মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৯

[ Informations on Andhra Pradesh Telangana Tourism ]

PAST HISTORY & SOME VALUABLE INFORMATIONS ABOUT ANDHRA PRADESH & TELANGANA:-

           ২০০৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে নতুন রাজ্য তেলেঙ্গানার জন্ম হলেও আগামী ১০ বছর উভয়েরই রাজধানী ( Capital City ) থাকবে হায়দ্রাবাদ ( Hyderabad ) এবং অমরাবতী ( Amarabati )। সবচেয়ে বড় শহর ( Largest City ) বিশাখাপত্তনম ( Visakhapatnam )। মোট জনসংখ্যা ( Total Population ) ৪৯৩৮৬৮০০ জন। জনঘনত্ব ( Population Density ) অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিমিতে ৩১০ জন বাস করেন। মোট এলাকা ( Total Area ) বা আয়তন হলো ১৬০২০০ বর্গকিলোমিটার। এখানকার অধিবাসীদের তেলুগু বা অন্ধ্রি ( Telugu / Andhraite ) বলা হয়। সাক্ষরতার হার ( Percentage of Literacy ) ৬৮%। সরকারি প্রধান ভাষা ( Main Official Language ) তেলুগু। মোট সমুদ্র উপকূলের দৈর্ঘ্য ( Total Coastline Length ) ৯৭৫ কি.মি.। প্রতি ১০০০ পুরুষে নারীর সংখ্যা ৯৯০ ( Sex Ratio of Male and Female )। গড় বার্ষিক আয় ( Per Body / Per Capita Annual Income ) ১৬৪০২৪ টাকা।

Govt. Official Portal -
https://www.aponline.gov.in

Tourism Related Site -
https://www.aptourism.gov.in

মোট জেলার সংখ্যা ১৩ ( Total Number of Districts is 13 )। (১) Anantapur, (২) ( Chittoor ), (৩) East Godavari ( Kakinada ), (৪) Guntur, (৫) Kadapa, ( ৬) Krishna ( Machilipatnam ), (৭) Kurnool, (৮) Nellore, (৯) Prakasam ( Ongole ), (১০) Srikakulam, (১১) Visakhapatnam ( Vizag ), (১২) Vizianagaram, (১৩) West Godavari ( Eluru ).

                                তেলাঙ্গানা
           [ New Indian State TELANGANA ]

                   ২০১৪ সালের ২রা জুন পূর্বতন অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে এই নতুন রাজ্যটি গঠিত হয়। রাজধানী ও বড় শহর হায়দ্রাবাদ ( Main Capital & Largest City is Hyderabad )। মোট জনসংখ্যা ( Total Population ) ৩৫১৯৪০০০। জনঘনত্ব ( Population Density ) প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩১০ জন। এখানকার অধিবাসীদের তেলাঙ্গানী ( Telanganite ) বলা হয়। মোট এলাকা ( Total Area ) বা আয়তন ১১২০৭৭ বর্গ কি.মি.। সরকারি প্রধান ভাষা তেলুগু ( Main Official Language is Telugu )। এছাড়া, এই দুই রাজ্যেই হিন্দি, উর্দু এবং ইংরেজি ভাষারও ( Other Languages ) যথেষ্ট ভালো চল আছে। সাক্ষরতার হার ( Percentage of Literacy ) ৬৭%।
   
                    এই রাজ্যে মোট জেলা আছে ৩৩টি ( Total Number of Districts is 33 )। যেমন, (1) Adilabad, (2) Bhadradri Kothagudem, (3) Hyderabad, (4) Jagitial, (5) Jangaon, (6) Jayashankar Bhupalapally ( Bhupalpalle ), (7) Jogulamba Gadwal, (8) Kamareddy, (9) Karimnagar, (10) Khammam, (11) Komaram Bheem, (12) Mahabubnagar, (13) Mancherial District, (14) Medak, (15) Medchal Malkajgiri ( Shamirpet ), (16) Mulugu, (17) Nagar kurnool, (18) Narayanpet, (19) Nalgonda, (20) Nirmal, (21) Nizamabad, (22) Peddapalli, (23) Rajanna Sircilla, (24) Ranga Reddy ( Shamshabad ), (25) Sangareddy, (26) Siddipet, (27) Suryapet, (28) Vikarabad, (29) Wanaparthy, (30) Warangal Rural, (31) Warangal Urban, (32) Yadadri Bhuvanagiri ( Bhongir ), (33) Mahabubabad. 

Govt. Official Weblink -
https://www.telangana.gov.in

Tourism Corporation Portal -
(1) https://www.telanganatourism.gov.in
(2) https://tourism.telangana.gov.in

ALL TOTAL LIST OF 23 VERY BIG, MOST POPULAR OR FAMOUS LOCAL FAIRS & MAJOR FESTIVALS:-

(i) Tirupati Festival, (ii) Ganga Jatara / Srivari Brahmotsavam, (iii) Deccan Festival, (iv) Lumbini Utsav, (v) Maha Shivratri Festival, (vi) Makar Sankranti, (vii) Pongal, (viii) Ugadi Fest, (ix) Vaikuntha Ekadashi, (x) Sirimanothsavam, (xi) Rottela Panduga, (xii) Poleramma Jatara Venkatagiri, (xiii) Peerla Panduga, (xiv) Kusarlapudi, (xv) Krishna Pushkaralu, (xvi) Gowri Habba, (xvii) Godavari Mahapushkaram, (xviii) Gangamma Jatra, (xix) Devaragutta Dasara Festival, (xx) Deepothsavam, (xxi) Bara Shaheed Dargah, (xxii) Atla Tadde, (xxiii) Alagu Sevai.

AVERAGE WEATHER OR CLIMATE. WHEN SHOULD YOU GO THERE? / BEST TIME TO VISIT OR TRAVEL THESE STATES:-

           অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় গ্রীষ্মকালে অসম্ভব গরমের আধিক্য অনুভব করা যায়। সেই তুলনায় শীতকালে ঠান্ডা প্রায় থাকে না বললেই চলে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। এই সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বছরের যে কোন সময়েই এই দুই রাজ্যে ভ্রমণ করতে আসা যায়। কিন্তু, অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যবর্তী সময়ই হ'ল এখানে বেড়াতে আসার উপযুক্ত সময়।

এই রাজ্যের যেকোন জায়গায় যাওয়া আসা, থাকা খাওয়ার ব্যাপারে আগে থাকতে অনলাইন বুকিং-এর জন্য নীচের বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে এক বা একাধিক ব্যবহার করতে পারেন। [ FOR ONLINE BOOKING OF FOODS / FLIGHTS, TRAIN / RAILWAY RESERVATION, HOUSES ON RENT/ FLATS RENTAL / LODGES / RESORTS / HOMESTAYS / TENTS / HOTELS ROOMS IN ANY PLACE WITH DISCOUNT, CHEAP AIR TICKETS, BUS BOOKING, CAR HIRE ]:-
1. https://www.trivago.in
2. https://www.goibibo.com
3. https://www.makemytrip.com
4. https://www.yatra.com
5. https://www.cleartrip.com
6. https://www.tripadvisor.in
7. https://www.ixigo.com
8. https://www.zomato.com

TOP PLACES TO VISIT OR MAJOR TOURIST ATTRACTIONS IN ANDHRA PRADESH & TELANGANA WITH PROPER TOUR PLAN ON MAIN TRAVEL DESTINATIONS AND OTHER NEAREST BEAUTIFUL SPOTS:-

হায়দ্রাবাদ ( Hyderabad is Known as The Pearl City of India ) - ২০২৪ সাল পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা উভয় রাজ্যেরই রাজধানী হলো হায়দ্রাবাদ। অতীতে নিজামের রাজধানীও ছিল এই শহর। ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে। ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দে মুসী নদীর তীরে ৪র্থ কুতুবশাহি সুলতান মহম্মদ কুলী কুতুব শাহের হাতে এই নগরীর গোড়াপত্তন ঘটে। শহরের নাম হয় ভাগ্যনগর। পরে এর নাম হয় হায়দরাবাদ। ১৭২৪ খ্রিস্টাব্দে মোগল শাসনের অবসান হয়ে নিজামী শাসনকালের শুরু হয়। কয়েকবছর বাদে এই শহরের চারপাশে প্রাচীরও তৈরি হয়। শোনা যায়, বহু বছর পূর্বে সুড়ঙ্গ পথে শহরের সাথে গোলকুন্ডা দূর্গের সংযোগ ছিল। এখনকার মতো আগেও এই শহর ভারতের অন্যতম নগরী ছিল। এমনকি মার্কোপোলোও এই স্থান দর্শন করে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। কম্পিউটার ও সফটওয়্যার শিল্প অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে দারুণ উন্নতি করেছে। তাই অনেকে একে হাইটেক সিটিও বলে থাকেন। এই কারণে খুব দ্রুত শহরের কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক উঁচু উঁচু ইমারত ও চওড়া চওড়া রাস্তা তৈরি হয়েছে। পর্যটন শিল্পেও এই জায়গা যথেষ্ট উন্নত। এই দুই Industry-র প্রভাবে ব্যাঙ্কের কাজের সময়েও কয়েকটি ব্যাঙ্কের বেশ কিছু শাখায় হেরফের লক্ষ্য করা যায়।

এখানে উর্দুভাষী মুসলিমদের সংখ্যা বেশি। জনমানসে ইসলামি সংস্কৃতির প্রভাব অতিরিক্ত মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। নিজামদের জন্য এখানকার পুরাতন বাড়িঘর ও বাগিচায় পারসীয় স্থাপত্যের ছাপ রয়েছে। রাতের আলোকসজ্জায় অত্যন্ত সুন্দর লাগে এই মেগাসিটিকে।

নিজাম শাসকদের মধ্যে ১০ম অর্থাৎ শেষ নিজাম মীর ওসমান আলী খানের সম্পর্কে একটু আলোচনা না করলেই নয়। তিনি ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতায় বসেন এবং ১৯৪৮ পর্যন্ত হায়দ্রাবাদের শাসক ছিলেন। শোনা যায়, তিনি বিশ্বের অন্যতম একজন ধনী ব্যক্তিও নাকি ছিলেন। তাঁর ছিল বিশাল প্রাসাদ, ১০০ জন বেগম, ৪০০ টি সন্তান-সন্ততি, ১১০০০ চাকর। বিশ্ববিখ্যাত ডায়মন্ডের ডিম্বাকার পেপারওয়েট তাঁর বিপুল পরিমাণ ধনের নিদর্শনস্বরূপ। তিনি একসময়ে পর্তুগিজদের কাছ থেকে গোয়া কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁর সময়েই প্রজাদের অভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। সেই সময়ে অন্ধ্রপ্রদেশ ছিল সবচেয়ে অনুন্নত ও দরিদ্রতম রাজ্য।

পর্যটকেরা এখানে এসে অনেক রকম মুখরোচক মোগলাই খাবারের স্বাদ নেওয়ার সাথে বাদশাহী আদবকায়দার সাক্ষাৎ করে নিজেদের ধন্য মনে করেন। কর্মসূত্রে ও স্থায়ীভাবে বেশকিছু বাঙালি রয়েছে শহরে। এখানে দুই-একটি দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। তারমধ্যে একটি রামকৃষ্ণ মিশনের।

পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হলো মুসী নদীর ডান পাড়ের পুরাতন হায়দ্রাবাদ। কারণ, এখানেই আছে সালার জং, চারমিনার, হাইকোর্ট, কুতুব শাহ গার্ডেন, আমিন বাগ, জ্যু বা চিড়িয়াখানা ইত্যাদি। সাধারণ মানের অজস্র হোটেল আছে নামপালি অর্থাৎ হায়দ্রাবাদ স্টেশন রোড পেরিয়ে আবিদ তথা নেহেরু রোড জুড়ে। সবচেয়ে আভিজাত্যপূর্ণ দুইটি এলাকার নাম না করলেই নয়। এক, বানজারা হিলস্ ( Banjara Hills )। একসময়ে বানজারা উপজাতি মানুষদের মুক্তাঞ্চল এবং বর্তমানে বিখ্যাত চিত্রতারকা, খেলোয়াড়, ধনী ব্যবসায়ীদের স্থায়ী বাসভূমি। দুই, বেগমপেট ( Begumpet )। এখানে রাজ্যপালসহ অনেক বিখ্যাত ও প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীদের বাস। কাছেই রয়েছে এই শহরের গৌরবময় অতীত গোলকুন্ডা দূর্গ ( Golconda Fort )।

গোলকুন্ডা দূর্গ ( Golconda Fort ) - শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার পশ্চিমে মোচার আকারের গ্রানাইট পাথরের পাহাড়ের মাথায় এই ইতিহাসখ্যাত দূর্গটি অবস্থিত।১২ শতকে ওয়ারাঙ্গলের কাকাতীয় বংশের রাজা গণপতি এটি মাটি দিয়ে নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে দূর্গটি গুলবর্গার বাহমনি সুলতানদের দখলে আসার পরে পাথর দিয়ে পুনর্নির্মিত হয়। শুধুমাত্র একবার দুইবার নয়, বহুবার সংস্কার হয় এই গোলকুন্ডা দূর্গের। এর নির্মাণ শৈলীতেও যথেষ্ট অভিনবত্ব আছে। চওড়া ১১ কি. মি., ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৫ থেকে ১৮ মিটার উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। অতীতে চারপাশে পরিখা বা খালও কাটা হয়েছিল সুরক্ষার জন্য। গ্রানাইট পাথরে তৈরি করা ৮টি অলঙ্কৃত বিশালাকার প্রবেশদ্বার, হাতির আক্রমণ ঠেকাতে গজাল বসানো দরজা, ৮৭টি বুরুজ, কুতুবশাহিদের বন্দুক আজও আপনার অপেক্ষায় রয়েছে। মরটিউরি বাথ রেখে আক্কানা ও মাডান্না দুই মন্ত্রীর দ্বিতল বাড়ি পেরিয়ে ৩৬০ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠে পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে ১২টি খিলানযুক্ত তিনতলা তানা শাহ কি গদি অর্থাৎ বারাদরি বা দরবার হল। সিঁড়ির ডানদিকে বড়ি বাওড়ি অর্থাৎ ঝরনায় সুশোভিত পাতকুয়া। এছাড়াও দূর্গের অভ্যন্তরে ছিল মণিমুক্তা খচিত বিভিন্ন প্রাসাদ, জেনানা প্যালেস বা হারেম মহল, মন্দির, মসজিদ, তামার ফোয়ারায় গোলাপ জলের তার্কিশ বাথ, ত্রিতল তোপখানা, অন্ধকার কারাগার ডানজন, সুন্দর বাগান নাগিনা বাগ। ঔরঙ্গজেব এই ফোর্ট দখলের সাথে সাথে কোহিনুর ও হোপ - এই দুটি অমূল্য রত্নদ্বয়ও নিজের দখলে নিয়ে নেন।

মূল প্রবেশদ্বার হলো পাঁচিলে ঘেরা বালাহিসার তোরণ। গেট পেরিয়ে সামান্য যেতেই দরদালানের গম্বুজের নিচে ফতে দরওয়াজায় হাততালি দিলে সেই ধ্বনি দূর্গের মাথায় দরবার হলেও পৌঁছায়। সেকালে এই পদ্ধতি জরুরি সঙ্কেত রূপে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দরবার হল থেকে ৮ কি. মি. দূরের গোসা মহল পর্যন্ত একটি সুরঙ্গপথও ছিল। কিন্তু, সেই রাস্তা বর্তমানে বন্ধ। তানা শাহ কি গদির মাথায় টেলিস্কোপ বসেছে। গরমকালে কেল্লায় শীতাতপ ব্যবস্থাটিও ছিল অভিনব। মাটির নল ও পার্সিয়ান চাকার সাহায্যে ছাদের উপর জল তুলে ঠান্ডা রাখা হতো প্রাসাদ। পর্যটকেরা এই সমস্ত কিছুর ধ্বংসাবশেষ দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যান। চারপাশের প্রাকৃতিক শোভাও অতুলনীয়।

গোলকুন্ডার হীরারও যথেষ্ট সুখ্যাতি ছিল প্রাচীনকালে। কৃষ্ণা নদীর অববাহিকায় মিলত হীরা। সুদূর আরব, পারস্য, তুরস্ক থেকে ব্যবসায়ীরা উটের ক্যারাভান নিয়ে এসে হীরা কিনে নিয়ে যেত। এমনকি ব্রিটিশ ক্রাউনের Kohinoor  ( Mountain of Light ) Diamond-টিও এখানকার।

যদি সম্ভব হয় তবে সন্ধ্যাবেলায় গিয়ে সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চনের গ্রন্থনায় ১ ঘন্টার Sonet Lumiere প্রদর্শনীতে ইংরেজি, তেলুগু অথবা হিন্দি ধারাভাষ্যে বছরের যেকোন দিন গোলকুন্ডার ইতিহাস শুনে নিন। ৫ বছরের বেশি বয়সের যে কেউ এই প্রদর্শনীতে টিকিট কেটে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বড়োদের টিকিটের তুলনায় ছোটদের টিকিটের দাম কিছুটা কম। সন্ধ্যা ৫টায় APTDC-এর বাস যাচ্ছে যাত্রীনিবাস থেকে পর্যটকদের নিয়ে। অ্যাডভান্স টিকিট বুকিং করতে পারবেন যাত্রীনিবাস থেকে। কোন দিন কি ভাষায় ধারাভাষ্য হবে তা গোলকোন্ডা ফোর্টের কাউন্টারে আগে থেকে ফোন করে জেনে নিন।

কনডাকটেড ট্যুর প্রোগ্রামে মাত্র ১ ঘন্টায় দূর্গ ঠিকভাবে দেখা কোনমতেই সম্ভব নয়। চূড়োয় ওঠানামাতেই ১ ঘন্টা লেগে যায়। তাই, আরও একটু বেশি সময় হাতে নিয়ে বাসে করে ঘুরে আসুন। অটো বা ট্যাক্সি ভাড়া করেও যেতে পারেন। ঢোকার গেটে গাইডও পেয়ে যাবেন। সঙ্গে একজন গাইড নিয়ে ঘুরুন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে। ১৪ বছর বয়স অবধি কোন মানুষের টিকিট কাটতে হয় না। এখান থেকে মাত্র ৩ কি. মি. দূরে আছে বরাদরি। শেষ কুতুবশাহির শিক্ষয়িত্রী তারামতীর নাচগানের আসর বসত। বর্তমানেও এখানে নাচগানের আসর বসছে।

কুতুবশাহী সমাধি ( Qutb Shahi Tombs, Golconda ) - দূর্গের এক কিলোমিটার উত্তরে ফলবাগিচায় ঘেরা ইব্রাহিম বাগে সাতজন কুতবশাহী ছাড়াও সমাধিস্থ রয়েছেন এই রয়্যাল ফ্যামিলির আরও অনেকে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত এই সমাধিক্ষেত্র খোলা থাকে। হিন্দু, পারসীয় মুসলিম ও পাঠান স্থাপত্যে গড়া, অনবদ্য কারুকার্য মন্ডিত এই সমাধিসৌধ ক্ষেত্র। সামান্য মূল্যের টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। শেষকৃত্যের জন্য অন্তেষ্টিগৃহ আছে। ব্যাসাল্ট পাথরের দরজা যুক্ত ছোট মসজিদ রয়েছে যার মাথায় গ্রানাইট পাথরের গম্বুজ আছে। অনেকে বলেন যে, ঔরঙ্গজেবও নাকি নমাজ পড়তেন এখানে। খনন করে কুতুবশাহি সুলতানদের গ্রীষ্মাবাসও আবিষ্কৃত হয়েছে ইব্রাহিম বাগের মাটির নীচে থেকে।

শিল্পরমম ( Full Address:- Shilparamam, Hi Tech City Main Road, Madhapur Rd, HITEC City, Hyderabad, Telangana 500081 ) - হায়দ্রাবাদ শহর থেকে জুবিলী হিল ( Jubilee Hills ) ছাড়িয়ে ১৫ কি. মি. দূরের মাধপুরে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে ৩০ একর জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছে শিল্পগ্রাম শিল্পরমম। এখানে ঝরণা ও ঘাসের জাজিমে পাথর খোদাই করে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন শিল্পসম্ভার। এই গ্রামে সারা ভারতের নানা প্রান্ত থেকে আসা শিল্পীদের শিল্পসৃষ্টি দেখা ও কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রত্যেক মার্চ মাসে শিল্পোৎসব ও নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। যা দেখতে দেশ-বিদেশের প্রচুর পর্যটক আসেন। সকাল সাড়ে দশটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা অবধি খোলা থাকে। সামান্য মূল্যের টিকিটের বিনিময়ে এই গ্রামে প্রবেশ করতে হয়। এর ঠিক বিপরীতে তৈরি হয়েছে থিয়েটার হল শিল্পকলা বেদিকা। পাশেই আছে HITEC CITY, IT Park. অনুমতি নিয়ে সবকয়টি স্থানই দর্শন করতে পারবেন।

শিল্পরমমের কাছে একটি সুন্দর প্রাকৃতিক হ্রদ রয়েছে যার নাম দুর্গম চেরুভু ( Durgam Cheruvu Secret Lake )।  সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে এই দুর্গম চেরুভু গুপ্ত লেক। দারুন সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ। অতীতে এই লেক থেকেই গোলকুন্ডা দূর্গে জল যেত। পর্যটকদের জন্য বিনোদনের নানান বন্দোবস্ত রয়েছে। এর পাড়ে লেক রিসর্ট, রেস্টুরেন্ট গড়েছে TSTDC. একটি Park-ও আছে। ছোট ছোট টিলা দিয়ে ঘেরা পাহাড়ি পরিবেশের এই লেকে বোটিং করতে ও মাছও ধরতে পারবেন। তাঁর জন্য নির্দিষ্ট মূল্যের টিকিট কাটতে হবে।

ওসমান সাগর ( Osman Sagar ) - গোলকুন্ডা দূর্গের মক্কা দরজা দিয়ে বেরিয়ে ডানদিকে কিছুটা এগুলেই পৌঁছে যাবেন ওসমান সাগরের তীরে। মুসী নদীর ( Musi River ) প্লাবনের হাত থেকে শহরকে বাঁচাতে গান্ধীপেট গ্রামে বাঁধ দিয়ে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে এই কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করা হয়। ৭ম নিজাম ওসমান আলী খানের নামে নামাঙ্কিত। বর্তমানে শহরের পানীয় জল আসছে এই জলাশয় থেকে। এর পাড়ের বাগিচা বা Park-টিও খুব সুন্দর। আর রয়েছে ১৫ একর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা অপরূপ Dream Valley Resort. আছে Golf Course. Water Sports এর নানা ব্যবস্থা রয়েছে। কাছেই বিনোদনের নানা সরঞ্জাম নিয়ে ৬০ একর ব্যাপী জায়গা জুড়ে ট্রেজার আইল্যান্ড ( Treasure Island )।

হিমায়ত সাগর ( Himayat Sagar Lake ) - ওসমান সাগর থেকে ১০ কি. মি. এবং হায়দ্রাবাদ থেকে ২০ কি. মি. সড়কপথের দূরত্বে হিমায়ত সাগর কৃত্রিম লেকটি অবস্থিত। এটিও ৭ম নিজাম ওসমান আলী খান মুসী নদীকে বাগে আনতে বাঁধ দিয়ে তৈরি করান। ওসমানের থেকে এই হিমায়ত আকারে বড়ো। সপ্তাহান্তিক ছুটি কাটানোর আদর্শ মনোরম পরিবেশ। থাকার জন্য Govt. Rest House ও Duck Bunglow আছে। আগে বুকিং করে আসতে হবে।

বনস্থালিপুরম ডিয়ার পার্ক ( Vanasthalipuram Deer Park ) - বিজয়ওয়াড়া জাতীয় সড়কের উপর শহর থেকে ১৩ কি. মি. দূরে Mahavir Harina Vanasthali National Park-টি ঘুরে আসতে পারেন। এই অরন্যে হরিণের সাথে চিঙ্কারা, ব্ল্যাক বাক, বন্য শূকর, শজারুসহ শতাধিক প্রজাতির পাখিও দেখতে পাবেন। যাওয়ার পথে দেখে নেবেন দ্বিতীয় নিজামের ফরাসি সৈনিক মাইকেল রেমন্ড তথা মুসা রামের সমাধি ( Raymond's Tomb )।

ফলকনুমা প্রাসাদ ( Falaknuma Palace, Fatima Nagar ) - ভিখারুল উমরের হাতে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ করে ইতালিয়ান ও টিউডরি স্থাপত্যে গড়ে তোলা হয় ফলকনুমা নামের বিশাল বাড়ি। কুতুবশাহি ষষ্ঠ নিজাম মীর মেহবুব আলী খান ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে এটি কিনে প্রাসাদে পরিনত করেন। অতি আধুনিক বাড়িগুলোর মধ্যে থাকা স্টার অফ দ্য হেভেন ফলকনুমা প্রাসাদের বিশ্বজুড়ে সুখ্যাতি আছে। বাঁক খাওয়া পাহাড়ি ঘাট রোড ধরে কোহিটুর পাহাড়ের উপরে ফতেমা নগরে এই বিশালাকার অনুপম নিজাম মহলটি অবস্থিত। এই বিল্ডিং-এর লাইব্রেরির পান্ডুলিপি ও দুষ্প্রাপ্য বইয়ের সংগ্রহ অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। বিলাসবহুল রাজকীয় রিসেপশন ঘরটি স্ফটিক, হীরা ও মূল্যবান সমস্ত ধাতু বসিয়ে অনবদ্য করে তোলা হয়েছে। এখানকার পাথরের ভাস্কর্য, ঝাড়লন্ঠন, ছবির সংগ্রহ অতুলনীয়। সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নেই এখানে। এটি পারিবারিক প্রাসাদ। Tourist Office বা The Secretary, Nizam's Trust Fund এর বিশেষ অনুমতি নিয়ে সামান্য মূল্যের টিকিট কেটে এখানে ঢুকতে পারবেন। একটি অংশে তাজ হোটেল চালু আছে।

চারমিনারের উত্তর-পূর্বে মুসী নদীর দক্ষিণ পাড়ে পুরাতন শহরে সপ্তম নিজামের গড়া পুরানী হাভেলিতে ( Purani Haveli ) ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত সিলভার জুবিলী মিউজিয়ামে নিজাম মীর ওসমান আলির সংগ্রহ করা ও পুরস্কার পাওয়া বহুমূল্য জিনিসের প্রদর্শনশালা ( The Nizam's Museum, Purani Haveli, Pathar Gatti ) দর্শন করে আসুন। এখানে যে কেউ টিকিট কেটে প্রবেশ করতে পারেন। শুক্রবার বন্ধ থাকে। অন্যান্য দিন বেলা সাড়ে দশটা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কাঠের ওয়ারড্রবটিও দেখার মতো। এর কাছেই রয়েছে সালার জঙ-এর ধাঁচে গড়া চৌমহল্লা প্রাসাদ ( Chow Mohalla Palace, Pathar Gatti )। এটি চার প্রাসাদের সমন্বয়ে গঠিত বলে এইরকম নামকরণ করা হয়েছিল। আর আছে শতরঞ্জ কি খিলাড়ি শুটিং খ্যাত Miss Haversham's Cottage টিও আর এক গৌরবময় ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্য।

ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ( Osmania University ) - সেকেন্দ্রাবাদের ৮ কি. মি. পূর্বে ১৪০০ একরের বিশাল এলাকা জুড়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। নিজাম মীর ওসমান আলি খানের হাতে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয় ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে। বিশাল চত্বর জুড়ে অনেক বড়ো বড়ো বিল্ডিং নিয়ে এই বিশ্ববিখ্যাত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গঠিত। এখানে এক বিল্ডিং থেকে আর এক বিল্ডিং-এ যাতায়াতের জন্য গাড়ির প্রয়োজন হয়। দিল্লি-আগ্রা শুধু নয়, সারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাছাই করা স্থাপত্য ও ভাস্কর্য সংগৃহীত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের জন্য। কালো গ্রানাইট পাথর দিয়ে হিন্দু ও মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে গড়া কলা শাখার বাড়িটি সত্যিই অসাধারণ। পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা কলেজ, বিভিন্ন বিভাগ, গবেষণা কেন্দ্র, হস্টেল, ক্যান্টিন, খেলার মাঠ, স্টেট আর্কাইভ, বটানিক্যাল গার্ডেন ইত্যাদি। এখানে পঠনপাঠনের ভাষা মাধ্যম হলো উর্দু। অতীতের ব্রিটিশ রেসিডেন্সিতে বর্তমানে মেয়েদের জন্য Osmania College For Women চালু আছে। বেগমপেটে ২০ শতকের গোড়ায় তৈরি হওয়া চমৎকার হায়দ্রাবাদ পাবলিক স্কুলটিও ( Hyderabad Public School, Begumpet ) আপনার ভ্রমণ গন্তব্যের তালিকায় সংযুক্ত হওয়ার দাবি রাখে।

পাবলিক গার্ডেন / বোটানিক্যাল গার্ডেন ( Public Gardens / Botanical Garden ) - হায়দ্রাবাদ রেলস্টেশনের ঠিক উত্তর পাশে নামপালি এলাকায় বটানিক্যাল গার্ডেনসহ বিনোদনের নানান পসরা নিয়ে গড়ে উঠেছে আর এক দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র পাবলিক গার্ডেন ( Full Address:- Public Garden Road, Public Gardens, Red Hills, Nampally, Hyderabad )। ১৯ ভাগে বিভক্ত ১২০ একরের এই বাগিচায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ তথা উদ্ভিদ আনা হয়। বাগিচার বুক চিরে সাপের মতো আঁকাবাঁকা হয়ে বয়ে চলেছে লেক বা হ্রদ। পদ্মফুলে ভরা বিশাল জলাশয়, গোলাপ বাগান, সাইপ্রিম বাগান, ছোটদের খেলার মাঠ, বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর বসেছে এই চত্বরে। পুরাতত্ত্বের সংগ্রহ নিয়ে গঠিত হওয়া হায়দ্রাবাদ মিউজিয়ামটি ( Horticultural Department and Museum, Telangana State Archaeology Museum ) এখানেই অবস্থিত। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই সংগ্রহশালায় মুদ্রার সংগ্রহ, বাসনকোসন, আগ্নেয়াস্ত্র, পান্ডুলিপি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এর অজন্তা প্যাভিলিয়নের অজন্তা গুহার ফ্রেস্কো চিত্র এই জায়গার আকর্ষণ ও ঐতিহ্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সোমবার বন্ধ থাকে। এছাড়া, রোজ সকাল সাড়ে দশটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য খোলা থাকে। হেলথ মিউজিয়ামের সংগ্রহে অভিনবত্ব আছে। এছাড়াও রয়েছে, রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীতে তৈরি হওয়া রবীন্দ্র ভারতীর জাতীয় থিয়েটার, মুক্তাঙ্গন থিয়েটার ( Open Theatre ), জওহর বাল ভবন ( Jawahar Bal Bhavan ), ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী অডিটোরিয়াম ( Indira Priyadarshini Auditorium ), ললিত কলা খোরানাম ইত্যাদি স্বমহিমায় উজ্জ্বল স্থানসমূহ। বালভবনে আছে মাছের অ্যাকোয়ারিয়াম। এই বিশাল উদ্যানে ঘাস ছেঁটে অনেকগুলো মডেল মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেকটিই সুন্দর। কিন্তু, এর মধ্যে জোয়াল কাঁধে জোড়াবলদ মূর্তিটি সত্যিই অনবদ্য।

নওবত পাহাড় ( Naubat Pahad ) - পাবলিক গার্ডেন পেরিয়ে হুসেন সাগরের তীরে রিজার্ভ ব্যাংকের বিপরীতে দুটি পাহাড় নিয়ে গঠিত হওয়া অধিত্যকা এটি। বহু পূর্বে ড্রাম পিটিয়ে রাজাজ্ঞা ঘোষিত হত এই পাহাড় থেকে। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে নবাবের প্রধানমন্ত্রী স্যার মির্জা ইসমাইল এই স্থানের আকর্ষণ বাড়ান দুইটি প্যাভিলিয়ন গড়ে। ২৮০ ফুট উঁচু কালাপাহাড়ে ২ কোটি টাকা ব্যয় করে ১৯৭৬ সালে বিড়লা গ্রুপ দুধসাদা রঙের শ্রীভেঙ্কটেশ্বর স্বামীর মন্দির ( Srivenkateshwar Swami Temple ) গঠন করা হয়। একে সবাই বিড়লা মন্দির ( Birla Mandir ) বলে। মন্দির তৈরির সময় রাজস্থান থেকে ৫০ লাখ টাকার ২০০০ টন শ্বেতপাথর আনা হয়েছিল। প্রধান স্থপতি ছিলেন তাজমহলের স্থপতিদের উত্তরসূরি। খাজুরাহো ও বোধগয়ার শৈলীতে এই বিড়লা টেম্পলটি নির্মিত হয়েছে। দেবতার মূর্তিটি শ্বেতপাথরের। ৫১ ফুট উঁচু রাজা গোপুরমটি দক্ষিণী স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি। মন্দিরগাত্রে হিন্দুপুরাণের নানা আখ্যান রূপায়িত হয়েছে। ভাস্কর্যময় মন্দির থেকে হুসেন সাগরসহ পুরো শহরই সুন্দর দেখতে লাগে। সবচেয়ে সুন্দর সূর্যাস্তের সময়। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা এবং দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য দরজা উন্মুক্ত থাকে। অক্ষমদের জন্য উপরে ওঠার লিফটও রয়েছে।

যাওয়ার পথের মাঝে একটি ১৫ ফুট উঁচু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কালোপাথরের মূর্তি আছে। এছাড়াও, কালাপাহাড়ে লাইব্রেরি, মিউজিয়াম ও অডিটোরিয়াম আছে। উল্টোদিকে নওবত পাহাড়ে রূপায়িত হয়েছে ঝুলন্ত উদ্যান ( Hanging Garden ) ও ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানি শিল্প সহযোগিতায় গড়ে ওঠা অত্যাধুনিক বি. এম. বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম ( B. M. Birla Planetarium ), বিড়লা সায়েন্স মিউজিয়াম ( Birla Science Museum )। উল্লেখিত বিজ্ঞান কেন্দ্রে ( Science Centres ) মাসের শেষ বৃহস্পতিবার বাদে রোজ নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুসারে ইংরেজি, হিন্দি ও তেলুগুতে ধারাবিবরণীসহ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। সামান্য দামের টিকিটের বিনিময়ে এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

হুসেন সাগর ( Hussain Sagar ) - নওবত পাহাড় থেকে বেগমপেট লাগোয়া এই বিশাল কৃত্রিম জলাশয়ের দৃশ্য দেখতে দারুণ সুন্দর লাগে। বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময় ও রাতে আলোকমালায় সজ্জিত চারপাশের পরিবেশ আরও মায়াবী হয়ে ওঠে। সান্ধ্য ভ্রমণের আদর্শ পরিবেশ। এখানে অনেক ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্যারাসেলিং, বোটিং, লাক্সারি/ প্লেজার ক্রুজ-এর আকর্ষণ অনবদ্য। হায়দ্রাবাদ ও সেকেন্দ্রাবাদ শহরের মাঝে এই বিশাল ঐতিহাসিক কৃত্রিম হ্রদটি অবস্থিত। রোগমুক্তিতে হুসেন শাহ আলির প্রতি খুশি হয়ে ইব্রাহিম কুলী কুতবশাহ ১৫৬২ খ্রিস্টাব্দে এই লেকটি খনন করান এবং হুসেন শাহের নাম অনুসারেই এর নাম হয়। লেকের বুকে সেতুতে পাথর দিয়ে ৩৬ জন মনীষীর মূর্তি গড়া হয়। লেকের পাড়ে বিখ্যাত বাঙালি নীতীশ রায়ের নকশায় HUDA ( Hyderabad Urban Development Authority )-র গড়া ৩৪ একর ব্যাপী ফাইবার গ্লাসের তৈরি নানা সম্ভারের এন. টি. আর. গার্ডেনটিও ( N. T. R. Gardens ) অপরূপ। দুপুর ২.৩০টা থেকে রাত ৮.৩০টার মধ্যে এখানে প্রবেশ করতে হবে। লেকের দক্ষিণ-পশ্চিমে অতীতের টাউন হলে বর্তমানে বিধানসভার অধিবেশন বসে। বিধানসভার পিছনে রয়েছে জুবিলি হল ( Jubilee Hall )।আরও অনেক পার্ক আছে পুরো শহর জুড়ে। জুবিলী হিলস অঞ্চলে প্রায় ৩৫০ একর জায়গা জুড়ে শতাধিক প্রজাতির পাখি ও নানা জীবজন্তু নিয়ে রয়েছে কে. বি. আর. ন্যাশনাল পার্ক ( K. B. R. National Park / Kasu Brahmanandha Reddy National Park, Jubilee Hills )। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বাঁধ তৈরির মালমশলা দিয়ে ইন্দিরা পার্কে গঠিত হয়েছে রক গার্ডেনস ( Rock Gardens in Indira Park ), এম চেন্না রেড্ডি স্মারক ( M. Chenna Reddy Memorial ), সঞ্জীবাইয়া পার্ক ( Sanjibaiya Park ) পর্যটক বিনোদনে অনবদ্য। টুইন সিটি অর্থাৎ Hyderabad ও Secunderabad-র সংযোগকারী ৩.৬ কি. মি. দীর্ঘ নেকলেস রোডটিও ( Necklace Road, Hussain Sagar ) খুব সুন্দর। এটি হুসেন সাগরের পাড় ধরে গড়ে তোলা হয়েছে।

শহরের অন্যতম আকর্ষণ হুসেন সাগর লেকের নিজামিয়া অবজারভেটরির ( Nizamia Observatory ) বুদ্ধপূর্ণিমা কমপ্লেক্স বা লুম্বিনী পার্ক ( Buddha Purnima Complex / Lumbini Park )। এই পার্কের Hussain Sagar Boating Point থেকে নৌকা বা ফেরিতে করে পৌঁছে যান লেকের মাঝের Rock of Gibraltar-এ অবস্থিত গোমতেশ্বরের সমান উচ্চতার অর্থাৎ প্রায় ১৮ মিটার উঁচু ৩২০ টন ওজনের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভগবান বুদ্ধদেবের ( Buddha Statue ) মনোলিথিক মূর্তির কাছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী N. T. Ramarao-র উদ্যোগে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তৈরির কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৯০ তে। মূর্তি প্রতিষ্ঠার সময় বার্জ ডুবে মারা যান আটজন। এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে লেকের জল থেকে মূর্তিটি তুলে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৩-র মে মাসে মহামান্য দলাইলামা স্ট্যাচুর আবরণ উন্মোচন করেন। উদ্যানের সৌন্দর্য বাড়াতে Musical Dancing Fountain তৈরি করা হয়েছে। ঢোকার রাস্তার ফুলের ঘড়িটিও ( Flower Clock ) দুর্দান্ত। শীতকালে চেনা-অচেনা বহু রকমের পরিযায়ী পাখিরা ( Migratory Birds ) এই লেকের সৌন্দর্যকে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। চাইলে জলে বোটিং করে উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে ঘুরতে পারবেন।

নওবত পাহাড় লাগোয়া ফতে ময়দান অর্থাৎ ভিক্টরি ময়দানে গোলকুন্ডা দখলের সময় ঔরঙ্গজেবের ক্যাম্প বসেছিল। এখন এখানে একটি খেলার স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে। নাম হলো লাল বাহাদুর স্টেডিয়াম ( Lal Bahadur Shastri Stadium, Fateh Maidan, Abids )। কনডাকটেড ট্যুরেও দেখে নিতে পারেন। হাইটেক সিটির আর দুটি পছন্দের জায়গা হলো, আইম্যাক্স থিয়েটার ( Imax Theatre ) ও সাইবার টাওয়ার ( Cyber Tower )।

সালার জং যাদুঘর ( Salar Jung Museum ) - মুসী নদীর দক্ষিণ পাড়ে এই ঐতিহাসিক মিউজিয়ামটি অবস্থিত। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন মীর ইউসুফ আলী খান। এখানকার বেশিরভাগ স্মারক সংগ্রহ তিনিই করেছিলেন। বিবাহ করেননি। এই মহান কাজের জন্য তিনি তাঁর সম্মানিত চাকরি সময়ের আগে ছেড়ে দেন। তাঁর মৃত্যুর পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় স্বার্থে এটি সরকারি মিউজিয়ামের স্বীকৃতি দেন। তখন সংগ্রহশালাটি ছিল সালার জং প্রাসাদে ( Salar Jung Palace )। পরে ১৯৬৮ নাগাদ বর্তমান বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। একক সংগ্রহের যাদুঘর হিসেবে বিশ্বে একটা আলাদা মর্যাদা আছে। পুরোটা মেইন, ইস্টার্ন ও ওয়েস্টার্ন - এই তিন ব্লকে ভাগ করে ৩৫ টি কক্ষে ৩৫০০০ সম্ভারে অতীতের বিত্তের প্রাচুর্য প্রদর্শিত হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সারা পৃথিবী থেকে আনা অনেক মূল্যবান সামগ্রী স্থানাভাবে গোডাউনে আজও বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে আছে। চীন, জাপান ও বর্মা থেকে আনা জিনিসের জন্য আলাদা আলাদা হল আছে। এছাড়া, জুয়েল হল, পেইন্টিং হল, স্কাল্পচার হল, ম্যানাসক্রিপ্ট হল দর্শকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। ইতিহাসও যেন জেগে ওঠে নুরজাহানের ড্যাগার, টিপুর হাতির দাঁতের চেয়ার, ঔরঙ্গজেবের তলোয়ার, জাহাঙ্গীরের সুরাপান পাত্রে। ভিতরে প্রবেশ করে একে একে দেখে নিন ব্রোঞ্জ ও টেক্সটাইলের সামগ্রী, পাথরের মূর্তির ভান্ডার, দক্ষিণ ভারতীয় শিল্প সম্ভার, খ্রিস্টপূর্ব সময় থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ের ভারতীয় ভাস্কর্য, বয়ন শিল্প, ছোটদের জন্য সংগ্রহ আছে ৫, ৬, ৭ নম্বর ও আরও কয়েকটি ঘরে। এই ঘরগুলোতে উল্লেখযোগ্য হলো পেঁচামুখী ঘড়ি, পা থেকে কাঁটা তোলা যুবক, খেলনা ও বিদেশি পুতুলসমূহ। হাতির দাঁতের রকমারি শিল্প। ঔরঙ্গজেব, শাহজাহান, বাহাদুর শাহের তরবারি। টিপুর বন্দুক। ধাতব সম্ভার, মিনিয়েচার ও ছবির সংগ্রহ। রয়েছে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ফ্লাইং বোট ( এটি খুব আকর্ষণীয় একটি ঐতিহাসিক সামগ্রী )। ইংরেজি ১৮৭৬ সালে ৭ লাখ টাকা খরচ করে রোম থেকে আনা বিখ্যাত ইতালীয় ভাস্কর বেনজোনির হাতে সৃষ্টি হওয়া ভেইলড রেবেকা বা অবগুন্ঠিতা সুন্দরীর অনবদ্য পাথরের মূর্তি আছে, যা একঝলকে দেখলে জীবন্ত মনে হয়। একটি কাঠের গুঁড়ির একদিকে নারী ও অন্যদিকে পুরুষ অর্থাৎ মেফিস্টোফিলিস-মার্গারেট মূর্তিটিও অতুলনীয়। বৈচিত্র্যময় ঘড়ির সম্ভারও আপনাকে মুগ্ধ করবে। ১৬ নম্বর ঘরের সামনে রাখা Cuckoo Clock-টি দেখলে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। মডার্ন আর্ট ছবির কালেকশন এই মিউজিয়ামের মর্য্যাদাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। রবি ভার্মা, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুনীল, প্রকাশ ছাড়াও আরো অনেক স্বনামধন্য শিল্পীর আঁকা ছবি আছে। মিনিয়েচার ধর্মী শিল্পকলায় রূপায়িত হয়েছে ভারতীয় পুরাণ-ইতিহাস-সমাজ। অন্যান্য ঘরগুলোতে রয়েছে- জাপানি-ফরাসি সামগ্রী, কাশ্মীরি সম্ভার, ভারতীয় ও চীনা মণির কালেকশন, পুরাতন পান্ডুলিপি - বিশেষ করে কোরানের সম্ভার, বিদরি শিল্প, ইউরোপিয়ান শিল্পকলার মধ্যে পোর্সেলিনের বাসনকোসনসহ নানা জিনিস উল্লেখ করার মতো। আরও উল্লেখযোগ্যের মধ্যে বৌদ্ধ ভাস্কর্যগুলো অবশ্যই দেখে নেবেন। তবে এর সাথে আর একটি কথা বলে রাখা উচিত, এখানে মাঝেমধ্যেই ঘরের পরিবর্তন করা হয়। আগে থেকে জানা ঘরে আপনার নির্ধারিত দ্রষ্টব্য নাও থাকতে পারে। এখানে পৌঁছনোর পরে টিকিট কেটে তারপর জেনে নিন কোন ঘরে কি আছে। কেবলমাত্র শুক্রবার ও পাবলিক হলিডেগুলিতে বন্ধ থাকে। এছাড়া, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ১৮ বছর বয়সের উর্দ্ধের ভারতীয়দের অল্প টাকার টিকিট কাটতে হয়। বিদেশিদের তার তুলনায় অন্ততপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ গুণ বেশি টাকার টিকিট কাটতে হয়। সকাল সাাড়ে দশটার পরে প্রতি আধ ঘন্টা অন্তর বিনামূল্যে গাইড পেয়ে যাবেন। ক্যামেরা ও সঙ্গের অন্যান্য জিনিস গেটে বাধ্যতামূলক জমা রাখতে হবে। পুুুরো সালার জং ঠিকভাবে দেখতে কমপক্ষে ৫ ঘন্টা সময় লাগে। বাস বা ভাড়া করা গাড়িতে করে এখানে সহজে আসতে পারবেন।

মুসীনদী বাঁধের নিউ রোডের পাশে লাল-সাদা পাথরে ইন্দো-সেরাসেনিক শৈলীতে তৈরি হাইকোর্ট বা ওসমানিয়া আদালত ( Osmania Court / Highcourt ) বিল্ডিং রয়েছে। এর উল্টোদিকে আছে ওসমানিয়া জেনারেল হাসপাতাল ( Osmania General Hospital )। হাসপাতালের পূর্বে অবস্থিত আসাফিয়া স্টেট সেন্ট্রাল লাইব্রেরির ( Asafia State Central Library ) উর্দু, আরবি, পারসি গ্রন্থ ও পান্ডুলিপির সংগ্রহ উল্লেখ করার মতন।

চারমিনার ( Charminar, Charminar Road, Char Kaman, Ghansi Bazaar, Hyderabad, Telangana - 500002. ) - পুরাতন শহরের প্রাণকেন্দ্রে সালার জং থেকে বাজারমুখী পথে চুন আর পাথর দিয়ে তাজিয়ার আকারে গড়ে তোলা হয়েছে কারুকার্যময় হলুদ রঙের চারমিনার। চারটি সরু মিনার রয়েছে চারকোণে। প্রতিটি মিনার ৫৬ মিটার উঁচু, পরিধি ১৫ থেকে ৩০ মিটারের মধ্যে। পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণে চারমুখী চারটি গেট। ১৪৯ ধাপের স্পাইরাল সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা যায়। দ্বিতীয় তলায় মন্দির, তৃতীয় তলে মসজিদ ও নবাব পরিবারের শিশুদের কোরান পাঠের স্কুলও বসেছে। তবে, বর্তমানে সিঁড়িপথ বন্ধ আছে। মহম্মদ কুলী কুতুবশাহ শহর থেকে প্লেগ মহামারী দূর করার স্মারক হিসেবে ১৫৯১-১৫৯৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে এটি গঠন করেন। রূপবতী হিন্দু নর্তকী ভাগমতীকে প্রথম দর্শনের স্থানেই এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যটি তিনি তৈরি করেন। ভাগমতী পার্শ্ববর্তী চিচাম গ্রামে বাস করতেন। সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত আলোকসজ্জায় সজ্জিত থাকে। বেলা ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই সৌধটিকে সর্বসাধারণের সৌজন্যে উন্মুক্ত রাখা হয়। সামান্য কয়েকটি টাকার টিকিট কেটেই এখানে ঢোকা যায়।

এর পশ্চিমে গাড়িঘোড়ায় ঠাসা, ঘিঞ্জি পথ, কাঠ ও পাথরের কার্ভিং বাড়িঘর, পিঙ্ক রঙের এলিফ্যান্ট গেট পেরিয়ে দেখে আসুন চক-কি-মসজিদ ( Chowk-ki-Masjid ) ও ভিক্টোরিয়ান ক্লক টাওয়ার ( Clock Tower )। যাওয়ার পথে পড়বে বহু পুরনো লাড বাজার ও তার নামাঙ্কিত রোড ( Laad Bazaar Road )। চারপাশে প্রচুর দোকানপাট। ঘরসংসার, সাজসজ্জা, পোশাক পরিধান, অ্যান্টিক জিনিস, বিবাহ সম্পর্কিত, খাবার দাবার ইত্যাদি নানারকম দোকান-স্টল পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। উত্তর দিকে আছে ১৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে তৈরি করা চারকামান ( Char Kaman )। লাড বাজারের দক্ষিণ-পূর্বে বাজারকে ঘিরে রয়েছে রয়্যাল প্যালেস কমপ্লেক্স অর্থাৎ পাঁচ মহল্লা, চৌ মহল্লা, কিং কোঠি, বরাদরির অবস্থান। তবে এখন এগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হওয়ার মুখে।

জামিয়া মসজিদ ( Jamia Masjid / Mosque ) - Charminar-এর উত্তর-পূর্বে সঙ্কীর্ণ গলিপথে ১৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই শহরের দ্বিতীয় প্রাচীন মসজিদ হলো জামিয়া।

মক্কা মসজিদ ( Mecca Masjid / Mosque ) - চারমিনার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ৮ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছিল দক্ষিণ ভারতের এই বৃহত্তম মসজিদটি। ভিতরের চত্বরে ১০০০০ পূণ্যার্থী একসাথে নমাজ পড়তে পারেন। স্থাপত্য নির্মাণ সুলতান আবদুল্লাহ ্কুতুব শাহের আমলে শুরু হলেও সমাপ্ত হয় গোলকুন্ডা দখলের পর ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে। তোরণটি একখন্ড পাথর দিয়ে তৈরি। খিলানের ভর রেখেছে ৩০ মিটার উঁচু পিলার। এর সকল দরজা ও পিলার তৈরি হয়েছে খন্ড খন্ড গ্রানাইট পাথর দিয়ে। চুনবালির কারুকার্য, ফ্রেস্কো চিত্রগুলি খুবই সুন্দর। তিন দিকে অনবদ্য ৫ টি করে খিলান। এর নামকরণের কারণ নিয়ে নানা মুনির নানা মত আছে। কেউ বলেন, একটি ইট মক্কা থেকে আনার জন্য এই নামকরণ হয়েছে। আবার অনেকে বলেন, মক্কার মসজিদের আদলে তৈরি বলে এই নাম। ২০০ বছরেরও বেশি সময় আগে ইরান থেকে নিয়ে আসা একটি কালো পাথরের আসন চত্বরের ডানদিকে রাখা আছে। বামদিকে রয়েছে নিজাম পরিবারের সমাধি।

মীর আলম ট্যাঙ্ক ( Mir Alam Tank, Nehru Zoological Park, Kishan Bagh ) - এই শহরের একটি অতি মনোরম স্থান ও জনপ্রিয় পিকনিক স্পট হলো মীর আলম ট্যাঙ্ক। এটি কিষান বাগ এলাকায় ব্যাঙ্গালোর রোডের পাশে অবস্থিত। লেকের জলে বোট, লঞ্চ ও হাউসবোট ভেসে বেড়াচ্ছে। ২০ বর্গকিলোমিটার ব্যাপ্ত এই কৃত্রিম লেকের ঠিক পাশেই রয়েছে আর একটি সুবিখ্যাত ভ্রমণস্থল নেহেরু জুলজিক্যাল পার্ক বা চিড়িয়াখানা। এটি শিশুদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি জায়গা। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ৩৫০ একর জমির উপর গড়ে তোলা এই চিড়িয়াখানায় কমবেশি ২৫০ জাতির প্রায় ২৫০০ টি প্রানী রয়েছে। খোলা নীল আকাশের নীচে স্বাভাবিক প্রকৃতিতে বনের পশুরা ঘোরাফেরা করতে পারছে এখানে। ভারতের প্রথম লায়ন সাফারি পার্কটিও ( First Lion Safari Park in India ) এখানে অবস্থিত। পশুরাজ সিংহের রাজসিকভাবে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য খুব কাছে থেকে দেখতে পাবেন। নির্দিষ্ট সময়ে ১৫ মিনিট পরপর মিনিবাসে করে সিংহদর্শনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর আছে টাইগার সাফারি ও বিয়ার সাফারি পার্ক ( Tiger and Bear Safari Park ), প্রবেশ পথে প্রাগৈতিহাসিক স্টাফড্ জীবজন্তুর পার্ক, শিশুদের Amusement-র জন্য টয়ট্রেন, ছাগলে টানা রিকশা, টাট্টুঘোড়া-হাতি-উটের পিঠে চড়ার ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও কয়েকশো প্রজাতির পাখি রয়েছে পুরো চিড়িয়াখানা ও লেকের আশেপাশের গাছগাছালিতে। নিশাচর প্রাণীদের জন্য বিশেষ বাসস্থানও নির্মাণ করা হয়েছে এই নেহেরু জুলজিক্যাল পার্কে। সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

রামোজি ফিল্ম সিটি ( Ramoji Film City ) - হায়দ্রাবাদ ভ্রমণের একটি নতুন সংযোজিত হওয়া পর্যটন আকর্ষণ হলো ২০০০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা রামোজি ফিল্ম সিটি। শহর থেকে ৪০ কি. মি. দূরের হায়াৎনগরে ( Near Hayathnagar ) এটি অবস্থিত। অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানার সমস্ত বড়ো-মাঝারি শহরের সাথে বাস যোগাযোগ ভালো রয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রয়োজন মেটাতে সারা বিশ্বের পটভূমিকায় সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে এই জায়গাটি শ্যুটিং জোন্ হিসেবে। পাহাড়, পর্বত, বনজঙ্গল, বাগিচা, চাষবাস, চকচকে পথঘাট, ডিসকভারি পন্ড, নিচুতে আছে কৃপালু গুহা ( Kripalu Cave )। সান ফাউন্টেন, বাতিস্তম্ভগুলিও বেশ মজাদার। শুধু কি তাই? এই চত্বরে বস্তি, প্রাসাদপুরী, স্কুল-কলেজ, চার্চ-মন্দির-মসজিদ, সুইমিং পুল, বাস-রেল-বিমান বন্দরও রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম ইনটিগ্রেটেড ফিল্ম প্রোডাকশন কমপ্লেক্স এটি। সিতারা, সাহারা, বসুন্ধরা ও তারা নামের চারটি তারকা খচিত হোটেল ও ৭ টি রেস্টুরেন্ট হয়েছে। এইসব জায়গাগুলিতে খাবার পেয়ে যাবেন। ইচ্ছুকেরা নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী ব্যালে প্রদর্শনী ও কিভাবে শ্যুটিং হয় তা স্বচক্ষে দেখে নিতে পারেন। এখানে সব স্পটই কৃত্রিম। এই বিশাল ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সৃষ্টির নেপথ্যে যে দুজন ব্যক্তির নাম না করলেই নয় তাঁরা হলেন এনাডু পত্রিকার মালিক রামোজি রাও এবং বিখ্যাত গুণী বাঙালি স্থপতি নীতীশ রায়। এই নীতীশ রায়ই রামোজির স্বপ্নকে কাঠ ও প্লাইয়ের সাহায্যে বাস্তবে রূপায়িত করেছিলেন। পুরো ফিল্ম সিটি গাইডের নির্দেশ মেনে দেখতে হবে। কয়েক হাজার কর্মী এর দেখভালে নিয়োজিত আছেন। সাধারণ পর্যটকদের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। TSTDC সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার মধ্যে প্রতিদিন রামোজি ফিল্ম সিটি দর্শন করিয়ে নিয়ে আসছে। For Advance Booking :- (040) 23262150-54 / 9848126947.

সেকেন্দ্রাবাদ ( Secunderabad City ) - ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশদের হাতে হায়দ্রাবাদ শহর থেকে ৮ কি. মি. উত্তরে হুসেন সাগরের তীরে মিলিটারী ক্যান্টনমেন্ট ( Military Cantonment ) নগরীরূপে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। দুই শহরের ( Twin City ) সংযোগকারী রাস্তা হলো নেকলেস রোড ( Necklace Road )। নিজাম সিকান্দার ঝা-এর নাম থেকে এই শহরের নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে আধুনিক নগরায়ন খুব দ্রুততার সাথে এগোচ্ছে। সাধারণ নাগরিকদের জন্য নতুন নতুন ঝাঁ চকচকে উঁচু উঁচু বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে। সৈনিকাবাস কিছুটা দূরে বোলারুমে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের স্মৃতিতে নির্মিত হাসপাতাল, ইউনাইটেড সার্ভিস ক্লাব ( United Service Club ), রাষ্ট্রপতি ভবন ( Rashtrapati Nilayam / Bhavan, Bolarum ), ম্যালেরিয়া রোগের ওষুধের আবিষ্কর্তা স্যার রোনাল্ড রসের বাড়ির ( House of Sir Ronald Ross ) আলাদা পর্যটন আকর্ষণ রয়েছে। মহাকালী মন্দিরটিও ( Mahakali Temple ) দেখে নিতে পারেন। জুন-জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত Bonalu Festival-এ যোগ দিতে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন। সেকেন্দ্রাবাদ রেল স্টেশনকে ( Secunderabad Rail Station ) ঘিরে প্রচুর থাকা-খাওয়ার হোটেল রয়েছে। এই শহরে থাকার জায়গার কোন অভাব নেই।

আমলাপুর ( Amlapur ) - হাতে যথেষ্ট সময় থাকলে হায়দ্রাবাদ বা সেকেন্দ্রাবাদ থেকে বাসে করে আমলাপুর বেড়িয়ে নিতে পারেন। চালুক্য রাজাদের তৈরি কয়েকটি প্রাচীন মন্দিরের জন্য এই ভ্রমণস্থলের এত সুখ্যাতি। মন্দিরের শিল্পকর্মে পশ্চিম ভারতীয় ব্রাহ্মণ্য ধারার ও বুদ্ধগুহার আদলের প্রতিফলন ঘটেছে।

মেডক ( Medak, Telangana ) - হায়দ্রাবাদ থেকে রেল বা বাসে চলে যান প্রায় ১০০ কি. মি. দূরে অবস্থিত তেলেঙ্গানা সংস্কৃতির মর্মকেন্দ্র মেডকে। অতীতে এই স্থানের নাম ছিল সিধাপুর। কাকাতীয়দের সময়ে উন্নতির শিখরে পৌঁছায়। বিভিন্ন মন্দির-চার্চ-দুর্গ দেখতে পর্যটক আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। এখানেই রয়েছে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে গঠিত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং এশিয়ার বৃহত্তম ক্যাথেড্রাল চার্চ Medak Cathedral. এই গীর্জায় একসাথে ৫০০০ ব্যক্তি একত্রে উপাসনায় অংশ নিতে পারেন। এখানকার শিল্প, স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও জানালার রঙীন কাঁচের অলঙ্করণ অনবদ্য। অনুচ্চ পাহাড়ের মাথায় রয়েছে কাকাতীয় রাজা প্রতাপচন্দ্রের তৈরি করা মেডক দূর্গ ( Medak Fort )। এটি এই জায়গার আর একটি দুর্দান্ত ভ্রমণ দ্রষ্টব্য। এই ফোর্টে তিনটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করা যায়। তিনটি তোরণের নাম হলো প্রথমা ( Prathama ), সিংহ ( Simha ) ও গজ ( Gaja )। এছাড়া আছে ১৭ শতকে নির্মিত ৩.২ মিটার দীর্ঘ একটি কামান।

এই শহর থেকে গাড়িতে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নিজামদের মৃগয়াভূমি পোকারাম ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি ( Pocharam Forest and Wildlife Sanctuary Trail Road, Mirgudpalle, Telangana ) দেখে নিতে পারেন। পোকারাম লেককে ঘিরে সবুজ গাছগাছালিতে ছাওয়া প্রায় ১০ বর্গ কি.মি. ব্যাপ্ত অরণ্যে পাঁচ ধরনের অ্যান্টিলোপ, লেপার্ড, নেকড়ে, শম্বর, নীলগাই, চিঙ্কারা ছাড়াও নানাবিধ জীবজন্তুর দর্শন মেলে। ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র ( Eco Tourism Centre ) তৈরি হয়েছে। মেডকের নিকটবর্তী আরো কয়েকটি দর্শনীয় স্থান হলো -  মনজিরা ফরেস্ট ( Manjeera Forest ), ৮ কি. মি. দূরের এডুপাইলুর কনকদূর্গা দেবীর মন্দির, ১২ কি. মি. দূরের হরিদ্রা নদীর তীরের লক্ষ্মী নৃসিংহ স্বামী মন্দির, হরিদ্রা নদীতে স্নানে পূণ্য সঞ্চয় হয়। এমনকি চর্মরোগেরও উপশম হয়। ৬০ কিলোমিটার দূরে আছে নন্দী কান্দী অর্থাৎ স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে অভিনব তারকাকার রামলিঙ্গেশ্বর মন্দির, ৭১ কি. মি. দূরে মঞ্জিরা বাঁধের কাছে রয়েছে ১৪ শতকের শ্রীকাশী বিশ্বেশ্বর মন্দির, ৪৫ কি. মি. দূরে অবস্থিত কোটি লিঙ্গেশ্বর স্বামী মন্দির ইত্যাদি। মেডকে থাকা-খাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল-লজ আছে।

ভ্রমণের সময় কেনাকাটা ( What are The Things You Should Buy ( Marketing ) While Traveling in Hyderabad and Secunderabad - Twin City ? )

অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানার হাতের কাজের যথেষ্ট কদর আছে ভূ ভারতে। পারসীয় আদলে তামার উপর সোনা ও রুপোর কাজ করা সিগারেট কেস, অ্যাশট্রে, ফুলদানি, রকমারি পুতুল, রেকাব, বোতাম, ব্রোচ যেমন এই তালিকায় রয়েছে তেমনি সোনা ও রুপোর সুতোর কাজ করা হিমরু ব্রোকেড শাড়ি-শাল, সোনা-রুপোর অলঙ্কার, চন্দন কাঠের খেলনা ইত্যাদি কিনে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন বেড়ানোর স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে। হায়দ্রাবাদের আবিদ সার্কেল, সুলতান বাজার, বসিরবাগ, লাড বাজার, নামপালি এবং সেকেন্দ্রাবাদের এম. জি. রোড, সুলতান বাজার এইসব জিনিস কেনাকাটার জন্য সবচেয়ে সঠিক স্থান হবে। বিশেষ করে মুক্তো ও গয়না কেনার সেরা জায়গা হলো এম. জি. রোড, আবিদ সার্কেল, বসিরবাগ অথবা চারমিনারের চারপাশের বিভিন্ন দোকান। এই দুই শহরের দোকানপাট প্রতি রবিবার বন্ধ থাকে।

জনপ্রিয় স্থানীয় খাবার ( Popular Local Foods ) - রকমারি খাবারে যথেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে টুইন সিটির হোটেল রেস্তোরাঁর। নবাবি পদ্ধতিতে তৈরি মশলাদার আমিষ খাবার পাবেন মুসলিম রেস্টুরেন্টে আর নিরামিষ পাবেন হিন্দু হোটেলগুলিতে। প্রতিটি মেনুর স্বাদ অতুলনীয়। একমাত্র তারকাখচিত হোটেলে দেশি-বিদেশি, আমিষ-নিরামিষ সবরকম খাবার এক টেবিলেই যোগান পেয়ে যাবেন। আপনার উচিৎ হবে চারমিনারের কাছের মদিনা সার্কেলের মদিনা ও শাদাব হোটেলে বা আবিদ রোডের রেইনবো রেস্টুরেন্টে বিরিয়ানির সাথে মিরচি কা সালাম-এর স্বাদ গ্রহণ করা। এই রেস্তোরাঁয় মটনের তৈরি Haleem, Baghara, Baigan, Kabab, Biriyani, Nahari, Kulcha, Chicken-65 ও অন্যান্য মোগলাই খাবারের ডিশ সত্যিই অপূর্ব। দক্ষিণ ভারতীয় নিরামিষ থালি ও ভেজ বিরিয়ানির জন্য সম্পূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল, কামাথ বা উদিপি হোটেলে যেতে পারেন। হায়দ্রাবাদ স্টেশন রোডে কামাথ হোটেলের যে শাখা আছে তার উল্টোদিকের পাঞ্জাব রেস্টুরেন্ট বিখ্যাত ননভেজ মিলের জন্য। শ্রীবৃন্দাবন হোটেলের মুখোমুখি প্রিয়া হোটেলের যথেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে ভেজ ও ননভেজ মিল পরিবেশনায়। পাশের স্বাগতও যথেষ্ট ভালো। ভেজ খাবারে নামপালির লক্ষ্মী রেস্টুরেন্টের যথেষ্ট সুখ্যাতি আছে। আবিদ রোডের ব্রডওয়ে রেস্টুরেন্ট ও গোল্ডেন গেট রেস্টুরেন্টে চীনা-ভারতীয়-কন্টিনেন্টাল আহার মেলে। বেগমপেটের China Regency ( Airport Road ), হিমায়তনগরে Hai King Restaurant, সেকেন্দ্রাবাদে M. G. Road ছাড়িয়ে Golden Dragon - এরাও চাইনিজ খাবারের জন্য বিখ্যাত। আবিদের Palace Height - এ দেশি-বিদেশি-চীনা-তন্দুরি খাদ্য পাওয়া যায়। সেক্রেটারিয়েট চত্বরে ইন্ডিয়ান কফি হাউসের দারুণ খ্যাতি রয়েছে কোল্ড ও হট কফির সাথে দক্ষিণ ভারতীয় সুস্বাদু খাবার পরিবেশনের কারণে। এই প্রসঙ্গে সেকেন্দ্রাবাদ রেল স্টেশনের বিপরীতে গুরুদ্বারার নিকটে অবস্থিত বাঙালি প্রবীর দাসের খাবার হোটেল মহাকালী ক্যাটারিং-এর নাম না করলে তালিকা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এখানে ন্যায্যমূল্যে অনেক রকম বাঙালি খাবার খেতে পাবেন।

কনডাকটেড ট্যুর প্রোগ্রাম ( Conducted Tour Programmes ) - Telangana Tourism, Yatrinivas Complex, S. P. Road, Secunderabad - 3, Tel - (040) 27893100 / 9848126947 থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা পর্যন্ত গোলকুন্ডা দুর্গ ও কুতুবশাহি সমাধি, সালার জং মিউজিয়াম, নিজাম জুবিলী প্যাভিলিয়ন, চৌমহল্লা প্যালেস, জুলজিক্যাল পার্ক, চারমিনার, মক্কা মসজিদ, লুম্বিনী পার্ক, নওবত পাহাড়, বিড়লা মন্দির ইত্যাদি শহরের প্রধান বেশ কিছু দ্রষ্টব্য দেখিয়ে আনে। অর্ধেক দিনের হেরিটেজ ট্যুরে এসি কোচে গোলকুন্ডার লাইট এন্ড সাউন্ড শো, রামোজি ফিল্ম সিটি সহ আরো কিছু স্থান ঘুরিয়ে নিয়ে আসে। ১২ বছর বয়সের উর্ধ্বে পুরো ভাড়া লাগে। দর্শনী সমেত ভাড়া ধরা হয়। ITDC, 3-6-150 Himayatnagar Road, Hyderabad - 500029-থেকেও সুপার ডিলাক্স লাক্সারি বাসে প্রতিদিন শহর দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। ভাড়া ও প্রোগ্রাম একই রকম। যথেষ্ট সংখ্যক যাত্রী হলে TSTDC ( Telangana State Tourism Development Corporation ) নাগার্জুন সাগর, নাগার্জুনকোন্ডা, ইথিপোথালা ঘুরিয়ে নিয়ে আসে। ২ দিনের মন্ত্রালয়ম ট্যুরে তুঙ্গভদ্রার তীরের শ্রী রাঘবেন্দ্র মন্দির দর্শনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতি শনিবার। ২ দিনের ট্যুরে শ্রীশৈলম যাচ্ছে। বর্তমানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হেলিকপ্টারে তিরুপতি, তিরুমালাই, শ্রীনিবাস মঙ্গাপুরম, তিরুচামুর আর শ্রীকালাহস্তী দেখিয়ে আনা হয়। Rajiv Gandhi International Airport থেকে এই হেলিকপ্টার ছাড়ে। এছাড়াও অনেক প্রাইভেট ট্রাভেল কোম্পানি ও ট্যুর অপারেটর আছে যারা আকর্ষণীয় প্যাকেজ ট্যুরে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা ভ্রমণের বন্দোবস্ত করে। এদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের গাড়িও ভাড়ায় পাওয়া যায়।

প্যাকেজ ট্যুর সংক্রান্ত যেকোন রকম অনুসন্ধান ও সংরক্ষণের জন্য আপনার নিকটবর্তী নিম্নলিখিত যে কোন পর্যটন দপ্তরে যোগাযোগ করে নিন। -
(১) Tourism House, 3-5-891, Himayatnagar, Hyderabad - 500029, Tel. - (040) 23262150/51/52/53/54.

(২) Shakar Bhavan, Fateh Maidan, Basheerbagh, Hyderabad, Ph. No. - 29801040/9848540371.

(৩) Tank Bank Road, Telephone - 23450165/9848125720.

(৪) 4/1, Sikkim House, Middleton Street, Kolkata - 17. Tel. - (033) 22813679.

(৫) A. P. Bhavan, Contact - (011) 23381293.

(৬) Govt. of India Tourist Office, Sandozi Building, Himayatnagar Road, Hyderabad - 500029, Just Dial - 23261360 ( Sunday Closed ).

কিভাবে যাবেন? How to Go or Reach?

দেশের যেকোন স্থানের সাথে আকাশপথে, সড়কপথে ও রেলপথে টুইন সিটির খুব সুন্দর যোগাযোগ রয়েছে। এখানে পৌঁছবার জন্য অযথা চিন্তার কোন কারণ নেই। দক্ষিণ ভারতের যেকোন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বাসযোগে ও ট্রেনযোগে এখানে সহজে পৌঁছনো সম্ভব।

কোথায় থাকবেন? Where to Stay?

হায়দ্রাবাদ ও সেকেন্দ্রাবাদ রেল স্টেশনদ্বয়ের আশেপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রচুর হোটেল-লজ-গেস্ট হাউস রয়েছে। এগুলির মান ও দাম বিভিন্ন। এই দুই রেল স্টেশনের মধ্যেকার দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। কলকাতা যাত্রীদের কাছে অপ্রয়োজনীয় হলেও জেনে রাখা উচিত চেন্নাই-ব্যাঙ্গালোর রেলপথে হায়দ্রাবাদের সংযোগকারী স্টেশন কাচিগুদা। বিভিন্ন দাম ও মানের হোটেলও আছে কাচিগুদা স্টেশন রোডের আশেপাশে। সরাসরি গিয়ে দরদাম করে আপনার পছন্দসই ঘর ভাড়া করতে পারেন। আবার, আগে থেকে বিশ্বস্ত সরকারি / বেসরকারি ওয়েবসাইট থেকে তুলনামূলক সস্তায় ঘর বুকিং করে নিশ্চিন্তে যেতে পারেন। ভাগ্য ভালো থাকলে কোন না কোন অফারে আকর্ষণীয় ডিসকাউন্টে ঘর পেতে পারেন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please, Don't Spam.

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷