সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৯

[ Nice Weekend Tourist Attractions-Assam Tourism ]

PAST HISTORY & SOME VALUABLE INFORMATIONS ABOUT ASSAM:-

               উত্তর-পূর্ব ভারতের ( North East India ) একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হলো আসাম। অনেক সুন্দর সুন্দর ভ্রমণস্থল আছে সমস্ত রাজ্য জুড়ে। পাহাড়, নদ-নদী, অরণ্য, শস্যক্ষেত্র মিলিয়ে যেন এক মোহিনী নারী। ভ্রমণপিপাসু এবং ধর্মপ্রাণ মানুষদের যেন সবসময় হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মহাশক্তিপীঠ কামরূপ কামাখ্যার অবস্থানও এই রাজ্যে। আমার মতো তন্ত্রপ্রেমীদের কাছে রহস্যময়তায় মোড়া একটি চিরআকাঙ্খিত মহাপবিত্র তীর্থস্থান এই কামাখ্যা। বিশ্বের দীর্ঘতম নদ ব্রহ্মপুত্র বয়ে গেছে এই রাজ্যের উপর দিয়ে। এই বিখ্যাত নদটি যেমন একদিকে আশীর্বাদ তেমনি আর এক দিকে অভিশাপ। কারণ, এর জল এবং উর্বর পলিমাটিতেই গোটা আসাম এত শস্যশ্যামলা। আবার, বর্ষাকালে দুকূল ছাপিয়ে নির্বিচারে ধ্বংসলীলা চালাতে থাকে। এই উর্বর মাটি অনেক বিশ্ববন্দিত কিংবদন্তি ( World Famous Legend ) প্রতিভার জন্ম দিয়েছে। যেমন, আমাদের সকলের পরম শ্রদ্ধেয় সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার ও গীতিকার ভূপেন হাজারিকা ( Bhupen Hazarika )। আবার, প্রাকৃতিক সম্পদেও সমগ্র দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রেখেছে। কয়লা, চুনাপাথর, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাসের অফুরন্ত ভান্ডার রয়েছে এখানে। রাজ্যের ৩৫% অঞ্চলই অরণ্য অধ্যুষিত। একশৃঙ্গ গন্ডার, হাতি, বুনো মহিষ, চিতাবাঘ, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার প্রভৃতি বন্যপ্রাণীর দেখা মেলে এখানকার বনাঞ্চলে। চা উৎপাদনে সমগ্র দেশের মধ্যে এক নম্বর স্থানে রয়েছে। দেশে উৎপাদিত চায়ের ৫৫% অংশ শুধুমাত্র এই রাজ্যই যোগান দিচ্ছে।

              বিভিন্ন আদিম উপজাতির মানুষদেরও দেখা মেলে এখানে। অসমের হস্তশিল্পের ( Handicrafts/Handlooms ) দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য ও তার বৈচিত্র্য আপনার মন কেড়ে নেবেই। শিল্পীরা তাদের হাতের অসামান্য দক্ষতায় লোকশিল্পের আখ্যান তুলে ধরেছেন। জিপসি রমণীদের সূচিশিল্প নজর কাড়ে সবার। পিতলের তৈরি নানারকম জিনিসপত্র, বিদ্রি, রূপোর ঝালরের কারুকাজ, বাঁশ-বেত-কাঠের তৈরি বিভিন্ন গৃহস্থালীর জিনিস, চিত্রকলা, পাথরের দেবদেবী, হাতির দাঁত ও মোষের শিং - এর দ্বারা তৈরি নানা জিনিস, ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গোয়ালপাড়ায় পোড়ামাটির ও শোলার উপরে পৌরাণিক কাহিনীগুলির রূপায়ণ অবশ্যই তারিফযোগ্য। এখানে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন উৎসবও আজ বিশ্বের দরবারে বিশেষ মর্যাদা আদায় করে ছেড়েছে। যেমন, চৈত্র সংক্রান্তিতে কৃষি উৎসব বিহু ( Bihu )। নীচে এই রাজ্যে বছরব্যাপী অনুষ্ঠিত কয়েকটি বিশ্ববিখ্যাত উৎসবের নামের ( Name of Festivals ) তালিকা দিয়ে দিলাম স্থান ( Place ) ও সময় ( Time / Date ) সহযোগে।

ALL TOTAL LIST OF 29 VERY BIG, MOST POPULAR OR FAMOUS LOCAL FAIRS & MAJOR FESTIVALS

→   (1) Brahmaputra Beach Festival ( Guwahati, 15th - 17th January ); (2) Pani Dihing Bird Festival ( Sivasagar, January ); (3) Deling Patkal Festival ( Lekhapani, 16th - 19th January ); (4) Tea Festival ( Jorhat, February ); (5) Elephant Festival ( Kaziranga, 29th - 31st January ); (6) Rongali / Holi Utsav ( Guwahati, 28th - 30th April ); (7) Ambubachi Mela ( Guwahati, June ); (8) Ras Mahotsav / Raslila ( Majuli, 19th - 24th November ).

OTHERS:-

(9) Bihu Dance Utsav, (10) Majuli Fest, (11) Ali Ai Ligang, (12) Baresahariya Bhaona, (13) Bathow Puja, (14) Bohag Bihu, (15) Bohuwa Dance, (16) Bwisagu, (17) Dehing Patkai Fest, (18) Durga Puja, (19) Gaan Ngai, (20) Guwahati Theatre Utsav, (21) Karbi Youth Festival, (22) Konijuj, (23) Krishna Janmashtami, (24) Magh Bihu, (25) Me Dam Me Phi, (26) Namami Brahmaputra, (27) Parsem Kut, (28) Porag, (29) Rongker.

               এই রাজ্যের রাজধানী ( Capital City ) দিসপুর ( Dispur )। সবচেয়ে বড়ো শহর ( Largest City ) হলো গুয়াহাটি ( Guwahati )। মোট এলাকা ( Total Area ) বা আয়তন ৭৮৪৩৮ বর্গ কি.মি. বা ৩০২৮৫ বর্গ মাইল। মোট জনসংখ্যা ( Total Population ) ৩১১৬৯২৭০। জনঘনত্ব ( Population Density ) বা প্রতি বর্গ কি.মি.তে ৪০০ জন লোক বাস করেন। প্রতি ১০০০ পুরুষ পিছু নারী বাস করেন ৯৫৪ জন ( Male Female Sex Ratio )। মোট জনসংখ্যার ৭৩% মানুষ সাক্ষর ( Percentage of Literacy )। সাধারণ মানুষদের বলা হয় অসমীয়া ( Assamese )। সরকারি ভাষাও ( Official Language ) হলো অসমীয়া ( Assamese )। এছাড়া, ( Other Languages ) বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিরও চল আছে। মাথাপিছু বার্ষিক আয় ( Yearly Per Head / Per Capita Income ) ৭৪২০০ টাকা।

(1) AVERAGE WEATHER OR CLIMATE. (2) WHEN SHOULD YOU GO THERE? / BEST TIME TO VISIT OR TRAVEL THIS STATE.

           সারাবছর ধরেই পর্যটকদের আনাগোনা চলতে থাকে। তবে, অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস অবধি সময়ই সঠিক এখানে ঘুরতে আসার। আর বর্ষাকালে ( মে থেকে সেপ্টেম্বর ) অসমে না যাওয়াই ভালো। কারণ, অসমে প্রতি বছর বিধ্বংসী বন্যা অবশ্যম্ভাবী। তখন রাজ্যটি এক ভয়ঙ্কর চেহারা ধারণ করে। জনজীবনও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। আর এক ভয়ঙ্কর রূপ হয় ভূমিকম্প হলে।

Govt. Official Portal -
https://www.assam.gov.in

Tourism Related Website -
(1) https://tourism.assam.gov.in
(2) https://tourismcorporation.assam.gov.in

              মোট ৩৩টি জেলা আছে ( Total Number of Districts is 33 )। যথা - (1) Tinsukia, (2) Dibrugarh, (3) Dhemaji, (4) Charaideo, (5) Sivasagar, (6) Lakhimpur, (7) Majuli, (8) Jorhat, (9) Biswanath, (10) Golaghat, (11) Karbi Anglong, (12) Sonitpur, (13) Nagaon, (14) Hojai, (15) Karbi, (16) Dima Hassao, (17) Cachar, (18) Hailakandi, (19) Karimganj, (20) Morigaon, (21) Udalguri, (22) Darrang, (23) Kamrup Metro, (24) Baksa, (25) Nalbari, (26) Kamrup, (27) Barpeta, (28) Chirang, (29) Bongaigaon, (30) Goalpara, (31) Kokrajhar, (32) Dhubri, (33) South Salmara Mankachar.

এই রাজ্যের যেকোন জায়গায় যাওয়া আসা, থাকা খাওয়ার ব্যাপারে আগে থাকতে অনলাইন বুকিং-এর জন্য নীচের বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে এক বা একাধিক ব্যবহার করতে পারেন। [ FOR ONLINE BOOKING OF FOODS / FLIGHTS, TRAIN / RAILWAY RESERVATION, HOUSES ON RENT/ FLATS RENTAL / LODGES / RESORTS / HOMESTAYS / TENTS / HOTELS ROOMS IN ANY PLACE WITH DISCOUNT, CHEAP AIR TICKETS, BUS BOOKING, CAR HIRE ]:-
1. https://www.trivago.in
2. https://www.goibibo.com
3. https://www.makemytrip.com
4. https://www.yatra.com
5. https://www.cleartrip.com
6. https://www.tripadvisor.in
7. https://www.ixigo.com
8. https://www.zomato.com

TOP PLACES TO VISIT OR MAJOR TOURIST ATTRACTIONS IN ASSAM WITH PROPER TOUR PLAN ON MAIN TRAVEL DESTINATIONS AND OTHER NEAREST BEAUTIFUL SPOTS:-

গুয়াহাটি ( Guwahati ) এবং দিসপুর ( Dispur ):- অসম তথা সারা উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার বলা হয় গুয়াহাটি শহরকে। গুয়া শব্দের অর্থ সুপারি এবং হাটি শব্দের অর্থ হাট। প্রচুর সুপারি উৎপাদন হতো বলে এই স্থানের এই নামকরণ হয়েছে। এই শহরে তথা রাজ্যে পান খাওয়ারও ভালো চলন আছে। পৌরাণিক যুগে এর নাম ছিল প্রাগজ্যোতিষপুর। ব্রহ্মপুত্র অর্থাৎ লোহিত নদের দক্ষিণ পাড়ে এই বৃহৎ নগর গড়ে উঠেছে। ব্রহ্মপুত্রের সৌন্দর্যও অতি মনোরম। পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয় জন্ম হওয়ার পর রাজ্যপাট শিলং থেকে গুটিয়ে গুয়াহাটি-শিলং রোডের উপর দিসপুরে নতুন করে রাজধানী স্থাপিত হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে শহরও গড়ে তোলা হয়েছে। এই নতুন রাজধানীতেও অনেক পর্যটন স্থল আছে। গুয়াহাটিকে চায়ের শহর বলা হয়। Dispur-এ চা নিলাম কেন্দ্রে CTC চা বিকোচ্ছে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে। শিলং যাওয়ার পথে একদিনে বা দুইদিনে এই সুন্দর সাজানো শহরটি দেখে নিতে পারেন। 

সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক শহর রূপে সমগ্র পূর্ব ভারতে গুয়াহাটির আলাদা সুখ্যাতি আছে। ক্রমশঃ আধুনিক সাজে বেড়ে চলেছে। এই প্রাচীন শহরে শৈব, বৈষ্ণব, তন্ত্র, বৌদ্ধ, ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্মের সর্বধর্ম সহাবস্থান ঘটেছে। জল, স্থল ও আকাশপথে সারা পূর্ব ভারতের সঙ্গে এই দুই শহর যুক্ত। নেহেরু পার্কের উল্টোদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কাছারি প্রাঙ্গন। আদালতের বিপরীতে নদের মাঝে অবস্থিত ছোট দ্বীপ ভস্মাচল বা ভস্মকূট যেটি বর্তমানে পিকক আইল্যান্ড নামে পরিচিত। এই পাহাড়ি দ্বীপের টিলার মাথায় রয়েছে ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হওয়া উমানন্দ মন্দির ( Umananda Temple )। এই প্রাচীন মন্দিরে দেবী কামাখ্যার ভৈরব শিব দেবতা হিসেবে পূজিত হন। জনশ্রুতি আছে, শিবের ক্রোধাগ্নিতে কামদেব এখানেই পুড়ে ছাই হয়ে যান। এখানে শিবরাত্রি উৎসব খুব ধুমধামের সাথে পালন করা হয়। তখন দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর সংখ্যক পূণ্যার্থী আসেন। এখানে অহম রাজাদের সময়ে নির্মিত আরো ২ টি মন্দির রয়েছে। কয়েক ধাপ নামতেই পৌঁছে যাবেন সঙ্কটমোচন হনুমান মন্দিরে। কাছারি ঘাট থেকে যন্ত্রচালিত বোট বা ফেরি লঞ্চে এখানে পারাপার করা যায়। 

শুক্রেশ্বর ঘাটের ( Shukreshwar Ghat ) কাছে শুক্রেশ্বর টিলায় আছে হিন্দু ও বৌদ্ধ স্থাপত্যের নিদর্শন স্বরূপ জনার্দন মন্দির বা শ্রী শ্রী জনার্দন দেবালয় ( Janardan Temple / Shree Shree Janardhan Devalaya )। বহু প্রাচীন এই মন্দিরটিকে নতুন করে ১৭ শতকে সংস্কার করা হয়েছিল। সূর্যাস্তের সময় ঘাট থেকে ব্রহ্মপুত্র ও লাগোয়া পার্কটিকে ( Sukreswar Park ) অপরূপ সুন্দর লাগে। কাছেই রয়েছে পান বাজার এলাকা ( Pan Bazar )। 

কোথা থেকে ভ্রমণের স্মৃতি স্বরূপ কি কি কেনাকাটা করবেন? What are The Things You Should Buy ( Marketing ) While Traveling in this City? 

এখান থেকে অসম সিল্ক, এন্ডি, পাটজাত দ্রব্য ও মুগার বসন কেনাকাটা করতে পারেন। এছাড়া, বাঁশ ও বেতের তৈরি নানা হস্তশিল্প সামগ্রী কিনতে পারবেন। আপনার অসম ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন আপনি ফ্যান্সি বাজারের ( Fancy Bazaar ) দোকানপাট বা অসম স্পান সিল্ক মিলের শোরুম গণেশপুরী অথবা জি. এন. বরদলুই রোডের পূর্বশ্রী থেকেও কিনতে পারেন। 

আমবাড়ি এলাকার ট্যুরিস্ট লজ লাগোয়া রিজার্ভ ব্যাংকের পিছনে অসম রাজ্যের অতীত সময়ের বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে আপনার আগমনের অপেক্ষায় রয়েছে অসম স্টেট মিউজিয়াম ( Assam State Museum, Dighalipukhuri )। সপ্তাহের সোমবার, মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ শনিবার, অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রত্যেকদিন গরমকালে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা, শীতকালে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪ টা অবধি এই সংগ্রহশালাটি খোলা থাকে। এটি অসমের শিল্প-সংস্কৃতি এবং প্রাচীন সম্পদের অনন্য সংগ্রহশালা। 

উজান বাজারে গুয়াহাটি প্লানেটেরিয়াম ( Guwahati Planetarium, Uzan Bazar ) বা তারাঘর অবস্থিত। এখানে এসে টিকিট কেটে মহাকাশ সম্পর্কিত প্রদর্শনী দেখা যায়। 

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রথম বিজ্ঞান মিউজিয়াম ও আঞ্চলিক বিজ্ঞান কেন্দ্র হয়েছে শহরের খানাপাড়া অঞ্চলে ( Science Museum & Regional Science Centre, Khanapara )। সোমবার ছাড়া প্রতিদিন খোলা থাকে। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস অবধি প্রত্যেকদিন সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত আর মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস অবধি প্রত্যেকদিন সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত দেখে নিতে পারবেন তারামণ্ডল, মহাকাশ, নদী উপত্যকা, সাগরীয় তরঙ্গ, ভূমিকম্প, বিজ্ঞান ও চলচ্চিত্র প্রদর্শন, আকাশ নিরীক্ষণ ছাড়াও আরও নানাকিছু। 

শহরের ৩ কি. মি. পূর্বে চিত্রাচল পাহাড়ের পশ্চিমে নবগ্রহ মন্দির ( Nabagraha Temple ) অবস্থিত। অতীতে কোন টেলিস্কোপ ছিল না। তাই টেলিস্কোপের অভাবে তখনকার বিজ্ঞানীরা খালি চোখে নবগ্রহের জায়গায় ৭ টি গ্রহ দেখতেন। সেই হিসেব অনুসারে সূর্য, চন্দ্র, বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি - এই সাতটি গ্রহের মনোলিথ মূর্তি বানানো হয়েছে লিঙ্গমূর্তিকে ঘিরে। এই চত্বরে প্রচুর বানর আছে। গাছ থেকে গাছে লাফিয়ে বেড়ায়। তাই সঙ্গের খাবার একটু সাবধানে রাখবেন। অতীতে এই স্থানে জ্যোতিষশাস্ত্রের চর্চা হতো। আঅবসর সেই কারণেই এই জায়গার নামকরণ হয়েছিল প্রাগজ্যোতিষপুর। 

শহর থেকে মাত্র ১০ কি. মি. দূরে উত্তর-পশ্চিমে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর নামের তিন শিখরযুক্ত নীলাচল পাহাড়ে ৫২৫ ফুট উঁচু শিব পর্বতে বিশ্ববিখ্যাত শক্তিপীঠ কামাখ্যা মন্দির ( Kamakhya Temple, Nilachal Hill ) অবস্থিত। বিদেহরাজ জনকপুত্র নরক কামরূপ জয় করে দেবীর সেবায়েত নিযুক্ত হন। আর দেবী হন রাজকুল আরাধ্যা। পুণ্য শক্তিপীঠ কামাখ্যা হ'ল তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান। দৈত্যরাজ নরকাসুরের তৈরি মূল মন্দিরটি ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন বাংলার সুলতান সুলেমানের সেনাপতি কালাপাহাড়ের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তারপরে কোচবিহারের রাজা নরনারায়ণ ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে নতুন করে মন্দির গড়েন। ১৮৯৭-র ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতিও করেন সেই সময়ের কোচবিহার রাজ।

এবার আসি মন্দিরের গঠন প্রসঙ্গে। ডিম্বাকার মৌচাকের আদলে নির্মিত এর শিখরদেশে ৭ টি চূড়া, প্রস্ফুটিত পদ্মের উপর ৩ টি সোনার কলসি এবং তার উপর সোনার ত্রিশূল রয়েছে। মন্দিরের দেওয়ালগুলি জুড়ে নানান ভাস্কর্যের মাধ্যমে হিন্দুপুরাণের দেবদেবীরা মূর্ত হয়েছেন। হাতির পিঠে চড়া মন্দির স্রষ্টা বিশ্বকর্মা ও দাড়িগোঁফওয়ালা শিবের মূর্তি রয়েছে মন্দিরে। প্রাচীন অহোম স্থাপত্যের নিদর্শন এই মন্দিরে দূর্গা, কালী, তারা, কমলা, উমা ও চামুণ্ডার প্রতিভূ রূপে পূজিতা হচ্ছেন দশ মহাবিদ্যার অন্যতমা পঞ্চরত্নের সিংহাসনে অষ্টধাতুর দেবী কামাখ্যা। ৫১ সতীপীঠের এক পীঠ এই মহাতীর্থের আরাধ্যা দেবী কামাখ্যা খুবই জাগ্রতা। 

পুরাণ মতে বিষ্ণুচক্রে খন্ডিত সতী দেবীর যোনি পড়ে এখানে। যোনি হ'ল ধরিত্রী অর্থাৎ মাটির প্রতীক। সমগ্র ভারতে একমাত্র কামাখ্যায় যোনি পূজার প্রথা প্রচলিত আছে। বিদ্যুৎহীন আলো-আঁধারি সিঁড়ি বেয়ে নেমে দেবীর গুহামন্দিরে প্রবেশ করতে হয়। সুন্দরভাবে বাঁধানো যোনি-বেদির ফাটল ফুঁড়ে ঝরনাধারায় বেরিয়ে আসা জলে থৈ থৈ করছে দেবীকুন্ড। আষাঢ় মাসে অম্বুবাচীতে দেবী ঋতুমতী হন। এই সময় জলের রঙ হয় লাল। জনশ্রুতি আছে, এই জল পান করলে নানা দুরারোগ্য ব্যাধির নিরাময় ঘটে। যোগিনী তন্ত্রে উল্লেখ আছে যে,- মহামুদ্রা যোনিপীঠ দর্শনে, স্পর্শে, চরণামৃত পান করলে মোক্ষলাভ হয় অর্থাৎ দেবঋণ-পিতৃঋণ-মাতৃঋণ থেকে মুক্তিলাভ হয়। দেবীর রক্তবস্ত্রের মাহাত্ম্যও অপরিসীম। অম্বুবাচীতে মহা ধুমধামের সাথে উৎসব পালন করা হয়। প্রদীপের আলোয় লাল সালুতে ঢাকা দেবী অর্থাৎ যোনিমূর্তি দর্শন করতে হয়।  মহিষবলির প্রথাও চালু আছে এই উৎসবে। সারা বছর ধরে ভারত ও বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রচুর তীর্থযাত্রী ও পর্যটক আসেন। বছরভর অনেকগুলি উৎসব পালিত হয় এই কামাখ্যায়। অম্বুবাচীতে মন্দির ৩ দিন বন্ধ থাকে। এছাড়াও পৌষ মাসের কৃষ্ণপক্ষে ২য় বা ৩য় দিনে পুষ্যা নক্ষত্রে পাহান বিয়া অর্থাৎ দেবীর বিয়ের আসর বসে। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করে বর কামেশ্বরদেব আসেন দোলায় চেপে। বসন্তে বাসন্তী উৎসবও উৎসবগুলির মধ্যে যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। এই বিশ্ববন্দিত দেবীমন্দির নানা সংস্কার, ভীতি, রোমাঞ্চ ও রহস্যে ঘেরা। মানুষের মনে দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে, পুরুষেরা কামাখ্যা পাহাড়ে গেলে ভেড়ায় পরিনত হয়। দেবী রুষ্ট হলে বংশলোপের আশঙ্কা থাকে। আবার দেবীমা সন্তুষ্ট হলে বন্ধ্যানারীও সন্তানসম্ভবা হন। 

সকাল ৮ টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খোলা থাকে, তবে দুপুর ১ টা থেকে ৩ টা অবধি ঘন্টা দুয়েকের জন্য মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়। মন্দিরের সামনে একটি ছোট্ট জলাশয় আছে, যার নাম সৌভাগ্যকুন্ড। যাত্রীরা এখানেই স্নান-তর্পন করে দেবীর পূজা দেন। মূল মন্দিরের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দশমহাবিদ্যা, সিদ্ধেশ্বর, কামেশ্বরসহ আরও নানা মন্দির। কামাখ্যায় থাকার জন্য পান্ডা ঠাকুরদের বাড়িই ভরসা। 

কামাখ্যা বাস স্ট্যান্ডের বিপরীতে উমাচল আশ্রম তথা স্বামী শিবানন্দ সরস্বতী মহারাজের প্রতিষ্ঠিত পূর্ব ভারতে প্রথম যোগবলে রোগ আরোগ্যকেন্দ্র শিবানন্দ যৌগিক হাসপাতালটিও আর এক দর্শনীয় স্থান। 

Kaamakhya Temple থেকে আরো ১৬৫ ফুট উঁচুতে ব্রহ্মা পর্বতের চূড়ায় ছোট্ট সাদা রঙের মা ভুবনেশ্বরী মন্দির ( Bhubaneswari Temple ) রয়েছে। ভিতরে এক গর্তে রক্তরঙা পাথরে বিরাজ করছেন দশ মহাবিদ্যার অন্যতমা দেবী ভুবনেশ্বরী। সমস্ত বেদী ফুলে ফুলে ঢাকা। এখানে বলি প্রথা চালু আছে। এই চত্বর থেকে Guwahati City পরিস্কার দৃশ্যমান। সূর্যাস্তের দৃশ্য এই পাহাড় থেকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। বাসস্ট্যান্ড থেকে পায়ে হেঁটে বা ট্যাক্সিতে করে এই মন্দিরে পৌঁছতে পারবেন। আর কাছারি বা নেহেরু পার্ক থেকে সকাল ৭ টার পরে প্রতি ঘন্টা অন্তর সরকারি বাস যাচ্ছে কামাখ্যা মন্দিরের সামনে। শেয়ারে বা এককভাবে ট্যাক্সি ভাড়া করেও যেতে পারেন। অটোও আছে। এছাড়া পান্ডুগামী বাসে পাহাড়ের পাদদেশে নেমে ভুবনেশ্বরী মন্দিরে যাওয়া যায়। 

খুব কাছেই অবস্থান করছে রেল উপনগরী পান্ডু ( Pandu )। পান্ডু রাজার নামে নাম। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে টিলার মাথায় পান্ডুনাথ মন্দিরও ( Pandunath Temple ) আছে। বনবাসকালে পঞ্চপাণ্ডবেরা এখানে এসেছিলেন। গণেশের ছদ্মবেশে কিছুকাল এখানে বসবাসও করেন। তাই এই মন্দিরে গণেশরূপী পঞ্চপাণ্ডবের মূর্তিও রয়েছে। এছাড়াও আরও নানান মূর্তি আছে। নৃসিংহ অবতারের মূর্তিটি কিছুটা বৈচিত্র্যপূর্ণ। তবে, অযত্ন আর অবহেলায় এখন এই ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন ভাস্কর্য ধ্বংসের প্রহর গুনছে। 

মূল City থেকে ১২ কি. মি. দক্ষিণ-পূর্বে সন্ধ্যাচল পাহাড়ে রয়েছে বশিষ্ঠ আশ্রম মন্দির ( Basistha Ashram Mandir, Sandhyachal Hill )। শোনা যায়, মহর্ষি বশিষ্ঠদেবের তপোবন ছিল এখানে। তাঁর পায়ের ছাপ রয়েছে। মূর্তিও তৈরি হয়েছে। তিন পাহাড়ি ঝোরা সন্ধ্যা, ললিতা ও কান্তা আশ্রমের কাছে মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছে বশিষ্ঠ গঙ্গার। এই গঙ্গায় ডুব দিয়েই শাপমুক্ত হন বশিষ্ঠ মুনি। এই গঙ্গা ছাড়িয়ে গ্রামের পথে যেতে বৈচিত্র্যমন্ডিত পাথরের হাতির মূর্তি আছে। হাতির পেটের গহ্বরে ছোট গণেশ মূর্তি আছে। পর্যটকদের জন্য বিশ্রামঘর তৈরি হয়েছে। আশ্রমের মাথায় রয়েছে শিব মন্দির। পথে পড়বে গুরুদ্বার ও রাধাকৃষ্ণ মন্দির। G. N. B. Road ও Station Road Junction থেকে সিটি বাস যাচ্ছে Vasistha Temple. 

কাছারি স্ট্যান্ড থেকে বাস, কনডাকটেড ট্যুরে বা অটোতে চেপে ৫ কিলোমিটার পূর্বে আর. জি. বড়ুয়া রোডে মনোরম পাহাড়ি পরিবেশে ১৭৫ হেক্টরের অসম স্টেট জু ও বটানিক্যাল গার্ডেন ( Assam State Zoo Cum Botanical Garden, R. G. Baruah Road, Ambikagirinagar ) দেখে আসুন। জু বা চিড়িয়াখানার বন্যজন্তুর সংগ্রহ তাক লাগিয়ে দেবে। এর পাশেই রয়েছে বটানিক্যাল গার্ডেন। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন খোলা থাকে। গ্রীষ্মকালে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা ও শীতকালে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত খোলা থাকার সময়সীমা। প্রবেশ মূল্য যৎসামান্য। 

হেঁটে হেঁটে দেখে নিন গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিদ্যা সংগ্রহের মিউজিয়াম, অসম ফরেস্ট মিউজিয়াম, কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ মিউজিয়াম, দিঘালিপুখুরি ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরি, লাইব্রেরি ভবনে আর্ট গ্যালারি, গান্ধী মন্ডপ, বি. বড়ুয়া রোডে স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সে নেহেরু স্টেডিয়াম, কনকলতা ইনডোর স্টেডিয়াম, আবিতা ইনডোর স্টেডিয়াম, বি. পি. চালিহা সুইমিং পুল, নুরুল আমিন টেনিস কমপ্লেক্স, আমবাড়িতে দিঘালিপুখুরি লেকে বোটিং, রুমানিয়ার সহযোগিতায় ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে গড়া নুনমাটি তৈল শোধনাগার, ১০ কি. মি. দূরে দিসপুরে রাজধানী শহর, কাছারির কাছে নেহেরু পার্কে নৃত্যরতা ঝরনা, বাঁশ ও দড়ি দিয়ে তৈরি করা সাঁকো, মুক্তাঙ্গন রেস্তোরাঁ, মজার খেলা বেলুনের সমুদ্র ছাড়াও বিনোদনের নানা ব্যবস্থা রয়েছে। শহরের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হলো ব্রহ্মপুত্র নদ। সকাল-সন্ধ্যাবেলা পাড় ধরে হাঁটুন, বোটিং বা ফেরিতে জলবিহার করুন ও তার সাথেসাথে দ্বীপ থেকে দ্বীপে ঘুরে ঘুরে স্থানীয় মানুষদের জীবনযাত্রা দেখুন। গুয়াহাটি ও দিসপুর ভ্রমণ পুরোপুরি সার্থক হবে। 

হাজো ( Hajo ):- সরাইয়াঘাট সেতু পার হয়ে শিঙিমারীচক হয়ে ২৫ কি. মি. উত্তর-পূর্বে ব্রহ্মপুত্রের উত্তর পাড়ে মনোরম প্রকৃতির মাঝে ৮ কিলোমিটারের ব্যবধানে দুই পাহাড়ের কোলে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ তীর্থ হাজো অবস্থিত। আবার পিতল, কাঁসা, তাঁতবস্ত্রের জন্যও হাজো যথেষ্ট বিখ্যাত। এমনকি মধ্যযুগে মোগল ঘাঁটিও ছিল এখানে। হাজোর নামকরণ নিয়ে নানা বিভ্রান্তি রয়েছে। কারও মতে, যোগভ্রষ্ট মুনির আর্তনাদ হত যোগই নাকি হাজো হয়ে থাকবে। কেউ বলেন, গৌতমবুদ্ধ এই পূণ্যভূমিতে নির্বাণ লাভ করতেই শোকার্ত শিষ্যের দলের হঅ-জু হঅ-জু আর্তনাদ থেকে এই নামের সৃষ্টি। আবার অন্যমতে, ১৫ শতকের রাজা হাজুর নাম  থেকেই এই নামকরণ। 

শোনা যায়, মক্কায় যেতে অক্ষম মুসলিমরা হজ করতে আসতেন গিয়াসুদ্দিন আউলিয়ার তৈরি মসজিদ বা মাজারে। এই পীরবাবা ১৩ শতকে তাব্রিজ থেকে এসেছিলেন। মক্কা থেকে এক পোয়া মাটি এনে এই মসজিদের ভিত গড়া হয়। গরুড়াচল পাহাড়ের এই মসজিদ পবিত্রতায় মক্কার এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ পোয়া মক্কা ( Poa Mecca Dargah Sarif, Hajo ) হিসেবে ভারত বিখ্যাত। 

হাজোর মূল আকর্ষণ হ'ল ৯৩ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠে ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় ৫-৬ শতকের শ্রী শ্রী হয়গ্রীবামাধব মন্দির ( Shri Shri Hayagriv Madhav Temple )। হয়াসুর দৈত্যকে নিধন করে দেবতা বিষ্ণু ঠাঁই নেন এই স্থানে। গর্ভগৃহে পাথরের উঁচু বেদিতে দেবতা, বাঁয়ে বুঢ়ামাধব ও বাসুদেব, ডাইনে জগন্নাথ, দ্বিতীয় মাধব ও গরুড়, দশভূজা দেবী দুর্গা, পাথরের মঠাকৃতি দৌলগৃহ ছাড়াও অনেক কিছু আছে এই দেবালয়ে। এছাড়া এখানে বসতি ছাড়িয়ে গ্রাম পেরিয়ে একই চত্বরে অর্ধনারীশ্বররূপী লিঙ্গমূর্তি কেদারেশ্বর ও কমলেশ্বর, লিঙ্গরূপী কামেশ্বর ও গণেশ মন্দির রয়েছে। তাই অনেকে হাজোকে পঞ্চতীর্থও বলে থাকেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যেমন বারবার মন্দির ধ্বংস হয়েছে, তেমনি মন্দির গড়াও হয়েছে বারেবারে। Hajo-র নানা ধ্বংসাবশেষ দেখে নিতে পারবেন এখানকার মিনি মিউজিয়ামে। সর্বধর্মাবলম্বীদের কাছে এই পবিত্র ধর্মস্থানটি এক মহান তীর্থ। গুয়াহাটি শহরের মাছখাওয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ঘনঘন বাস যাওয়া-আসা করছে এখানে। থাকার বেশ কয়েকটি সাধারণ হোটেল ছাড়াও সরকারি ট্যুরিস্ট লজ আছে হাজো বাসস্ট্যান্ডের কাছে। 

শুয়ালকুচি ( Sualkuchi ):- হাজো থেকে ২০ কি. মি. দক্ষিণে উত্তর ব্রহ্মপুত্রের তীরে শুয়ালকুচি সিল্ক সেন্টার ( Sualkuchi Silk Centre ) অবস্থিত। ফেরি সার্ভিস ও নিয়মিত বাস সার্ভিসের সাহায্যে গুয়াহাটির সাথে ভালো যোগাযোগ রয়েছে। পুরো এলাকা জুড়ে রাস্তার পাশে পাশে প্রতি ঘরে ঘরে ডুবি অর্থাৎ তাঁত আছে। তৈরি হচ্ছে এন্ডি, মুগা, পাটজাত বস্ত্রের বৈচিত্র্যময় সম্ভার। তাঁত কারখানার সাথে সাথে প্রতি বাড়িতে দোকানও আছে। এখানে আসলে নিজের চোখে যেমন কাপড় তৈরি দেখতে পারবেন, তেমনি পছন্দসই জিনিস অনেক সস্তা দামেও কিনতে পারবেন। শুয়ালকুচিতে এসে আপনি আপনার কাপড়ের ব্যবসার জন্যও পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যেতে পারেন। তাতে আপনার ব্যবসায়িক লাভের অঙ্ক অনেকটাই বেড়ে যাবে। 

মদন কামদেব মন্দিররাজি ( Madan Kamdev Temple Complex, Baihata, Katanipara, Assam - 781121 ):- বাইহাটা কাটানিপাড়ার এই মন্দির কমপ্লেক্সকে বলা হয় অসমের কামরূপের খাজুরাহো। গুয়াহাটি থেকে রঙ্গিয়া-তেজপুর রাস্তা ধরে গিয়ে বাইহাটা চৌরাস্তায় পৌঁছে ডানহাতে প্রায় ৫ কি. মি. এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন শাল ও সেগুন গাছে ছাওয়া একটি টিলার উপরে এই পবিত্র দেবালয়টি অবস্থিত। ২৪ টিরও বেশি ভাস্কর্যমন্ডিত মন্দির রয়েছে এই কমপ্লেক্স চত্বরে। এই স্থানের পূর্বদিক দিয়ে বয়ে চলেছে বর নদী, দক্ষিণ দিক দিয়ে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। পাঁচ ভাগে গড়ে তোলার জন্য একে পঞ্চরথও বলা হয়। ইতিহাসে সঠিক সময় না মিললেও আনুমানিক ১০ থেকে ১২ শতকে পাল রাজাদের সময়ে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে গড়ে উঠেছিল এই মদন কামদেব পঞ্চরথ। ভিতরে নাগারা শৈলীতে গড়া একশিলার নানা মূর্তি রয়েছে। অলঙ্করণে শৃঙ্গার মূর্তিও রূপ পেয়েছে। এখানকার প্রধান উপাস্য দেবতা হ'ল উমা ও মহেশ্বর। 

অন্যান্য দেবতারা হলেন ছয় মাথার ভৈরব, চতুর্ভুজ শিব, বিকট দর্শনের রাক্ষস, বিভিন্ন নরনারী মূর্তি। মদনদেব-রতিদেবী পূজা পাচ্ছেন মদন-রতির মন্দিরে। পূর্নিমার চন্দ্রালোকিত রাতে এই জায়গার সৌন্দর্য বহুগুণ বেড়ে যায়। সম্ভবত ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় মদন কামদেব মন্দির কমপ্লেক্স। অনাদর আর অবহেলায় লোপ পেয়ে যাচ্ছে এখানকার প্রত্নতত্ত্বের নানা সম্ভার। বর্তমানে অসম বায়ো রিসার্চ সেন্টার স্থাপিত হয়েছে এই পাহাড়ে। এখানে টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। গুয়াহাটি থেকে ঘনঘন বাস, মিনিবাস যাচ্ছে বাইহাটা চারিয়ালি ( চৌরাস্তা )। রঙ্গিয়া ও তেজপুরের বাসও যাচ্ছে বাইহাটা চৌরাস্তা মোড় হয়ে। উচিৎ হবে দিসপুর-গুয়াহাটি থেকে একই দিনে ঘুরে আসা। 

চান্দডুবি লেক পিকনিক স্পট ( Chandubi Lake Picnic Spot,  Barduar Tea Garden, Rajapara, Kamrup ):- গুয়াহাটি থেকে গোয়ালপাড়ার দিকে ৫৫ কি. মি গেলে রাজাপাড়া পোস্ট অফিস পেরিয়ে বারদুয়ার চা বাগানের মধ্যে দিয়ে একটু গেলেই পৌঁছে যাবেন অতি মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের চান্দডুবি লেক ভিউ পয়েন্টে ( View Point )। এই বিশাল প্রাকৃতিক জলাশয়ের গভীরতা কম, তাই একে লেক বা হ্রদ না বলে লেগুন বা উপহ্রদ বলা সঠিক হবে। লেকের জলে নৌকাবিহার ও মাছ ধরার ( Boating and Fishing ) সুবন্দোবস্ত আছে। এখানে থাকা-খাওয়ার জন্য Ecotourism Village,  Assam Tourism Development Corporation Limited Authorized Tourist Lodge, Home Stay, Eco Resort, Chandubi Picnic Cottages রয়েছে। এখান থেকে প্রায় ৮০ কি. মি. দূরে ভূটান সীমান্তে Darrang অবস্থিত। দরং-এ ভূটানি জিনিসপত্র কিনতে পারা যায়। 

স্থানীয় খাদ্যাভ্যাস ( Local Food Habits ):- পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সাথে এখানকার খাদ্যাভ্যাসে যথেষ্ট মিল রয়েছে। ভাত, ডাল, মাছের দেশ এই অসম। কিছু নিজস্ব খাবারও আছে। যেমন, খার, খারোলি, খরিসা, ব্যাম্বু শুটের চাটনি, মিষ্টান্নর মধ্যে নানারকম পিঠা ও আরও অনেক কিছু। স্বাদও নিতে পারেন চলার পথের পাশে থাকা হোটেল-রেস্তোরাঁয়। এই প্রসঙ্গে আপনাদের সুবিধার্থে কতকগুলি খাবার জায়গার নাম উল্লেখ করলাম। যেমন, G. N. B. Road-এ হোটেল প্যারাডাইস ভালো মানের চীনা ও অসমীয়া খাবারের জন্য বিখ্যাত। স্থানীয় অহমীয়া খাবার পরিবেশনের জন্য যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে হোটেল গ্যাম'স ডেলিকেসি। দক্ষিণ ভারতীয় থালি খেতে যেতে পারেন উডল্যান্ডস, ন্যুডল্যান্ডি-উলুবাড়ি। চীনা, মোগলাই, তন্দুরি, কন্টিনেন্টাল খাবারের স্বাদ নিতে হলে যেতে পারেন হোটেল নন্দন কমপ্লেক্সের উৎসব রেস্তোরাঁয় অথবা G. S. Road-এর হোটেল সম্রাটের দিলখুশ পাঞ্জাবিতে। এছাড়াও পানবাজার, ফ্যান্সি মার্কেট, চাঁদমারি-সহ সমস্ত শহর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রচুর খাবার হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ফাস্ট ফুড স্টল রয়েছে। সব জায়গারই নিজস্ব সুখ্যাতি ও বিশেষত্ব আছে।

কনডাকটেড ট্যুর ( Conducted Tour ):- যাত্রী অনুসারে ATDC অনুমোদিত New Travellers Point, Assam Tourism Complex, Station Road, Guwahati-781001. Tel - ( 0361) 2604018/9864331336- থেকে কনডাকটেড ট্যুরে প্রতিদিন শহর দেখাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নানা ট্রাভেল এজেন্ট নানারকম প্যাকেজে অসম, অরুণাচল ও মেঘালয়ের নানা প্রান্তে ভ্রমণের ব্যবস্থা করে চলেছে। 

 কিভাবে যাবেন? How to Reach or Go? 

দিল্লি, কলকাতা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত বিমানবন্দরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। সড়কপথে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি হয়ে গুয়াহাটি পৌঁছতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকে নৌপথে এই শহরে পৌঁছতে পারবেন। হেলিকপ্টার সার্ভিসে ইটানগরসহ অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর ও শিলিগুড়ি থেকে সহজে গুয়াহাটি পৌঁছতে পারবেন। 

কোথায় থাকবেন? Where to Stay? 

শহর ও শহরতলিতে প্রচুর হোটেল রয়েছে। অনলাইনে অথবা এখানে এসে সরাসরি বুকিং করতে পারেন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please, Don't Spam.

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷