PAST HISTORY & SOME VALUABLE INFORMATIONS ABOUT TAMIL NADU:-
দক্ষিণ ভারতের আর একটি ঐতিহ্যশালী রাজ্য হ'ল তামিলনাড়ু। এই রাজ্যটি পূর্ব উপকূলের বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। এখনও এখানে দ্রাবিড়ীয় সভ্যতার নিদর্শন যথেষ্ট উজ্জ্বলভাবে রয়েছে। এই রাজ্যের অলিতে গলিতে প্রচুর সংখ্যক অপূর্ব কারুকার্যযুক্ত নতুন-পুরাতন মন্দির রয়েছে। তাই কর্ণাটকের সাথে সাথে এই রাজ্যকেও মন্দিরের দেশ বলা হয়।
দক্ষিণ ভারতের আর একটি ঐতিহ্যশালী রাজ্য হ'ল তামিলনাড়ু। এই রাজ্যটি পূর্ব উপকূলের বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। এখনও এখানে দ্রাবিড়ীয় সভ্যতার নিদর্শন যথেষ্ট উজ্জ্বলভাবে রয়েছে। এই রাজ্যের অলিতে গলিতে প্রচুর সংখ্যক অপূর্ব কারুকার্যযুক্ত নতুন-পুরাতন মন্দির রয়েছে। তাই কর্ণাটকের সাথে সাথে এই রাজ্যকেও মন্দিরের দেশ বলা হয়।
এখানকার ভাষা-সংস্কৃতি-খাদ্য-লোকাচার-শিক্ষা-সংস্কার-রক্ষনশীলতা-পরিধান-ধর্মাচারনসহ সমাজজীবনের প্রতিটি অংশই পুরোপুরি বিদেশী এবং অবশিষ্ট ভারতবর্ষের প্রভাবমুক্ত। এর রাজধানী চেন্নাই ( Capital City Chennai )। ১৯৫৬ সালের ১লা নভেম্বর এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়। তাই, এই দিনটি প্রতি বছর সারা রাজ্যজুড়ে ঘটা করে Tamil Nadu Day হিসেবে পালন করা হয়। মোট এলাকা ( Total Area ) বা আয়তন হলো ১৩০০৫৯ বর্গ কি.মি. অর্থাৎ ৫০২২০ বর্গ মাইল। জনঘনত্ব ( Population Density ) হলো প্রতি বর্গ কি.মি.তে ৫৫২ জন। প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৯৭ জন নারী ( Sex Ratio of Male and Female ) এই রাজ্যে বসবাস করেন। সাক্ষরতার হার ( Percentage of Literacy ) ৮১%। প্রধান সরকারি ভাষা ( Main Official Language is Tamil ) তামিল। অন্যান্য প্রচলিত ভাষাগুলির ( Other Languages ) কয়েকটি হলো তেলুগু, মালয়ালম ও ইংরেজি। গড় বার্ষিক আয় ( Per Head / Per Capita Income Per Annum ) ১৯৩৭৫০ টাকা। মোট জনসংখ্যা ( Total Population ) ৭২১৫০০০০। এই রাজ্যের অধিবাসীদের বলা হয় তামিলান ( Tamilan ) বা তামিলার ( Tamilar )।
মোট জেলার সংখ্যা ৩৭টি ( Total Number of Districts is 37 )। সবকয়টির বর্তমান নাম ও প্রথম বন্ধনীর মধ্যে পূর্বতন নাম দিয়ে দিলাম। যথা, (১) Ariyalur ( Perambalur ), (২) Chengalpattu ( Kanchipuram ), (৩) Chennai ( Madras ), ( ৪) Coimbatore, (৫) Cuddalore ( South Arcot District ), (৬) Dharmapuri ( Salem ), (৭) Dindigul ( Madurai ), (৮) Erode, (৯) Kallakurichi ( Viluppuram ), (১০) Kanchipuram ( Chingleput ), (১১) Kanniyakumari / Kanyakumari ( Nagercoil ), (১২) Karur ( Tiruchirappalli ), (১৩) Krishnagiri, (১৪) Madurai, (১৫) Nagapattinam ( Thanjavur ), (১৬) Namakkal, (১৭) Nilgiris ( Udhagamandalam ), (১৮) Perambalur ( Tiruchirappalli ), (১৯) Pudukkottai, (২০) Ramanathapuram, (২১) Ranipet ( Vellore ), (২২) Salem, (২৩) Sivaganga, (২৪) Tenkasi ( Tirunelveli ), (২৫) Thanjavur, (২৬) Theni ( Madurai ), (২৭) Thoothukudi, (২৮) Tiruchirappalli, (২৯) Tirunelveli, (৩০) Tirupattur, (৩১) Tiruppur, (৩২) Tiruvallur ( Chingleput ), (৩৩) Tiruvannamalai ( North Arcot ), (৩৪) Tiruvarur / Thiruvarur, (৩৫) Vellore, (৩৬) Viluppuram, (৩৭) Virudhunagar.
Tamil Nadu Government Official Online Portal-
https://www.tn.gov.in
Tamil Nadu Tourism Website-
http://www.tamilnadutourism.org
AVERAGE WEATHER OR CLIMATE. WHEN SHOULD YOU GO THERE? / BEST TIME TO VISIT OR TRAVEL THIS STATE:-
এখানে শীত প্রায় বোধই হয় না। শীতে তাপমাত্রা থাকে ২০° থেকে ৩২° সেলসিয়াসের মধ্যে। আর গ্রীষ্মে ২২° থেকে ৩৭° সেলসিয়াসের মধ্যে। সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়ায় বাতাসে আদ্রতাও বেশি থাকে। বর্ষা এখানে বছরে দুইবার আসে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর আর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। বেড়াবার উপযুক্ত মরশুম হ'ল ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস।
ALL TOTAL LIST OF 23 VERY BIG, MOST POPULAR OR FAMOUS LOCAL FAIRS & MAJOR FESTIVALS:-
(i) Pongal, (ii) Nayanjali Dance Festival, (iii) Karthigai Deepam, (iv) Jallikattu Bull Fest, (v) Music and Dance Festival Chennai, (vi) Vinayaka / Ganesha Chaturthi, (vii) Navaratri, (viii) Deepawali / Diwali, (ix) Saraswati Pooja, (x) Chitri Rai Festival, (xi) Mahamaham Utsav, (xii) Tamil New Year's Day, (xiii) Thaipusam, (xiv) Thiruvaiyaru Festival, (xv) Onam, (xvi) Puthandu / Puthuvarusham, (xvii) Holi, (xviii) Eid Al Adha, (xix) Raksha Bandhan, (xx) Krishna Janmashtami, (xxi) Muharram, (xxii) Eid Ul Fitr, (xxiii) Dussehra.
জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি ফসল কাটার পোঙ্গল উৎসব চলে চেন্নাই তথা সমগ্র দক্ষিণ ভারত জুড়ে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে মিউজিক ফেস্টিভ্যাল, পোঙ্গল, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব।
TOP PLACES TO VISIT OR MAJOR TOURIST ATTRACTIONS IN TAMIL NADU WITH PROPER TOUR PLAN ON MAIN TRAVEL DESTINATIONS AND OTHER NEAREST BEAUTIFUL SPOTS:-
চেন্নাই ( Chennai ) - দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রাজধানী শহরের একটা লম্বা ইতিহাস আছে। তেমনি এই সদাব্যস্ত নগরীর ভ্রমণস্থলেরও যথেষ্ট প্রাচুর্য রয়েছে। রাজনৈতিক পালাবদল ও সময়ের সাথে সাথে নামেরও পরিবর্তন ঘটেছে। বহুযুগ আগে এর নাম ছিল চেন্নাপাট্টিনাম। তারপরে এর নামকরণ হয় মাদ্রাজ ( Madras )। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে সর্বশেষ নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় চেন্নাই। পোশাক, আচার, ভাষাগত দিক থেকে যথেষ্ট স্বতন্ত্রতা রয়েছে এখানকার মানুষের মধ্যে। হিন্দী ভাষা এরা পছন্দ করেন না। ইংরেজি কিছুটা বুঝলেও উত্তর পাবেন তামিলে। পুরুষেরা মিলকার্ণ ভেস্তি পরেন লুঙ্গির মতো করে। খাদ্যাভাসেও নিজস্বতা আছে। স্থানীয় মানুষেরা যথেষ্ট সহজসরল, হাসিখুশি, বন্ধুবৎসল হন।
এই আধুনিক শহরটি যেন তিন ভাগে বিভক্ত। উত্তরে রয়েছে ফোর্ট সেন্ট জর্জ তথা জর্জ টাউন এবং প্যারিস কর্ণার। কায়ুম ও আডিয়ার নদীর মাঝে আছে চেন্নাই সেন্ট্রাল। আর সর্ব দক্ষিণে রয়েছে অতীতের পর্তুগিজ উপনিবেশ মৈলাপুর।
ব্যস্ততম বানিজ্যিক এলাকা হলো আন্না সলাই ( Anna Salai )। এখানেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পর্যটন দপ্তর WB Youth Hostel, 18 Wallajah Road-এ ট্যুরিজম অফিস খুলেছে। এছাড়াও রয়েছে দেশি-বিদেশি অনেক ব্যাঙ্কের শাখা অফিস, এয়ারলাইন্স, বিদেশি দূতাবাস, হোটেল, দোকানপাট, শপিংমল মাউন্ট রোড ও পুরো আন্নাসলাই এলাকা জুড়ে।
আপনার কেনাকাটা। What are The Things You Should Buy ( Marketing ) While Traveling in Chennai?
তা স্বত্ত্বেও কেনাকাটা করার জন্য নেতাজি সুভাষ রোড বা প্যারিস কর্ণারের আকর্ষণ অনস্বীকার্য। বস্ত্রশিল্পে এই শহরের সুখ্যাতি সমগ্র বিশ্ব জুড়ে। রকমারি সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্ক শাড়ি, সিল্কের লুঙ্গির সম্ভার দেখলে কেনার লোভ সামলাতে পারবেন না। পটারি, হ্যান্ডিক্রাফটস, চর্মজাত ফ্যান্সি জিনিসেরও যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। সেন্ট্রাল রেল রিজার্ভেশনের নিকটস্থ Moore Market-এও আসতে পারেন কেনাকাটা করতে। বিদেশি দ্রব্যের জন্য বিখ্যাত বার্মা বাজার। এইসব জায়গা থেকে আপনার পছন্দসই জিনিস ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কিনে নিয়ে যেতে পারেন। চেন্নাইয়ের সমস্ত দোকান রবিবার বাদে রোজ খোলা থাকে।
শিল্প ( Industry ) - একে শিল্পনগরীও বলা চলে। চলচ্চিত্র শিল্পে এই শহর যথেষ্ট উন্নত। মুম্বাইয়ের পরেই চেন্নাইয়ের স্থান। গাড়ি তৈরি, রেলের বগি তৈরির কারখানা ছাড়াও নানারকম শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে শহর ও শহরতলি জুড়ে। পর্যটন শিল্পেও দিনদিন উন্নতি করছে এই শহর তথা এই রাজ্য।
বঙ্গোপসাগরের পাড়ে হাইকোর্টের দক্ষিণে ফোর্ট সেন্ট জর্জ ( Fort St. George ) অবস্থিত। ২০ ফুট উচ্চতার দেওয়াল পরিবৃত দূর্গটির এলাকার মোট আয়তন ৩ বর্গ মাইল। মূল প্রবেশপথ তিনটি। এই সুপ্রাচীন দূর্গটিকে অনেকে জর্জ টাউনও বলে থাকেন। ফোর্টের উত্তরে রয়েছে ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীতে গড়ে ওঠা হোয়াইট টাউন। ভিতরে একটি মিউজিয়াম ( Fort Museum ) আছে। রবার্ট ক্লাইভ ও কর্ণেল ওয়েলেসলির বাসগৃহ দুটি দেখার মতন। মিউজিয়ামের দক্ষিণে ক্লাইভের বাসগৃহে আজ পেতে অ্যাকাউন্টস অফিস হয়েছে। এখানে অবস্থিত ক্লাইভ কর্ণারে কিছু প্রাচীন জিনিসের সংগ্রহ আছে, তা অবশ্যই দেখে নেবেন।
ফোর্ট মিউজিয়ামটি ( Fort St. George Museum ) হলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ৩০০ বছর ভারত শাসনের স্মৃতি সংগ্রহশালা। এখানে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির ব্যবহৃত তরবারি, আগ্নেয়াস্ত্র, শিরস্ত্রাণ, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুদ্রা, সাহেবদের ব্যবহৃত কাপড়, ঐতিহাসিক দলিল, ক্লাইভের চিঠিপত্র, পান্ডুলিপি ও অন্যান্য জিনিসের বিপুল সম্ভার রয়েছে। মিউজিয়ামটি সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত সর্ব সাধারণের জন্য খোলা থাকে। টিকিটের মূল্য যৎসামান্য। দ্বিতীয় তলে ব্যাঙ্কোয়েট হলে সেন্ট জর্জের গভর্নর তথা ব্রিটিশ শাসনকালের VIP-দের ছবির আর্ট গ্যালারি বসেছে। সেন্ট জর্জ দূর্গেই রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন ও সচিবালয়ের বৈঠক বসে। সরু মাথার স্তম্ভশ্রেণী ও পশ্চিম গ্যালারির কাঠের কার্ভিং অতুলনীয়। নিকটেই কায়ূম নদী শহর পরিক্রমা শেষ করে সমুদ্রে মিশেছে।
মিউজিয়ামের দক্ষিণে অবস্থিত সেন্ট মেরি গীর্জাটিও ( CSI St. Mary's Church ) দেখে নিন। ব্রিটিশদের তৈরি করা প্রাচ্যের প্রথম প্রটেস্টান্ট চার্চ এটি। এটি ১৬৭৮ থেকে ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত হয়। অতি সাধারণ আঙ্গিকের হলেও গঠন অত্যন্ত মজবুত। দেওয়াল ১.৩ মিটার চওড়া। ছাদের কামানের গোলার আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা আছে। দ্বিতীয় রানী এলিজাবেথ এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ছবি প্রদর্শিত হয়েছে এখানে। শোনা যায়, চার্চের লাস্ট সাপার ছবিটি রাফেলের তুলির টান পেয়ে তাঁরই এক ছাত্রের হাতে সম্পূর্ণতা পায়। এই ছবিটি পুদুচেরি থেকে লুটের মাল হিসেবে আসে। রবার্ট ক্লাইভ ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে মার্গারেটকে এই চার্চেই বিবাহ করেন। এই চত্বরেই প্রাচীন একটি সমাধিস্থল রয়েছে। দূর্গের উত্তরে আগের পুরানো শহর অর্থাৎ ব্রিটিশদের ব্ল্যাক টাউনে দোকানপাটে ঠাসা আর্মেনিয়ান স্ট্রিট। এটি মূলতঃ আর্মেনিয়ানদের পাড়া। এই রাস্তাতেই আছে ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত Armenian Church Holy Virgin Mary. পুরো এলাকা পায়ে হেঁটে ঘুরে ঘুরে দেখে নিন আর্মেনিয়ান কলোনি, চার্চ ও কবরস্থান। আর্মেনিয়ান গীর্জার উত্তরে রয়েছে চেন্নাইয়ের প্রথম ক্যাথলিক ক্যাথেড্রাল চার্চ St. Mary of the Angels. Poonamallee High Road-এ আর একটি প্রাচীন গীর্জা রয়েছে। এর নাম St. Andrew's Kirk Cathedral Church. এটি লন্ডনের সেন্ট মার্টিনের আদলে তৈরি।
দূর্গের উত্তরের জর্জ টাউনের বর্তমান নাম প্যারিস কর্ণার। এই এলাকায় রয়েছে ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হওয়া টাঁকশাল অর্থাৎ মিন্ট। মিন্ট স্ট্রিটের চারপাশে রয়েছে বাসস্ট্যান্ড, বাণিজ্যিক সংস্থার অফিস, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক, দোকান বাজার, চার্চ, হিন্দু মন্দির, জৈন মন্দির, মসজিদ ইত্যাদি। টাঁকশালের একটি অংশে বর্তমানে সরকারি ছাপাখানা তৈরি হয়েছে। বামদিকে রাজাজি সলাই-এ রয়েছে GPO. জর্জ টাউন বা প্যারিস কর্ণারের দক্ষিণে বেলেপাথরের চূড়ার মাথায় আছে হাইকোর্ট ভবন ( Madras High Court, High Ct Rd, Parry's Corner, George Town, Chennai, Tamil Nadu - 600108 )। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে ইন্দো-সেরাসেনিক শৈলীতে তৈরি হওয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ন্যায়ালয় এই মাদ্রাজ হাইকোর্ট। সাজসজ্জা, রঙীন কাঁচ, কাঠের আসবাবপত্র, অলঙ্কৃত সিলিং-এ যথেষ্ট অভিনবত্ব রয়েছে। আপনি চাইলে রেজিস্ট্রারের অনুমতি নিয়ে সোমবার থেকে শনিবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দর্শন করতে পারেন। হাইকোর্টের পশ্চিমে জোড়া মিনারের মাথায় ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত আইন মহাবিদ্যালয় ( Law College ) আছে।
হাইকোর্টের পাশে ১৮৯৪ সালে তৈরি ১৬০ ফুট উঁচু লাইট হাউজ ( Old Light House ) রয়েছে। উপর থেকে পুরাতন শহর এবং সাগরের ৩০ কি. মি. দূরত্ব পর্যন্ত দেখা যায়। সপ্তাহের প্রত্যেকদিনই কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এর মাথায় ওঠা যায়। হাইকোর্টের দক্ষিণ-পূর্বে ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত ডোরিক স্থাপত্যশৈলীর স্তম্ভের মতো দেখতে এসপ্ল্যানেড লাইট হাউজ ( Esplanade Light House ) আছে। আকাশবাণী ভবনের বিপরীতে মেরিনা সি বিচে ১৯৭৭ সালে তৈরি হওয়া একটি আধুনিক বাতিঘর রয়েছে। তার নাম Chennai Marina Lighthouse. উচ্চতা ১৫০ ফুট। মাথায় ওঠার জন্য একটি লিফটও আছে। দুপুর ২ টা থেকে বিকেল ৪ টার মধ্যে উপরে উঠে চারপাশের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
প্রত্যেক পর্যটকের কাছে এই শহরের সবচেয়ে সেরা পর্যটন আকর্ষণ হলো বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিনা সমুদ্র সৈকত ( Marina Sea Beach )। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বীচ হিসেবে বিখ্যাত। বালুকাবেলার রঙ হলুদ। এর সুখ্যাতি সান্ধ্যভ্রমণের জন্য। জলে হাঙর আছে, তাই এখানে সরাসরি সমুদ্রস্নান নিরাপদ নয়। তাই স্থানীয় প্রশাসন অ্যাকোয়ারিয়ামের ডানদিকে স্নানার্থীদের জন্য একটি সুইমিংপুল ( Swimming Pool ) তৈরি করে দিয়েছেন। এর আকর্ষণও কম নয়। এখানেই স্নান সেরে নেওয়া উচিত হবে। Aquarium-টি সোমবার থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা অবধি খোলা থাকে। রবিবার ও অন্যান্য ছুটির দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
অ্যাকোয়ারিয়ামের কাছে ১৮৪২ সালে নির্মিত আইস হাউস ( Ice House ) রয়েছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বকালে সুদূর আমেরিকার গ্রেট লেক থেকে বরফ এনে রাখা হতো এই বাড়িতে। পরবর্তীকালে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ই থেকে ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যবর্তী সময়ে স্বামী বিবেকানন্দ এই বাড়িতে থাকেন। সেই কারণেই এই ভবনে তাঁর স্মৃতিতে বিবেকানন্দ ইল্লম বা মিউজিয়াম ( Vivekananda Illam or Museum ) স্থাপনা করা হয়েছে। এই মিউজিয়ামে ফটোগ্রাফিতে স্বামীজীর জীবন তুলে ধরা হয়। বুধবার ছাড়া অন্যান্য দিন খোলা থাকে।
মেরিনা বীচের উত্তরে নেপিয়ার ব্রিজে ওঠার আগে রয়েছে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ভবন ( University of Madras )। এই বিল্ডিং-এর ঘড়িঘর দূর থেকে চিনতে সাহায্য করে।
ইউনিভার্সিটির খুবই কাছে আর একটি দর্শনীয় স্থান হলো সেনেট হাউস ( Senate House, Navalar Nagar, Chepauk, Triplicane, Chennai, Tamil Nadu - 600005 )। হিন্দু-জৈন-মুসলিম স্থাপত্যের সাথে ভিক্টোরিয়ান ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে তৈরি হয়েছে এই গম্বুজওয়ালা ঐতিহাসিক নির্মাণটি। ১৬০০ আসনের সেনেট হলে খোদাই করা সিলিং, রঙীন কাঁচের জানালা সত্যি অতুলনীয়।
সেনেট হাউসের পাশে রয়েছে ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে কর্ণাটকের নবাব Wallajah Muhammad Ali-র তৈরি করা ইন্দো-সেরাসেনিক শৈলীর চীপক প্রাসাদ ( Historical Chepauk Palace )। দেখলে অভিভূত হয়ে যাবেন। এই প্রাসাদে অসংখ্য খিলান ও সরু সরু মিনার রয়েছে। এখানে একসময় কর্ণাটকের নবাবের দরবার বসতো। বর্তমানে তামিলনাড়ু রাজ্য সরকারের পূর্ত দপ্তর বসছে।
এর ঠিক পিছনেই রয়েছে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত ঐতিহাসিক চীপক স্টেডিয়াম ( Historical Chepauk Stadium )। এটি এখন বর্তমানে এম. এ. চিদাম্বরম ক্রিকেট স্টেডিয়াম ( M. A. Chidambaram Cricket Stadium ) হিসেবে পরিচিত। আর একটু দক্ষিণ-পূর্বে আসলে পৌঁছে যাবেন ইন্দো-সেরাসেনিক শৈলীতে গড়ে তোলা ঐতিহাসিক বিল্ডিং প্রেসিডেন্সি কলেজ ( Presidency College )। নেপিয়ার ব্রিজ পেরিয়ে সেন্ট জর্জের আগে রয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈন্যদের স্মৃতিতে ভিক্টরি ওয়ার মেমোরিয়াল ( Victory War Memorial )।
মেরিনা বীচের উত্তরে রয়েছে একটি বিখ্যাত সুন্দর বাগিচা, যার নাম আন্না স্কোয়ার পার্ক ( Anna Square Park )। এখানে রয়েছে DMK রাজনৈতিক দলের স্রষ্টা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী C.N. Annadurai এর সমাধিস্থল ও স্মৃতিমন্দির ( CN Annadurai Memorial )। প্রবেশ দ্বারে দুই হাতির শুঁড়ের খিলান আছে। এই পার্কেই আর এক মুখ্যমন্ত্রী তথা তামিল চলচ্চিত্রের প্রাক্তন সুপারস্টার M. G. Ramachandran -এর স্মৃতিমন্দির ( Memorial ) আছে। তাই এই আন্না স্কোয়ারের আকর্ষণও পর্যটকদের কাছে কম নয়। শুধুমাত্র রবিবার বিকেলের সানডে মার্কেটটিও ( Sunday Market ) কম আকর্ষণীয় নয়। আরও দক্ষিণে গেলে Broken Bridge -এর পরেই Edward Elliot's Beach নামের একটি সুন্দর সৈকত রয়েছে।
মেরিনার পশ্চিমে ত্রিপলিকেন রোডে একটি সুন্দর অতি প্রাচীন মন্দির রয়েছে, যার নাম পার্থসারথিস্বামী মন্দির ( Arulmigu Sri Parthasarathyswamy Temple, Narayana Krishnaraja Puram, Triplicane )। অষ্টম শতকে পহ্লবরাজাদের তৈরি করা এই কৃষ্ণ মন্দিরের কার্ভিং-এর কাজ ও স্থাপত্যশৈলী অতুলনীয়। এই মন্দিরে বিষ্ণুর পাঁচ অবতারের মূর্তি আছে। বিষ্ণুপত্নী ভেদাবল্লী আম্মান ও পরিজন দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। ষোড়শ শতকে বিজয়নগর রাজাদের সময়েও একবার সংস্কার হয় এই বিশাল দেবস্থানের। সকাল ৬ টা থেকে বেলা ১২ টা ও বিকেল ৪ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত পূণ্যার্থীদের জন্য খোলা থাকে। এর পিছনে একটি দর্শনীয় স্থান হলো কবি সুব্রহ্মণ্য ভারতীর বাড়িতে তৈরি হওয়া ইলাম বা মিউজিয়াম ( Tamil Poet Subrahmanya Bharati Illam / Museum )। এই অঞ্চলেই আছে কর্ণাটকের নবাবদের নির্মিত ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দের ঐতিহাসিক ওল্লাজাহ বড়ো মসজিদ ( Walajah Big Mosque, Triplicane High Rd, SVM Nagar, Ellis Puram, Padupakkam )।
মৈলাপুরে পহ্লবরাজাদের নির্মিত দ্রাবিড়ীয় শৈলীর সুপ্রাচীন কপালেশ্বর শিব মন্দির ( Kapaleeshwar Temple Chariot, Mylapore, Vadakku, Madaveethi, Chennai ) আর একটি দর্শনীয় স্থান। শোনা যায় বহু পূর্বে এই স্থানে প্রচুর ময়ূর ছিল। কিন্তু, বর্তমানে আর ময়ূরের দর্শন মেলে না। পুরাণ অনুসারে, দেবী পার্বতী ময়ূরের রূপ ধারণ করে মুক্তিলাভের জন্য শিবের তপস্যা করেন। সেই কাহিনী মন্দির গাত্রে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও আরো অনেক পৌরাণিক কাহিনী স্টুকো শৈলীতে মূর্ত হয়েছে। ১৯০৬ সালের ৩৭ মিটার উঁচু দ্রাবিড়ীয় গোপুরমের সূক্ষ্ম কারুকার্যও খুবই দৃষ্টিনন্দন। এই মন্দিরটি দুইবার তৈরি করা হয়। ১৫০৭-এ পর্তুগিজদের হাতে ১২৫০-এর প্রথম মন্দিরটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়। এখন যে মন্দিরটি দেখতে পাবেন সেটি ১৬ শতকে বিজয়নগরের রাজা নির্মাণ করেন। শোনা যায়, এই স্থানটি এতটাই জাগ্রত যে এখানকার দেবতার আশীর্বাদে মৃত মানুষও জীবিত হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের পুশম উৎসবে ব্রোঞ্জের শিব-পার্বতীকে নৌকাবিহার করানো হয়। মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ ১১ দিন ব্যাপী Arupathumoovar Festival অর্থাৎ শিব-পার্বতীর বিবাহ উৎসব ধুমধামের সাথে পালন করা হয়। একই মাসে Therotgavan বা কার ফেস্টিভ্যাল পালিত হয়। বসন্তোৎসবে অনেক দূর থেকে দলে দলে পূণ্যার্থীরা এখানে আসেন। মৈলাপুরের নবরাত্রিরও যথেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে। এই মন্দিরের দরজা ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে বারোটা ও বিকাল চারটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা অবধি খোলা থাকে। এর পাশে অবস্থিত প্রাচীন পুনাই বৃক্ষের নিচে ময়ূররূপী পার্বতী দেবীর মন্দিরটি অবশ্যই দর্শন করবেন। সামান্য পশ্চিমে এগোলেই পৌঁছে যাবেন পর্তুগিজ নাবিকদের নির্মিত Our Lady of Light Luz Church-এ। সামুদ্রিক ঝড়ে পথভ্রষ্ট পর্তুগিজ নাবিকদের একটি আলোর সঙ্কেত তীরে পৌঁছতে সাহায্য করে। পরবর্তীতে সেই আলোর সঙ্কেতের স্থানেই তাঁরা এই পবিত্র গীর্জাটি নির্মাণ করেন।
এর ঠিক পাশেই রয়েছে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত প্রথম শতকের তামিল কবি তিরুভাল্লুভারের ( Tamil Poet Thiruvalluvar ) স্মৃতি মন্দির ভাল্লুভারকোট্টাম ( Valluvarkottam Memorial )। তামিলদের কাছে মহাপবিত্র শ্লোকধর্মী Thirukkural গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। থিরুভারুর রথের অনুকরণে পাথর দিয়ে গড়া ৩৯ মিটার উঁচু দ্বিতল এই মন্দিরের নীচে ২২০ ফুট বাই ১০০ ফুটের অডিটোরিয়ামটি এশিয়ার মধ্য বৃহত্তম। এই মহাকবির ১৩৩০ টি শ্লোক বা Kurals খোদিত হয়েছে গ্রানাইট পাথরের উপরে। যৎসামান্য দর্শনী দিয়ে প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন।
যীশুর মৃত্যুর পর তাঁর ১২ জন শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম সেন্ট টমাস ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে ৫২ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসেন। ৭২ খ্রিস্টাব্দে টমাসের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। বিমানবন্দরের পথে Parangimalai-এ ৯২ মিটার উঁচু সেন্ট টমাস মাউন্টে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। ১৩৪ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠে এই সমাধিস্থলে পৌঁছতে হয়। পরবর্তীকালে পর্তুগিজরা তাঁর সমাধির উপরে Our Lady of Expectation Church গঠন করেন। এই গীর্জা তৈরির সময়ে সেন্ট টমাসের নানা স্মারক বা ব্যবহৃত জিনিস মেলে। অনুমতি নিয়ে এই সমস্ত স্মারক সম্ভার দর্শন করতে পারেন। শোনা যায়, ১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দে পাথরের ক্রস থেকে নাকি রক্তক্ষরণ হয়েছিল।
মৈলাপুরে একটি সুন্দর ঐতিহাসিক গীর্জা আছে যার নাম স্যানথোম ক্যাথেড্রাল ব্যাসিলিকা চার্চ ( Santhome Cathedral Basilica Church, 38, Santhome High Rd, Dummingkuppam, Mylapore )। পর্তুগিজরা সেন্ট টমাসকে স্যানথোম বলে সম্বোধন করতেন। অনেক কিংবদন্তি ঘটনায় সমৃদ্ধ ১৮০ ফুট উঁচু মোচাকার চূড়ার এই গীর্জাটি নিওগথিক শৈলীতে তৈরি। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে এটি ব্যাসিলিকার মর্যাদা পায়। এই গীর্জায় একটি মিউজিয়াম রয়েছে। সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে এসে এই Santhome Museum-টি দেখে নিতে পারেন।
এই ব্যাসিলিকা চার্চ থেকে ৩ কি. মি. দূরে আদিয়ার নদীর উপর স্থিত সইদাপেট ব্রিজের ( Saidapet Adyar River Bridge ) দক্ষিণে অবস্থিত দি লিটল মাউন্ট ( The Little Mount )। সেন্ট টমাস ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে এখানকার গুহাতেই আশ্রয় নেন। এই লিটল মাউন্টে তিনি প্রায় ৮ বছর ছিলেন। গুহার সুরঙ্গপথে তাঁর পায়ের ছাপ এখনও রয়ে গেছে। পর্তুগিজরা ১৫৫১ খ্রিস্টাব্দে Our Lady of Health Church তৈরি করেন। আর এক যিশু শিষ্য সেন্ট লিউকের আঁকা যীশু জননী কুমারী মেরীর ছবিও এখানে রয়েছে। ক্রশটিরও অলৌকিক মাহাত্ম্য রয়েছে। আজও প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের ১৮ তারিখ এই ক্রসটি সিক্ত হয়ে ওঠে। চার্চের ঠিক পিছনে রয়েছে একটি পবিত্র ঝর্ণা। এই ঝর্ণার পবিত্র জল বিক্রিও হচ্ছে।
এগমোর রেল স্টেশনের ( Egmore Railway Station ) দক্ষিণে Pantheon Road-এ হেনরি আরউইনের নকশায় মোগলি শৈলীতে বেলেপাথরে তৈরি আর্ট গ্যালারির বাড়িটি ( National Art Gallery Museum ) অত্যন্ত সুন্দর। পূর্বে এটি চেন্নাই শহরের উন্নতিকল্পে গঠন করা Pantheon Committee-এর সদস্যদের বাসস্থান ছিল। মাঝখানে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল রূপে গড়ে উঠলেও আবার ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে আর্ট গ্যালারিতে পরিনত হয়। এখানে বিভিন্ন ধরনের চিত্রকলার বিশাল প্রদর্শনী রয়েছে। এই সংগ্রহশালায় বা মিউজিয়ামে এলে মোগলি, রাজপুত, দক্ষিণী ছবির সাথে মডার্ন আর্টের সুন্দর সমাবেশ দেখতে পাবেন। প্রতি শুক্রবার ও অন্যান্য ছুটির দিন বাদে বাদবাকি প্রত্যেকদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই অসাধারণ শিল্প মন্দিরটি খোলা থাকে।
এই আর্ট গ্যালারি চত্বরে একটি মিউজিয়ামও রয়েছে। এটির প্রতিষ্ঠা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে। এখানে দক্ষিণ ভারতীয় ব্রোঞ্জশিল্পের অমূল্য ভান্ডার প্রদর্শিত হয়েছে। বিশেষ করে অর্ধনারীশ্বর ও নটরাজ মূর্তিতে অভিনবত্ব আছে। প্রস্তর, লৌহযুগের সাথে অমরাবতীতে পাওয়া বৌদ্ধস্তূপের বিভিন্ন ভাস্কর্য মিউজিয়ামের মর্যাদা আরো বাড়িয়েছে। চুনাপাথরের দেওয়ালগুলিতে নানা বৌদ্ধ আখ্যানও মূর্ত হয়েছে। আবার পহ্লব, চোল, পান্ড্য, হোয়সল ও বিজয়নগর রাজাদের সময়ের স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের সংগ্রহও রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। ইথনলজিক্যাল গ্যালারিতে ( Ethnological Gallery ) উপজাতীয় সমাজজীবনে ব্যবহৃত অনেককিছুই প্রদর্শিত হয়েছে। মিউজিয়ামে বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রও রাখা আছে। কাউন্টার থেকে ব্রোঞ্জের নটরাজ মূর্তিও কিনতে পারেন। খাবার ক্যান্টিনও রয়েছে। মিউজিয়ামের থিয়েটারে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও দেখে নিতে পারেন। শুক্রবার ও অন্যান্য ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত এই সংগ্রহশালা খোলা থাকে।
এছাড়া, (1) Arcot-Mudali Street, T. Nagar-এ M. G. R. Museum. (2) 46 Tirumalai Street, T. Nagar-এ অবস্থিত Kamraj Museum. (3) E. V. K. Sampat Salai-এর Periyar E. V. R. Museum. (4) Annanagar এর Prime Times বা মজা-আনন্দে ভরা ইনডোর অ্যামিউজমেন্ট পার্কটিও ( Indoor Amusement Park ) চেন্নাই সফরে বেড়িয়ে নেওয়া উচিত হবে।
শহরের কোট্টরপুরমের অত্যাধুনিক ২৩৬ আসনের বি. এম. বিড়লা প্ল্যানেটরিয়ম ( B.M. Birla Planetarium, Gandhi Mandapam Rd, Duraisamy Nagar, Kotturpuram, Chennai, Tamil Nadu - 600025 ) পরিবারের সাথে গিয়ে দেখে আসুন। শিশুদের জন্য হাফ টিকিট কাটতে হয়। এখানে ৩৬০° থিয়েটারে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে মহাকাশে ভার্চুয়াল ট্যুর করে বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করুন। সত্যিই এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হবে। প্রত্যেক সোমবার বন্ধ থাকে। প্রদর্শনীর সময় ইংরেজি ও তামিল ভাষায় ধারাভাষ্য চলতে থাকে।
এর কাছেই রয়েছে পেরিয়ার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কেন্দ্র ( Periyar Science and Technology Centre )। এখানে বেলা দশটা থেকে পৌনে ছয়টার মধ্যে সামান্য দর্শনীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক নানা কিছুর প্রদর্শনী দেখে নিতে পারেন।
সেন্ট্রাল রেল স্টেশন থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে ওয়ার মেমোরিয়ালের বিপরীতে ফেয়ারল্যান্ড কমপ্লেক্সে INTACH ও TTDC -এর যৌথ উদ্যোগে প্রতি সন্ধ্যায় পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য মিনি থিয়েটারে অর্থাৎ সিট্টারঙ্গমে ( Sittarangam Mini Theatre ) তামিল শিল্প-সংস্কৃতির আসর বসানো হচ্ছে। যদি দেখতে আগ্রহী হন তাহলে Cultural Coordinator, INTACH, 855 Anna Salai, Chennai-2 -এই ঠিকানায় যোগাযোগ করবেন।
শহরের খুব কাছে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে আর একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যার নাম রেড হিলস হ্রদ বা পুঝাল লেক ( Red Hills / Puzhal Lake )। এখান থেকেই শহরের পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনোরম। পিকনিকের আদর্শ পরিবেশ। বাসে করেই এখানে যেতে পারবেন।
পেরাম্বুরে গিয়ে Perambur Loco Works এবং Integral Coach Factory-তে কিভাবে Railway-র হালকা ইস্পাতের বগি তৈরি হয় তা দেখে আসুন। এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম এই বগি কারখানা। তবে শুধুমাত্র মঙ্গলবার ও শুক্রবার গেলেই এখানে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। ট্রেনে বা বাসে করে গিয়ে দেখে আসতে পারবেন।
শহরের দক্ষিণ প্রান্তে গিনডি রেল স্টেশনের ( Guindy Rail Station ) কাছে আছে গিনডি ন্যাশনাল পার্ক ( Guindy National Park )। ৫৯৫ একর জমির উপর গড়ে তোলা একটি অতি আকর্ষণীয় Tourist Spot এটি। এখানে যদি আসেন তাহলে ব্ল্যাক বাক, স্পটেড ডিয়ার, সিভিট ক্যাট, চিতা, শিয়াল, বেজি, বানর, লুপ্তপ্রায় কালো হরিণ বা অ্যান্টিলোপেরও দর্শন পাবেন। অ্যাডিয়ার রোডে রাজভবন লাগোয়া এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে গিনডি মৃগ উদ্যান ( Guindy Deer Park )। এই পার্কে বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ রয়েছে। বিশেষ অনুমতি নিয়ে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে এখানে প্রবেশ করতে পারবেন।
এছাড়া রয়েছে ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, চিলড্রেনস পার্ক বা মিনি জ্যু। গান্ধীজি, রাজাজি, কামরাজ - এই তিন রাষ্ট্রনায়কদের স্মৃতিতে গড়ে তোলা তিন স্মরণ-মন্দির অনেকে দেখতে যায়। জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে গান্ধীমন্ডপ ( Gandhi Mandap )। এখানে নিয়মিত উপাসনা করা হয়। ভারতের প্রথম ভারতীয় গভর্নর জেনারেল রাজা গোপালাচারীর স্মৃতিমন্দির ( C. Rajagopalachari Memorial ) রাজাজি হল ( Rajaji Hall ) ভবনটিতে ব্রিটিশ স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। গ্রিক দেশীয় মন্দিরের ধাঁচে করিন্থিয়ান শৈলীতে তৈরি ব্যাঙ্কোয়েট হলে রাজাজি স্মৃতিমন্দির হয়েছে। এটি ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট ক্লাইভের ছেলে এডওয়ার্ড ক্লাইভ এই ভবনটি নির্মাণ করেন। টিপুর সাথে যুদ্ধ জয়ের স্মারক হিসেবে এটি তৈরি করান। অতীতে এটি ব্রিটিশ গভর্ণরদের বাসভবন ছিল। দেওয়ালে টাঙানো সেকালের প্রতিকৃতিগুলি সেই সময়ের কথা মনে পরিয়ে দেয়। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর স্মারকরূপে ভক্তবতচলম ( Bakthavatchalam ) অবশ্যই দেখে নিন। মঙ্গলবার বন্ধ থাকে। অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এর কাছেই রয়েছে রেসকোর্স ( Race Course )।
রেসকোর্সের কাছেই আছে শিশুদের মনোরঞ্জনের আর একটি অতুলনীয় স্থান সর্প উদ্যান ( Chennai Snake Park )। Romulas Whittaker নামের একজন আমেরিকান ব্যক্তি গড়ে তুলেছেন এই সর্প উদ্যান। খোলা গর্তে ২০০-রও অধিক প্রজাতির ৫০০-এরও বেশি সাপ রয়েছে এখানে। শুধুমাত্র চোখের দেখাই নয়, হাতেও স্পর্শ করতে পারবেন এদের। ছবি ও ভিডিও তুলতেও কোনরূপ নিষেধাজ্ঞা নেই। কেবলমাত্র সাপই নয়, এখানে কুমির, অ্যালিগেটর, টিকটিকি, গিরগিটি, কচ্ছপ ইত্যাদি আরও নানা সরিসৃপ প্রানী রয়েছে। প্রতি ঘন্টায় ডেমনস্ট্রেশন চলে এখানে। এছাড়া নানারকম গবেষণাও চলছে সাপের বিষ নিয়ে। এই জায়গার পর্যটন আকর্ষণও দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এই চত্বর সাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। ট্রেন, বাস বা গাড়িতে করে শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে সহজেই এখানে পৌঁছতে পারবেন।
রাশিয়ান মেয়ে Madame Petrovna Blavatsky এবং আমেরিকান Colonel Olcott - এই দুই জনে মিলে ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকায় থিওসফিক্যাল সোসাইটি গঠন করেন। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে সোসাইটি অফ অল হেলথের ( Society of all Health ) মূল দপ্তর আমেরিকা থেকে চেন্নাইয়ের অ্যাডিয়ারে ( The Theosophical Society, Arunachalapuram, Adyar ) স্থানান্তরিত হয়। ১৮৭৬-এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে পীড়িত জনতাকে কাজ দিতে এলফিনস্টোন ব্রিজ পেরিয়ে অ্যাডিয়ার নদীর দক্ষিণ পাড়ে ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ২৭০ একর জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে সোসাইটির এই কর্মশালা। এই মহান কাজে Annie Besant-এরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এই সোসাইটির মূল উদ্দেশ্য হলো সত্যের সন্ধান করা ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলা। এদের কর্মকান্ডের ব্যাপ্তি বিশাল। ধ্যানকক্ষে ( Meditation Hall ) রয়েছে সকল ধর্মের প্রতীক চিহ্ন। লাইব্রেরীতে রয়েছে ১৮ হাজার অমূল্য পুঁথি ও বইয়ের বিপুল সংগ্রহ। এই বিশাল এলাকায় আছে গার্ডেন অফ রিমেমব্রান্স, অলকট মেমোরিয়াল স্কুল, মিউজিয়াম, অতিথিশালা ইত্যাদি। ১৯৯০ সালের ঝড়ে মূল গাছটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ৪০০০০ বর্গফুট ব্যাপ্ত ৪০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন বটবৃক্ষের স্নিগ্ধ শীতল ছায়ায় কিছুক্ষণ জিরিয়েও নিতে পারেন। রবিবার ও ছুটির দিনগুলোতে লাইব্রেরি ও মূল চত্বর বন্ধ থাকে। অন্যান্য দিনে এই পুরো এলাকা সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১২ টা এবং দুপুর ২ টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত দর্শন করতে পারবেন। লাইব্রেরী সর্বসাধারণের জন্য সকাল ৮ টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের আগমনে অ্যাডিয়ারের আকর্ষণ আরও বেড়ে যায়। অলিভ রিডলে কচ্ছপেরাও সমুদ্র থেকে এসে Adyar নদীর মোহনায় ডিম পাড়ে। ৩ কি. মি. পশ্চিমে অবস্থিত ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ হওয়া গভর্নমেন্ট হাউস এখন রাজভবন ( Rajbhavan ) হয়েছে।
নাচ-গান যারা ভালোবাসেন তাঁদের জন্য একটি সুখবর আছে। দক্ষিণ শহরতলিতে থিওসফিক্যাল সোসাইটির ঠিক পাশেই রয়েছে Rukmini Devi Arundale দ্বারা প্রায় ১০০ একর জমির উপর ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত কলাক্ষেত্র ( Kalakshetra Foundation, Kalakshetra Road, Thiruvanmiyur )। এটি হলো নৃত্যগীত শিক্ষার একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। ১৬০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী এখানে পাঠরত। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্ণাটক মিউজিক, কুরাতি যাযাবরদের কুরুভাঞ্জি লোকনৃত্য অনুসরণে সৃষ্ট ব্যালেধর্মী ভারতনাট্যম ছাড়াও নানা ধ্রুপদী নৃত্যকলা শেখানো হয়। সামান্য দর্শনীর বিনিময়ে এখানে প্রবেশ করতে পারবেন। আর একটু দক্ষিণে গিয়ে দেখে আসুন ১১ শতকে নির্মিত কারুকার্যময় শিব মন্দির। অ্যাডিয়ারের আর এক আকর্ষণীয় স্থান হলো MGR Film City.
এখান থেকে কিছুটা দূরে সাগরপারে রয়েছে চোলামন্ডল শিল্পীগ্রাম ( Cholamandal Artists Village )। এই বিশেষ গ্রামটি ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে গড়ে তোলা হয়। এখানে শুধুমাত্র ভাস্কর ও শিল্পীরা বসবাস করেন। এই গ্রামে এসে নানাবিধ স্থাপত্য, বাটিক, টেরাকোটা ও গ্রাফিক শিল্পীদের হাতের কাজ দেখতে ও কিনতে পারবেন। মুক্তমঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়।
শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ভান্ডালুরে ( Vandaloor ) ৫১০ হেক্টর জমির উপর মনোরঞ্জনের ( Amusement ) নানা উপকরণ নিয়ে গড়ে উঠেছে আন্না জুলজিকাল পার্ক ( Arignar Anna Zoological Park )। এখানে আসলে দেখতে পাবেন নানা জীবজন্তুর সাথে পাখি, স্টাফড করে রাখা প্রাক্-ঐতিহাসিক জন্তু জানোয়ার, লায়ন ও বাইসন সাফারি, নিশাচর জীবজন্তুর ঘর, অ্যাকোয়ারিয়াম, ন্যাচারাল মিউজিয়াম ইত্যাদি। পুরো চত্বর রোপওয়ে, মনোরেল, ব্যাটারি চালিত গাড়ি ও সাইকেলে চড়ে ঘুরতে পারবেন। মঙ্গলবার বন্ধ। অন্যান্য দিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। যৎসামান্য মূল্যের টিকিট কেটে এখানে প্রবেশ করতে হয়।
চেন্নাই থেকে NH-4-এ পশ্চিমমুখী ৩০ কিলোমিটার গিয়ে বামহাতি পথে ১১ শতকের বৈষ্ণব দার্শনিক রামানুজের জন্মস্থান হলো শ্রীপেরামবুদুর ( Thiruperumputhur )। এটি একটি বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র। আবার NH-45 ধরে চিঙ্গেলপুটের ১০ কি. মি. আগে সিনগাপেরা মালকয়েল থেকেও ডানহাতি পথ ধরে পৌঁছে যেতে পারেন ৩ কি. মি. দূরের শ্রীপেরামপুদুরে ( Sriperumbudur )। জাতীয় সড়কে ইন্দিরা গান্ধীর স্মারক মূর্তি তৈরি হয়েছে। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে মে রাত দশটা বিশ মিনিটে এই এলাকাতেই আততায়ীর হাতে শহীদ হয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। শ্রদ্ধেয় রাজীব গান্ধীর স্মরণে একটি স্ট্যাচুও নির্মিত হয়েছে। থাকা-খাওয়ার জন্য এখানে বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল-রেস্টুরেন্ট আছে।
খাবার-দাবার ( Popular Foods ) - এখানে নিরামিষ খাবারের প্রাধান্যই বেশি। ব্রেকফাস্ট অর্থাৎ টিফিনের মেনু হলো ইডলি, দোসা, বড়া ইত্যাদি। দুপুর ও রাতের প্রধান খাবার হলো Saapad বা ভাতের সাথে রসম-সম্বরম, Puliodharai বা মশলা দেওয়া তেঁতুল ভাত, Akkaara Vadisal অর্থাৎ দুধ-মিষ্টি ও চাল দিয়ে তৈরি মিষ্টি খাবার। কিন্তু, আপনি চাইলে চেন্নাই ও তার আশেপাশের হোটেল-রেস্তোরাঁয় মোগলাই, তন্দুরি, চীনা, কন্টিনেন্টাল সবরকমেরই খাদ্য পেয়ে যাবেন। ভারতের অন্যান্য জায়গার তুলনায় দামও কম। বাঙালি খাবার খেতে হলে চলে যান "শ্রীঅন্নপূর্ণা অফ ক্যালকাটা হোটেলে"। এটি এগমোরে পুলিশ কমিশনার অফিসের পাশে ২৩ প্যানথিয়ন রোডে অবস্থিত। এখানে অনেক রকম বাঙালি খাবারের পাশাপাশি সকালে লুচি, পরোটা, মাখন-পাউরুটি, ওমলেট আর বিকেলে রোল, শিঙাড়াও পেয়ে যাবেন। এই শহরে আরও দুটি বাঙালি হোটেলের নাম হলো "হোটেল বাংলা" ও জেমস স্ট্রিটের "আপনজন রেস্তোরাঁ"। আন্নাসলাইয়ের যমুনা রেস্টুরেন্টের সুখ্যাতি আছে মশলা দোসা ও লস্যির জন্য। হোটেল ইম্পিরিয়ালের ওমর খৈয়াম রেস্টুরেন্টের সুনাম রয়েছে আমিষ আহারের জন্য। ভালো চাইনিজ খাবার খেতে হলে যেতে হবে চোলা শেরাটনের উল্টো দিকে ৭৪ ক্যাথেড্রাল রোডে অবস্থিত "চায়না টাউনে", হ্যারিসন হোটেলের "ডাইনেস্টি"-তে, আনন্দ থিয়েটারের পাশে ৬৮৩ আন্নাসলাইয়ের "সাউদার্ন চাইনিজ" বা কাছের Changking-এ। এই এলাকার ট্যুরিস্ট অফিসের কাছে অবস্থিত "আভিন" বিখ্যাত নানারকম সুস্বাদু ঠান্ডা পানীয়ের কারণে। ভালো মানের স্যান্ডউইচ ও লস্যি পেয়ে যাবেন ট্রিপলিকেন হাই রোডের "মহারাজা রেস্টুরেন্টে"। পাশের অন্নপূর্ণা হোটেলের গঙ্গা রেস্টুরেন্টের সুখ্যাতি নিরামিষ টিফিনের কারণে।
কনডাকটেড ট্যুর প্রোগ্রাম ( Conducted Package Tour Programmes ) - TTDC ( Tamilnadu Tourism Development Corporation ) উদ্যোগ নিয়ে ইচ্ছুক পর্যটকদের তামিলনাড়ু ও সমস্ত দক্ষিণ ভারত ঘোরাবার বন্দোবস্ত করে থাকে। এদের বিভিন্ন ধরনের ট্যুর প্যাকেজ রয়েছে। আপনি আপনার পছন্দসই ও সময় অনুযায়ী এক বা একাধিক প্যাকেজের টিকিট কাটতে পারেন। নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা ও থাকা-খাওয়া সমেত চুক্তি অনুসারে সমস্ত কিছুর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে থাকে TTDC. এই ব্যাপারে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কলকাতা থেকেই আগে থাকতে প্যাকেজ ট্যুর প্রোগ্রাম বুকিং করে যেতে পারেন। Kolkata Booking Contact Address:- TTDC, G-26 Dakshinapan Shopping Complex, 2 Gariahat Road ( South ), Kol - 68. Tel. - 24237432.
কোথায় থাকবেন? Where to Stay?
চেন্নাইয়ে বিভিন্ন মানের ও বিভিন্ন দামের হোটেল রয়েছে। হোটেলগুলো গড়ে উঠেছে তিনটি জোন্ হিসেবে। সেন্ট্রাল এলাকার আন্নাসলাই ও তার আশেপাশে গড়ে উঠেছে উঁচু মানের তারকাখচিত হোটেলশ্রেনী। পুনামেল হাই রোড ধরে এগমোর রেলস্টেশনকে ঘিরে আছে মধ্যম মানের হোটেলরাজি। ওয়ালট্যাক্স রোড থেকে ব্রিটিশের জর্জ টাউন অর্থাৎ পুরাতন শহরে রয়েছে সাধারণ মানের হোটেলগুলো। এছাড়া, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিভিন্ন ব্যাঙ্কসহ সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের হলিডে হোম রয়েছে। আগে থাকতে বুকিং করে আসাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।
কিভাবে যাবেন? How to go / Reach?
সড়কপথে বাসের মাধ্যমে এই রাজ্যসহ দক্ষিণ ভারতের যেকোন প্রান্তের সাথে ভালো যোগাযোগ রয়েছে। ভারতের যেকোন বড়ো শহর থেকে রেলপথে সহজে এখানে আসা যায়। বিমানপথে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শহরের সাথে উত্তম যোগাযোগ আছে। জাহাজে করে আন্দামান, মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে এই শহরের সামুদ্রিক বন্দরে আসা যায়।
মোট জেলার সংখ্যা ৩৭টি ( Total Number of Districts is 37 )। সবকয়টির বর্তমান নাম ও প্রথম বন্ধনীর মধ্যে পূর্বতন নাম দিয়ে দিলাম। যথা, (১) Ariyalur ( Perambalur ), (২) Chengalpattu ( Kanchipuram ), (৩) Chennai ( Madras ), ( ৪) Coimbatore, (৫) Cuddalore ( South Arcot District ), (৬) Dharmapuri ( Salem ), (৭) Dindigul ( Madurai ), (৮) Erode, (৯) Kallakurichi ( Viluppuram ), (১০) Kanchipuram ( Chingleput ), (১১) Kanniyakumari / Kanyakumari ( Nagercoil ), (১২) Karur ( Tiruchirappalli ), (১৩) Krishnagiri, (১৪) Madurai, (১৫) Nagapattinam ( Thanjavur ), (১৬) Namakkal, (১৭) Nilgiris ( Udhagamandalam ), (১৮) Perambalur ( Tiruchirappalli ), (১৯) Pudukkottai, (২০) Ramanathapuram, (২১) Ranipet ( Vellore ), (২২) Salem, (২৩) Sivaganga, (২৪) Tenkasi ( Tirunelveli ), (২৫) Thanjavur, (২৬) Theni ( Madurai ), (২৭) Thoothukudi, (২৮) Tiruchirappalli, (২৯) Tirunelveli, (৩০) Tirupattur, (৩১) Tiruppur, (৩২) Tiruvallur ( Chingleput ), (৩৩) Tiruvannamalai ( North Arcot ), (৩৪) Tiruvarur / Thiruvarur, (৩৫) Vellore, (৩৬) Viluppuram, (৩৭) Virudhunagar.
Tamil Nadu Government Official Online Portal-
https://www.tn.gov.in
Tamil Nadu Tourism Website-
http://www.tamilnadutourism.org
AVERAGE WEATHER OR CLIMATE. WHEN SHOULD YOU GO THERE? / BEST TIME TO VISIT OR TRAVEL THIS STATE:-
এখানে শীত প্রায় বোধই হয় না। শীতে তাপমাত্রা থাকে ২০° থেকে ৩২° সেলসিয়াসের মধ্যে। আর গ্রীষ্মে ২২° থেকে ৩৭° সেলসিয়াসের মধ্যে। সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়ায় বাতাসে আদ্রতাও বেশি থাকে। বর্ষা এখানে বছরে দুইবার আসে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর আর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। বেড়াবার উপযুক্ত মরশুম হ'ল ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস।
ALL TOTAL LIST OF 23 VERY BIG, MOST POPULAR OR FAMOUS LOCAL FAIRS & MAJOR FESTIVALS:-
(i) Pongal, (ii) Nayanjali Dance Festival, (iii) Karthigai Deepam, (iv) Jallikattu Bull Fest, (v) Music and Dance Festival Chennai, (vi) Vinayaka / Ganesha Chaturthi, (vii) Navaratri, (viii) Deepawali / Diwali, (ix) Saraswati Pooja, (x) Chitri Rai Festival, (xi) Mahamaham Utsav, (xii) Tamil New Year's Day, (xiii) Thaipusam, (xiv) Thiruvaiyaru Festival, (xv) Onam, (xvi) Puthandu / Puthuvarusham, (xvii) Holi, (xviii) Eid Al Adha, (xix) Raksha Bandhan, (xx) Krishna Janmashtami, (xxi) Muharram, (xxii) Eid Ul Fitr, (xxiii) Dussehra.
জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি ফসল কাটার পোঙ্গল উৎসব চলে চেন্নাই তথা সমগ্র দক্ষিণ ভারত জুড়ে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে মিউজিক ফেস্টিভ্যাল, পোঙ্গল, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব।
এই রাজ্যের যেকোন জায়গায় যাওয়া আসা, থাকা খাওয়ার ব্যাপারে আগে থাকতে অনলাইন বুকিং-এর জন্য নীচের বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে এক বা একাধিক ব্যবহার করতে পারেন। [ FOR ONLINE BOOKING OF FOODS / FLIGHTS, TRAIN / RAILWAY RESERVATION, HOUSES ON RENT/ FLATS RENTAL / LODGES / RESORTS / HOMESTAYS / TENTS / HOTELS ROOMS IN ANY PLACE WITH DISCOUNT, CHEAP AIR TICKETS, BUS BOOKING, CAR HIRE ]:-
1. https://www.trivago.in
2. https://www.goibibo.com
3. https://www.makemytrip.com
4. https://www.yatra.com
5. https://www.cleartrip.com
6. https://www.tripadvisor.in
7. https://www.ixigo.com
8. https://www.zomato.com
2. https://www.goibibo.com
3. https://www.makemytrip.com
4. https://www.yatra.com
5. https://www.cleartrip.com
6. https://www.tripadvisor.in
7. https://www.ixigo.com
8. https://www.zomato.com
TOP PLACES TO VISIT OR MAJOR TOURIST ATTRACTIONS IN TAMIL NADU WITH PROPER TOUR PLAN ON MAIN TRAVEL DESTINATIONS AND OTHER NEAREST BEAUTIFUL SPOTS:-
চেন্নাই ( Chennai ) - দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রাজধানী শহরের একটা লম্বা ইতিহাস আছে। তেমনি এই সদাব্যস্ত নগরীর ভ্রমণস্থলেরও যথেষ্ট প্রাচুর্য রয়েছে। রাজনৈতিক পালাবদল ও সময়ের সাথে সাথে নামেরও পরিবর্তন ঘটেছে। বহুযুগ আগে এর নাম ছিল চেন্নাপাট্টিনাম। তারপরে এর নামকরণ হয় মাদ্রাজ ( Madras )। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে সর্বশেষ নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় চেন্নাই। পোশাক, আচার, ভাষাগত দিক থেকে যথেষ্ট স্বতন্ত্রতা রয়েছে এখানকার মানুষের মধ্যে। হিন্দী ভাষা এরা পছন্দ করেন না। ইংরেজি কিছুটা বুঝলেও উত্তর পাবেন তামিলে। পুরুষেরা মিলকার্ণ ভেস্তি পরেন লুঙ্গির মতো করে। খাদ্যাভাসেও নিজস্বতা আছে। স্থানীয় মানুষেরা যথেষ্ট সহজসরল, হাসিখুশি, বন্ধুবৎসল হন।
এই আধুনিক শহরটি যেন তিন ভাগে বিভক্ত। উত্তরে রয়েছে ফোর্ট সেন্ট জর্জ তথা জর্জ টাউন এবং প্যারিস কর্ণার। কায়ুম ও আডিয়ার নদীর মাঝে আছে চেন্নাই সেন্ট্রাল। আর সর্ব দক্ষিণে রয়েছে অতীতের পর্তুগিজ উপনিবেশ মৈলাপুর।
ব্যস্ততম বানিজ্যিক এলাকা হলো আন্না সলাই ( Anna Salai )। এখানেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পর্যটন দপ্তর WB Youth Hostel, 18 Wallajah Road-এ ট্যুরিজম অফিস খুলেছে। এছাড়াও রয়েছে দেশি-বিদেশি অনেক ব্যাঙ্কের শাখা অফিস, এয়ারলাইন্স, বিদেশি দূতাবাস, হোটেল, দোকানপাট, শপিংমল মাউন্ট রোড ও পুরো আন্নাসলাই এলাকা জুড়ে।
আপনার কেনাকাটা। What are The Things You Should Buy ( Marketing ) While Traveling in Chennai?
তা স্বত্ত্বেও কেনাকাটা করার জন্য নেতাজি সুভাষ রোড বা প্যারিস কর্ণারের আকর্ষণ অনস্বীকার্য। বস্ত্রশিল্পে এই শহরের সুখ্যাতি সমগ্র বিশ্ব জুড়ে। রকমারি সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্ক শাড়ি, সিল্কের লুঙ্গির সম্ভার দেখলে কেনার লোভ সামলাতে পারবেন না। পটারি, হ্যান্ডিক্রাফটস, চর্মজাত ফ্যান্সি জিনিসেরও যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। সেন্ট্রাল রেল রিজার্ভেশনের নিকটস্থ Moore Market-এও আসতে পারেন কেনাকাটা করতে। বিদেশি দ্রব্যের জন্য বিখ্যাত বার্মা বাজার। এইসব জায়গা থেকে আপনার পছন্দসই জিনিস ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কিনে নিয়ে যেতে পারেন। চেন্নাইয়ের সমস্ত দোকান রবিবার বাদে রোজ খোলা থাকে।
শিল্প ( Industry ) - একে শিল্পনগরীও বলা চলে। চলচ্চিত্র শিল্পে এই শহর যথেষ্ট উন্নত। মুম্বাইয়ের পরেই চেন্নাইয়ের স্থান। গাড়ি তৈরি, রেলের বগি তৈরির কারখানা ছাড়াও নানারকম শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে শহর ও শহরতলি জুড়ে। পর্যটন শিল্পেও দিনদিন উন্নতি করছে এই শহর তথা এই রাজ্য।
বঙ্গোপসাগরের পাড়ে হাইকোর্টের দক্ষিণে ফোর্ট সেন্ট জর্জ ( Fort St. George ) অবস্থিত। ২০ ফুট উচ্চতার দেওয়াল পরিবৃত দূর্গটির এলাকার মোট আয়তন ৩ বর্গ মাইল। মূল প্রবেশপথ তিনটি। এই সুপ্রাচীন দূর্গটিকে অনেকে জর্জ টাউনও বলে থাকেন। ফোর্টের উত্তরে রয়েছে ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীতে গড়ে ওঠা হোয়াইট টাউন। ভিতরে একটি মিউজিয়াম ( Fort Museum ) আছে। রবার্ট ক্লাইভ ও কর্ণেল ওয়েলেসলির বাসগৃহ দুটি দেখার মতন। মিউজিয়ামের দক্ষিণে ক্লাইভের বাসগৃহে আজ পেতে অ্যাকাউন্টস অফিস হয়েছে। এখানে অবস্থিত ক্লাইভ কর্ণারে কিছু প্রাচীন জিনিসের সংগ্রহ আছে, তা অবশ্যই দেখে নেবেন।
ফোর্ট মিউজিয়ামটি ( Fort St. George Museum ) হলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ৩০০ বছর ভারত শাসনের স্মৃতি সংগ্রহশালা। এখানে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির ব্যবহৃত তরবারি, আগ্নেয়াস্ত্র, শিরস্ত্রাণ, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুদ্রা, সাহেবদের ব্যবহৃত কাপড়, ঐতিহাসিক দলিল, ক্লাইভের চিঠিপত্র, পান্ডুলিপি ও অন্যান্য জিনিসের বিপুল সম্ভার রয়েছে। মিউজিয়ামটি সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত সর্ব সাধারণের জন্য খোলা থাকে। টিকিটের মূল্য যৎসামান্য। দ্বিতীয় তলে ব্যাঙ্কোয়েট হলে সেন্ট জর্জের গভর্নর তথা ব্রিটিশ শাসনকালের VIP-দের ছবির আর্ট গ্যালারি বসেছে। সেন্ট জর্জ দূর্গেই রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন ও সচিবালয়ের বৈঠক বসে। সরু মাথার স্তম্ভশ্রেণী ও পশ্চিম গ্যালারির কাঠের কার্ভিং অতুলনীয়। নিকটেই কায়ূম নদী শহর পরিক্রমা শেষ করে সমুদ্রে মিশেছে।
মিউজিয়ামের দক্ষিণে অবস্থিত সেন্ট মেরি গীর্জাটিও ( CSI St. Mary's Church ) দেখে নিন। ব্রিটিশদের তৈরি করা প্রাচ্যের প্রথম প্রটেস্টান্ট চার্চ এটি। এটি ১৬৭৮ থেকে ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত হয়। অতি সাধারণ আঙ্গিকের হলেও গঠন অত্যন্ত মজবুত। দেওয়াল ১.৩ মিটার চওড়া। ছাদের কামানের গোলার আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা আছে। দ্বিতীয় রানী এলিজাবেথ এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ছবি প্রদর্শিত হয়েছে এখানে। শোনা যায়, চার্চের লাস্ট সাপার ছবিটি রাফেলের তুলির টান পেয়ে তাঁরই এক ছাত্রের হাতে সম্পূর্ণতা পায়। এই ছবিটি পুদুচেরি থেকে লুটের মাল হিসেবে আসে। রবার্ট ক্লাইভ ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে মার্গারেটকে এই চার্চেই বিবাহ করেন। এই চত্বরেই প্রাচীন একটি সমাধিস্থল রয়েছে। দূর্গের উত্তরে আগের পুরানো শহর অর্থাৎ ব্রিটিশদের ব্ল্যাক টাউনে দোকানপাটে ঠাসা আর্মেনিয়ান স্ট্রিট। এটি মূলতঃ আর্মেনিয়ানদের পাড়া। এই রাস্তাতেই আছে ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত Armenian Church Holy Virgin Mary. পুরো এলাকা পায়ে হেঁটে ঘুরে ঘুরে দেখে নিন আর্মেনিয়ান কলোনি, চার্চ ও কবরস্থান। আর্মেনিয়ান গীর্জার উত্তরে রয়েছে চেন্নাইয়ের প্রথম ক্যাথলিক ক্যাথেড্রাল চার্চ St. Mary of the Angels. Poonamallee High Road-এ আর একটি প্রাচীন গীর্জা রয়েছে। এর নাম St. Andrew's Kirk Cathedral Church. এটি লন্ডনের সেন্ট মার্টিনের আদলে তৈরি।
দূর্গের উত্তরের জর্জ টাউনের বর্তমান নাম প্যারিস কর্ণার। এই এলাকায় রয়েছে ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হওয়া টাঁকশাল অর্থাৎ মিন্ট। মিন্ট স্ট্রিটের চারপাশে রয়েছে বাসস্ট্যান্ড, বাণিজ্যিক সংস্থার অফিস, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক, দোকান বাজার, চার্চ, হিন্দু মন্দির, জৈন মন্দির, মসজিদ ইত্যাদি। টাঁকশালের একটি অংশে বর্তমানে সরকারি ছাপাখানা তৈরি হয়েছে। বামদিকে রাজাজি সলাই-এ রয়েছে GPO. জর্জ টাউন বা প্যারিস কর্ণারের দক্ষিণে বেলেপাথরের চূড়ার মাথায় আছে হাইকোর্ট ভবন ( Madras High Court, High Ct Rd, Parry's Corner, George Town, Chennai, Tamil Nadu - 600108 )। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে ইন্দো-সেরাসেনিক শৈলীতে তৈরি হওয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ন্যায়ালয় এই মাদ্রাজ হাইকোর্ট। সাজসজ্জা, রঙীন কাঁচ, কাঠের আসবাবপত্র, অলঙ্কৃত সিলিং-এ যথেষ্ট অভিনবত্ব রয়েছে। আপনি চাইলে রেজিস্ট্রারের অনুমতি নিয়ে সোমবার থেকে শনিবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দর্শন করতে পারেন। হাইকোর্টের পশ্চিমে জোড়া মিনারের মাথায় ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত আইন মহাবিদ্যালয় ( Law College ) আছে।
হাইকোর্টের পাশে ১৮৯৪ সালে তৈরি ১৬০ ফুট উঁচু লাইট হাউজ ( Old Light House ) রয়েছে। উপর থেকে পুরাতন শহর এবং সাগরের ৩০ কি. মি. দূরত্ব পর্যন্ত দেখা যায়। সপ্তাহের প্রত্যেকদিনই কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এর মাথায় ওঠা যায়। হাইকোর্টের দক্ষিণ-পূর্বে ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত ডোরিক স্থাপত্যশৈলীর স্তম্ভের মতো দেখতে এসপ্ল্যানেড লাইট হাউজ ( Esplanade Light House ) আছে। আকাশবাণী ভবনের বিপরীতে মেরিনা সি বিচে ১৯৭৭ সালে তৈরি হওয়া একটি আধুনিক বাতিঘর রয়েছে। তার নাম Chennai Marina Lighthouse. উচ্চতা ১৫০ ফুট। মাথায় ওঠার জন্য একটি লিফটও আছে। দুপুর ২ টা থেকে বিকেল ৪ টার মধ্যে উপরে উঠে চারপাশের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
প্রত্যেক পর্যটকের কাছে এই শহরের সবচেয়ে সেরা পর্যটন আকর্ষণ হলো বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিনা সমুদ্র সৈকত ( Marina Sea Beach )। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বীচ হিসেবে বিখ্যাত। বালুকাবেলার রঙ হলুদ। এর সুখ্যাতি সান্ধ্যভ্রমণের জন্য। জলে হাঙর আছে, তাই এখানে সরাসরি সমুদ্রস্নান নিরাপদ নয়। তাই স্থানীয় প্রশাসন অ্যাকোয়ারিয়ামের ডানদিকে স্নানার্থীদের জন্য একটি সুইমিংপুল ( Swimming Pool ) তৈরি করে দিয়েছেন। এর আকর্ষণও কম নয়। এখানেই স্নান সেরে নেওয়া উচিত হবে। Aquarium-টি সোমবার থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা অবধি খোলা থাকে। রবিবার ও অন্যান্য ছুটির দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
অ্যাকোয়ারিয়ামের কাছে ১৮৪২ সালে নির্মিত আইস হাউস ( Ice House ) রয়েছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বকালে সুদূর আমেরিকার গ্রেট লেক থেকে বরফ এনে রাখা হতো এই বাড়িতে। পরবর্তীকালে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ই থেকে ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যবর্তী সময়ে স্বামী বিবেকানন্দ এই বাড়িতে থাকেন। সেই কারণেই এই ভবনে তাঁর স্মৃতিতে বিবেকানন্দ ইল্লম বা মিউজিয়াম ( Vivekananda Illam or Museum ) স্থাপনা করা হয়েছে। এই মিউজিয়ামে ফটোগ্রাফিতে স্বামীজীর জীবন তুলে ধরা হয়। বুধবার ছাড়া অন্যান্য দিন খোলা থাকে।
মেরিনা বীচের উত্তরে নেপিয়ার ব্রিজে ওঠার আগে রয়েছে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ভবন ( University of Madras )। এই বিল্ডিং-এর ঘড়িঘর দূর থেকে চিনতে সাহায্য করে।
ইউনিভার্সিটির খুবই কাছে আর একটি দর্শনীয় স্থান হলো সেনেট হাউস ( Senate House, Navalar Nagar, Chepauk, Triplicane, Chennai, Tamil Nadu - 600005 )। হিন্দু-জৈন-মুসলিম স্থাপত্যের সাথে ভিক্টোরিয়ান ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে তৈরি হয়েছে এই গম্বুজওয়ালা ঐতিহাসিক নির্মাণটি। ১৬০০ আসনের সেনেট হলে খোদাই করা সিলিং, রঙীন কাঁচের জানালা সত্যি অতুলনীয়।
সেনেট হাউসের পাশে রয়েছে ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে কর্ণাটকের নবাব Wallajah Muhammad Ali-র তৈরি করা ইন্দো-সেরাসেনিক শৈলীর চীপক প্রাসাদ ( Historical Chepauk Palace )। দেখলে অভিভূত হয়ে যাবেন। এই প্রাসাদে অসংখ্য খিলান ও সরু সরু মিনার রয়েছে। এখানে একসময় কর্ণাটকের নবাবের দরবার বসতো। বর্তমানে তামিলনাড়ু রাজ্য সরকারের পূর্ত দপ্তর বসছে।
এর ঠিক পিছনেই রয়েছে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত ঐতিহাসিক চীপক স্টেডিয়াম ( Historical Chepauk Stadium )। এটি এখন বর্তমানে এম. এ. চিদাম্বরম ক্রিকেট স্টেডিয়াম ( M. A. Chidambaram Cricket Stadium ) হিসেবে পরিচিত। আর একটু দক্ষিণ-পূর্বে আসলে পৌঁছে যাবেন ইন্দো-সেরাসেনিক শৈলীতে গড়ে তোলা ঐতিহাসিক বিল্ডিং প্রেসিডেন্সি কলেজ ( Presidency College )। নেপিয়ার ব্রিজ পেরিয়ে সেন্ট জর্জের আগে রয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈন্যদের স্মৃতিতে ভিক্টরি ওয়ার মেমোরিয়াল ( Victory War Memorial )।
মেরিনা বীচের উত্তরে রয়েছে একটি বিখ্যাত সুন্দর বাগিচা, যার নাম আন্না স্কোয়ার পার্ক ( Anna Square Park )। এখানে রয়েছে DMK রাজনৈতিক দলের স্রষ্টা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী C.N. Annadurai এর সমাধিস্থল ও স্মৃতিমন্দির ( CN Annadurai Memorial )। প্রবেশ দ্বারে দুই হাতির শুঁড়ের খিলান আছে। এই পার্কেই আর এক মুখ্যমন্ত্রী তথা তামিল চলচ্চিত্রের প্রাক্তন সুপারস্টার M. G. Ramachandran -এর স্মৃতিমন্দির ( Memorial ) আছে। তাই এই আন্না স্কোয়ারের আকর্ষণও পর্যটকদের কাছে কম নয়। শুধুমাত্র রবিবার বিকেলের সানডে মার্কেটটিও ( Sunday Market ) কম আকর্ষণীয় নয়। আরও দক্ষিণে গেলে Broken Bridge -এর পরেই Edward Elliot's Beach নামের একটি সুন্দর সৈকত রয়েছে।
মেরিনার পশ্চিমে ত্রিপলিকেন রোডে একটি সুন্দর অতি প্রাচীন মন্দির রয়েছে, যার নাম পার্থসারথিস্বামী মন্দির ( Arulmigu Sri Parthasarathyswamy Temple, Narayana Krishnaraja Puram, Triplicane )। অষ্টম শতকে পহ্লবরাজাদের তৈরি করা এই কৃষ্ণ মন্দিরের কার্ভিং-এর কাজ ও স্থাপত্যশৈলী অতুলনীয়। এই মন্দিরে বিষ্ণুর পাঁচ অবতারের মূর্তি আছে। বিষ্ণুপত্নী ভেদাবল্লী আম্মান ও পরিজন দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। ষোড়শ শতকে বিজয়নগর রাজাদের সময়েও একবার সংস্কার হয় এই বিশাল দেবস্থানের। সকাল ৬ টা থেকে বেলা ১২ টা ও বিকেল ৪ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত পূণ্যার্থীদের জন্য খোলা থাকে। এর পিছনে একটি দর্শনীয় স্থান হলো কবি সুব্রহ্মণ্য ভারতীর বাড়িতে তৈরি হওয়া ইলাম বা মিউজিয়াম ( Tamil Poet Subrahmanya Bharati Illam / Museum )। এই অঞ্চলেই আছে কর্ণাটকের নবাবদের নির্মিত ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দের ঐতিহাসিক ওল্লাজাহ বড়ো মসজিদ ( Walajah Big Mosque, Triplicane High Rd, SVM Nagar, Ellis Puram, Padupakkam )।
মৈলাপুরে পহ্লবরাজাদের নির্মিত দ্রাবিড়ীয় শৈলীর সুপ্রাচীন কপালেশ্বর শিব মন্দির ( Kapaleeshwar Temple Chariot, Mylapore, Vadakku, Madaveethi, Chennai ) আর একটি দর্শনীয় স্থান। শোনা যায় বহু পূর্বে এই স্থানে প্রচুর ময়ূর ছিল। কিন্তু, বর্তমানে আর ময়ূরের দর্শন মেলে না। পুরাণ অনুসারে, দেবী পার্বতী ময়ূরের রূপ ধারণ করে মুক্তিলাভের জন্য শিবের তপস্যা করেন। সেই কাহিনী মন্দির গাত্রে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও আরো অনেক পৌরাণিক কাহিনী স্টুকো শৈলীতে মূর্ত হয়েছে। ১৯০৬ সালের ৩৭ মিটার উঁচু দ্রাবিড়ীয় গোপুরমের সূক্ষ্ম কারুকার্যও খুবই দৃষ্টিনন্দন। এই মন্দিরটি দুইবার তৈরি করা হয়। ১৫০৭-এ পর্তুগিজদের হাতে ১২৫০-এর প্রথম মন্দিরটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়। এখন যে মন্দিরটি দেখতে পাবেন সেটি ১৬ শতকে বিজয়নগরের রাজা নির্মাণ করেন। শোনা যায়, এই স্থানটি এতটাই জাগ্রত যে এখানকার দেবতার আশীর্বাদে মৃত মানুষও জীবিত হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের পুশম উৎসবে ব্রোঞ্জের শিব-পার্বতীকে নৌকাবিহার করানো হয়। মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ ১১ দিন ব্যাপী Arupathumoovar Festival অর্থাৎ শিব-পার্বতীর বিবাহ উৎসব ধুমধামের সাথে পালন করা হয়। একই মাসে Therotgavan বা কার ফেস্টিভ্যাল পালিত হয়। বসন্তোৎসবে অনেক দূর থেকে দলে দলে পূণ্যার্থীরা এখানে আসেন। মৈলাপুরের নবরাত্রিরও যথেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে। এই মন্দিরের দরজা ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে বারোটা ও বিকাল চারটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা অবধি খোলা থাকে। এর পাশে অবস্থিত প্রাচীন পুনাই বৃক্ষের নিচে ময়ূররূপী পার্বতী দেবীর মন্দিরটি অবশ্যই দর্শন করবেন। সামান্য পশ্চিমে এগোলেই পৌঁছে যাবেন পর্তুগিজ নাবিকদের নির্মিত Our Lady of Light Luz Church-এ। সামুদ্রিক ঝড়ে পথভ্রষ্ট পর্তুগিজ নাবিকদের একটি আলোর সঙ্কেত তীরে পৌঁছতে সাহায্য করে। পরবর্তীতে সেই আলোর সঙ্কেতের স্থানেই তাঁরা এই পবিত্র গীর্জাটি নির্মাণ করেন।
এর ঠিক পাশেই রয়েছে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত প্রথম শতকের তামিল কবি তিরুভাল্লুভারের ( Tamil Poet Thiruvalluvar ) স্মৃতি মন্দির ভাল্লুভারকোট্টাম ( Valluvarkottam Memorial )। তামিলদের কাছে মহাপবিত্র শ্লোকধর্মী Thirukkural গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। থিরুভারুর রথের অনুকরণে পাথর দিয়ে গড়া ৩৯ মিটার উঁচু দ্বিতল এই মন্দিরের নীচে ২২০ ফুট বাই ১০০ ফুটের অডিটোরিয়ামটি এশিয়ার মধ্য বৃহত্তম। এই মহাকবির ১৩৩০ টি শ্লোক বা Kurals খোদিত হয়েছে গ্রানাইট পাথরের উপরে। যৎসামান্য দর্শনী দিয়ে প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন।
যীশুর মৃত্যুর পর তাঁর ১২ জন শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম সেন্ট টমাস ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে ৫২ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসেন। ৭২ খ্রিস্টাব্দে টমাসের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। বিমানবন্দরের পথে Parangimalai-এ ৯২ মিটার উঁচু সেন্ট টমাস মাউন্টে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। ১৩৪ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠে এই সমাধিস্থলে পৌঁছতে হয়। পরবর্তীকালে পর্তুগিজরা তাঁর সমাধির উপরে Our Lady of Expectation Church গঠন করেন। এই গীর্জা তৈরির সময়ে সেন্ট টমাসের নানা স্মারক বা ব্যবহৃত জিনিস মেলে। অনুমতি নিয়ে এই সমস্ত স্মারক সম্ভার দর্শন করতে পারেন। শোনা যায়, ১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দে পাথরের ক্রস থেকে নাকি রক্তক্ষরণ হয়েছিল।
মৈলাপুরে একটি সুন্দর ঐতিহাসিক গীর্জা আছে যার নাম স্যানথোম ক্যাথেড্রাল ব্যাসিলিকা চার্চ ( Santhome Cathedral Basilica Church, 38, Santhome High Rd, Dummingkuppam, Mylapore )। পর্তুগিজরা সেন্ট টমাসকে স্যানথোম বলে সম্বোধন করতেন। অনেক কিংবদন্তি ঘটনায় সমৃদ্ধ ১৮০ ফুট উঁচু মোচাকার চূড়ার এই গীর্জাটি নিওগথিক শৈলীতে তৈরি। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে এটি ব্যাসিলিকার মর্যাদা পায়। এই গীর্জায় একটি মিউজিয়াম রয়েছে। সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে এসে এই Santhome Museum-টি দেখে নিতে পারেন।
এই ব্যাসিলিকা চার্চ থেকে ৩ কি. মি. দূরে আদিয়ার নদীর উপর স্থিত সইদাপেট ব্রিজের ( Saidapet Adyar River Bridge ) দক্ষিণে অবস্থিত দি লিটল মাউন্ট ( The Little Mount )। সেন্ট টমাস ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে এখানকার গুহাতেই আশ্রয় নেন। এই লিটল মাউন্টে তিনি প্রায় ৮ বছর ছিলেন। গুহার সুরঙ্গপথে তাঁর পায়ের ছাপ এখনও রয়ে গেছে। পর্তুগিজরা ১৫৫১ খ্রিস্টাব্দে Our Lady of Health Church তৈরি করেন। আর এক যিশু শিষ্য সেন্ট লিউকের আঁকা যীশু জননী কুমারী মেরীর ছবিও এখানে রয়েছে। ক্রশটিরও অলৌকিক মাহাত্ম্য রয়েছে। আজও প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের ১৮ তারিখ এই ক্রসটি সিক্ত হয়ে ওঠে। চার্চের ঠিক পিছনে রয়েছে একটি পবিত্র ঝর্ণা। এই ঝর্ণার পবিত্র জল বিক্রিও হচ্ছে।
এগমোর রেল স্টেশনের ( Egmore Railway Station ) দক্ষিণে Pantheon Road-এ হেনরি আরউইনের নকশায় মোগলি শৈলীতে বেলেপাথরে তৈরি আর্ট গ্যালারির বাড়িটি ( National Art Gallery Museum ) অত্যন্ত সুন্দর। পূর্বে এটি চেন্নাই শহরের উন্নতিকল্পে গঠন করা Pantheon Committee-এর সদস্যদের বাসস্থান ছিল। মাঝখানে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল রূপে গড়ে উঠলেও আবার ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে আর্ট গ্যালারিতে পরিনত হয়। এখানে বিভিন্ন ধরনের চিত্রকলার বিশাল প্রদর্শনী রয়েছে। এই সংগ্রহশালায় বা মিউজিয়ামে এলে মোগলি, রাজপুত, দক্ষিণী ছবির সাথে মডার্ন আর্টের সুন্দর সমাবেশ দেখতে পাবেন। প্রতি শুক্রবার ও অন্যান্য ছুটির দিন বাদে বাদবাকি প্রত্যেকদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই অসাধারণ শিল্প মন্দিরটি খোলা থাকে।
এই আর্ট গ্যালারি চত্বরে একটি মিউজিয়ামও রয়েছে। এটির প্রতিষ্ঠা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে। এখানে দক্ষিণ ভারতীয় ব্রোঞ্জশিল্পের অমূল্য ভান্ডার প্রদর্শিত হয়েছে। বিশেষ করে অর্ধনারীশ্বর ও নটরাজ মূর্তিতে অভিনবত্ব আছে। প্রস্তর, লৌহযুগের সাথে অমরাবতীতে পাওয়া বৌদ্ধস্তূপের বিভিন্ন ভাস্কর্য মিউজিয়ামের মর্যাদা আরো বাড়িয়েছে। চুনাপাথরের দেওয়ালগুলিতে নানা বৌদ্ধ আখ্যানও মূর্ত হয়েছে। আবার পহ্লব, চোল, পান্ড্য, হোয়সল ও বিজয়নগর রাজাদের সময়ের স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের সংগ্রহও রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। ইথনলজিক্যাল গ্যালারিতে ( Ethnological Gallery ) উপজাতীয় সমাজজীবনে ব্যবহৃত অনেককিছুই প্রদর্শিত হয়েছে। মিউজিয়ামে বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রও রাখা আছে। কাউন্টার থেকে ব্রোঞ্জের নটরাজ মূর্তিও কিনতে পারেন। খাবার ক্যান্টিনও রয়েছে। মিউজিয়ামের থিয়েটারে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও দেখে নিতে পারেন। শুক্রবার ও অন্যান্য ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত এই সংগ্রহশালা খোলা থাকে।
এছাড়া, (1) Arcot-Mudali Street, T. Nagar-এ M. G. R. Museum. (2) 46 Tirumalai Street, T. Nagar-এ অবস্থিত Kamraj Museum. (3) E. V. K. Sampat Salai-এর Periyar E. V. R. Museum. (4) Annanagar এর Prime Times বা মজা-আনন্দে ভরা ইনডোর অ্যামিউজমেন্ট পার্কটিও ( Indoor Amusement Park ) চেন্নাই সফরে বেড়িয়ে নেওয়া উচিত হবে।
শহরের কোট্টরপুরমের অত্যাধুনিক ২৩৬ আসনের বি. এম. বিড়লা প্ল্যানেটরিয়ম ( B.M. Birla Planetarium, Gandhi Mandapam Rd, Duraisamy Nagar, Kotturpuram, Chennai, Tamil Nadu - 600025 ) পরিবারের সাথে গিয়ে দেখে আসুন। শিশুদের জন্য হাফ টিকিট কাটতে হয়। এখানে ৩৬০° থিয়েটারে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে মহাকাশে ভার্চুয়াল ট্যুর করে বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করুন। সত্যিই এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হবে। প্রত্যেক সোমবার বন্ধ থাকে। প্রদর্শনীর সময় ইংরেজি ও তামিল ভাষায় ধারাভাষ্য চলতে থাকে।
এর কাছেই রয়েছে পেরিয়ার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কেন্দ্র ( Periyar Science and Technology Centre )। এখানে বেলা দশটা থেকে পৌনে ছয়টার মধ্যে সামান্য দর্শনীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক নানা কিছুর প্রদর্শনী দেখে নিতে পারেন।
সেন্ট্রাল রেল স্টেশন থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে ওয়ার মেমোরিয়ালের বিপরীতে ফেয়ারল্যান্ড কমপ্লেক্সে INTACH ও TTDC -এর যৌথ উদ্যোগে প্রতি সন্ধ্যায় পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য মিনি থিয়েটারে অর্থাৎ সিট্টারঙ্গমে ( Sittarangam Mini Theatre ) তামিল শিল্প-সংস্কৃতির আসর বসানো হচ্ছে। যদি দেখতে আগ্রহী হন তাহলে Cultural Coordinator, INTACH, 855 Anna Salai, Chennai-2 -এই ঠিকানায় যোগাযোগ করবেন।
শহরের খুব কাছে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে আর একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যার নাম রেড হিলস হ্রদ বা পুঝাল লেক ( Red Hills / Puzhal Lake )। এখান থেকেই শহরের পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনোরম। পিকনিকের আদর্শ পরিবেশ। বাসে করেই এখানে যেতে পারবেন।
পেরাম্বুরে গিয়ে Perambur Loco Works এবং Integral Coach Factory-তে কিভাবে Railway-র হালকা ইস্পাতের বগি তৈরি হয় তা দেখে আসুন। এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম এই বগি কারখানা। তবে শুধুমাত্র মঙ্গলবার ও শুক্রবার গেলেই এখানে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। ট্রেনে বা বাসে করে গিয়ে দেখে আসতে পারবেন।
শহরের দক্ষিণ প্রান্তে গিনডি রেল স্টেশনের ( Guindy Rail Station ) কাছে আছে গিনডি ন্যাশনাল পার্ক ( Guindy National Park )। ৫৯৫ একর জমির উপর গড়ে তোলা একটি অতি আকর্ষণীয় Tourist Spot এটি। এখানে যদি আসেন তাহলে ব্ল্যাক বাক, স্পটেড ডিয়ার, সিভিট ক্যাট, চিতা, শিয়াল, বেজি, বানর, লুপ্তপ্রায় কালো হরিণ বা অ্যান্টিলোপেরও দর্শন পাবেন। অ্যাডিয়ার রোডে রাজভবন লাগোয়া এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে গিনডি মৃগ উদ্যান ( Guindy Deer Park )। এই পার্কে বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ রয়েছে। বিশেষ অনুমতি নিয়ে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে এখানে প্রবেশ করতে পারবেন।
এছাড়া রয়েছে ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, চিলড্রেনস পার্ক বা মিনি জ্যু। গান্ধীজি, রাজাজি, কামরাজ - এই তিন রাষ্ট্রনায়কদের স্মৃতিতে গড়ে তোলা তিন স্মরণ-মন্দির অনেকে দেখতে যায়। জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে গান্ধীমন্ডপ ( Gandhi Mandap )। এখানে নিয়মিত উপাসনা করা হয়। ভারতের প্রথম ভারতীয় গভর্নর জেনারেল রাজা গোপালাচারীর স্মৃতিমন্দির ( C. Rajagopalachari Memorial ) রাজাজি হল ( Rajaji Hall ) ভবনটিতে ব্রিটিশ স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। গ্রিক দেশীয় মন্দিরের ধাঁচে করিন্থিয়ান শৈলীতে তৈরি ব্যাঙ্কোয়েট হলে রাজাজি স্মৃতিমন্দির হয়েছে। এটি ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট ক্লাইভের ছেলে এডওয়ার্ড ক্লাইভ এই ভবনটি নির্মাণ করেন। টিপুর সাথে যুদ্ধ জয়ের স্মারক হিসেবে এটি তৈরি করান। অতীতে এটি ব্রিটিশ গভর্ণরদের বাসভবন ছিল। দেওয়ালে টাঙানো সেকালের প্রতিকৃতিগুলি সেই সময়ের কথা মনে পরিয়ে দেয়। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর স্মারকরূপে ভক্তবতচলম ( Bakthavatchalam ) অবশ্যই দেখে নিন। মঙ্গলবার বন্ধ থাকে। অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এর কাছেই রয়েছে রেসকোর্স ( Race Course )।
রেসকোর্সের কাছেই আছে শিশুদের মনোরঞ্জনের আর একটি অতুলনীয় স্থান সর্প উদ্যান ( Chennai Snake Park )। Romulas Whittaker নামের একজন আমেরিকান ব্যক্তি গড়ে তুলেছেন এই সর্প উদ্যান। খোলা গর্তে ২০০-রও অধিক প্রজাতির ৫০০-এরও বেশি সাপ রয়েছে এখানে। শুধুমাত্র চোখের দেখাই নয়, হাতেও স্পর্শ করতে পারবেন এদের। ছবি ও ভিডিও তুলতেও কোনরূপ নিষেধাজ্ঞা নেই। কেবলমাত্র সাপই নয়, এখানে কুমির, অ্যালিগেটর, টিকটিকি, গিরগিটি, কচ্ছপ ইত্যাদি আরও নানা সরিসৃপ প্রানী রয়েছে। প্রতি ঘন্টায় ডেমনস্ট্রেশন চলে এখানে। এছাড়া নানারকম গবেষণাও চলছে সাপের বিষ নিয়ে। এই জায়গার পর্যটন আকর্ষণও দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এই চত্বর সাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। ট্রেন, বাস বা গাড়িতে করে শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে সহজেই এখানে পৌঁছতে পারবেন।
রাশিয়ান মেয়ে Madame Petrovna Blavatsky এবং আমেরিকান Colonel Olcott - এই দুই জনে মিলে ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকায় থিওসফিক্যাল সোসাইটি গঠন করেন। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে সোসাইটি অফ অল হেলথের ( Society of all Health ) মূল দপ্তর আমেরিকা থেকে চেন্নাইয়ের অ্যাডিয়ারে ( The Theosophical Society, Arunachalapuram, Adyar ) স্থানান্তরিত হয়। ১৮৭৬-এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে পীড়িত জনতাকে কাজ দিতে এলফিনস্টোন ব্রিজ পেরিয়ে অ্যাডিয়ার নদীর দক্ষিণ পাড়ে ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ২৭০ একর জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে সোসাইটির এই কর্মশালা। এই মহান কাজে Annie Besant-এরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এই সোসাইটির মূল উদ্দেশ্য হলো সত্যের সন্ধান করা ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলা। এদের কর্মকান্ডের ব্যাপ্তি বিশাল। ধ্যানকক্ষে ( Meditation Hall ) রয়েছে সকল ধর্মের প্রতীক চিহ্ন। লাইব্রেরীতে রয়েছে ১৮ হাজার অমূল্য পুঁথি ও বইয়ের বিপুল সংগ্রহ। এই বিশাল এলাকায় আছে গার্ডেন অফ রিমেমব্রান্স, অলকট মেমোরিয়াল স্কুল, মিউজিয়াম, অতিথিশালা ইত্যাদি। ১৯৯০ সালের ঝড়ে মূল গাছটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ৪০০০০ বর্গফুট ব্যাপ্ত ৪০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন বটবৃক্ষের স্নিগ্ধ শীতল ছায়ায় কিছুক্ষণ জিরিয়েও নিতে পারেন। রবিবার ও ছুটির দিনগুলোতে লাইব্রেরি ও মূল চত্বর বন্ধ থাকে। অন্যান্য দিনে এই পুরো এলাকা সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১২ টা এবং দুপুর ২ টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত দর্শন করতে পারবেন। লাইব্রেরী সর্বসাধারণের জন্য সকাল ৮ টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের আগমনে অ্যাডিয়ারের আকর্ষণ আরও বেড়ে যায়। অলিভ রিডলে কচ্ছপেরাও সমুদ্র থেকে এসে Adyar নদীর মোহনায় ডিম পাড়ে। ৩ কি. মি. পশ্চিমে অবস্থিত ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ হওয়া গভর্নমেন্ট হাউস এখন রাজভবন ( Rajbhavan ) হয়েছে।
নাচ-গান যারা ভালোবাসেন তাঁদের জন্য একটি সুখবর আছে। দক্ষিণ শহরতলিতে থিওসফিক্যাল সোসাইটির ঠিক পাশেই রয়েছে Rukmini Devi Arundale দ্বারা প্রায় ১০০ একর জমির উপর ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত কলাক্ষেত্র ( Kalakshetra Foundation, Kalakshetra Road, Thiruvanmiyur )। এটি হলো নৃত্যগীত শিক্ষার একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। ১৬০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী এখানে পাঠরত। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্ণাটক মিউজিক, কুরাতি যাযাবরদের কুরুভাঞ্জি লোকনৃত্য অনুসরণে সৃষ্ট ব্যালেধর্মী ভারতনাট্যম ছাড়াও নানা ধ্রুপদী নৃত্যকলা শেখানো হয়। সামান্য দর্শনীর বিনিময়ে এখানে প্রবেশ করতে পারবেন। আর একটু দক্ষিণে গিয়ে দেখে আসুন ১১ শতকে নির্মিত কারুকার্যময় শিব মন্দির। অ্যাডিয়ারের আর এক আকর্ষণীয় স্থান হলো MGR Film City.
এখান থেকে কিছুটা দূরে সাগরপারে রয়েছে চোলামন্ডল শিল্পীগ্রাম ( Cholamandal Artists Village )। এই বিশেষ গ্রামটি ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে গড়ে তোলা হয়। এখানে শুধুমাত্র ভাস্কর ও শিল্পীরা বসবাস করেন। এই গ্রামে এসে নানাবিধ স্থাপত্য, বাটিক, টেরাকোটা ও গ্রাফিক শিল্পীদের হাতের কাজ দেখতে ও কিনতে পারবেন। মুক্তমঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়।
শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ভান্ডালুরে ( Vandaloor ) ৫১০ হেক্টর জমির উপর মনোরঞ্জনের ( Amusement ) নানা উপকরণ নিয়ে গড়ে উঠেছে আন্না জুলজিকাল পার্ক ( Arignar Anna Zoological Park )। এখানে আসলে দেখতে পাবেন নানা জীবজন্তুর সাথে পাখি, স্টাফড করে রাখা প্রাক্-ঐতিহাসিক জন্তু জানোয়ার, লায়ন ও বাইসন সাফারি, নিশাচর জীবজন্তুর ঘর, অ্যাকোয়ারিয়াম, ন্যাচারাল মিউজিয়াম ইত্যাদি। পুরো চত্বর রোপওয়ে, মনোরেল, ব্যাটারি চালিত গাড়ি ও সাইকেলে চড়ে ঘুরতে পারবেন। মঙ্গলবার বন্ধ। অন্যান্য দিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। যৎসামান্য মূল্যের টিকিট কেটে এখানে প্রবেশ করতে হয়।
চেন্নাই থেকে NH-4-এ পশ্চিমমুখী ৩০ কিলোমিটার গিয়ে বামহাতি পথে ১১ শতকের বৈষ্ণব দার্শনিক রামানুজের জন্মস্থান হলো শ্রীপেরামবুদুর ( Thiruperumputhur )। এটি একটি বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র। আবার NH-45 ধরে চিঙ্গেলপুটের ১০ কি. মি. আগে সিনগাপেরা মালকয়েল থেকেও ডানহাতি পথ ধরে পৌঁছে যেতে পারেন ৩ কি. মি. দূরের শ্রীপেরামপুদুরে ( Sriperumbudur )। জাতীয় সড়কে ইন্দিরা গান্ধীর স্মারক মূর্তি তৈরি হয়েছে। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে মে রাত দশটা বিশ মিনিটে এই এলাকাতেই আততায়ীর হাতে শহীদ হয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। শ্রদ্ধেয় রাজীব গান্ধীর স্মরণে একটি স্ট্যাচুও নির্মিত হয়েছে। থাকা-খাওয়ার জন্য এখানে বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল-রেস্টুরেন্ট আছে।
খাবার-দাবার ( Popular Foods ) - এখানে নিরামিষ খাবারের প্রাধান্যই বেশি। ব্রেকফাস্ট অর্থাৎ টিফিনের মেনু হলো ইডলি, দোসা, বড়া ইত্যাদি। দুপুর ও রাতের প্রধান খাবার হলো Saapad বা ভাতের সাথে রসম-সম্বরম, Puliodharai বা মশলা দেওয়া তেঁতুল ভাত, Akkaara Vadisal অর্থাৎ দুধ-মিষ্টি ও চাল দিয়ে তৈরি মিষ্টি খাবার। কিন্তু, আপনি চাইলে চেন্নাই ও তার আশেপাশের হোটেল-রেস্তোরাঁয় মোগলাই, তন্দুরি, চীনা, কন্টিনেন্টাল সবরকমেরই খাদ্য পেয়ে যাবেন। ভারতের অন্যান্য জায়গার তুলনায় দামও কম। বাঙালি খাবার খেতে হলে চলে যান "শ্রীঅন্নপূর্ণা অফ ক্যালকাটা হোটেলে"। এটি এগমোরে পুলিশ কমিশনার অফিসের পাশে ২৩ প্যানথিয়ন রোডে অবস্থিত। এখানে অনেক রকম বাঙালি খাবারের পাশাপাশি সকালে লুচি, পরোটা, মাখন-পাউরুটি, ওমলেট আর বিকেলে রোল, শিঙাড়াও পেয়ে যাবেন। এই শহরে আরও দুটি বাঙালি হোটেলের নাম হলো "হোটেল বাংলা" ও জেমস স্ট্রিটের "আপনজন রেস্তোরাঁ"। আন্নাসলাইয়ের যমুনা রেস্টুরেন্টের সুখ্যাতি আছে মশলা দোসা ও লস্যির জন্য। হোটেল ইম্পিরিয়ালের ওমর খৈয়াম রেস্টুরেন্টের সুনাম রয়েছে আমিষ আহারের জন্য। ভালো চাইনিজ খাবার খেতে হলে যেতে হবে চোলা শেরাটনের উল্টো দিকে ৭৪ ক্যাথেড্রাল রোডে অবস্থিত "চায়না টাউনে", হ্যারিসন হোটেলের "ডাইনেস্টি"-তে, আনন্দ থিয়েটারের পাশে ৬৮৩ আন্নাসলাইয়ের "সাউদার্ন চাইনিজ" বা কাছের Changking-এ। এই এলাকার ট্যুরিস্ট অফিসের কাছে অবস্থিত "আভিন" বিখ্যাত নানারকম সুস্বাদু ঠান্ডা পানীয়ের কারণে। ভালো মানের স্যান্ডউইচ ও লস্যি পেয়ে যাবেন ট্রিপলিকেন হাই রোডের "মহারাজা রেস্টুরেন্টে"। পাশের অন্নপূর্ণা হোটেলের গঙ্গা রেস্টুরেন্টের সুখ্যাতি নিরামিষ টিফিনের কারণে।
কনডাকটেড ট্যুর প্রোগ্রাম ( Conducted Package Tour Programmes ) - TTDC ( Tamilnadu Tourism Development Corporation ) উদ্যোগ নিয়ে ইচ্ছুক পর্যটকদের তামিলনাড়ু ও সমস্ত দক্ষিণ ভারত ঘোরাবার বন্দোবস্ত করে থাকে। এদের বিভিন্ন ধরনের ট্যুর প্যাকেজ রয়েছে। আপনি আপনার পছন্দসই ও সময় অনুযায়ী এক বা একাধিক প্যাকেজের টিকিট কাটতে পারেন। নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা ও থাকা-খাওয়া সমেত চুক্তি অনুসারে সমস্ত কিছুর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে থাকে TTDC. এই ব্যাপারে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কলকাতা থেকেই আগে থাকতে প্যাকেজ ট্যুর প্রোগ্রাম বুকিং করে যেতে পারেন। Kolkata Booking Contact Address:- TTDC, G-26 Dakshinapan Shopping Complex, 2 Gariahat Road ( South ), Kol - 68. Tel. - 24237432.
কোথায় থাকবেন? Where to Stay?
চেন্নাইয়ে বিভিন্ন মানের ও বিভিন্ন দামের হোটেল রয়েছে। হোটেলগুলো গড়ে উঠেছে তিনটি জোন্ হিসেবে। সেন্ট্রাল এলাকার আন্নাসলাই ও তার আশেপাশে গড়ে উঠেছে উঁচু মানের তারকাখচিত হোটেলশ্রেনী। পুনামেল হাই রোড ধরে এগমোর রেলস্টেশনকে ঘিরে আছে মধ্যম মানের হোটেলরাজি। ওয়ালট্যাক্স রোড থেকে ব্রিটিশের জর্জ টাউন অর্থাৎ পুরাতন শহরে রয়েছে সাধারণ মানের হোটেলগুলো। এছাড়া, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিভিন্ন ব্যাঙ্কসহ সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের হলিডে হোম রয়েছে। আগে থাকতে বুকিং করে আসাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।
কিভাবে যাবেন? How to go / Reach?
সড়কপথে বাসের মাধ্যমে এই রাজ্যসহ দক্ষিণ ভারতের যেকোন প্রান্তের সাথে ভালো যোগাযোগ রয়েছে। ভারতের যেকোন বড়ো শহর থেকে রেলপথে সহজে এখানে আসা যায়। বিমানপথে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শহরের সাথে উত্তম যোগাযোগ আছে। জাহাজে করে আন্দামান, মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে এই শহরের সামুদ্রিক বন্দরে আসা যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please, Don't Spam.
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷