও করা আছে সেকথা। কুতুবউদ্দিনের জামাই শামসুদ্দিন ইলতুৎমিস ও আল্লাহর দূত আলাউদ্দিন খিলজির সময়ে দুই বার এই মসজিদের আকার ও আয়তন বাড়ে।
১৩১১ খ্রিস্টাব্দে কুতুব মিনারের দক্ষিণ পূর্বে আলাউদ্দিনের সময় তৈরি হওয়া আলাই দরওয়াজা ( Alai Darwaza ) অর্থাৎ আলাই মিনারের সুন্দর প্রবেশদ্বারটিও এককথায় অনবদ্য। পুরো স্থাপত্যটিই তৈরি হয়েছে জাফরি ও লাল বেলেপাথর দিয়ে। এটি দিয়ে প্রবেশ করেই পৌঁছে যাবেন আলাউদ্দিনের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন আলাই মিনার ( Alai Minar )। এর উচ্চতা ২৭ মিটার। আলাউদ্দিনের মনের বাসনা ছিল যুদ্ধ জয়ের স্মারক হিসেবে এই আলাই মিনারটি কুতুবের চেয়েও বেশি উঁচু করবেন। কিন্তু, মৃত্যু ও উপযুক্ত উত্তরসূরির অভাবে এই স্বপ্ন একতলাতেই আটকে যায়। এই চত্বরেই ইলতুৎমিস ও আলাউদ্দিনের সমাধি ( Tombs of Iltutamish and Allauddin ) রয়েছে।
মেহেরৌলি গ্রামে আকবরের পালিত ভাই আদম খানের আটহাতি সুন্দর সমাধিস্থল বা ভুলভুলাইয়া ( Tomb of Adam Khan or Bhool Bhulaiya, Mehrauli, New Delhi ) সত্যিই তারিফ করার মতো। শোনা যায়, সেইসময়ে লালকেল্লার সাথে Bhool Bhulaiya - র সুরঙ্গপথে যোগাযোগ ছিল। মেহেরৌলির মোগল বাগিচাটিও ( Mughal Gardens ) অতি মনোরম। এই অঞ্চলের আর এক আকর্ষণ ইলতুৎমিসের নির্মিত আউলিয়া মসজিদ ( Auliya/Aulia Masjid )। এছাড়া আছে জামালি কামালি মসজিদ ( Jamali Kamali Mosque ), শেষ মোঘল সম্রাটের জাফরমহল প্রাসাদ ( Zafar Mahal Palace )। কুতুবের ৫ কি. মি. পশ্চিমে অবস্থিত ভারতের প্রাচীনতম কবর মামুদের সমাধিসৌধ। ১২২৯ সালে হিন্দু ও মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে তৈরি এটি। ইলতুৎমিসের ছেলে মামুদ। আর রয়েছে খিরকী মসজিদ ও বেগমপুরী দরগাহ। এত সুন্দর সুন্দর ঐতিহাসিক নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও সরকারি উদাসীনতায় মেহেরৌলি আজ পুরোপুরি অবহেলিত।
তুঘলকাবাদ দুর্গ ( Tughlakabad Fort on Mehrauli to Badarpur Road, Delhi ) - কনট প্লেস থেকে ১৫ কি. মি. দূরে মেহেরৌলি বদরপুর রোডের উপর তুঘলকাবাদে গিয়াসুদ্দিনের গড়া তারই বংশের নামে নামাঙ্কিত এই ঐতিহাসিক দূর্গটি অবস্থিত। মঙ্গোলীয় আক্রমণের ভয়ে ভীত হয়ে তিনি ১০ থেকে ১৫ মিটার উঁচু ১৩ টি প্রবেশদ্বার যুক্ত এই দূর্গ তথা রাজধানীটি গড়েন। ৬.৫ কি. মি. পরিধির এই সুবিশাল, মজবুত, অনবদ্য গঠনশৈলীর এই স্থাপত্যটি অবশ্য ১৫ বছর পরেই পরিত্যক্ত হয়। সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ঐতিহাসিকরা জলাভাবকেই তুলে ধরেন। গিয়াসুদ্দিনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মহম্মদ বিন তুঘলক এই স্থানের ঠিক ১ কি. মি. দূরে একটি পাহাড়ি টিলার উপরে আদিলাবাদ দূর্গ ( Adilabad Fort ) নির্মাণ করেন। ৫ বছর পরে মহম্মদ বিন তুঘলক এখান থেকে তাঁর রাজ্যপাট দাক্ষিণাত্যের দেবগিরিতে স্থানান্তর করেন। কথিত আছে, গিয়াসুদ্দিনের ধর্মগুরু শেখ নিজামুদ্দিনের অভিশাপে তুঘলক বংশই ধ্বংস হয়। বর্তমানে তুঘলকাবাদ ও আদিলাবাদ দুটি জায়গায় ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। দূর্গের দক্ষিণ দরজার কৃত্রিম জলাশয়ের মধ্যিখানের গম্বুজের উপরে অবস্থিত গিয়াসুদ্দিন, বেগম সাহিবা ও তাঁদের পুত্র মহম্মদ বিন তুঘলকের সুন্দর সমাধি ( Tombs of Ghiyasuddin, Begum Sahiba, Muhammad Bin Tughlaq ) দেখলে আপনি অবশ্যই কল্পনায় তুঘলকি আমলে হারিয়ে যাবেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই দুটি দূর্গ খোলা থাকে। নামমাত্র প্রবেশমূল্যের বিনিময়ে ঢুকতে পারবেন। দিল্লির যন্তরমন্তর থেকে বদরপুরের বাসে অথবা মেহেরৌলি পৌঁছে তারপর এখান থেকে বিভিন্ন বাসে Tughlaqabad এবং Adilabad - এ পৌঁছতে পারবেন।
স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম ( Swaminarayan Akshardham ) - নিউ দিল্লি স্টেশন থেকে NH -24 ধরে ১০ কি. মি. দূরের নয়ডা মোড়ে পৌঁছলেই পৌঁছে যাবেন দিল্লি ভ্রমণের এই নতুন আকর্ষণীয় গন্তব্যে। যমুনা নদীর তীরে প্রায় ১০০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে ভগবান স্বামী নারায়ণের এই সুন্দর মন্দিরটি। এটি ১৪১ ফুট উঁচু, ৩১৬ ফুট চওড়া, ৩৫৬ ফুট লম্বা এই অনিন্দ্যসুন্দর স্থাপত্যটি। ৯ টি গম্বুজ ও ২০ টি চূড়া যুক্ত গোলাপি পাথরে তৈরি এই মন্দিরে সব মিলিয়ে ২০ হাজারেরও বেশি অপরূপ ভাস্কর্য মূর্তি আছে। দশটি কারুকার্যময় প্রবেশ পথ, মন্ডপ, প্রদর্শনকক্ষ, স্বামী নারায়ণের পায়ের ছাপ, মিউজিক্যাল ফোয়ারা, বাগান, জায়েন্ট স্ক্রিন থিয়েটার, বোট রাইডিং সহ নানা আয়োজন রয়েছে। সোমবার ছাড়া অন্যান্য দিন জনসাধারণের জন্য সবকিছু উন্মুক্ত থাকে। তবে সবকিছু দেখতে হয় টিকিট কেটে। আরও বিস্তারিত জানতে - Swaminarayan Akshardham, Akshardham Setu, NH - 24, Noida - 110092, Tel - 22016688/22026688. - এই ঠিকানায় যোগাযোগ করুন।
সূরজ কুন্ড ( Surajkund ) - কুতুব মিনার থেকে মাত্র ১১ কি. মি. দূরে দিল্লি-আগ্রা রোডে হরিয়ানা রাজ্যের ফরিদাবাদ জেলায় সূরজ কুন্ড অবস্থিত। কথিত আছে, দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির জলাভাব মেটাতে ১১ শতকে টোমররাজ সূরজপল এই কুন্ডটি খনন করান। এতে জল না থাকলেও পাশের সূর্য দেবতার মন্দিরটি এখনও রয়েছে। কিছুটা দক্ষিণে সিধা কুন্ড আছে। এখান থেকে ২ কি. মি. দূরে পশ্চিমে আছে অনঙ্গপুর বাঁধ ( Anangpur Dam )। বনে বনে ফুল ফুঁটে ওঠায় মে জুন মাসে চারিদিকের পরিবেশ মনোরম হয়ে ওঠে। প্রতি বছর ১লা থেকে ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এখানে বিশাল মেলা বসে। থাকার জন্য এই স্থানে এবং কাছের ফরিদাবাদ শহরে হোটেল পেয়ে যাবেন। Surajkund থেকে ২২ কি. মি. দূরে আছে আরাবল্লী গল্ফ কোর্স। এখানে থাকার জন্য রয়েছে (1) Aravalli Golf Course, Tel - (0129) 2414810.
লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির ( Sri Laxmi Narayan Mandir or Birla Temple ) - কনট সার্কাসের পশ্চিমে ১৯৩৮ সালে রাজা বলদেও বিড়লা এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এটি বিড়লা মন্দির নামেও একইরকমভাবে বিখ্যাত। এখানকার পূজিত দেবদেবীরা হলেন লক্ষ্মী, নারায়ণ, দূর্গা ও শিব। মন্দির মার্গের এই পবিত্র স্থাপত্যের কারুকার্যও বেশ সুন্দর। এর সমস্ত দেওয়ালে পৌরাণিক আখ্যান চিত্রিত রয়েছে। সর্বধর্ম সমন্বয়ও লক্ষ্য করা যায় লাল গৈরিকরঙা ও শ্বেত পাথরের তৈরি এই মন্দিরে। বৌদ্ধ ও শিখ ফ্রেস্কো, চীনা বুদ্ধিস্ট বেলও জায়গা পেয়েছে এখানে। এই চত্বরের ধর্মশালায় থাকার ব্যবস্থাও আছে। এর পূর্বদিকে বাবা খড়ক সিং মার্গে জয়পুরের মহারাজা জয় সিংহের দ্বারা ১৭২৪ সালে নির্মিত হনুমান মন্দিরটিও ( Hanuman Temple ) দেখার মতো।
কালীবাড়ি ( Kali Bari Temple, Mandir Marg, New Delhi ) - বিড়লা মন্দিরের ঠিক পাশে এই বাঙালি কালীবাড়ি মন্দিরটির এক আলাদা ঐতিহ্য ও গুরুত্ব আছে দিল্লিবাসীর কাছে। এই স্থানের আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য লোকের মুখে মুখে। এই পবিত্রস্থানে একটি গেস্ট হাউস আছে। আপনি চাইলে এখানে দুই এক দিন থাকতে পারেন।
বাহাই মন্দির ( Bahai Mandir / Lotus Temple ) - এই মন্দিরটি মূলতঃ বাহাই ধর্মাবলম্বীদের। মানুষে মানুষে হানাহানি রুখতে এবং একজাতি একপ্রাণ এই মূলমন্ত্রকে বাস্তব রূপ দিতে সুদূর পারস্য দেশে বাহাউল্লাহ নামের এক মহান ধর্মপ্রচারক এই বাহাই ধর্মের প্রবর্তন করেন। ইনি ভারতে ধর্ম প্রচার করতে আসেন ১৮৭২ সালে। ১৯৮৬ সাল নাগাদ কালকাজির বাহাপুরে হিন্দুদের কালকা দেবীর মন্দিরের পাশে এই অনিন্দ্যসুন্দর না ফোঁটা পদ্মের আকারের মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। অনেকে একে লোটাস মন্দির বলে। সুন্দর সাজানো বাগানের মধ্যের ৯টি জলাশয়ের ফোয়ারার মাঝ দিয়ে ৯টি স্বর্গীয় পথ গেছে মূল প্রার্থনা সভায়। ৭০ মি. ব্যাসের হলে ১৩০০ ভক্তের বসার ব্যবস্থা আছে। ধর্মমত নির্বিশেষে সকলের প্রবেশের অধিকার আছে। সোমবার বন্ধ থাকে। কনট প্লেস থেকে বাস যাচ্ছে এখানে। মন্দিরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটি হ'ল - http://www.bahaihouseofworship.in/
ইন্ডিয়া গেট (India Gate) - জনপথ রোডের কাছে ব্রিটিশের পক্ষে মিত্রশক্তির হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং আফগান যুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ ও ভারতীয় সেনাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি ৪২ মিটার উঁচু এই ইন্ডিয়া গেট বা ভারত তোরণ। ১৩৫১৬ জন সেনার নাম খোদিত রয়েছে ওয়ার মেমোরিয়ালে। পাশের খালে বোটিং-এর ব্যবস্থা আছে। রাতের বেলায় আলোকসজ্জায় তোরণটিকে আরও সুন্দর দেখায়। ইন্ডিয়া গেটের নীচে রয়েছে ১৯৭১-এ ভারত-পাক যুদ্ধে নিহত ভারতীয় জওয়ানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ৪ টি শাশ্বত শিখা অমর জওয়ান জ্যোতি ( Amar Jawan Jyoti )। এই চত্বরের চারপাশেই রয়েছে সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং, পার্লামেন্ট ভবন, রাষ্ট্রপতি ভবন, হায়দ্রাবাদ হাউস, বরোদা হাউস, ন্যাশনাল আর্কাইভ, জাতীয় মিউজিয়াম ইত্যাদি।
রাষ্ট্রপতি ভবন ( Rashtrapati Bhawan / President's Estate ) - ইন্ডিয়া গেটের বিপরীতে রায়সিনা পাহাড়তলিতে ৩৩০ একর জমির উপর ৩৪০ ঘর, ৩৫ লবির ৪ তলার এই বিল্ডিংটি গঠিত। কৃত্রিম পাহাড়, বাগান, ঝর্ণা, জলাশয়, মোগল উদ্যানে সজ্জিত হয়ে এই অতি বিশেষ ভবনটি মনোরম দর্শনীয় স্থান হয়েছে। ১৯২১ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে Sir Edwin Lutyens -এর নকশায় ব্রিটিশ ভাইসরয় Lord Hardinge এর বাসভবনরূপে মোগল ও পাশ্চাত্য ধারার স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ ঘটিয়ে এই ইমারতটি নির্মাণ করা হয়। H হরফের মতো তামা দিয়ে তৈরি আকাশি রঙের মূল গম্বুজটি সাঁচীর বৌদ্ধ স্তূপের আকারের, অলিন্দ হয়েছে হিন্দু মন্দিরের আদলে। রঙবেরঙের পাথর দিয়ে তৈরি দরবার হল, অশোক হল সবসময় মহামান্য রাষ্ট্রপতির নানা অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকে। মূল ফটকের পূর্বদিকে জয়পুর মহারাজার দেওয়া ১৪৫ মিটার উঁচু আকাশছোঁয়া জয়পুর থাম আছে। জাতীয় উৎসবের দিনগুলোতে পুরো ভবনচত্বরটি সুন্দর আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে। শীতে ফুলের বাহার দেখার মতো। বিভিন্ন ফলের সংগ্রহও উল্লেখ করার মতো। উড়ে বেড়ানো রঙবেরঙের প্রজাপতি বাগানের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বাগিচা রক্ষনাবেক্ষনে নিযুক্ত আছেন ৪১৮ জন মালি। উটকো পাখি তাড়ানোর জন্য আরো ৫০ জন সদা ব্যস্ত থাকেন। দেখার অনুমতি মেলে কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারির কাছ থেকে। আর বিদেশীরা এই অনুমতি পাবেন Government of India Tourist Office থেকে। সব তথ্য ঠিক থাকলে যেকোন পর্যটকই এই অনুমতি পেতে পারেন। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ এই একমাস সোমবার ছাড়া প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সমস্ত জনসাধারণ এখানে ঢুকতে পারেন। বছরের অন্যান্য সময়ে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। রাজপথ থেকে যেটুকু দেখা যায় সেটুকু দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
সংসদ ভবন ( Parliament House / Parliament of India ) - রাষ্ট্রপতি ভবনের উত্তর-পূর্বে সংসদ মার্গে অর্থাৎ Parliament Street - এ ব্রিটেনের সংসদ ভবনের অনুকরণে চক্রাকার এই সরকারি এই বিশাল ইমারতটি গঠিত হয়। ব্রিটিশের গড়া এই ১৭১মি. ব্যাসের বিল্ডিং-এ কাউন্সিল অব স্টেটস বা রাজ্যসভা এবং অ্যাসেম্বলি বা পিপলস হাউস অথবা লোকসভার সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এখান থেকে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা এবং কানাডা সরকারের দান করা ৪টি ডমিনিয়ন কলামস বা থাম এই জায়গাটির মর্য্যাদা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি শনিবার ১০.৩০টায় রাষ্ট্রপতি ভবন ও সংসদ ভবনের মাঝে জওয়ান প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। সত্যিই দেখার মতো একটি অনুষ্ঠান।
যন্তর মন্তর ( Jantar Mantar, Sansad Marg, New Delhi ) - এই প্রাচীন মানমন্দির বা অতীতের পঞ্জিকাটি তৈরি করান জয়পুরের মহারাজা সওয়াই দ্বিতীয় জয় সিং। এটি ১৭২৪ সালে সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্রের গতিবিধি বোঝা এবং সময় পরিমাপ করার জন্য। বিশাল আকৃতির প্রিন্স ডায়ালটি এক কথায় অনবদ্য। মানমন্দির হিসেবে জয়পুরের পরেই এর স্থান। সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কাছেই আছে একই সময়ে তৈরি ভৈরব মন্দির।
জাতীয় মিউজিয়াম বা জাদুঘর ( National Museum, Janpath Road ) - জনপথ রোডের উপর আর একটি দ্রষ্টব্য স্থান হলো জাতীয় মিউজিয়াম অর্থাৎ জাদুঘর। ১৯৫৫ সালে জাতীয় জওহরলাল নেহেরু এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৬৫ সাল থেকে এই সংগ্রহশালার প্রদর্শন চালু হয়। মহেঞ্জোদরো, হরপ্পা, লোথাল, কালিবঙ্গান সহ অতীত সময়ের বিভিন্ন ঐতিহাসিক সংগ্রহ জায়গা পেয়েছে এই মিউজিয়ামে। ব্রাহ্মণিকাল, জৈন ও বৌদ্ধ স্থাপত্যের নমুনা আছে এখানে। ম্যুরাল ও মিনিয়েচার জাতীয় রঙীন চিত্রকলার Collection রয়েছে। মোগল, রাজপুত, ডেকান ও পাহাড়িশৈলীর ছবির সম্ভার দেখার মতো। গীতগোবিন্দ, সুন্দর অলঙ্কৃত মহাভারত, সোনালী হরফের ভগবৎ গীতা, অষ্টকোণী ছোট কোরান, বাবরের হাতে লেখা বাবরনামার পান্ডুলিপি, জাহাঙ্গীরের হাতে লেখা দিনপঞ্জী, তিন শতকেরও বেশি রকমের বাদ্যযন্ত্র, নানা উপজাতি পোশাক, অ্যান্টিক সামগ্রী মিউজিয়ামের সম্পদ। এখানকার নতুন সংযোজন হলো প্রাচীনযুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অলঙ্কারের ক্রম পরিবর্তনের গ্যালারি। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত এই জাতীয় জাদুঘরটি খোলা থাকে।
নেহেরু মিউজিয়াম ( Nehru Memorial Museum & Library, Teen Murti Bhavan & Marg ) - রাষ্ট্রপতি ভবনের দক্ষিণে তিনমূর্তি রোডে ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ কমান্ডার ইন চিফের বাসভবন ১৯৫৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পরিণত হয়। সেই থেকে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর বাসস্থান হয় এই তিনমূর্তি ভবন। ১৯৬৪ তে তাঁর মৃত্যুর পর এখানে নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম স্থাপিত হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনের ব্যবহৃত এবং প্রধানমন্ত্রীরূপে দেশ বিদেশ থেকে পাওয়া উপহারের সংগ্রহ প্রদর্শিত হয় এখানে। তাঁর কর্মজীবনের আলোকচিত্রের ( Photography ) বিশাল সম্ভারও কম উল্লেখযোগ্য নয়। একটি লাইব্রেরিও আছে। সোমবার বাদে প্রত্যেকদিন সকাল ১০ টা থেকে ৫ টা অবধি জনসাধারণের জন্য খোলা থাকে। এই চত্বরের গোলাপ বাগানটিও খুব সুন্দর। এই বাগানে পাথরে খোদাই করা আছে ১৯৪৭ সালের ১৪ - ১৫ আগস্টের মধ্যরাতের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ জহরজ্যোতি।
ইন্দিরা স্মারক মিউজিয়াম ( Indira Gandhi Memorial Museum, 1, Safdarjung Road, Near Delhi Gymkhana Club, New Delhi ) - ১ নম্বর সফদরজং রোডের বাড়িতে ১৯৮৫ সালের ২৭শে মে ইন্দিরা গান্ধীর স্মৃতিতে একটি সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়েছে। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে অক্টোবর এক দেহরক্ষীর গুলিতে তিনি শহীদের মৃত্যুবরণ করেন। সেই নির্দিষ্ট জায়গাটিকে কাচের একটি বড়ো পাত্র দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগের মুহুর্তে বাগানের যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে এসেছিলেন, সেই পথে চেক প্রজাতন্ত্র সরকারের পাঠানো শ্রদ্ধাঞ্জলি স্বরূপ ইস্পাতের পাতে স্ফটিক দিয়ে গড়া এক বিশাল বড়ো কৃত্রিম জলপ্রবাহ স্থাপিত আছে। মোট ৩ টি ঘর জুড়ে রয়েছে তাঁর জীবদ্দশার নানা আলোকচিত্রের সাথে ওঁনার ব্যবহৃত জিনিসের প্রদর্শনী। এমনকি রক্তাক্ত বস্ত্রখানিও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে প্রদর্শিত হয়েছে। আর দেখতে পারবেন পড়ার ঘর, খাবার ঘর, দেওয়ানি আম ও দেওয়ানি খাসসহ সমস্ত অন্দরমহল। সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
ফিরোজ শাহ কোটলা ( Feroz Shah Kotla Fort, Balmiki Basti, Vikram Nagar, New Delhi ) - যারা খেলাধুলা করে বা ভালোবাসেন তাঁদের কাছে যমুনা ভেলোড্রোম এবং ইন্দ্রপ্রস্থ স্টেডিয়াম অত্যন্ত পরিচিত নাম। স্টেডিয়াম ও মথুরা রোডের মাঝে দিল্লি গেটের দক্ষিণে বাহাদুর শাহ জাফর মার্গে ১৩৫৪ সালে আলাউদ্দিনের সিরি নগরী অর্থাৎ আজকের হজ খাসে অর্ধশত বছর পরে ৫ম নগরী গড়ে তোলেন ফিরোজ শাহ তুঘলক। রিং রোড আছে ফিরোজ শাহ কোটলা ঘেঁষে। অতীতের সিরি নগরী নাম বদলে হয় ফিরোজাবাদ ( Firozabad )। গড়ে ওঠে ফিরোজ শাহ কোটলা নামের একটি দূর্গ। নতুন রাজধানীর আকর্ষণ বাড়াতে ১৩ মি. উঁচু মনোলিথিক বেলেপাথরের অশোক স্থম্ভটি ( Ashokan Pillar ) যমুনা নদীতে ভাসিয়ে আম্বালা থেকে আনিয়ে এখানে পোঁতা হয়। বিশাল সরোবরটি ( Royal Tank / Firoz Shah Kotla Baoli ) খনন করান ফিরোজ শাহ। এই সরোবরের পাড়ে লোধী স্থাপত্যশৈলীতে গড়া ফিরোজের মাদ্রাসার কেন্দ্রস্থলে ছিল ফিরোজ শাহের সমাধি এবং সুলতানা রিজিয়ার সমাধি। শহর থেকে এই ঐতিহাসিক স্থানের দূরত্ব মাত্র ৩.৫ কিলোমিটার।
পুরনো কিল্লা ( Purana Qila ) - কনট সার্কাস থেকে ৪ কি. মি. দূরে ইন্ডিয়া গেটের দক্ষিণ-পূর্বে হুমায়ুনের হাতে শুরু হয়ে শের শাহের হাতে এর নির্মাণ সমাপ্ত হয়। তখন এই দূর্গের নাম হয় শের গড়। তখন এর তিনদিকে পরিখা এবং পূর্ব দিকে যমুনা নদী ছিল। উঁচু প্রাচীরে ঘেরা দূর্গটির প্রবেশপথ তিনটি। উত্তরের তালাকি দরওয়াজা দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে শের মঞ্জিলের লাল বেলেপাথরের অষ্টভূজাকার চূড়া। লাল ধূসর রঙের ধনুকাকৃতি খিলানের শের শাহ গেটটিও সুন্দর। শের মঞ্জিলের ঠিক পিছনে দক্ষিণের হুমায়ুন দরওয়াজায় পুরাতত্ত্বের অমূল্য সম্ভার নিয়ে গড়ে ওঠা ফিল্ড মিউজিয়ামটিও কম আকর্ষণীয় নয়। এখানে খননকার্যের মাধ্যমে পাওয়া মোগল, সুলতান, রাজপুত, গুপ্ত, কুষাণ, সুঙ্গ, মৌর্য এমনকি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের নানান সংগ্রহও স্থান পেয়েছে। ইন্দো-আফগান স্থাপত্যশৈলীতে সাধারণ পাথর ও লাল বেলেপাথরের গড়া শের শাহর কিল্লা-ই-কুহানা মসজিদটিও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এর ডাইনে আছে চিড়িয়াখানা, কাছেই হজরত নিজামউদ্দিন রেল স্টেশন। ইংরেজ সেনাপতি লে হাডসন, বাহাদুর শাহের ছেলে ও অন্যান্য পুরুষ বংশধরদের গুলি করে মেরে ঝুলিয়ে দেয় ফিরোজ শাহ কোটলার দিক থেকে পুরনো কেল্লার প্রধান প্রবেশপথের দ্বিতল বড়ো দরজায়। তারপর থেকে এর নাম হয় খুনি দরওয়াজা ( Khooni Darwaza )। আর কিছুটা গিয়ে মথুরা রোডে আছে খৈরুল মঞ্জিল প্রাসাদ।
এই মথুরা রোডে পুরনো কেল্লার দক্ষিণে অবস্থিত চিড়িয়াখানা ( National Zoological Park, Mathura Road, Pragati Maidan, New Delhi )। ২০০০ রকমের জীবজন্তুর সাথে ভারতের কয়েক প্রজাতির বিরল বন্যপ্রাণীও রয়েছে এই প্রানী উদ্যানে। মণিপুর রাজ্যের স্যাঙ্গাই আছে এখানে। ভারতের প্রথম বাঘদম্পতি রাজা-রানীর বসবাস এখানে। চেনা-অচেনা নানা পাখির দেখা মিলবে এখানে। শুক্রবার চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকে।
শিল্প বানিজ্য জগতে ভারতের প্রগতির প্রদর্শনশালা হলো প্রগতি ময়দান ( Pragati Maidan )। সারা বছরই এখানে বানিজ্য মেলা বা India International Trade Fair বসে। দেশের প্রতিটি রাজ্যের শিল্পের প্রদর্শনী মন্ডপ বসেছে পাকাপাকিভাবে। ভারতীয় সংস্কৃতির উপর আলোকপাত করতে পারে এরকম মিউজিয়ামও বসেছে অনেকগুলি। যেমন, নেহেরু প্যাভিলিয়ন, ইন্দিরা প্যাভিলিয়ন, সনস অফ ইন্ডিয়া প্যাভিলিয়ন, ডিফেন্স প্যাভিলিয়ন, ভিলেজ কমপ্লেক্স, এনার্জি ইজ লাইফ, বিভিন্ন হস্তশিল্পের ২০০০০ নিদর্শন নিয়ে গড়া ক্রাফট মিউজিয়াম ( Craft Museum ) ছাড়াও আছে আরও অনেক মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা এই প্রগতি ময়দানে। প্রত্যেক দিন খোলা থাকে। এর ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থান করছে আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট ( Supreme Court )।
পুরাতন কেল্লার ৩ কি. মি. দক্ষিণে বিখ্যাত লোধি গার্ডেন ( Lodhi Garden, Lodhi Road, Delhi ) অবস্থিত। এই অতি মনোরম বাগিচায় সৈয়দ ও লোধি শাসকদের সমাধি রয়েছে। এই বিশাল ঐতিহাসিক বাগানের মাঝামাঝি আছে বড়া গম্বুজ মসজিদ ( Bada Gumbad Mosque ), কিছুটা উত্তরে কাঁচের শীষ গম্বুজ ( Shish Gumbad ), নীলাভ টালিতে ফুল ও কোরানের আয়াত আঁকা আছে। অল্প দূরে আটকোণা সিকন্দর শাহ লোধির সমাধি ( Sikandar Shah Lodhi Tomb ) আর উত্তর-পূর্বের ১৬ শতকের নির্মিত আঠপুলা সেতু দেখে নিন।
ডলস মিউজিয়াম ( Shankar's International Dolls Museum, ITO, 4, Bahadur Shah Zafar Marg, Beside Central Bank, Nehru House, New Delhi, 110002.
Link - http://www.childrensbooktrust.com ) - সারা বিশ্বের মোট ৮৫ টি দেশ থেকে ৬০০০ - এরও বেশি পুতুলের বিশাল সংগ্রহ জায়গা পেয়েছে এই শঙ্করস ইন্টারন্যাশনাল ডলস মিউজিয়ামে। এই সংগ্রহশালাটি ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানকার জাপানি পুতুলের সম্ভার সত্যিই নজর কাড়ার মতন। সংখ্যার নিরিখে ভারতীয় পুতুলের পরিমাণই বেশি। এগুলো দেখে ভারতীয় সংস্কৃতির ধরন বোঝা যায়। সোমবার বাদে প্রতিদিন ১০ টা থেকে ৫.৩০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই জাদুঘর। আর আছে B. C. Roy Children's Library ও শিশুদের প্লে কর্নার।
রাজ ঘাট ( Raj Ghat, Mahatma Gandhi Was Cremated Here, Behind Red Fort, New Delhi - 110006 ) - জনপথ থেকে ৫ কি. মি. দূরে দিল্লি গেটের কাছে যমুনা নদীর তীরে নতুন ভারতের এই চিরস্মরণীয় জাতীয় মন্দিরটি অবস্থিত। জওহরলাল নেহেরু রোড এসে শেষ হয়েছে এই রাজঘাটের উল্টোদিকে। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর শেষকৃত্য এখানেই সম্পন্ন হয় ১৯৪৮ সালের ৩১শে জানুয়ারি। স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রয়েছে বর্গাকৃতির কালো পাথরের সমাধিবেদি। এই বেদির গায়ে খোদাই করা আছে ওঁনার শেষ উক্তি "হে রাম"। প্রতিদিন দেশীবিদেশী অগনিত পর্যটক আসেন বাপুজিকে শ্রদ্ধা জানাতে। প্রতি শুক্রবার ওঁনার মৃত্যুদিনে উপাসনা করা হয় এই স্থানে। এইখানেই আছে গান্ধী দর্শন ( Gandhi Darshan ), যেখানে ভাস্কর্য ও গান্ধীর বিভিন্ন সময়ের চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। এর ঠিক পাশেই বিরাজ করছে গান্ধী স্মারক সংগ্রহালয় ( Mahatma Gandhi Museum ), যেখানে ব্যক্তি জীবনের ব্যবহার করা অনেক জিনিসের প্রদর্শনী ছাড়াও প্রতি রবিবার বিকেল ৪ ঘটিকায় হিন্দিতে ও ৫ ঘটিকায় ইংরেজিতে সর্বোদয় আন্দোলনের উপর চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। শুধু প্রতি বৃহস্পতিবার এই মিউজিয়াম বন্ধ থাকে। আর এক অবশ্য দ্রষ্টব্য স্থান হ'ল গান্ধী বলিদান স্থল ( Gandhi Smriti, Infront of National Defence College, 5, Tees January Marg Near Birla House, New Delhi, Delhi 110001 ) - এই জায়গাটি তিস জানুয়ারি রোডে ঠিক জাতীয় প্রতিরক্ষা মহাবিদ্যালয়ের সামনে এবং বিড়লা ভবনের কাছে অবস্থিত। ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি বিকেল ৫ টা বেজে ৫ মিনিট নাগাদ বিড়লা ভবনে উপাসনায় যাবার পথে এক সন্ত্রাসী আততায়ীর গুলিতে মহাত্মা গান্ধী ঠিক এখানেই শহীদ হন। তাঁরই স্মৃতিতে বিড়লা ভবনে একটি মিউজিয়াম স্থাপিত হয়েছে। এখানে পুতুল এবং চলচ্চিত্রে গান্ধীচরিত দেখে নিতে পারবেন।
শান্তিবন ( Shantivan Memorial Park ) - রাজঘাটের উত্তরে রয়েছে শান্তিবন। ১৯৬৪ সালের ২৭শে মে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর শেষকৃত্য হয় এই স্থানে। ঠিক সেই স্থানেই নেহেরুজীর সমাধিবেদি গড়ে তোলা হয়েছে। পাশেই রয়েছে ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে সঞ্জয় গান্ধীর স্মৃতিবেদি, যিনি ১৯৮০ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।
বিজয়ঘাট ( Vijay Ghat ) - এটিও রাজঘাটের কাছে অবস্থিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থান। ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর সমাধিবেদি রয়েছে এখানে। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধ জয়ের পর শান্তি সম্মেলনে গিয়ে রাশিয়ার তাসখন্দে মৃত্যু ঘটে শাস্ত্রীজীর। ১৯৬৬ সালে এখানেই ওঁনার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
শক্তিস্থল ( Shakti Sthal Memorial Park ) - রাজঘাট ও শান্তিবনের মাঝে ইন্দিরা গান্ধীর স্মৃতিতে একটি সুন্দর মন্দির এটি। এই মন্দিরটিকে ভারতের জাতীয় সংহতির প্রতীক রূপে বিবেচনা করা হয়। ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর তিনি শহীদের মৃত্যুবরণ করেন আর ৩রা নভেম্বর তাঁর মরদেহ দাহ করা হয় এই স্থানে। স্মৃতি চিহ্নস্বরূপ ধূসর-লাল রঙের একটি মনোলিথিক পাথরের সৌধ রয়েছে। কাছেই ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে ভারতের আর এক বরেণ্য প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর মরদেহ দাহ করা হয় এই বীরভূমিতে। তাঁর স্মৃতিতেও একটি বেদি ও একটি মন্দির রয়েছে। দিল্লি বেড়াতে আসা যেকোন পর্যটকের কাছে এই অঞ্চলটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। লাগোয়া পার্কের প্রতিটি গাছই কোন না কোন বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তির রোপণ করা। সান্ধ্যভ্রমণের পক্ষেও এই জায়গার পরিবেশ অতি মনোরম। এর কাছে যমুনা নদীর তীরে ভারতের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী চরণ সিং-এর স্মৃতিতে কিষাণঘাট ( Kisan Ghat ) নির্মিত হয়েছে। রাজঘাটের বিপরীতে রিং রোডে যমুনা নদীর তীরে আর এক দর্শনীয় স্থান হ'ল জনপ্রিয় দলিত নেতা ভারতের আর এক প্রধানমন্ত্রী বাবু জগজীবন রামের সমাধি মন্দির।
লালকেল্লা ( Red Fort, Netaji Subhash Marg, Lal Qila, Chandni Chowk, New Delhi, Delhi 110006 ) - আগ্রা থেকে দিল্লি আসার পর মোগল সম্রাট শাহজাহান গড়ে তোলেন লাল বেলেপাথরের মোগলি স্থাপত্যশৈলীর এই লালকেল্লা দূর্গটি। ১৬৩৮ সাল থেকে দশ বছর ধরে এর নির্মাণ কাজ চলে। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশরা এর দখল নেন। ৩০০ বছর পরে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ব্রিটিশের ইউনিয়ন জ্যাক পতাকা নামিয়ে স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তারপর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। দূর্গের গঠনশৈলী চোখে পড়ার মতো। প্রায় আটকোণা ২.৫ কি. মি. এলাকা জুড়ে থাকা এই দূর্গের চারপাশে ছিল ১১ মিটার গভীর পরিখা। যমুনার দিকে ১৮ মি. এবং শহরের দিকে ৩৩ মি. উঁচু পাঁচিল ছিল বিদ্যমান। ১৪ টি প্রবেশপথের মধ্যে ১২ টির সাথে পূর্বের পাঁচিলও বর্তমানে লোপ পেয়েছে। বর্তমানে কেবলমাত্র দুটি মূল গেট বা প্রবেশপথ আছে। একটি হ'ল দক্ষিণে দিল্লি গেট এবং অপরটি হলো পশ্চিমের লাহোর গেট। এই দিল্লি গেটের শোভা ১৯০৩ সালে লর্ড কার্জনের গড়া দুটি বিশাল হস্তিমূর্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। লাহোর গেট দিয়ে ঢুকেই আছে মিনা বাজার (Meena Bazar)। এখানে নানারকম অ্যান্টিক জিনিস কেনাবেচা চলে। লাহোরি গেটে অর্ধগোলাকার খিলান ও মার্বেল পাথরের গম্বুজ আছে। এরপরেই রয়েছে গান বাজনার নহবতখানা। এই চত্বরেই আছে আটকোণা বিশালাকার কিল্লা-ই-মুবারক ( Qila-i-Mubarak )। এর শিল্পকর্ম দেখার মতন। এই চত্বর পেরোলেই আছে দেওয়ান ই আম ( Diwan-i-Aam )। এখানেই প্রজারা সম্রাটের কাছে সমস্ত অভাব-অভিযোগ জানাতো। পরে ভাইসরয় লর্ড কার্জন এর সংস্কার করেন। দেওয়ান ই আমের পেছনে পার্সিয়ান চার বাগের ঢঙের ফোয়ারায় সুশোভিত উদ্যান ও ছয় মহলের ধ্বংসস্তুপ আছে।
এই উদ্যানের পিছনে সাদা পাথরের দেওয়ান ই খাস ( Diwan-e-khas ) আর এক বিশেষ আকর্ষণ। এটি হলো বিশেষ অতিথিদের সঙ্গে সম্রাটের মিলনক্ষেত্র। এর কারুকার্য ও স্থাপত্য এককথায় অনবদ্য। রঙবেরঙের রত্নখচিত স্তম্ভ শোভিত দেওয়ান ই খাসের জালির কাজ অতিসুন্দর। সকাল ও সন্ধ্যায় সম্রাট এখানে আসতেন। এখানকার অত্যন্ত দামি সম্পদ ছিল ময়ূর সিংহাসন। এটি নাদির শাহ লুঠ করে নিয়ে যান। এখন এই সিংহাসনটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। কাছে অবস্থিত বেগমদের রংমহলের ( Rang Mahal ) নয়নভুলানো সৌন্দর্য সত্যিই অতুলনীয়। রংমহলের একই স্থাপত্যশৈলীতে গড়া মমতাজ মহলে ( Mumtaz Mahal ) Archaeological Museum স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি শুক্রবার বন্ধ থাকে। অন্যান্য দিন সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই মহলের একদম দক্ষিণে আছে কাঁচে মোড়া মমতাজ বেগমের শিশমহল। রাজস্থানিশৈলীতে রঙীন কাঁচে আঁকা ছবি ও অমূল্য রত্নরাজিতে সজ্জিত এই শিশমহলের তুলনা খুঁজে বের করা মুশকিল। এর স্নানঘর বা হামামটিও অত্যন্ত সুন্দর।
রংমহলের উত্তর দিকে শাহজাহান নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য একটি শ্বেত পাথরের ভবন নির্মাণ করেন। এরই নাম খাসমহল ( Khas Mahal )। শোনা যায় ভিতরের প্রতিটি অংশ অনবদ্য। কিন্তু, ১৮৫৭ সালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির জন্য বর্তমানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ আছে। দেওয়ানি খাসের উত্তর-পশ্চিমে ঔরঙ্গজেবের নির্মিত শ্বেত পাথরের মক্কামুখী মোতি মসজিদ ( Moti Masjid ) কেল্লার আর এক আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য। এটি সম্রাট নিজের ও পরিবারের মহিলা সদস্যাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পাঠের জন্য তৈরি করান। এই মসজিদটি আকারে ছোট হলেও কারুকার্য দেখার মতো। এরই পিছনে আছে মোগল উদ্যান।
লাল কেল্লার আর এক বিশেষ আকর্ষণ সন্ধ্যার শব্দ ও আলোর প্রদর্শনী। একে ইংরেজিতে বলা হয় "Son-et-Lumiere Show"। হিন্দি ও ইংরেজি ধারাভাষ্যে শব্দ ও আলোর প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মোগল যুগ থেকে আরম্ভ করে দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তি পর্যন্ত ৩৩০ বছরের ইতিহাস দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হয়। এই শো-এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। মাত্র ১ ঘন্টার এই প্রদর্শনী টিকিট কেটে দেখতে হয়। তবে, বর্ষাকালে মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকে।
জামা মসজিদ ( Jama Mosque ) - লালকেল্লার বিপরীতে সপ্তদশ শতাব্দীতে ওস্তাদ খলিলের কারিগরী বিদ্যায় মোতি মসজিদের আদলে এই Masjid-i-Jahanuma গঠিত হয়। এর জন্য সম্রাট শাহজাহান ১০ কোটি টাকা খরচ করেন। ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের নয়নের মণি এই জামা বা জুম্মা মসজিদ। এর প্রবেশদ্বার চারটি। এর মাথায় ৪০ মিটার উঁচু দুটি মিনার রয়েছে। টিকিট কেটে দক্ষিণের মিনারের মাথায় উঠে পুরো লালকেল্লা ও তার চারপাশের এলাকা দেখে নিতে পারেন। এর বিশাল চত্বরে একসাথে ২৫০০০ মানুষ উপাসনা করতে পারেন। ৩৫ ধাপ সিঁড়ি উঠে এর মূল উপাসনা কক্ষ। এই কক্ষটি লাল বেলেপাথর ও সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি। এটি তৈরিতে ৫ হাজার শ্রমিকের ৫ বছর সময় লাগে। এশিয়ার বৃহত্তম এই মসজিদে হজরত মহম্মদের দাড়ির একটি চুল, পায়ের চটি, তাঁর ব্যবহৃত কোরানের একটি অধ্যায়, সমাধি সৌধের চাঁদোয়া, পাথরে পায়ের ছাপ সংরক্ষিত আছে। শাহজাহানের নিয়োজিত ইমাম পরিবার বংশ পরম্পরায় এর ইমাম পদটি অলংকৃত করে রেখেছে। নামাজের সময় অন্য ধর্মের মানুষের প্রবেশ নিষেধ। ভিতরে খালি পায়ে, মাথা ঢেকে, লুঙ্গি পরে ঢুকতে হয়। সবই এখানে ভাড়ায় পাওয়া যায়। ছবি এবং ভিডিও তুলতে গেলে আগে থেকে টিকিট কাটতে হয়।
সফদরজং টুম্ব ( Safdarjung Tomb ) - কুতুব মিনারের পথে অরবিন্দ মার্গে সফদরজং টম্ব বা টুম্ব অবস্থিত। অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলা এই হুমায়ুন সৌধের আদলের সমাধিসৌধটি নির্মাণ করেন তাঁর পিতা মির্জা মুকিম আবুল মনসুর খানের সমাধির উপর। মোগল আমলের বাগিচা চারবাগের মাঝে মোগলি স্থাপত্যশৈলীর ৪০ ফুট উঁচু শেষ সমাধিসৌধও এটি। চারপাশে পাথরখচিত চার আজান মিনার এবং সাজানো গোলাপ বাগান রয়েছে।
বুদ্ধজয়ন্তী পার্ক ( Buddha Jayanti Park, Vandemataram Marg, Central Ridge Reserve Forest, New Delhi ) - বুদ্ধদেবের নির্বাণ লাভের ২৫০০ বছর পূর্তির স্মৃতিচিহ্নরূপে বন্দেমাতরম মার্গের পাশে সেন্ট্রাল রিজ সংরক্ষিত অরন্যে গড়ে তোলা সাজানো গোছানো অতি মনোরম বাগান হলো এই বুদ্ধজয়ন্তী পার্ক। সুদূর শ্রীলঙ্কা থেকে আসল বোধিবৃক্ষের একটি শাখা এনে এখানে পোঁতা হয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির সুন্দর সুন্দর ফুল ফুঁটে থাকে এই বাগানে। স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকেরা এখানে এসে ঘুরে, বসে সময় কাটান। চড়ুইভাতি অর্থাৎ পিকনিকের আদর্শ পরিবেশ এটি।
হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া দরগাহ ( Hazrat Nizammudin Aulia Dargah, Boali Gate Rd, Nizammudin West Slum, New Delhi - 110013 ) - লোধি রোডের বিপরীতে পুলিশ স্টেশনের পাশের সরু গলিপথ দিয়ে কিছুটা গেলেই পৌঁছে যাবেন এই বিশেষ ঐতিহাসিক স্থানে। লোধি স্থাপত্যশৈলীতে সাদা পাথরের নির্মিত মাথায় গম্বুজ নিয়ে শত শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে মুসলিমদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া দরগা। প্রধান সমাধিকক্ষটি জাফরির পর্দা ও ধনুকাকৃতি খিলানে সুশোভিত। চিস্তি সম্প্রদায়ের চতুর্থ গুরু শেখ নিজামউদ্দিনের দেহ সমাধিস্থ আছেন এখানে। প্রথম সৌধটি এখন আর নেই। এখনকার সৌধটি ১৫৬২ সালে গড়া। প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যাবেলায় গুরুর সমাধির সামনে কাওয়ালি সঙ্গীতের আসর বসে। এখানে দর্শনীয় অন্যান্য জিনিসের মধ্যে আছে বিশাল একটি জলাশয়, ১৩২৫ সালে আলাউদ্দিন খিলজির গড়া বাইজেন্টাইন শৈলীর জমায়েৎখানা মসজিদ। এছাড়াও রয়েছে উর্দু ভাষার কবি মির্জা গালিব, আমির খসরু, স্থপতি ঈশা খান ও শাহজাহান কন্যা জাহানারার সমাধি। প্রতি বছর উরস পালিত হয় সাড়ম্বরে। মুসলিম সমাজের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী আজমেরে দরগা খাজা সাহেব দর্শনের পরে এই আউলিয়া দরগাহ দর্শন করতে হয়। কাছেই সুফি সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু হজরত ইনায়েৎ খানের সমাধি ( Hazrat Inayat Khan Dargah, 129 Basti Hazrat, Lodhi Rd, Nizamuddin ) অবস্থিত। এটিও এরপরে দেখে নিন।
হুমায়ুনের সমাধি ( Humayun's Tomb, Opposite Mathura Road, Nizamuddin, Delhi 110013 ) - পুরানো কেল্লার ২ কি. মি. দক্ষিণে মথুরা রোডে দ্বিতীয় মোগল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিতে তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর পর আকবরের মা হামিদা বেগম ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে ৪৩ মিটার উঁচু এই আটকোণা সুরম্য সৌধ গড়ে তোলেন। এর মাথায় ৩৮ মি. উচ্চতাবিশিষ্ট পেঁয়াজের আকারের গম্বুজ রয়েছে। পরবর্তী কালে তাঁর বিধবা সহধর্মিনী হাজী বেগম বা হামিদা বেগমও সমাধিস্থ হন এইখানেই। ফোয়ারায় সুশোভিত মোগল উদ্যান চারবাগের মধ্যে পারসীয় স্থাপত্যশৈলীতে হালকা হলদেটে লাল বেলেপাথরের সাথে নানা রঙের পাথর দিয়ে নির্মিত এই সুন্দর ঐতিহাসিক সমাধিসৌধটি সত্যিই মনোমুগ্ধকর। খিলানের জাফরির কাজ অবশ্যই তারিফের যোগ্য। তাজমহলেরও অনেক আগে তৈরি এটি। তাজসহ অনেক সুন্দর মোগল স্থাপত্যের অনুপ্রেরণা এই প্রাচীন সৌধটি। এখানেই সমাধিস্থ রয়েছেন দারাশিকো, সুজা, মুরাদ, নাতি ও পুত্রসহ শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ। পাশেই রয়েছে মদিনার আদলের একটি মসজিদ। UNESCO-এর বিশ্ব হেরিটেজ তালিকাভুক্ত ভারতীয় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। কাছেই নিজামউদ্দিন রেল স্টেশন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি খোলা থাকে। টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয়। তবে শুক্রবার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দর্শন করা যায়। এখান থেকে ৩ থেকে ৩.৫ কিলোমিটার দূরে সম্রাট অশোকের রক এডিক্টও দেখে আসতে পারেন।
দিল্লি সফরের সময় আপনার কেনাকাটা। What are The Things You Should Buy ( Marketing ) While Traveling in Delhi?
একটা কথা প্রচলিত আছে যে, সারা ভারতের এখানে ওখানে যা যা জিনিস পাওয়া যায় তার সবটুকুই আপনি কিনতে পারবেন দিল্লির দোকানপাটে। প্রতিটি দ্রব্য ভারতের অন্যান্য শহর থেকে দামেও কিছুটা সস্তা পড়ে। তবে, পর্যটকমহলে আইভরির নানান জিনিস, চাঁদনি মার্কেটের জুতো, উলের পোশাক ও ইলেকট্রনিক্স গুডস -এর যথেষ্ট বেশি পরিমাণে জনপ্রিয়তা ও চাহিদা আছে। ঝলমলে সাজে আপনার প্রতিক্ষায় রয়েছে কনট প্লেসের গভর্নমেন্ট সেলস এম্পোরিয়াম, পাশেই অবস্থিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পালিকা বাজার। জনপথের সেন্ট্রাল কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজে অথবা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন দোকানপাট থেকেও কেনাকাটা করতে পারবেন। বাবা খড়ক সিং মার্গেও এম্পোরিয়াম তৈরি করেছে আমাদের দেশের নানা রাজ্য সরকার। প্রগতি ময়দানে বিভিন্ন রাজ্য সরকার তাঁদের স্থানীয় হস্তশিল্পসামগ্রী বিক্রি ও প্রদর্শনের জন্য স্থায়ী মন্ডপ গড়েছেন। দামে কিছুটা বেশি হলেও সরকারি দোকানের জিনিসের নির্ভরযোগ্যতা অনেক বেশি। দিল্লি ট্যুরিজম খোলা আকাশের নীচে হস্তশিল্প বাজার গড়ে তুলেছে লক্ষ্মীবাঈ নগরে। দিল্লীর লাড্ডুর স্বাদ নিতে চাইলে চলে যান চাঁদনির শিশগঞ্জ গুরুদ্বারার পাশে ঘন্টেবালার দোকানে। মুসলিম সংস্কৃতির বিভিন্ন সামগ্রী কিনতে হলে যেতে হবে জামা মসজিদ এলাকার মিনাবাজারে। দরিয়াগঞ্জ বিখ্যাত নতুন ও পুরাতন বইয়ের বাজারের জন্য। যেকোনো ধরণের জিনিস এক জায়গা থেকে কিনতে হলে চলে যান নিউ দিল্লি রেল স্টেশনের পশ্চিমে কিছুটা হেঁটে পাহাড়গঞ্জ বাজারে। ঐতিহাসিক বা অ্যান্টিক বস্তু কেনা উচিত হবে ডক্টর জাকির হোসেন রোডে অবস্থিত সুন্দরনগর মার্কেট থেকে। নামমাত্র দামে সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস কিনতে হলে যান লালকেল্লার পিছনের Chori Bazar - এ। এটি প্রতি রবিবার সারাদিন খোলা থাকে। এছাড়াও অনেক ছোট বড়ো নানা বাজার রয়েছে শহর জুড়ে। সমগ্র দিল্লীতে চুল কাটার সেলুন বন্ধ থাকে প্রতি মঙ্গলবার।
কিভাবে যাবেন? How to Reach / Go?
ট্রেনে কিংবা প্লেনে করে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে সহজেই দিল্লী যাওয়া যায়। বিদেশ থেকে যদি আসতে চান তাহলে সোজা বিমানে করে চলে আসুন। জাহাজে চড়ে আসলে প্রথমে মুম্বাই অথবা চেন্নাই পৌঁছে তারপর ট্রেনে অথবা প্লেনে চেপে সোজা দিল্লী যান।
কোথায় থাকবেন? Where to Stay? Fooding & Lodging.
থাকা ও খাওয়ার জন্য সারা শহর জুড়ে বিভিন্ন মানের আর দামের হোটেল, রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তাই আগে থেকে বুকিং না করে আসলেও হবে। আগে থেকে বুকিং করে আসতে চাইলে এই পেজের উপরের দিকে দেওয়া Trusted Website Link-এর মাধ্যমে বুকিং করে আসতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please, Don't Spam.
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷