PAST HISTORY & SOME VALUABLE INFORMATIONS ABOUT CHHATTISGARH:-
সম্প্রতি অতীতে আমাদের দেশ ভারতবর্ষে যে কয়টি নতুন রাজ্য গঠিত হয়েছে তার মধ্যে ছত্তিসগড় অন্যতম। ১৯৬০ সালে ডা: খুরীচাঁদ বাঘেল প্রথম এই রাজ্যের দাবি তোলেন। ১৯৯১ সালে বাঘেলের মৃত্যু হওয়ার পরে শঙ্কর গুহনিয়োগীর নেতৃত্বাধীন ছত্তিসগড় মুক্তিমোর্চার দাবি অনুসারে ২০০০ সালের ৩১শে অক্টোবর মধ্যপ্রদেশের উপজাতি অধ্যুষিত একটি অংশ ভেঙে সরকারি নিয়ম মেনে এই নতুন রাজ্যের উদ্ভব হয়। উল্লেখ্য, এই রাজ্যে প্রচুর বাঙালি বাস করেন। নামকরণের পিছনে একটি ইতিহাস আছে। সেটি হ'ল যে, কালচুরি রাজাদের ৩৬টি দুর্গ বা গড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই রাজ্য জুড়ে। এর চতুর্দিকে ছয়টি রাজ্যের সীমান্ত আছে। যেমন, উত্তরে উত্তরপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ড, পূর্বে উড়িষ্যা, দক্ষিণে অন্ধ্রপ্রদেশ, দক্ষিণ-পশ্চিমে মহারাষ্ট্র এবং উত্তর-পশ্চিমে মধ্যপ্রদেশ। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই রাজ্য। বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান খনিজ দ্রব্য রয়েছে এই রাজ্যের মাটির নিচে। এছাড়া, বনজ সম্পদেও যথেষ্ট সম্পদশালী। পৃথিবী বিখ্যাত ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টেরও ( Bhilai Steel Plant ) অবস্থান এখানে। এখানকার নৈসর্গিক শোভাও অতুলনীয়। সুন্দর সুন্দর ভ্রমণস্থলও আছে সমস্ত রাজ্য জুড়ে। এই ব্যাপারে বস্তার জেলার নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। রাজ্যের প্রায় অর্ধেকই হ'ল বনভূমি। যারা এই রাজ্য ভ্রমণ করতে আসবেন তাঁরা অবশ্যই বস্তার ও দান্তেওয়াড়া জেলা ভালো করে ঘুরে নেবেন। প্রচুর দর্শনীয় স্থান আছে এই দুই জেলায়।
রাজ্যের রাজধানী ( Capital City ) হলো রায়পুর ( Raipur )। মোট এলাকা ( Total Area ) বা আয়তন ১৩৫২৩৭ বর্গ কি. মি.। মোট জনসংখ্যা ( Population ) ২৫৫৪৫১৯৭। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করেন ( Population Density ) ১৮৮ জন। এখানকার মানুষদের ছত্তিসগড়ি ( Chhattisgarhi ) বলা হয়। প্রধান সরকারি ভাষা ( Main Official Languages ) হ'ল হিন্দি ও ছত্তিসগড়ি। প্রতি ১০০০ পুরুষে নারী বাস করেন ৯৯১ জন ( Sex Ratio of Male and Female )। সাক্ষরতার হার ( Percentage of Literacy ) ৭১.০২%। মাথাপিছু বার্ষিক আয় ( Average Yearly Income Per Head / Per Capita ) ৯৬৮৯০ টাকা।
AVERAGE WEATHER OR CLIMATE. WHEN SHOULD YOU GO THERE? / BEST TIME TO VISIT OR TRAVEL THIS STATE:-
গ্রীষ্মকালে অত্যন্ত গরম পড়ে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫° সেলসিয়াসেও উঠে যায়। তেমনি শীতকালেও বেশ ভালো ঠান্ডা পড়ে। অনেক সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০° সেলসিয়াসেরও বেশ নীচে নেমে যায়। বর্ষাকালে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়। এই রাজ্য সারা বছরই বেড়াবার জন্য উপযুক্ত। তবে সব দিক দিয়ে বিচার করলে অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময়ই হ'ল এখানে বেড়াবার সবচেয়ে ভালো মরশুম।
মোট ২৭ টি জেলা ( Total Number of Districts is 27 ) রয়েছে। সেগুলো হল, (1) বলরামপুর-রামানুজগঞ্জ ( Balrampur-Ramanujganj ), (2) বালোড ( Balod ), (3) বস্তার ( Bastar ), (4) বেমেতারা ( Bemetara ), (5) বিজাপুর ( Bijapur ), (6) বিলাসপুর ( Bilaspur ), (7) দান্তেওয়াড়া ( Dantewada ), (8) ধামতারি ( Dhamtari ), (9) দুর্গ ( Durg ), (10) গারিয়াবান্দ ( Gariyaband ), (11) জাঞ্জগির-চম্পা ( Janjgir-Champa ), (12) জাসপুর ( Jashpur ), (13) কবির ধাম ( Kabir Dham ), (14) কানকের ( Kanker ), (15) কোরবা ( Korba ), (16) কোরিয়া ( Koriya ), (17) কোন্দাগাঁও ( Kondagaon ), (18) মহাসমুন্দ ( Mahasamund ), (19) মুঙ্গেলি ( Mungeli ), (20) নারায়ণপুর ( Narayanpur ), (21) রায়গড় ( Raigarh ), (22) রায়পুর ( Raipur ), (23) রাজনন্দগাঁও ( Rajnandgaon ), (24) সুকমা ( Sukma ), (25) সুরজপুর ( Surajpur ), (26) সুরগুজা ( Surguja ), (27) বালোডাবাজার-ভাটপাড়া ( Balodabazar-Bhatapara )।
IMPORTANT OFFICE ADDRESSES, CONTACT TELEPHONE NUMBERS FOR EMERGENCY ENQUIRIES WHEN YOU ARE TRAVELLING DIFFERENT PLACES IN / ESSENTIAL ADDRESSES OF GOVT. TOURISM OFFICES, TRAVEL AGENCIES FOR ALL TOURISTS:-
[ Chhattisgarh Tourism Board ( CTB ). Offices Through All Over India ( Address With Mobile Telephone Number ) ] -
Raipur ( Central Office ) - 2nd Floor, Udyog Bhaban, Ring Road, Raipur 492006, Tel - 0771 4224600.
Jagdalpur - Tourist Information Centre, Tourist Rest House, Chitrakote, Tel - 7805905780 / 7049455567.
New Delhi - Chanakya Bhawan, 3rd Floor, Yaswant Place, Tel - 011 26116822 / 9811707111.
Bhopal - Ground Floor, Plot No. JM - 3, Ankur Colony, Tel - 07552573320 / 9893458861.
Bilaspur - Bilaspur Railway Station, Tel - 9111009037.
Kolkata - 230A, AJC Bose Road, Chitrakoot Building, 2nd Floor, Room No. 25, Tel - 40662381.
→ [ State Government Official Website - https://www.cgstate.gov.in
Tourism Related Website - http://www.chhattisgarhtourism.co.in ]
ALL TOTAL LIST OF 24 VERY BIG, MOST POPULAR OR FAMOUS LOCAL FAIRS & MAJOR FESTIVALS:-
(i) Bastar Dussera, (ii) Bastar Lokotsav, (iii) Bhoramdeo Mahotsav Festival, (iv) Champaran Mela, (v) Chhattisgarh Foundation Day Rajyotsav, (vi) Chhattisgarhi Language Day, (vii) Goncha Fest, (viii) Madai Festival, (ix) Teeja Utsav, (x) Narayanpur Mela, (xi) Pola, (xii) Rajim Kumbh Mela, (xiii) Hareli, (xiv) First Fruit Utsav, (xv) Earth Festival, (xvi) Bhagoriya Mahotsava, (xvii) Chakradhar Festival, (xviii) Hariyali, (xix) Kora, (xx) Navakhani and Cherta Festivals, (xxi) Kajari Utsav, (xxii) Rajim Lochan Mahotsav, (xxiii) Sheorinarayan Fair, (xxiv) Navakhana Festival.
এই রাজ্য ভ্রমণের সময়ের কেনাকাটা। What are The Things You Should Buy ( Marketing ) While Traveling in Chhattisgarh?
ভ্রমণের স্মৃতি হিসেবে এখান থেকে তসর সিল্ক, সুন্দর কারুকার্য করা কাঠের ছোটখাটো জিনিস, গ্রামীণ এলাকার হাট থেকে আদিবাসীদের হাতে তৈরি নানা সুন্দর সামগ্রী কিনে নিয়ে যেতে পারেন।
কিভাবে যাবেন? How to Reach or Go?
ভারতের যেকোন প্রান্তের সাথে রেলপথে রায়পুর ও বিলাসপুরের ভালো যোগাযোগ আছে। বিমানে আসলে প্রথমে রায়পুর বিমানবন্দরে নামতে হবে। তারপর গাড়ি বা বাসে করে এই রাজ্যের যেকোন জায়গায় সহজে যেতে পারবেন। পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির সাথে সড়কপথে বাস সহযোগে উত্তমমানের যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে।
কোথায় থাকবেন? Where to Stay?
এই রাজ্যের রাজধানীসহ প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে হোটেল, লজ, রেস্টুরেন্ট প্রভৃতির সুবন্দোবস্ত আছে।
[ TOP PLACES TO VISIT OR MAJOR TOURIST ATTRACTIONS IN CHHATTISGARH, INDIA WITH PROPER TOUR PLAN ON MAIN TRAVEL DESTINATIONS AND OTHER NEAREST BEAUTIFUL SPOTS. ]
রায়পুর ( Raipur ) - ভারতের ছত্তিসগড় রাজ্যের রাজধানী, একটি জেলা ও তার সদর শহর রায়পুরের দর্শনীয় স্থানগুলি সম্পর্কে জানাবো। এই ভূখণ্ডের একটি প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে। গবেষণার দ্বারা যা জানা গেছে তা হলো, কালচুরি রাজাদের রাজধানী ছিল এই স্থান, হাইহিয়া রাজাদের রাজত্ব ছিল এখানেই, এছাড়াও আরো বহু রাজবংশ রাজত্ব করেছে। ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এই জায়গার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। নামকরণ সম্পর্কে একটি তথ্যই পাওয়া যায়, সেটি হল কালচুরি রাজা রামচন্দ্রের পুত্র ব্রহ্মদেও রায়ের নাম থেকেই এই জায়গার রায়পুর নাম হয়েছে। বর্তমানে আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের অতুলনীয় মিশেলে দেশের অন্যতম সেরা শহরগুলির মধ্যে পরিগণিত হয়। রাজকুমার কলেজ ( Rajkumar College, Great Eastern Road, Mukut Nagar, Raipur, Chhattisgarh - 492001 ) - অভিজাত বংশের ছেলেদের লেখাপড়া করবার জন্য তৎকালীন সেন্ট্রাল প্রভিন্সের কমিশনার স্যার অ্যান্ড্রু ফ্রেজার ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে জব্বলপুরে প্রতিষ্ঠা করেন এই রাজকুমার কলেজটি। কিন্তু, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাফিলিয়েশন পাওয়ার পর ১৮৯৪ সালে রায়পুরে স্থানান্তরিত হয়। এরপর আসা যাক মহান্ত ঘাসিদাস স্মারক সংগ্রহশালায় ( Mahant Ghasidas Smarak Sangrahalay )। রাজা মহান্ত ঘাসিদাসের শিল্পকলার প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা ছিল। তারই ফলস্বরূপ ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে মহান্ত ঘাসিদাস মেমোরিয়াল মিউজিয়ামটি ( Mahant Ghasidas Memorial Museum ) প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে সংস্কৃতি, নৃতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব ও জীবতত্ত্ব সমেত মোট চারটি বিভাগ আছে। ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বহু শিল্পকর্মের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। তবে এই স্থানের বিশেষ আকর্ষণ হলো কিরারি থেকে আনা সাতবাহন রাজাদের নাম খোদাই করা খ্রিস্টীয় ২ শতকের একটি অতি প্রাচীন পিলার। প্রাচীন মুদ্রার সংগ্রহও রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেয়। এই চত্বরে একটি লাইব্রেরিও আছে। এগুলি কেবলমাত্র সপ্তাহের সোমবারই বন্ধ থাকে। ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত কয়েকশো বছরের পুরনো সুন্দর কারুকার্য করা দুধাহারি মঠটিও ( Shree Ramchandra Swami Dudhadhari / Dudhahari Math ) রাজধানী শহরটির আর এক উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য স্থান ও পবিত্র ধর্মস্থল। লোকমুখে শোনা যায় যে, মহান্ত বলভদ্র দাস নামের এক সাধু একখন্ড পাথরকে হনুমান জ্ঞানে পুজো করতেন। সুরহি নামের একটি দুগ্ধবতী গাভী নিজে থেকেই নিজের দুগ্ধধারায় স্নান করাত ঐ পাথরখণ্ডটিকে। মহান্তর জীবনধারণও হতো সেই দুধে। দেবনাম দুধাহারিরও প্রচলন সেই সময় থেকে।
লালরঙের টাউন হলে ( Town Hall / Victoria Hall ) রাখা ঐতিহাসিক কালো স্টিম ইঞ্জিনটি আর এক বিশেষ দর্শনীয় বস্তু। এই ভবনটি ১৮৮৯ সালে নির্মাণ করা হয়। শুরুতে এটি ছিল ব্রিটিশ প্রশাসনের সদর দপ্তর। মহারানী ভিক্টোরিয়ার সম্মানে প্রথমে এর নাম রাখা হয়েছিল ভিক্টোরিয়া হল। পরে এর নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় টাউন হল।
শহরের মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে বিশালাকার স্বামী বিবেকানন্দ সরোবর ( Swami Vivekanand Sarovar )। কেশকলের বোটানিক্যাল গার্ডেনটিও ( Botanical Garden, Keshkal Valley ) খুব সুন্দর। চারপাশে সবুজ পাহাড়। বসন্তে ফুলে ফুলে রঙীন হয়ে আরও মনোরম হয়ে ওঠে। একটি ওয়াচ টাওয়ার, চিলড্রেন পার্ক ও ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। আপনার ইচ্ছা হলে হাইওয়ে অথরিটির বাংলোয় দুই-এক দিন থেকেও যেতে পারেন। শহরে দেখার মধ্যে আর আছে রায়মুর দুর্গ, মহামায়া মন্দির, জৈতু সাউ মঠ, রামকৃষ্ণ মিশন, জগন্নাথ মন্দির, জয়স্তম্ভ চক, কায়সার ই হিন্দ দরওয়াজা, মাধব ঘাট ও মাধব মন্দির ইত্যাদি স্থান। উপরওয়ারা গ্রামে ২০০ একর জমির উপর অতি সম্প্রতি গড়ে ওঠা পুরখোউতি মুক্তাঙ্গন ( Purkhouti Muktangan, Uparwara Village ) দেখে নিতে ভুলবেন না। এখানে ছত্তিসগড়ের লোকশিক্ষা, সংগীত ও সংস্কৃতির আশ্চর্য মিলন প্রত্যক্ষ অনুভব করতে পারবেন।
সদরের ৩৫ কি. মি. পূর্বে আর একটি দর্শনীয় জায়গা আছে, তার নাম আরং ( Arang )। আরং বিখ্যাত একাদশ-দ্বাদশ শতকের প্রাচীন মন্দির সমূহের জন্য। দেওয়াল জীর্ণ হলেও এগুলির চূড়া ও গর্ভগৃহ আজও অক্ষত রয়েছে। মন্দিরের বাইরের দিকে ভাস্কর্যগুলো অতুলনীয়। যদিও সবকয়টি ভাস্কর্যেই সময়ের ছাপ স্পষ্ট। এখানকার জনপ্রিয় মন্দিরগুলির মধ্যে কয়েকটি হলো - Maa Mahamaya Temple, Natkeshwar Mahadev Temple, Shree Shanidev Mandir Ranisagar, Adishakti Chandi Mandir, Shree Hanuman Mandir, Shri Panchmukhi Mahadev, Old Shiv Mandir etc.
আরং ( Arang ) থেকে কাসডোল ( Kasdol )- এর পথে ৪২ কিলোমিটার পথ গেলে একটি ঐতিহাসিক ভ্রমণ স্থান পাবেন যার নাম শিরপুর ( Sirpur )। এখানে একসময় সর্ভপুরা রাজাদের রাজধানী ছিল। বৌদ্ধধর্মের অন্যতম পীঠস্থানও ছিল। শোনা যায়, সপ্তম শতকে চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাংও নাকি এসেছিলেন। খনন করে মাটির তলায় দীর্ঘদিন চাপা পড়ে থাকা বৌদ্ধ মন্দির, বৌদ্ধবিহার বা মনাস্ট্রিতে শায়িত বিশাল বুদ্ধমূর্তিগুলিই শিরপুরের প্রধান আকর্ষণ। ইঁটের তৈরি লক্ষ্মণ মন্দিরটির স্থাপত্যশৈলী সত্যিই সবার নজর কাড়ে। এখানে থাকার জন্য পাশেই ছত্তিসগড় ট্যুরিজমের রিসর্ট আছে।
মহাসমুন্দ রেলস্টেশনের ( Mahasamund Railway Station ) কাছে বর-নয়াপাড়া অভয়ারণ্য ( Bar Nayapara Wildlife Sanctuary / Reserve Forest ) জঙ্গলপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্যস্থল। রায়পুর স্টেশন থেকে ওয়ালটেয়ার যাওয়ার পথের একটি সুন্দর জায়গা। চারিদিকে ঢেউখেলানো টিলা আর ঘন সবুজ অরন্য। তারই মাঝে এখানে ওখানে নদী-নালা যেন অনবরত লুকোচুরি খেলছে। বলমদেহী ও জঁক এখানকার প্রধান দুই নদী। তুরতুরিয়াসহ অনেক ঝোরা রয়েছে। শাল, সেগুন, কুল, বাঁশ গাছ একে অপরের সাথে জড়িয়ে এমনভাবে রয়েছে যে অরন্যের ভিতরে ভরদুপুরেও সন্ধ্যার অন্ধকার আর এক ধরনের গা ছমছমে ভাব থাকে। এখানকার বন্যপ্রাণীদের মধ্যে রয়েছে বাঘ, প্যান্থার, চিতল, নীলগাই, বুনো শুয়োর, লেপার্ড, ভালুক, বার্কিং ডিয়ার, দেড়শোরও বেশি প্রজাতির পাখি, নানা ধরনের সরিসৃপ ও পোকামাকড়। বর-নয়াপাড়া অভয়ারণ্য ভ্রমণের সেরা সময় হলো নভেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যবর্তী সময়। থাকার জন্য ফরেস্ট রেস্ট হাউস, জঙ্গল কটেজ আছে। রায়পুরের ডি. এফ. ও. সাহেবের অফিসে যোগাযোগ করে বুকিং করতে হবে। এছাড়া, মোহদায় ছত্তিসগড় ট্যুরিজমের হারেলি ইকো রিসর্ট আছে।
এখান থেকে চলে যেতে পারেন খাল্লারি ( Khallari )। মহাসমুন্দ রেলস্টেশন থেকে এই স্থানের দূরত্ব মাত্র ২৫ কি. মি.। ঐতিহাসিক ও পুরাতাত্ত্বিক গুরুত্ব যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে খাল্লারির। পাহাড়ের চূড়ায় সেই বিখ্যাত খাল্লারি মন্দিরটি ( Khallari Temple ) অবস্থিত যেখানে মহাভারতের নিদর্শন হিসেবে আছে ভীমের পদচিহ্ন, কলসি, উনুন। অন্ততপক্ষে একবার ঘুরে আসুন। এই পবিত্র স্থান দর্শন করে চলে যান ৫৩ কি. মি. দূরে মহানদী, পেইরি ও সন্দুর নদীর সঙ্গমে অবস্থিত রাজিমে ( Rajim )। এই জায়গাটি ছত্তিসগড়ের প্রয়াগ নামেই বেশি পরিচিত। এখানে এসে ৮-৯ শতকের ইঁটের তৈরি রাজীবলোচন বিষ্ণু মন্দির ( Rajiblochan Vishnu Temple ) এবং একাদশ শতকে নির্মিত কুলেশ্বর শিব মন্দিরটি ( Kuleshwar Shiv Mandir ) সর্বপ্রথম দর্শন করে নেবেন। রাজিম ভ্রমণ সেরে সোজা চলে যান ১৫ কিলোমিটার দূরের বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র চম্পারণে ( Champaran )। এই চম্পারণেই বৈষ্ণব সাধক মহাপ্রভু বল্লভাচার্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর শিষ্যরা তাঁদের এই গুরুর স্মরণে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এখানে একটি বিশাল মেলা অনুষ্ঠিত হয়। নিকটের গভীর অরণ্যে প্রাচীন চম্পাকেশ্বর শিবের মন্দিরটিও ( Champakeshwar Shiva Temple, Champaran ) অবশ্যই দেখে নেবেন।
উদন্তি - সীতা নদী স্যাংচুয়ারি ( Udanti Sitanadi Wildlife Sanctuary / Tiger Reserve Forest ) - রায়পুর শহর থেকে প্রায় ২০০ কি. মি. দক্ষিণে ওড়িশা সীমান্ত ঘেঁষে এই বিশাল উদন্তি অভয়ারণ্যটি গড়ে উঠেছে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে। অরন্য, নদী, পাহাড়, উপত্যকা নিয়ে ৩৫০ মিটারের বেশি উচ্চতায় প্রায় ২৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে রয়েছে এই বিশালাকার প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। উদন্তি স্যাংচুয়ারিকে উত্তর-দক্ষিণে দুভাগে ভাগ করে উদন্তি নদীটি ( Udanti River ) পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে বয়ে চলেছে। এই নদীর নামেই এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলটির নামকরণ হয়েছে। ব্ল্যাক প্যান্থার, বুনো মহিষের মতো বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে সরকার একে স্যাংচুয়ারির স্বীকৃতি দিয়েছে। শাল সেগুনের বিশাল জঙ্গলে চিতল, সম্বর, নীলগাই, লেপার্ড, শ্লথ বিয়ার, স্ট্রিপড হায়না, গউর, চৌশিঙ্গা, বার্কিং ডিয়ার ও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। উদন্তিই একমাত্র অভয়ারণ্য যেখানে বৃহৎ বুনো মহিষ ও বাইসন একসাথে বসবাস করে। আবার শীতকালে ফিঙে, বুলবুলি প্রভৃতি দেশীয় পাখির সাথে ১০০-রও বেশি প্রজাতির পরিযায়ী পাখিদের ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ করতে দেখা যায়। পয়লা নভেম্বর থেকে তিরিশে জুন পর্যন্ত এই অভয়ারণ্য বিহারের ( Udanti Jungle Safari ) অনুমতি পাওয়া যায়। এই অরন্যে থাকা-খাওয়ার জন্য আছে Torenga Forest Rest House, For Advance Booking:- DFO ( East ), Karla Forest Rest House; or DFO ( Wildlife ), Raipur, Idagaon Eco Centre.
এবার চলে আসি ধামতারি ( Dhamtari ) ও সীতা নদী স্যাংচুয়ারির ( Sita River Sanctuary ) প্রসঙ্গে। রায়পুর থেকে জগদলপুরের পথে ধামতারি জেলার জেলা সদর ধামতারিতে ( Dhamtari )। চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা অতি মনোরম গাঙগ্রেল ( Gangrel Dam ) ও মাডামসিলি ( Madamsilli Dam ) জলাধার দুটি দর্শন করে এখান থেকে ১০০ কি. মি. দক্ষিণে অবস্থিত অতি বিশাল আয়তনের সীতা নদী স্যাংচুয়ারিতে। টিলা ও গভীর অরন্যময় ১০৫০ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে এই সংরক্ষিত অভয়ারণ্যটি রয়েছে। পুরো স্যাংচুয়ারিকে পূর্ব ও পশ্চিম এই দুভাগে ভাগ করে উত্তর থেকে দক্ষিণে অরন্য চিরে বয়ে চলেছে সীতা নদী ( Sita River )। এই নদীর নামেই অভয়ারণ্যটির নামকরণ হয়েছে। এই অরন্যের শাল কাঠের যথেষ্ট সুনাম আছে। এছাড়া, এই বনাঞ্চলে সেগুন, সাজা, বিজা, ধাওরা, আমলতাস ইত্যাদি বৃক্ষ প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। অরন্য দিয়ে বয়ে চলা মন্ডুর নদীর বুকে গড়ে উঠেছে মন্ডুর ড্যাম। আর এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে মন্ডুর লেকের। সীতা নদী স্যাংচুয়ারির অন্যতম আকর্ষণ হলো বাঘ, ব্ল্যাক প্যান্থার, ভাল্লুক এবং বিরল প্রজাতির উড়ুক্কু কাঠবিড়ালি। এছাড়াও, অন্যান্য অনেক প্রজাতির জীবজন্তু, পাখি, পোকামাকড় ও সরিসৃপ রয়েছে। গাইড নিয়ে অরন্য দর্শন করবেন। ১লা নভেম্বর থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত জঙ্গল সাফারি বা দর্শনের অনুমতি মেলে। এখানে থাকার জন্য একটি Forest Rest House আছে। ধামতারির গাঙগ্রেলে ছত্তিসগড় পর্যটন দপ্তরের Baridhi Lake View Resort অথবা ভান্থাগাঁও-এর Tourist Motel-এও থাকতে পারেন।
ভিলাই ( Bhilai ) - ভারতীয় ইস্পাত শিল্পের দ্বিতীয় কারখানাটি গড়ে ওঠে এই ভিলাইতে। একটি অখ্যাত গ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করে আজকের বিশ্ববিখ্যাত সাজানো গোছানো শিল্পনগরীতে রূপান্তরিত হওয়ার প্রথম পদক্ষেপের সময়কাল ছিল ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রুশ সরকারের সহযোগিতায়। ইস্পাত কারখানাটিতে প্রথম উৎপাদন আরম্ভ হয় ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ই অক্টোবর। আর এই কারখানাকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে একটি পরিকল্পিত আধুনিক শহর। কলকাতা থেকে মুম্বাইগামী জাতীয় সড়কপথে রায়পুরের অল্প কিছুটা পরে এই শিল্পনগরীটি অবস্থিত। জাতীয় সড়কের বামদিকে আছে ইস্পাত কারখানাটি। হাওড়া থেকে মুম্বাই যাওয়ার ট্রেন থেকেও এই ইস্পাত নগরীর শিল্প-সুষমা অল্প কিছু মিনিটের জন্য উপভোগ করতে পারবেন। ইস্পাত কারখানা দেখার অনুমতি পাওয়ার জন্য কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে কারখানাটির জেনারেল ম্যানেজার বা PRO-কে লিখিত আবেদন জানাতে হবে। যারা এখানে আসতে চান তারা যদি দুরগ্ ( Durg Railway Station ) রেলস্টেশনে নামেন তাহলে যাতায়াতে সুবিধা হবে। Bhilai ও Durg দুই শহরেই অনেক হোটেল আছে। যেখানে খুশি থাকতে পারেন। দুরগ্ স্টেশন থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে প্রাচীন জৈন তীর্থ নাগপুরা ( Nagpura ) দর্শনও একই
যাত্রায় সেরে নিন। এখানকার পার্শ্বনাথ মন্দিরে সপ্তমুখী নাগের সপ্তফনা আচ্ছাদিত পার্শ্বনাথের দারুণ সুন্দর মূর্তিটি ভালোভাবে দর্শন করে নিন। এই নাগ দেবতা থেকেই এই জায়গার নাম হয়েছে নাগপুরা ( Nagpura )। এখানকার ধর্মশালাটিতে থাকতে পারবেন।
ভোরামদেও ( Bhoramdev / Bhoramdeo ) - রায়পুর শহর থেকে প্রথমে সিমগা ( Simga ), তারপর সিমগা থেকে বাঁ হাতি রাস্তা ধরে সোজা চলে যান কাওয়ার্ধা ( Kawardha )। এই পথে নিয়মিত বাস চলে। রাজা রাজপাল সিং এর তৈরি দুর্গ এবং পুরো শহর ঘুরে দেখে নিন। এই শহরে Godna Eco Resort, Kawardha-এ থাকতে পারেন। তারপর ট্যাক্সি, সুমো, বোলেরো, মারুতি বা ট্রেকারে চেপে ১৭ কি. মি. দূরের ভোরামদেও-তে চলে আসুন। মাইকাল পাহাড় ও ঘন সবুজ অরন্যের প্রেক্ষাপটে ছবির মতো সুন্দর জায়গা হলো এই Bhoramdeo উপত্যকা। এখানকার একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হলো ভোরামদেব মন্দির ( Bhoramdev Temple ), যাকে ছত্তিসগড় রাজ্যের খাজুরাহো বলা হয়ে থাকে। এটি তৈরি হয় ৭ থেকে ১১ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। মন্দিরের গায়ে খোদিত রামায়ণের উপাখ্যান ও মিথুন মূর্তিগুলো আপনার মনে একধরনের বিস্ময় ও সম্ভ্রম একসাথে জাগিয়ে তুলবে। এই মন্দিরটিতে একসাথে উমা মহেশ্বর, নটরাজ, নৃসিংহ, কৃষ্ণ, সূর্য, কালভৈরব, নৃত্যরত গণেশ, কার্তিক, চামুণ্ডা, অম্বিকা, সপ্তমাতৃকা, লক্ষ্মীনারায়ণ প্রমুখ জনপ্রিয় দেবদেবীগণ রয়েছেন। গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গ পূজিত হন। পূর্বমুখী মন্দিরের সামনে একটি অতি মনোরম হ্রদ আছে। আর রয়েছে নাগবংশীয় সম্রাট রামচন্দ্র দেও দ্বারা ১৩৪৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত বিবাহমঞ্চ মাডোয়া মহল। রাজা নাগবংশী ও রানী হাইবংশীর বিবাহের স্মৃতিতে নির্মিত ১৬ স্তম্ভের উপর তৈরি শামিয়ানা আকৃৃতির এই ঐতিহাসিক মন্ডপটিতেও কামসূত্রের বিভিন্ন ভঙ্গিমা মূর্ত হয়েছে। এখানে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি রিসর্ট তৈরি হয়েছে।
কাওয়ার্ধা থেকে ৭৭ কি. মি. দূরের খয়রাগড়ে ( Khairagarh ) গিয়ে ১৯৫৬ সালে নির্মিত ইন্দিরা শিল্প ও সঙ্গীত বিশ্ববিদ্যালয় ( Indira Kala Sangit Vishwavidyalaya, Khairagarh ) দেখে আসুন। তারপর এখান থেকে ৩৪ কি. মি. দূরত্বের গান্ডাইতে ( Gandai ) গিয়ে ১০ - ১১ শতকে নির্মিত কালচুরি রাজাদের প্রাচীন শিবমন্দিরটি ( Old Shiva Temple, Gandai ) ভালো করে ঘুরে দেখে নিন।
হাওড়া-মুম্বাই রেলপথের রাজনন্দগাঁও ( Rajnandgaon ) হয়ে পৌঁছে যান জঙ্গল, পাহাড় ও জলাশয় পরিবৃত স্বপ্নের দেশ ডোঙ্গরগড়ে ( Dongargarh )। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হলো ডোঙ্গরগড় পাহাড়ে অবস্থিত মা বোমলেশ্বরী / বামলেশ্বরী দেবীর মন্দির ( Maa Bamleshwari Temple, Dongragarh )। সিঁড়ি বেয়ে উঠে বা রোপওয়ে চড়ে এই মন্দিরে পৌঁছতে হয়। বিশ্রাম গৃহ, পানীয় জল ও আহারের ব্যবস্থা আছে এই চত্বরে। নবরাত্রি উৎসব খুব ধুমধাম করে পালন করা হয়।
বস্তার ও চিত্রকূট জলপ্রপাত ( Bastar and Chitrakoot Water Fall ) - ছত্তিসগড় রাজ্যের জেলা বস্তার জীব-উদ্ভিদ বৈচিত্র্যে ও দর্শনীয় স্থানের সংখ্যার বিচারে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণকারীদের কাছে বিশেষভাবে আদরণীয়। এটি ওড়িশা সীমান্ত লাগোয়া। এর জেলাসদর হলো জগদলপুর ( Jagadalpur )। গুহা, মন্দির, পাহাড়-পর্বত, নদী নালা ঝোরা, জলপ্রপাত, ঝর্ণা, অরণ্য নিয়ে অতি মনোরম একটি ভূখণ্ড। জেলা সদরের অবস্থান ১৮৩০ ফুট উঁচুতে। উপজাতি অধ্যুষিত এই এলাকায় শতাব্দী প্রাচীন সংস্কৃতির ধারা দেখতে পাওয়া যায়। জগদলপুরের অনুপমা সিনেমা হলের কাছের বাসস্ট্যান্ড থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর চিত্রকোট জলপ্রপাত ( Chitrakut Water Fall ) যাওয়ার বাস ছাড়ে। ট্যাক্সি, জিপ ভাড়া করে লোহান্ডিগুডা ( Lohandiguda ) হয়ে অনন্যা চিত্রকূট জলপ্রপাত দর্শনে যেতে পারেন। লোহান্ডিগুডা থেকে এই জলপ্রপাত মাত্র ১০ কি. মি. দূরে অবস্থিত। এটিকে নায়াগ্রার মিনি সংস্করণও বলা যায়। অশ্বক্ষুরাকৃতি এই Water Fall-এর নৈসর্গিক সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ইন্দ্রাবতী নদী ( Indravathi River ) বিন্ধ্য পর্বতের ১৭২২ ফুট উঁচু থেকে প্রবল বেগে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিছুটা এগিয়ে ডাইনে বাঁক নিয়ে গিয়ে মিলিত হয়েছে গোদাবরী নদীতে। বর্ষায় এই নদী ও জলপ্রপাতের রূপ আরও বেড়ে যায়। সূর্যের আলো পড়লে রামধনুর রঙের ছটা দেখা যায়। ডোঙায় চেপে ভেসেও পড়তে পারেন। এর চারপাশের পরিবেশও অত্যন্ত মনোরম। কিন্তু, সঠিক প্রচারের অভাবে এই অসাধারণ দর্শনীয় স্থানটি ভারত তথা বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে আজও অবহেলিত। এখানে থাকার জন্য সরকারি-বেসরকারি রেস্ট হাউস ও রিসর্ট রয়েছে। এখানে আসার পথে জগদলপুর থেকে ৮ কি. মি. দূরে আর একটি সুন্দর দেখার জায়গা হলো চিত্রধারা জলপ্রপাত ( Chitradhara Water Fall )। চিত্রকূট থেকে বারসূয়া যাওয়ার পথে আর একটি সুন্দর ঝরণা আছে যার নাম টমরাঘুমর ঝর্ণা। এটি টমরাঘুমর গ্রামে অবস্থিত।
জগদলপুর বাসস্ট্যান্ড বাজারের কাছে উনবিংশ শতকের প্রথম কাকাতীয় রাজাদের তৈরি সুচারু শিল্প ও ভাস্কর্য মন্ডিত প্রাসাদে বর্তমানে সরকারি দপ্তর বসেছে। এই প্রাসাদে প্রবেশ করতেই দেখতে পাবেন রাজপরিবারের কুলদেবী দন্তেশ্বরী মাতার মন্দির। এখানে দেবী দন্তেশ্বরী হলেন সিংহবাহিনী দূর্গা। ৫১ পীঠের এক পীঠ হলো এই দন্তেশ্বরী কারণ পুরাণ মতে এখানে সতীর দাঁত পতিত হয়। যদিও আসল পীঠস্থান দন্তেবাড়ায়। পাশেই রয়েছে ভুবনেশ্বরী দেবীর মন্দির। এখানকার বৃক্ষতলে সতীর পদচিহ্ন রয়েছে। এই দেবালয়ে পুরুষদের জামা ছেড়ে ধুতি বা লুঙ্গি পরে ঢুকতে হয়। দশেরাতে রথোৎসব অতি জনপ্রিয় উৎসব। এই শহরের অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে আছে গঙ্গামুন্ডা লেক, দলপতি সাগর লেক, ১৯৭২ সালে ধরমপুরায় প্রতিষ্ঠিত অ্যানথ্রোপলজিক্যাল মিউজিয়াম ( Anthropological Museum, Chitrakote Rd, Dharmapur, Chhattisgarh-494005 )। বস্তারের জেলাসদর ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ কিনে নিয়ে যান এখানকার বিখ্যাত কোসা সিল্ক, কাঠ ও পোড়ামাটির মনভোলানো কারুশিল্প। এখানে ঘুরতে আসলে অন্ধ্রপ্রদেশ সীমান্তে জগদলপুর-নিজামাবাদ সড়কপথে খানিকটা গিয়ে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পামেদ অভয়ারণ্যটিও ( Pamed National Park / Wildlife Sanctuary or Pamed Reserve Forest ) অবশ্যই দেখে নেবেন। এই নগরী থেকে ৪০ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে গেলে আর একটি অভয়ারণ্য পেয়ে যাবেন। সেটি হলো কাঙ্গেরঘাটি ন্যাশনাল পার্ক ( Kanger Ghati National Park )। অর্জুন, মহুয়া, কেন্দু, খয়ের, শাল, সেগুন গাছে ভরপুর ২০৫ বর্গকিলোমিটার ব্যাপ্ত এই অভয়ারণ্যে ধুরবা, মারিয়া, মুরিয়া, গোন্ড ইত্যাদি আদিম উপজাতি সম্প্রদায়ের আদিবাসী মানুষ বসবাস করেন। বন্যপ্রাণীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বাঘ, চিতাবাঘ, চিতল ও সম্বর হরিণ, বুনো শুয়োর প্রভৃতি। বিভিন্ন পাখিদের কলকাকলিতে পার্কটি মুখরিত হয়ে থাকে। একটি কুমির প্রকল্পও ( Kanger Crocodile Project ) হয়েছে। এই জাতীয় উদ্যানের বুক চিরে বয়ে চলেছে কাঙ্গের নদী ( Kanger River )। ফরেস্ট বাংলোয় থাকতে হলে আগে থেকেই বুকিং করে আসতে হবে। পার্কে ঘোরা ও বাংলোয় থাকার অনুমতি পেতে যোগাযোগ করুন DFO, Kanger Valley National Park, Jagdalpur - এই ঠিকানায়। গাইড, ক্যামেরা ও গাড়ির জন্য মান অনুসারে চার্জ দিতে হবে। ১লা নভেম্বর থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত এই পার্কটি অনুমতি সাপেক্ষে জনসাধারণের জন্য খোলা থাকে। মেইন গেটের বিপরীতে গ্রামের পথ ধরে প্রায় ৫ কি. মি. গেলেই আরণ্যক পরিবেশে মনোমুগ্ধকর তিরৎগড় জলপ্রপাত ( Tirathgarh Waterfall ) পৌঁছে যাবেন। এটি আসলে কাঙ্গেরের ছোট শাখানদী মুনাগাতার। যেটি ১১০ মিটার উঁচু থেকে প্রবলবেগে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য এই সুন্দর Tirathgarh Waterfall -এর সৃষ্টি হয়েছে। এটি ১৬০ মিটার চওড়া। আপনি যদি সাহসী এবং শারীরিকভাবে যথেষ্ট সক্ষম হন তাহলে ২১৪ ধাপের পিচ্ছিল সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামুন। আরও বিস্ময় আপনার অপেক্ষায় রয়েছে। ভয়ঙ্কর রূপসী তিরৎগড়ের সফেন জলধারার সঙ্গীতের আবহ আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে। আর আছে প্রকৃতির আপন খেয়ালে সৃষ্ট অদ্ভুত সুন্দর প্রাকৃতিক হলঘরে স্ট্যালাগমাইট ও স্ট্যালাকটাইট লাইম স্টোন অর্থাৎ চুনাপাথরের দন্ডের অফুরন্ত ভান্ডার। ত্রিভুবনেশ্বর মহাদেব ও লক্ষ্মী-নারায়ণের মন্দির আছে এখানে। কাছেই রয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার ( Watch Tower )। এরপর ১ কিলোমিটার দূরে প্রকৃতির আর এক অপরূপ সৃষ্টি কুটুমসর গুহা ( Kotamsar Caves ) দেখে নিন। এটিকে বোরা গুহার ছোট সংস্করণও বলা চলে। এটি প্রায় দেড় কি. মি. বিস্তৃত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গুহা। সঙ্গে একজন গাইড নিয়ে কপিকলের সাহায্যে ৩৫ মিটার গভীরে নেমে টর্চের আলোয় চুনাপাথরের শিবলিঙ্গ দর্শন করে আসুন। Kotamsar-এ একটি বনবাংলোও আছে। এই Forest Bunglow টি গুহা থেকে এক কি. মি. দূরে অবস্থিত। কুটুমসরের ১৮ কিলোমিটার দূরে আর একটি দেখার মতো গুহা আছে, তার নাম কৈলাশ গুহা ( Kailash Cave )। পথের নৈসর্গিক শোভার কোন তুলনা নেই। তবে বাঘসহ অন্য হিংস্র বন্য জীবজন্তুর আক্রমণের ভয় আছে। যথেষ্ট দুর্গম চুনাপাথরের এই গুহার সুরঙ্গপথে ওঠানামায় যথেষ্ট শিহরণযুক্ত উত্তেজনা বোধ হয়। সঙ্গের গাইডের কাছে পেট্রোম্যাক্স থাকলেও আপনার কাছেও একটি জোরালো টর্চ অবশ্যই রাখবেন। কালেক্টর বা ট্যুরিস্ট অফিস থেকে এই জায়গাগুলিতে যাওয়ার অনুমতি ও গাইড দুইই পেয়ে যাবেন। এই বনাঞ্চলে জঙ্গিদের হাতে পড়ারও একটু ভয় রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত জঙ্গিরা পর্যটকদের উপকার ছাড়া কোন ক্ষতি করেননি।
ইন্দ্রাবতী টাইগার রিজার্ভ ( Indravati Tiger Reserve / National Park ) - দান্তেওয়াড়া ( Dantewada ) থেকে মাত্র ১১০ কি. মি. দূরে মহারাষ্ট্র সীমান্ত ঘেঁষে ইন্দ্রাবতী নদীর চারপাশের প্রায় ২৮০০ বর্গ কি.মি. বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঘন অরন্য আর ছোট বড়ো টিলা পাহাড় নিয়েই এই ইন্দ্রাবতী টাইগার রিজার্ভ জাতীয় উদ্যান। এটি ১৯৮৩ সালে জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি পায়। এই অরণ্যাঞ্চলে শীত, গ্রীষ্ম দুইয়েরই প্রাবল্য বেশি। এই আদ্র পর্ণমোচী বনাঞ্চলে উদ্ভিদ বলতে শাল, পলাশ, সেগুন, শিমূল, আমলকি, হরিতকী, বাঁশ, বিস্তীর্ণ তৃণভূমি ইত্যাদি। আর প্রানী বলতে রয়েছে কয়েকটি বাঘ, চিতাবাঘ, গউর, চৌশিঙা, নীলগাই, শম্বর, বার্কিং ডিয়ার, বুনো মহিষ, বুনো কুকুর, হায়না, শ্লথ বিয়ার, অন্যান্য কয়েকটি প্রজাতির তৃণভোজী জীবজন্তু, একশোরও বেশি রকমের দেশী বিদেশী পাখি, কীটপতঙ্গ, সরিসৃপ প্রভৃতি।
কিরণডোল আকরিক লৌহ খনি ( Kirandul Iron Ore Mines ) - দান্তেওয়াড়া ( Dantewada ) থেকে মাত্র ৫০ কি. মি. দূরে গিয়ে এশিয়ার বৃহত্তম লৌহখনি কিরণডোল আয়রন ওর মাইন এলাকাটি ঘুরে দেখে আসতে পারেন। এখানে উচ্চমানের আকরিক লৌহ উত্তোলিত হয়। স্থানীয় মানুষজন একে বয়লাডিলা বলে থাকেন। চারিদিকে সবুজ অরন্য আর উঁচু নিচু পাহাড় শ্রেণী আর সুনীল আকাশ। পর্যটন মানচিত্রে সেরকম উল্লেখ না থাকলেও দূরদূরান্ত থেকে অনেক পর্যটকই আসেন এই সুন্দর প্রকৃতির নৈসর্গিক শোভা উপভোগ করতে। ম্যানেজারের অনুমতি নিয়ে আয়রন ওর প্রজেক্ট ( Kirandul Iron Ore Project ) দর্শন করা যায়। এই খনি থেকে মাত্র ৮ কি. মি. দূরে পাহাড়ের মাথায় অর্থাৎ হিল টপে আছে কৈলাশনগর ( Kailash Nagar )। ১২০০ মিটার উঁচু এই কৈলাশনগর হিল টপ থেকে বিস্তীর্ণ কিরণডোলের প্যানোরামিক ভিউ সত্যিই অনবদ্য। পাহাড়ি আঁকা বাঁকা পথ ধরে গাড়িতে করেই এই পাহাড় চূড়ায় পৌঁছতে পারবেন। যাওয়ার পথে মেঘের মুখোমুখি হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কাছাকাছি আরও দুই একটি সুন্দর জায়গাও দেখে নিন। একটি হলো, ১৪ কি. মি. অরন্যপথে গিয়ে মালাঙ্গবালী ( Malangwali )। এখানে ঝরনার জল বাঁধ দিয়ে আটকে একটি সুন্দর কৃত্রিম লেক তৈরি করা হয়েছে। আর দ্বিতীয়টি, ১০ কিলোমিটার দূরের বাচেলী ( Bacheli )। বাচেলীর মাথায় বস্তার রাজাদের মৃগয়াভূমি আকাশনগর ( Akash Nagar ) অবশ্যই দর্শন করবেন। Kirandul-এ বেশ কয়েকটি লজ, হোটেল ছাড়াও NMDC Project-এর Guest House আছে। Bacheli-তেও এদের একটি গেস্ট হাউস রয়েছে। বিশাখাপত্তনম থেকে সরাসরি সকালের ট্রেনে করেও এখানে পৌঁছতে পারবেন।
আদিম আদিবাসী জনগোষ্ঠী সমৃদ্ধ বস্তারের গ্রামীণ জীবনের ( Village Life ) একটি বড়ো ঝলক দেখতে গেলে অবশ্যই গ্রামীণ হাট ( Bastar Weekly Or Daily Rural Market ) দর্শন করতে হবে। পুরো বস্তার জেলা তথা ছত্তিসগড় রাজ্য জুড়ে সমস্ত বড়ো-মাঝারি-ছোট গ্রামাঞ্চলেই এলাকাভেদে সপ্তাহের বিভিন্ন নির্দিষ্ট দিনে হাট বসে। আবার কোন কোন এলাকায় প্রতিদিনই বড়ো হাট বসতে দেখা যায়। এই সমস্ত বড়ো হাটে গেলে ঘরকন্নার টুকিটাকি জিনিসপত্র কেনাবেচা যে কোন সময়ই দেখতে পাবেন। তবে এলাকাভেদে সাপ্তাহিক হাটগুলোর আলাদা ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য আছে। দিনক্ষণ জেনে এই সমস্ত সাপ্তাহিক গ্রামীণ হাটে চলে গেলে বস্তার ও ছত্তিসগড়ের মানুষদের জীবনযাপন ( Village Lifestyle ) সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা করতে পারবেন আর আপনার মনে অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি হবে। এই সুমধুর স্মৃতি আপনি সারা জীবনেও ভুলতে পারবেন না। প্রতিটি হাটের শুরু আর শেষের সময়সীমারও পার্থক্য রয়েছে। যেমন, জগদলপুরের কোন্দাগাঁও ও নারায়ণপুরে হাট বসে প্রতি রবিবার। মারডুমে বসে প্রতি শনিবার করে। দান্তেওয়াড়ার কাছে নাগারনারে প্রতি বুধবার। লোহান্ডিগুড়ায় সাপ্তাহিক বসে প্রতি শুক্রবার করে। বেশিরভাগই দুপুরে শুরু হয়ে সন্ধ্যায় শেষ হয়। আবার দক্ষিণ বস্তারের বেশকিছু হাট আছে যেগুলো খুব ভোরে আরম্ভ হয়ে সকাল ৯-১০ টা পর্যন্ত চলতে থাকে। বস্তার দশেরার টাইমে দান্তেওয়াড়াতে রাস্তার ধারে রাতে চাঁদের মায়াবী আলোয় জমজমাট হাট বসতে দেখা যায়।
এখানকার আদিবাসী জীবন উৎসব মুখর। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো মাটি পূজা, গোনছা, রথযাত্রা, নবখানা অর্থাৎ নবান্ন, দশেরা ( Dussehra in Bastar ) ইত্যাদি। তবে, রামচন্দ্রের অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিতে প্রতি বছর সারা ভারত জুড়ে পালন করা দশেরার সাথে এর বিশাল পার্থক্য রয়েছে। এই দশেরার মধ্যমণি হলেন মাতা দন্তেশ্বরী। ধর্মবিশ্বাসের সাথে আদিবাসী আচার আচরণের সুন্দর মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায়। শোনা যায়, চতুর্থ কাকাতীয় রাজা পুরুষোত্তম দেও পঞ্চদশ শতাব্দীতে এই দশেরার সূচনা করেন। বর্তমানে এটি এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। কচ্চনগাদি মন্দিরে প্রতিবছর শ্রাবণ বা ইংরেজি জুলাই মাসে হরিয়ালি অমাবস্যায় এর শুভ সূচনা হয়। উদ্বোধনে তন্তুবায় সম্প্রদায়ের কোন এক তরুণীকে কাঁটার দোলনায় চড়ানো হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস যে, দন্তেশ্বরী দেবীর আশির্বাদে সম্পূর্ণ অক্ষত থাকে সেই তরুণী। ৭৫ দিন ধরে চলে এই জনপ্রিয় উৎসব। সকল আদিবাসী সম্প্রদায়ই এই উৎসবে যোগদান করে। ওড়িশা রাজ্যের সাওরারা রথ তৈরি করেন। সেই কাজ দেখভাল করেন ঢাকডারা। রথযাত্রার পূর্বে দন্তেশ্বরী দেবীর পূজা করেন খাকিরা। রথের রশির জোগান দেন পারজারা। সেই রশি টানে মারিস ও ধুরওয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা। হালবা উপজাতির প্রধানেরা দেবীর আশিস সাধারণ পূণ্যার্থীদের বিলিয়ে যান। পুরো দশেরা উৎসবই নৃত্য, গীত, পান ভোজনে ভরপুর থাকে।
বিলাসপুর ( Bilaspur ) - জেলা ও জেলা সদরের একই নাম বিলাসপুর। হাওড়া থেকে রেলপথে দূরত্ব ৭১৭ কি. মি.। এক জেলে কন্যা বিলাসার নামেই এই শহরের নামকরণ। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে বিলাসপুর রেলস্টেশনের ওয়েটিং রুমেই অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ফাঁকি কবিতাটি রচনা করেন। পরবর্তীকালে ১ নম্বর প্লাটফর্মে তাঁর স্মৃতিতে একটি স্মারক স্তম্ভ স্থাপনা করা হয়েছে। শহর থেকে কিছুটা দূরে ইতিহাস নগরী রতনপুর ( Ratanpur ) দর্শন করে নিন। রতনপুরে ( Ratanpur ) অনেক পুরাতন মন্দির, মসজিদ, প্রাসাদ আছে। এখান থেকে ৫ কি. মি. গিয়ে কোটাঘাট বাঁধ ( Khutaghat Dam ) ও বিশাল জলাধার অর্থাৎ Khutaghat Lake দেখে আসুন। লেকে বোটিং করার সুবন্দোবস্ত আছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। পিকনিক করার আদর্শ জায়গা। পর্যটন দপ্তরের Gaura Gauri Lake View Tourist Cottage- এ থেকেও যেতে পারেন। এখান থেকে আধঘণ্টার পথ অতিক্রম করে পৌঁছে যান পালি-র সুন্দর কারুকার্য করা শিবমন্দিরে ( Mahadev Temple, Pali )। যাওয়ার পথে বন-জঙ্গল, পাহাড়ে ঘেরা প্রায় ধ্বংসের মুখে চলে আসা লাফাগড় দূর্গটি ( Lafagarh Fort ) দেখে নিন। বাঘের পিঠে অষ্টভুজা মেনকা দেবীর প্রাচীন মন্দিরও আছে এই দূর্গে। শহরে ফেরার পথে কোনীতে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমটিও ( Ramakrishna Mission Ashrama, Koni, Bilaspur ) দেখে নিন। এই আশ্রমে একটি গেস্ট হাউসও আছে। গাড়ি ভাড়া করে নিলে পুরো শহরের বেশিরভাগ দর্শনীয় স্থান একদিনেই দেখে নিতে পারবেন। প্রধান দেখার জায়গাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দুটি কালীমন্দির, জগন্নাথ মন্দির, রাম মন্দির, বালাজী মন্দির, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মিলন আশ্রম, অনুকূল ঠাকুরের সৎসঙ্গ আশ্রম, ১৯২০ সালে গঠন করা বাঙালি সমিতির নানা ক্রিয়াকলাপ ইত্যাদি। এই নগরী থেকে প্রায় ৩০ কি. মি. দক্ষিণে মনিয়ারি নদীর তীরে তালাগাঁও ( Talagao, Maniyari River ) গিয়ে দারুণ সুন্দর দেওরানি-জেঠানি মন্দির ( Dewrani Jethani Mandir ) দর্শন করে নিন। গ্যারান্টি দিয়ে বলছি দেবাদিদেবের এই বিরল ধরনের রুদ্র মূর্তি আগে কখনোই দেখেননি। এখানে ঘোরা শেষ করে Talagao থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরের মলহারে ( Malhar ) গিয়ে দিন্দেশ্বরী, পাতালেশ্বর, চতুর্ভুজ বিষ্ণু ও জৈন ইত্যাদি মন্দির দেখে নিন। এই সকল মন্দিরের মূর্তিগুলি মাটি খনন করে পাওয়া। প্রতি বছর এখানে জমকালো শিবরাত্রি মেলা ( Shivaratri Fair, Malhar ) বসে। মলহার থেকে গাড়িতে করে ৪৫ কি. মি. পথ অতিক্রম করে চলে আসুন হাসদেও নদীর তীরে জাঞ্জগিরের ( Janjgir, Hasdeo River ) চম্পাতে। চম্পা ( Champa, Janjgir ) বিখ্যাত তসর সিল্ক শাড়ি বা কোষার জন্য। তসর সিল্ক কিভাবে তৈরি হয় তা দেখে এবং পছন্দমতো কেনাকাটা সেরে ঐ গাড়িতেই সড়কপথে চলে আসুন ৩৬ কি. মি. দূরের শক্তি ( Sakti City ) শহরে। শক্তি ( Sakti ) শহরের দামৌদহরা, গিধাপর্বত, রাইনখোল, হরি, গুজর ছাতরি, মহামাঈ ইত্যাদি মন্দিরগুলি ও এই জায়গার আরো কিছু ছোটখাটো দ্রষ্টব্য আছে সেগুলো দেখে চলে যান ৬০ কি. মি. দূরের কেলো নদীর তীরে রায়গড়ে ( Raigarh, Kelo River )। এখানে মোতিমহল / রাজামহল রাজপ্রাসাদ, পুষ্প বাটিকা বাল উদ্যান ( Children Park ), লাল ট্যাঙ্কি, রাধাকৃষ্ণ মন্দির, ভূূূূূপদেওপুর ঝরণা, জুটমিল প্রভৃতি দেখে শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে ১৪-১৫ কি. মি. দূরে অবস্থিত সিংহানপুর গুহায় ( Singhanpur Cave ) চলে আসুন। Singhanpur Cave-এ মোট তিনটি গুহা আছে। তার মধ্যে দুটি ২৫-৩০ ফুট লম্বা। অন্যটিতে মানুষের জীবনের নানা পর্যায় বিভিন্ন ভঙ্গিমায় আঁকা রয়েছে। Raigarh-এ রকমারি হোটেল, লজ, রেস্টুরেন্ট আছে থাকা-খাওয়ার জন্য।
রায়গড় থেকে জাতীয় সড়ক ধরে চলে আসুন ৫২ কি. মি. দূরের সারংগড়ে ( Sarangarh )। এখানকার শ্যামলেশ্বরী দেবীর মন্দির ও দূর্গ প্রধান দ্রষ্টব্য। এছাড়া রয়েছে বহু প্রাচীন মহাপ্রভু মন্দির, কেভটিন মন্দির, রানীঝুলা মন্দির। সারংগড়কে কেন্দ্র করে গোমারধা অভয়ারণ্য ( Gomarda Wildlife Sanctuary / National Park ) ঘুরে দেখে নিন। চারিদিকের সবুজ পাহাড়, টিলা, ঝরণা নিয়ে গোমারধা সত্যিই অপরূপা। রায়গড় থেকে প্রায় ৮০ কি. মি. উত্তরে ধরমজয়গড়ের ( Dharmjaigarh ) নামডাক প্রাচীন দূর্গ-প্রাসাদ মধ্যেকার উষ্ণ প্রস্রবণের জন্য। এটিও খুব সুন্দর ছোট শহর। বিলাসপুর থেকে ৬৫ কি. মি. দক্ষিণে আর একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থান আছে যার নাম শিওরিনারায়ণ ( Sheorinarayan / Shivrinarayan )। এটি জাঞ্জগির-চম্পা জেলায় মহানদী, শিওনাথ ও জঁক - এই তিন নদীর সঙ্গমে অবস্থিত। কথিত আছে, এখানেই রামভক্ত শিবরি বা শিওরি স্বয়ং রামকে উচ্ছিষ্ট ফুল খাওয়ান। সেই শিওরির নাম অনুসারে এই জায়গার নামকরণ হয়েছে। এখানে পৌঁছে নরনারায়ণ-কেশবনারায়ণ-জগন্নাথ মন্দির, সঙ্গমস্থল ও অন্যান্য দ্রষ্টব্যগুলি দেখে নিন। প্রতি বছর মাঘী পূর্ণিমার বিশাল মেলার জন্য এই জায়গাটি এত বিখ্যাত। শিবরিনারায়ন থেকে ৫-৬ কি. মি. দূরের খারোদে ( Kharod ) এসে প্রথমে মধ্যযুগের বিখ্যাত লক্ষ্মণেশ্বর মহাদেব মন্দির ( Laxmaneshwar Mahadev Temple, Kharod ) দর্শন করে নিন। তারপর দেওরানি-জেঠানি মন্দির ও দেবাদিদেব মহাদেবের সুবিশাল মূর্তিটি দেখে আবার বিলাসপুর ফিরে আসুন।
অমরকণ্টক ( Amarkantak ) যাওয়ার পথে মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিসগড়ের সীমান্তে অচানকমার অভয়ারণ্য ( Achanaknar Wildlife Sanctuary ) অরন্যপ্রেমীদের আর এক স্বর্গরাজ্য। জঙ্গল-পাহাড় পরিবৃত এই Reserve Forest-এ বাঘ, চিতাবাঘ, গউর, ভাল্লুক, শুয়োর, চিতল, শতাধিক প্রজাতির পাখি, কীটপতঙ্গ, সরিসৃপ রয়েছে। ঘোঙ্গা ও খুড়িয়া ড্যাম - এই দুটি জলাধারের বিশাল লেক থাকা সত্ত্বেও এখানে জলাভাব আছে। অচানকমার চেকপোস্ট থেকে ১০-১২ কি. মি. দূরে ছাপরোয়ো ও আরো কিছুটা গিয়ে লামনি ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি দেখে নিন। অমরকণ্টকের বাস বিলাসপুর থেকে যাত্রা শুরু করে এই সমস্ত অরন্য ও জায়গার উপর দিয়ে যায়। এই সমস্ত অরণ্যাঞ্চলের গ্রামগুলোতে বৈগই, গোন্ড, ওরাওঁ উপজাতির মানুষেরা বাস করেন। রাস্তার দুধারে প্রচুর শালগাছ দেখতে পাবেন। আদিবাসীরা শালগাছকে দেবতা হিসেবে পূজা করেন। ১লা জুলাই থেকে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত অচানকমার পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকে। জঙ্গলে প্রবেশ করতে হয় গাইড নিয়ে। আলাদা করে ফি দিতে হয়। এই জঙ্গলে সাফারি করার যাবতীয় তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন - DFO, Bilaspur Division, Fax- 07752 226082 অথবা, Superintendent, Achanakmar Wildlife Sanctuary, Kota, Kargi Road, District - Bilaspur, Chhattisgarh - এই ঠিকানা গুলিতে। শুক্রবারের হাটও দেখতে পাবেন এই অরণ্যাঞ্চলে।
অম্বিকাপুর ( Ambikapur ) - সুরগুজা জেলার সদর শহর এটি। শহরের প্রধান দ্রষ্টব্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মহামায়া মন্দির, বাবা মুরাদ শাহ ও বাবা মহম্মদ শাহের সমাধিক্ষেত্র, শ্রী সাঁই বাবা মন্দির, সুরগুজা বা রঘুনাথ প্যালেস ইত্যাদি। এই শহর দর্শন করে ৩৬ কি. মি. পথ অতিক্রম করে পৌঁছে যান কবি কালিদাসের মেঘদূত খ্যাত রামগড়ে ( Ramgarh )। পাহাড়ের মাথায় রয়েছে মৌর্য যুগের গুহা। পাহাড় আর সবুজে মাখামাখি অপূর্ব প্রাকৃতিক নৈসর্গিক শোভা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন অ্যাম্পিথিয়েটার এখানেই আছে। দেবদাসী সুতনুকার জীবন সম্পর্কে জানতে পারবেন যোগীমারা গুহার মিউজিয়াম থেকে। প্রতি বছর বসন্তকালে Ramgarh-এ Dance Festival-এর আয়োজন করা হয়।সংস্কৃত গুরুরা এই নৃত্য উৎসবের আয়োজন করেন। এখানে গুহাকে বেঙরা বলা হয়। এখানকার কয়েকটি প্রধান দ্রষ্টব্য হলো - হাথি পোল, সীতাকুণ্ড, সীতা গুহা, রামগড় দূর্গ ( Ramgarh Fort ), কবিচৌরা, বশিষ্ঠ গুহা, লক্ষ্মণ গুহা, ঝাপি ও ফুলসুন্দরী গুহা, দরবার ফুফা ইত্যাদি।
Ambikapur থেকে ৫১ কি. মি. দূরে সুরগুজা জেলায় আর একটি মনোরম স্থান রয়েছে যার নাম মৈনপাট ( Mainpat )। একে ছত্তিসগড়ের সিমলা বলা হয়। এখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই তিব্বতী। দুটি বিশাল বৌদ্ধ মনাস্ট্রি, সারভাঞ্জা ঝরণা, টাইগার ইকো পয়েন্ট ও উল্টা পানি ( Ulta Pani ) অন্যতম দ্রষ্টব্য। আমরা জানি, জলের গতি সবসময় উপর থেকে নীচের দিকে। কিন্তু, এই Ulta Pani-র সরু নালার জল সবসময় নীচ থেকে উপর দিকে যায়। এইখানে সবকিছুই মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে কাজ করে। তাই বর্তমানে এই অতি আশ্চর্য জিনিস চাক্ষুষ করতে দেশ-বিদেশের প্রচুর পর্যটক এই Mainpat ভ্রমণে আসেন। এখানকার তিব্বতী কার্পেট ও কুকুরেরও যথেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে। এখানে অবস্থান করার জন্য দুটি স্থানের উল্লেখ করতে পারি। এক, Saila Tourist Resort এবং দুই, Forest Rest House - দুটি থাকার জায়গাই চমৎকার এবং সরকারি তত্ত্বাবধানে আছে।
দিপাদি ( Dipadih ) - অম্বিকাপুর থেকে মাত্র ৭৫ কিলোমিটার দূরের দিপাদি হলো এই রাজ্যের আর একটি সুবিখ্যাত ঐতিহাসিক ভ্রমণস্থল। এটি কানহার, সূর্য ও গালফুল্লা - এই তিন নদীর সঙ্গমে অবস্থিত। এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ খনন কার্যের ফলে প্রাপ্ত ভগ্নপ্রায় মন্দিরগুলিকে অত্যন্ত যত্নে রক্ষনাবেক্ষন করে চলেছে। Dipadih-তে একটি মিউজিয়াম আছে। সমস্ত মন্দির ও মিউজিয়ামটি ঘুরে সকল প্রাচীন মূর্তিগুলি দর্শন করে নেবেন। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশও অতি মনোরম।
সম্প্রতি অতীতে আমাদের দেশ ভারতবর্ষে যে কয়টি নতুন রাজ্য গঠিত হয়েছে তার মধ্যে ছত্তিসগড় অন্যতম। ১৯৬০ সালে ডা: খুরীচাঁদ বাঘেল প্রথম এই রাজ্যের দাবি তোলেন। ১৯৯১ সালে বাঘেলের মৃত্যু হওয়ার পরে শঙ্কর গুহনিয়োগীর নেতৃত্বাধীন ছত্তিসগড় মুক্তিমোর্চার দাবি অনুসারে ২০০০ সালের ৩১শে অক্টোবর মধ্যপ্রদেশের উপজাতি অধ্যুষিত একটি অংশ ভেঙে সরকারি নিয়ম মেনে এই নতুন রাজ্যের উদ্ভব হয়। উল্লেখ্য, এই রাজ্যে প্রচুর বাঙালি বাস করেন। নামকরণের পিছনে একটি ইতিহাস আছে। সেটি হ'ল যে, কালচুরি রাজাদের ৩৬টি দুর্গ বা গড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই রাজ্য জুড়ে। এর চতুর্দিকে ছয়টি রাজ্যের সীমান্ত আছে। যেমন, উত্তরে উত্তরপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ড, পূর্বে উড়িষ্যা, দক্ষিণে অন্ধ্রপ্রদেশ, দক্ষিণ-পশ্চিমে মহারাষ্ট্র এবং উত্তর-পশ্চিমে মধ্যপ্রদেশ। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই রাজ্য। বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান খনিজ দ্রব্য রয়েছে এই রাজ্যের মাটির নিচে। এছাড়া, বনজ সম্পদেও যথেষ্ট সম্পদশালী। পৃথিবী বিখ্যাত ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টেরও ( Bhilai Steel Plant ) অবস্থান এখানে। এখানকার নৈসর্গিক শোভাও অতুলনীয়। সুন্দর সুন্দর ভ্রমণস্থলও আছে সমস্ত রাজ্য জুড়ে। এই ব্যাপারে বস্তার জেলার নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। রাজ্যের প্রায় অর্ধেকই হ'ল বনভূমি। যারা এই রাজ্য ভ্রমণ করতে আসবেন তাঁরা অবশ্যই বস্তার ও দান্তেওয়াড়া জেলা ভালো করে ঘুরে নেবেন। প্রচুর দর্শনীয় স্থান আছে এই দুই জেলায়।
রাজ্যের রাজধানী ( Capital City ) হলো রায়পুর ( Raipur )। মোট এলাকা ( Total Area ) বা আয়তন ১৩৫২৩৭ বর্গ কি. মি.। মোট জনসংখ্যা ( Population ) ২৫৫৪৫১৯৭। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করেন ( Population Density ) ১৮৮ জন। এখানকার মানুষদের ছত্তিসগড়ি ( Chhattisgarhi ) বলা হয়। প্রধান সরকারি ভাষা ( Main Official Languages ) হ'ল হিন্দি ও ছত্তিসগড়ি। প্রতি ১০০০ পুরুষে নারী বাস করেন ৯৯১ জন ( Sex Ratio of Male and Female )। সাক্ষরতার হার ( Percentage of Literacy ) ৭১.০২%। মাথাপিছু বার্ষিক আয় ( Average Yearly Income Per Head / Per Capita ) ৯৬৮৯০ টাকা।
AVERAGE WEATHER OR CLIMATE. WHEN SHOULD YOU GO THERE? / BEST TIME TO VISIT OR TRAVEL THIS STATE:-
গ্রীষ্মকালে অত্যন্ত গরম পড়ে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫° সেলসিয়াসেও উঠে যায়। তেমনি শীতকালেও বেশ ভালো ঠান্ডা পড়ে। অনেক সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০° সেলসিয়াসেরও বেশ নীচে নেমে যায়। বর্ষাকালে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়। এই রাজ্য সারা বছরই বেড়াবার জন্য উপযুক্ত। তবে সব দিক দিয়ে বিচার করলে অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময়ই হ'ল এখানে বেড়াবার সবচেয়ে ভালো মরশুম।
মোট ২৭ টি জেলা ( Total Number of Districts is 27 ) রয়েছে। সেগুলো হল, (1) বলরামপুর-রামানুজগঞ্জ ( Balrampur-Ramanujganj ), (2) বালোড ( Balod ), (3) বস্তার ( Bastar ), (4) বেমেতারা ( Bemetara ), (5) বিজাপুর ( Bijapur ), (6) বিলাসপুর ( Bilaspur ), (7) দান্তেওয়াড়া ( Dantewada ), (8) ধামতারি ( Dhamtari ), (9) দুর্গ ( Durg ), (10) গারিয়াবান্দ ( Gariyaband ), (11) জাঞ্জগির-চম্পা ( Janjgir-Champa ), (12) জাসপুর ( Jashpur ), (13) কবির ধাম ( Kabir Dham ), (14) কানকের ( Kanker ), (15) কোরবা ( Korba ), (16) কোরিয়া ( Koriya ), (17) কোন্দাগাঁও ( Kondagaon ), (18) মহাসমুন্দ ( Mahasamund ), (19) মুঙ্গেলি ( Mungeli ), (20) নারায়ণপুর ( Narayanpur ), (21) রায়গড় ( Raigarh ), (22) রায়পুর ( Raipur ), (23) রাজনন্দগাঁও ( Rajnandgaon ), (24) সুকমা ( Sukma ), (25) সুরজপুর ( Surajpur ), (26) সুরগুজা ( Surguja ), (27) বালোডাবাজার-ভাটপাড়া ( Balodabazar-Bhatapara )।
IMPORTANT OFFICE ADDRESSES, CONTACT TELEPHONE NUMBERS FOR EMERGENCY ENQUIRIES WHEN YOU ARE TRAVELLING DIFFERENT PLACES IN / ESSENTIAL ADDRESSES OF GOVT. TOURISM OFFICES, TRAVEL AGENCIES FOR ALL TOURISTS:-
[ Chhattisgarh Tourism Board ( CTB ). Offices Through All Over India ( Address With Mobile Telephone Number ) ] -
Raipur ( Central Office ) - 2nd Floor, Udyog Bhaban, Ring Road, Raipur 492006, Tel - 0771 4224600.
Jagdalpur - Tourist Information Centre, Tourist Rest House, Chitrakote, Tel - 7805905780 / 7049455567.
New Delhi - Chanakya Bhawan, 3rd Floor, Yaswant Place, Tel - 011 26116822 / 9811707111.
Bhopal - Ground Floor, Plot No. JM - 3, Ankur Colony, Tel - 07552573320 / 9893458861.
Bilaspur - Bilaspur Railway Station, Tel - 9111009037.
Kolkata - 230A, AJC Bose Road, Chitrakoot Building, 2nd Floor, Room No. 25, Tel - 40662381.
→ [ State Government Official Website - https://www.cgstate.gov.in
Tourism Related Website - http://www.chhattisgarhtourism.co.in ]
ALL TOTAL LIST OF 24 VERY BIG, MOST POPULAR OR FAMOUS LOCAL FAIRS & MAJOR FESTIVALS:-
(i) Bastar Dussera, (ii) Bastar Lokotsav, (iii) Bhoramdeo Mahotsav Festival, (iv) Champaran Mela, (v) Chhattisgarh Foundation Day Rajyotsav, (vi) Chhattisgarhi Language Day, (vii) Goncha Fest, (viii) Madai Festival, (ix) Teeja Utsav, (x) Narayanpur Mela, (xi) Pola, (xii) Rajim Kumbh Mela, (xiii) Hareli, (xiv) First Fruit Utsav, (xv) Earth Festival, (xvi) Bhagoriya Mahotsava, (xvii) Chakradhar Festival, (xviii) Hariyali, (xix) Kora, (xx) Navakhani and Cherta Festivals, (xxi) Kajari Utsav, (xxii) Rajim Lochan Mahotsav, (xxiii) Sheorinarayan Fair, (xxiv) Navakhana Festival.
এই রাজ্য ভ্রমণের সময়ের কেনাকাটা। What are The Things You Should Buy ( Marketing ) While Traveling in Chhattisgarh?
ভ্রমণের স্মৃতি হিসেবে এখান থেকে তসর সিল্ক, সুন্দর কারুকার্য করা কাঠের ছোটখাটো জিনিস, গ্রামীণ এলাকার হাট থেকে আদিবাসীদের হাতে তৈরি নানা সুন্দর সামগ্রী কিনে নিয়ে যেতে পারেন।
কিভাবে যাবেন? How to Reach or Go?
ভারতের যেকোন প্রান্তের সাথে রেলপথে রায়পুর ও বিলাসপুরের ভালো যোগাযোগ আছে। বিমানে আসলে প্রথমে রায়পুর বিমানবন্দরে নামতে হবে। তারপর গাড়ি বা বাসে করে এই রাজ্যের যেকোন জায়গায় সহজে যেতে পারবেন। পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির সাথে সড়কপথে বাস সহযোগে উত্তমমানের যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে।
কোথায় থাকবেন? Where to Stay?
এই রাজ্যের রাজধানীসহ প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে হোটেল, লজ, রেস্টুরেন্ট প্রভৃতির সুবন্দোবস্ত আছে।
এই রাজ্যের যেকোন জায়গায় যাওয়া আসা, থাকা খাওয়ার ব্যাপারে আগে থাকতে অনলাইন বুকিং-এর জন্য নীচের বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে এক বা একাধিক ব্যবহার করতে পারেন। [ FOR ONLINE BOOKING OF FOODS / FLIGHTS, TRAIN / RAILWAY RESERVATION, HOUSES ON RENT/ FLATS RENTAL / LODGES / RESORTS / HOMESTAYS / TENTS / HOTELS ROOMS IN ANY PLACE WITH DISCOUNT, CHEAP AIR TICKETS, BUS BOOKING, CAR HIRE ]:-
1. https://www.trivago.in
2. https://www.goibibo.com
3. https://www.makemytrip.com
4. https://www.yatra.com
5. https://www.cleartrip.com
6. https://www.tripadvisor.in
7. https://www.ixigo.com
8. https://www.zomato.com
2. https://www.goibibo.com
3. https://www.makemytrip.com
4. https://www.yatra.com
5. https://www.cleartrip.com
6. https://www.tripadvisor.in
7. https://www.ixigo.com
8. https://www.zomato.com
[ TOP PLACES TO VISIT OR MAJOR TOURIST ATTRACTIONS IN CHHATTISGARH, INDIA WITH PROPER TOUR PLAN ON MAIN TRAVEL DESTINATIONS AND OTHER NEAREST BEAUTIFUL SPOTS. ]
রায়পুর ( Raipur ) - ভারতের ছত্তিসগড় রাজ্যের রাজধানী, একটি জেলা ও তার সদর শহর রায়পুরের দর্শনীয় স্থানগুলি সম্পর্কে জানাবো। এই ভূখণ্ডের একটি প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে। গবেষণার দ্বারা যা জানা গেছে তা হলো, কালচুরি রাজাদের রাজধানী ছিল এই স্থান, হাইহিয়া রাজাদের রাজত্ব ছিল এখানেই, এছাড়াও আরো বহু রাজবংশ রাজত্ব করেছে। ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এই জায়গার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। নামকরণ সম্পর্কে একটি তথ্যই পাওয়া যায়, সেটি হল কালচুরি রাজা রামচন্দ্রের পুত্র ব্রহ্মদেও রায়ের নাম থেকেই এই জায়গার রায়পুর নাম হয়েছে। বর্তমানে আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের অতুলনীয় মিশেলে দেশের অন্যতম সেরা শহরগুলির মধ্যে পরিগণিত হয়। রাজকুমার কলেজ ( Rajkumar College, Great Eastern Road, Mukut Nagar, Raipur, Chhattisgarh - 492001 ) - অভিজাত বংশের ছেলেদের লেখাপড়া করবার জন্য তৎকালীন সেন্ট্রাল প্রভিন্সের কমিশনার স্যার অ্যান্ড্রু ফ্রেজার ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে জব্বলপুরে প্রতিষ্ঠা করেন এই রাজকুমার কলেজটি। কিন্তু, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাফিলিয়েশন পাওয়ার পর ১৮৯৪ সালে রায়পুরে স্থানান্তরিত হয়। এরপর আসা যাক মহান্ত ঘাসিদাস স্মারক সংগ্রহশালায় ( Mahant Ghasidas Smarak Sangrahalay )। রাজা মহান্ত ঘাসিদাসের শিল্পকলার প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা ছিল। তারই ফলস্বরূপ ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে মহান্ত ঘাসিদাস মেমোরিয়াল মিউজিয়ামটি ( Mahant Ghasidas Memorial Museum ) প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে সংস্কৃতি, নৃতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব ও জীবতত্ত্ব সমেত মোট চারটি বিভাগ আছে। ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বহু শিল্পকর্মের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। তবে এই স্থানের বিশেষ আকর্ষণ হলো কিরারি থেকে আনা সাতবাহন রাজাদের নাম খোদাই করা খ্রিস্টীয় ২ শতকের একটি অতি প্রাচীন পিলার। প্রাচীন মুদ্রার সংগ্রহও রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেয়। এই চত্বরে একটি লাইব্রেরিও আছে। এগুলি কেবলমাত্র সপ্তাহের সোমবারই বন্ধ থাকে। ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত কয়েকশো বছরের পুরনো সুন্দর কারুকার্য করা দুধাহারি মঠটিও ( Shree Ramchandra Swami Dudhadhari / Dudhahari Math ) রাজধানী শহরটির আর এক উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য স্থান ও পবিত্র ধর্মস্থল। লোকমুখে শোনা যায় যে, মহান্ত বলভদ্র দাস নামের এক সাধু একখন্ড পাথরকে হনুমান জ্ঞানে পুজো করতেন। সুরহি নামের একটি দুগ্ধবতী গাভী নিজে থেকেই নিজের দুগ্ধধারায় স্নান করাত ঐ পাথরখণ্ডটিকে। মহান্তর জীবনধারণও হতো সেই দুধে। দেবনাম দুধাহারিরও প্রচলন সেই সময় থেকে।
লালরঙের টাউন হলে ( Town Hall / Victoria Hall ) রাখা ঐতিহাসিক কালো স্টিম ইঞ্জিনটি আর এক বিশেষ দর্শনীয় বস্তু। এই ভবনটি ১৮৮৯ সালে নির্মাণ করা হয়। শুরুতে এটি ছিল ব্রিটিশ প্রশাসনের সদর দপ্তর। মহারানী ভিক্টোরিয়ার সম্মানে প্রথমে এর নাম রাখা হয়েছিল ভিক্টোরিয়া হল। পরে এর নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় টাউন হল।
শহরের মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে বিশালাকার স্বামী বিবেকানন্দ সরোবর ( Swami Vivekanand Sarovar )। কেশকলের বোটানিক্যাল গার্ডেনটিও ( Botanical Garden, Keshkal Valley ) খুব সুন্দর। চারপাশে সবুজ পাহাড়। বসন্তে ফুলে ফুলে রঙীন হয়ে আরও মনোরম হয়ে ওঠে। একটি ওয়াচ টাওয়ার, চিলড্রেন পার্ক ও ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। আপনার ইচ্ছা হলে হাইওয়ে অথরিটির বাংলোয় দুই-এক দিন থেকেও যেতে পারেন। শহরে দেখার মধ্যে আর আছে রায়মুর দুর্গ, মহামায়া মন্দির, জৈতু সাউ মঠ, রামকৃষ্ণ মিশন, জগন্নাথ মন্দির, জয়স্তম্ভ চক, কায়সার ই হিন্দ দরওয়াজা, মাধব ঘাট ও মাধব মন্দির ইত্যাদি স্থান। উপরওয়ারা গ্রামে ২০০ একর জমির উপর অতি সম্প্রতি গড়ে ওঠা পুরখোউতি মুক্তাঙ্গন ( Purkhouti Muktangan, Uparwara Village ) দেখে নিতে ভুলবেন না। এখানে ছত্তিসগড়ের লোকশিক্ষা, সংগীত ও সংস্কৃতির আশ্চর্য মিলন প্রত্যক্ষ অনুভব করতে পারবেন।
সদরের ৩৫ কি. মি. পূর্বে আর একটি দর্শনীয় জায়গা আছে, তার নাম আরং ( Arang )। আরং বিখ্যাত একাদশ-দ্বাদশ শতকের প্রাচীন মন্দির সমূহের জন্য। দেওয়াল জীর্ণ হলেও এগুলির চূড়া ও গর্ভগৃহ আজও অক্ষত রয়েছে। মন্দিরের বাইরের দিকে ভাস্কর্যগুলো অতুলনীয়। যদিও সবকয়টি ভাস্কর্যেই সময়ের ছাপ স্পষ্ট। এখানকার জনপ্রিয় মন্দিরগুলির মধ্যে কয়েকটি হলো - Maa Mahamaya Temple, Natkeshwar Mahadev Temple, Shree Shanidev Mandir Ranisagar, Adishakti Chandi Mandir, Shree Hanuman Mandir, Shri Panchmukhi Mahadev, Old Shiv Mandir etc.
আরং ( Arang ) থেকে কাসডোল ( Kasdol )- এর পথে ৪২ কিলোমিটার পথ গেলে একটি ঐতিহাসিক ভ্রমণ স্থান পাবেন যার নাম শিরপুর ( Sirpur )। এখানে একসময় সর্ভপুরা রাজাদের রাজধানী ছিল। বৌদ্ধধর্মের অন্যতম পীঠস্থানও ছিল। শোনা যায়, সপ্তম শতকে চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাংও নাকি এসেছিলেন। খনন করে মাটির তলায় দীর্ঘদিন চাপা পড়ে থাকা বৌদ্ধ মন্দির, বৌদ্ধবিহার বা মনাস্ট্রিতে শায়িত বিশাল বুদ্ধমূর্তিগুলিই শিরপুরের প্রধান আকর্ষণ। ইঁটের তৈরি লক্ষ্মণ মন্দিরটির স্থাপত্যশৈলী সত্যিই সবার নজর কাড়ে। এখানে থাকার জন্য পাশেই ছত্তিসগড় ট্যুরিজমের রিসর্ট আছে।
মহাসমুন্দ রেলস্টেশনের ( Mahasamund Railway Station ) কাছে বর-নয়াপাড়া অভয়ারণ্য ( Bar Nayapara Wildlife Sanctuary / Reserve Forest ) জঙ্গলপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্যস্থল। রায়পুর স্টেশন থেকে ওয়ালটেয়ার যাওয়ার পথের একটি সুন্দর জায়গা। চারিদিকে ঢেউখেলানো টিলা আর ঘন সবুজ অরন্য। তারই মাঝে এখানে ওখানে নদী-নালা যেন অনবরত লুকোচুরি খেলছে। বলমদেহী ও জঁক এখানকার প্রধান দুই নদী। তুরতুরিয়াসহ অনেক ঝোরা রয়েছে। শাল, সেগুন, কুল, বাঁশ গাছ একে অপরের সাথে জড়িয়ে এমনভাবে রয়েছে যে অরন্যের ভিতরে ভরদুপুরেও সন্ধ্যার অন্ধকার আর এক ধরনের গা ছমছমে ভাব থাকে। এখানকার বন্যপ্রাণীদের মধ্যে রয়েছে বাঘ, প্যান্থার, চিতল, নীলগাই, বুনো শুয়োর, লেপার্ড, ভালুক, বার্কিং ডিয়ার, দেড়শোরও বেশি প্রজাতির পাখি, নানা ধরনের সরিসৃপ ও পোকামাকড়। বর-নয়াপাড়া অভয়ারণ্য ভ্রমণের সেরা সময় হলো নভেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যবর্তী সময়। থাকার জন্য ফরেস্ট রেস্ট হাউস, জঙ্গল কটেজ আছে। রায়পুরের ডি. এফ. ও. সাহেবের অফিসে যোগাযোগ করে বুকিং করতে হবে। এছাড়া, মোহদায় ছত্তিসগড় ট্যুরিজমের হারেলি ইকো রিসর্ট আছে।
এখান থেকে চলে যেতে পারেন খাল্লারি ( Khallari )। মহাসমুন্দ রেলস্টেশন থেকে এই স্থানের দূরত্ব মাত্র ২৫ কি. মি.। ঐতিহাসিক ও পুরাতাত্ত্বিক গুরুত্ব যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে খাল্লারির। পাহাড়ের চূড়ায় সেই বিখ্যাত খাল্লারি মন্দিরটি ( Khallari Temple ) অবস্থিত যেখানে মহাভারতের নিদর্শন হিসেবে আছে ভীমের পদচিহ্ন, কলসি, উনুন। অন্ততপক্ষে একবার ঘুরে আসুন। এই পবিত্র স্থান দর্শন করে চলে যান ৫৩ কি. মি. দূরে মহানদী, পেইরি ও সন্দুর নদীর সঙ্গমে অবস্থিত রাজিমে ( Rajim )। এই জায়গাটি ছত্তিসগড়ের প্রয়াগ নামেই বেশি পরিচিত। এখানে এসে ৮-৯ শতকের ইঁটের তৈরি রাজীবলোচন বিষ্ণু মন্দির ( Rajiblochan Vishnu Temple ) এবং একাদশ শতকে নির্মিত কুলেশ্বর শিব মন্দিরটি ( Kuleshwar Shiv Mandir ) সর্বপ্রথম দর্শন করে নেবেন। রাজিম ভ্রমণ সেরে সোজা চলে যান ১৫ কিলোমিটার দূরের বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র চম্পারণে ( Champaran )। এই চম্পারণেই বৈষ্ণব সাধক মহাপ্রভু বল্লভাচার্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর শিষ্যরা তাঁদের এই গুরুর স্মরণে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এখানে একটি বিশাল মেলা অনুষ্ঠিত হয়। নিকটের গভীর অরণ্যে প্রাচীন চম্পাকেশ্বর শিবের মন্দিরটিও ( Champakeshwar Shiva Temple, Champaran ) অবশ্যই দেখে নেবেন।
উদন্তি - সীতা নদী স্যাংচুয়ারি ( Udanti Sitanadi Wildlife Sanctuary / Tiger Reserve Forest ) - রায়পুর শহর থেকে প্রায় ২০০ কি. মি. দক্ষিণে ওড়িশা সীমান্ত ঘেঁষে এই বিশাল উদন্তি অভয়ারণ্যটি গড়ে উঠেছে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে। অরন্য, নদী, পাহাড়, উপত্যকা নিয়ে ৩৫০ মিটারের বেশি উচ্চতায় প্রায় ২৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে রয়েছে এই বিশালাকার প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। উদন্তি স্যাংচুয়ারিকে উত্তর-দক্ষিণে দুভাগে ভাগ করে উদন্তি নদীটি ( Udanti River ) পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে বয়ে চলেছে। এই নদীর নামেই এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলটির নামকরণ হয়েছে। ব্ল্যাক প্যান্থার, বুনো মহিষের মতো বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে সরকার একে স্যাংচুয়ারির স্বীকৃতি দিয়েছে। শাল সেগুনের বিশাল জঙ্গলে চিতল, সম্বর, নীলগাই, লেপার্ড, শ্লথ বিয়ার, স্ট্রিপড হায়না, গউর, চৌশিঙ্গা, বার্কিং ডিয়ার ও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। উদন্তিই একমাত্র অভয়ারণ্য যেখানে বৃহৎ বুনো মহিষ ও বাইসন একসাথে বসবাস করে। আবার শীতকালে ফিঙে, বুলবুলি প্রভৃতি দেশীয় পাখির সাথে ১০০-রও বেশি প্রজাতির পরিযায়ী পাখিদের ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ করতে দেখা যায়। পয়লা নভেম্বর থেকে তিরিশে জুন পর্যন্ত এই অভয়ারণ্য বিহারের ( Udanti Jungle Safari ) অনুমতি পাওয়া যায়। এই অরন্যে থাকা-খাওয়ার জন্য আছে Torenga Forest Rest House, For Advance Booking:- DFO ( East ), Karla Forest Rest House; or DFO ( Wildlife ), Raipur, Idagaon Eco Centre.
এবার চলে আসি ধামতারি ( Dhamtari ) ও সীতা নদী স্যাংচুয়ারির ( Sita River Sanctuary ) প্রসঙ্গে। রায়পুর থেকে জগদলপুরের পথে ধামতারি জেলার জেলা সদর ধামতারিতে ( Dhamtari )। চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা অতি মনোরম গাঙগ্রেল ( Gangrel Dam ) ও মাডামসিলি ( Madamsilli Dam ) জলাধার দুটি দর্শন করে এখান থেকে ১০০ কি. মি. দক্ষিণে অবস্থিত অতি বিশাল আয়তনের সীতা নদী স্যাংচুয়ারিতে। টিলা ও গভীর অরন্যময় ১০৫০ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে এই সংরক্ষিত অভয়ারণ্যটি রয়েছে। পুরো স্যাংচুয়ারিকে পূর্ব ও পশ্চিম এই দুভাগে ভাগ করে উত্তর থেকে দক্ষিণে অরন্য চিরে বয়ে চলেছে সীতা নদী ( Sita River )। এই নদীর নামেই অভয়ারণ্যটির নামকরণ হয়েছে। এই অরন্যের শাল কাঠের যথেষ্ট সুনাম আছে। এছাড়া, এই বনাঞ্চলে সেগুন, সাজা, বিজা, ধাওরা, আমলতাস ইত্যাদি বৃক্ষ প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। অরন্য দিয়ে বয়ে চলা মন্ডুর নদীর বুকে গড়ে উঠেছে মন্ডুর ড্যাম। আর এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে মন্ডুর লেকের। সীতা নদী স্যাংচুয়ারির অন্যতম আকর্ষণ হলো বাঘ, ব্ল্যাক প্যান্থার, ভাল্লুক এবং বিরল প্রজাতির উড়ুক্কু কাঠবিড়ালি। এছাড়াও, অন্যান্য অনেক প্রজাতির জীবজন্তু, পাখি, পোকামাকড় ও সরিসৃপ রয়েছে। গাইড নিয়ে অরন্য দর্শন করবেন। ১লা নভেম্বর থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত জঙ্গল সাফারি বা দর্শনের অনুমতি মেলে। এখানে থাকার জন্য একটি Forest Rest House আছে। ধামতারির গাঙগ্রেলে ছত্তিসগড় পর্যটন দপ্তরের Baridhi Lake View Resort অথবা ভান্থাগাঁও-এর Tourist Motel-এও থাকতে পারেন।
ভিলাই ( Bhilai ) - ভারতীয় ইস্পাত শিল্পের দ্বিতীয় কারখানাটি গড়ে ওঠে এই ভিলাইতে। একটি অখ্যাত গ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করে আজকের বিশ্ববিখ্যাত সাজানো গোছানো শিল্পনগরীতে রূপান্তরিত হওয়ার প্রথম পদক্ষেপের সময়কাল ছিল ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রুশ সরকারের সহযোগিতায়। ইস্পাত কারখানাটিতে প্রথম উৎপাদন আরম্ভ হয় ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ই অক্টোবর। আর এই কারখানাকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে একটি পরিকল্পিত আধুনিক শহর। কলকাতা থেকে মুম্বাইগামী জাতীয় সড়কপথে রায়পুরের অল্প কিছুটা পরে এই শিল্পনগরীটি অবস্থিত। জাতীয় সড়কের বামদিকে আছে ইস্পাত কারখানাটি। হাওড়া থেকে মুম্বাই যাওয়ার ট্রেন থেকেও এই ইস্পাত নগরীর শিল্প-সুষমা অল্প কিছু মিনিটের জন্য উপভোগ করতে পারবেন। ইস্পাত কারখানা দেখার অনুমতি পাওয়ার জন্য কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে কারখানাটির জেনারেল ম্যানেজার বা PRO-কে লিখিত আবেদন জানাতে হবে। যারা এখানে আসতে চান তারা যদি দুরগ্ ( Durg Railway Station ) রেলস্টেশনে নামেন তাহলে যাতায়াতে সুবিধা হবে। Bhilai ও Durg দুই শহরেই অনেক হোটেল আছে। যেখানে খুশি থাকতে পারেন। দুরগ্ স্টেশন থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে প্রাচীন জৈন তীর্থ নাগপুরা ( Nagpura ) দর্শনও একই
যাত্রায় সেরে নিন। এখানকার পার্শ্বনাথ মন্দিরে সপ্তমুখী নাগের সপ্তফনা আচ্ছাদিত পার্শ্বনাথের দারুণ সুন্দর মূর্তিটি ভালোভাবে দর্শন করে নিন। এই নাগ দেবতা থেকেই এই জায়গার নাম হয়েছে নাগপুরা ( Nagpura )। এখানকার ধর্মশালাটিতে থাকতে পারবেন।
ভোরামদেও ( Bhoramdev / Bhoramdeo ) - রায়পুর শহর থেকে প্রথমে সিমগা ( Simga ), তারপর সিমগা থেকে বাঁ হাতি রাস্তা ধরে সোজা চলে যান কাওয়ার্ধা ( Kawardha )। এই পথে নিয়মিত বাস চলে। রাজা রাজপাল সিং এর তৈরি দুর্গ এবং পুরো শহর ঘুরে দেখে নিন। এই শহরে Godna Eco Resort, Kawardha-এ থাকতে পারেন। তারপর ট্যাক্সি, সুমো, বোলেরো, মারুতি বা ট্রেকারে চেপে ১৭ কি. মি. দূরের ভোরামদেও-তে চলে আসুন। মাইকাল পাহাড় ও ঘন সবুজ অরন্যের প্রেক্ষাপটে ছবির মতো সুন্দর জায়গা হলো এই Bhoramdeo উপত্যকা। এখানকার একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হলো ভোরামদেব মন্দির ( Bhoramdev Temple ), যাকে ছত্তিসগড় রাজ্যের খাজুরাহো বলা হয়ে থাকে। এটি তৈরি হয় ৭ থেকে ১১ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। মন্দিরের গায়ে খোদিত রামায়ণের উপাখ্যান ও মিথুন মূর্তিগুলো আপনার মনে একধরনের বিস্ময় ও সম্ভ্রম একসাথে জাগিয়ে তুলবে। এই মন্দিরটিতে একসাথে উমা মহেশ্বর, নটরাজ, নৃসিংহ, কৃষ্ণ, সূর্য, কালভৈরব, নৃত্যরত গণেশ, কার্তিক, চামুণ্ডা, অম্বিকা, সপ্তমাতৃকা, লক্ষ্মীনারায়ণ প্রমুখ জনপ্রিয় দেবদেবীগণ রয়েছেন। গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গ পূজিত হন। পূর্বমুখী মন্দিরের সামনে একটি অতি মনোরম হ্রদ আছে। আর রয়েছে নাগবংশীয় সম্রাট রামচন্দ্র দেও দ্বারা ১৩৪৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত বিবাহমঞ্চ মাডোয়া মহল। রাজা নাগবংশী ও রানী হাইবংশীর বিবাহের স্মৃতিতে নির্মিত ১৬ স্তম্ভের উপর তৈরি শামিয়ানা আকৃৃতির এই ঐতিহাসিক মন্ডপটিতেও কামসূত্রের বিভিন্ন ভঙ্গিমা মূর্ত হয়েছে। এখানে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি রিসর্ট তৈরি হয়েছে।
কাওয়ার্ধা থেকে ৭৭ কি. মি. দূরের খয়রাগড়ে ( Khairagarh ) গিয়ে ১৯৫৬ সালে নির্মিত ইন্দিরা শিল্প ও সঙ্গীত বিশ্ববিদ্যালয় ( Indira Kala Sangit Vishwavidyalaya, Khairagarh ) দেখে আসুন। তারপর এখান থেকে ৩৪ কি. মি. দূরত্বের গান্ডাইতে ( Gandai ) গিয়ে ১০ - ১১ শতকে নির্মিত কালচুরি রাজাদের প্রাচীন শিবমন্দিরটি ( Old Shiva Temple, Gandai ) ভালো করে ঘুরে দেখে নিন।
হাওড়া-মুম্বাই রেলপথের রাজনন্দগাঁও ( Rajnandgaon ) হয়ে পৌঁছে যান জঙ্গল, পাহাড় ও জলাশয় পরিবৃত স্বপ্নের দেশ ডোঙ্গরগড়ে ( Dongargarh )। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হলো ডোঙ্গরগড় পাহাড়ে অবস্থিত মা বোমলেশ্বরী / বামলেশ্বরী দেবীর মন্দির ( Maa Bamleshwari Temple, Dongragarh )। সিঁড়ি বেয়ে উঠে বা রোপওয়ে চড়ে এই মন্দিরে পৌঁছতে হয়। বিশ্রাম গৃহ, পানীয় জল ও আহারের ব্যবস্থা আছে এই চত্বরে। নবরাত্রি উৎসব খুব ধুমধাম করে পালন করা হয়।
বস্তার ও চিত্রকূট জলপ্রপাত ( Bastar and Chitrakoot Water Fall ) - ছত্তিসগড় রাজ্যের জেলা বস্তার জীব-উদ্ভিদ বৈচিত্র্যে ও দর্শনীয় স্থানের সংখ্যার বিচারে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণকারীদের কাছে বিশেষভাবে আদরণীয়। এটি ওড়িশা সীমান্ত লাগোয়া। এর জেলাসদর হলো জগদলপুর ( Jagadalpur )। গুহা, মন্দির, পাহাড়-পর্বত, নদী নালা ঝোরা, জলপ্রপাত, ঝর্ণা, অরণ্য নিয়ে অতি মনোরম একটি ভূখণ্ড। জেলা সদরের অবস্থান ১৮৩০ ফুট উঁচুতে। উপজাতি অধ্যুষিত এই এলাকায় শতাব্দী প্রাচীন সংস্কৃতির ধারা দেখতে পাওয়া যায়। জগদলপুরের অনুপমা সিনেমা হলের কাছের বাসস্ট্যান্ড থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর চিত্রকোট জলপ্রপাত ( Chitrakut Water Fall ) যাওয়ার বাস ছাড়ে। ট্যাক্সি, জিপ ভাড়া করে লোহান্ডিগুডা ( Lohandiguda ) হয়ে অনন্যা চিত্রকূট জলপ্রপাত দর্শনে যেতে পারেন। লোহান্ডিগুডা থেকে এই জলপ্রপাত মাত্র ১০ কি. মি. দূরে অবস্থিত। এটিকে নায়াগ্রার মিনি সংস্করণও বলা যায়। অশ্বক্ষুরাকৃতি এই Water Fall-এর নৈসর্গিক সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ইন্দ্রাবতী নদী ( Indravathi River ) বিন্ধ্য পর্বতের ১৭২২ ফুট উঁচু থেকে প্রবল বেগে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিছুটা এগিয়ে ডাইনে বাঁক নিয়ে গিয়ে মিলিত হয়েছে গোদাবরী নদীতে। বর্ষায় এই নদী ও জলপ্রপাতের রূপ আরও বেড়ে যায়। সূর্যের আলো পড়লে রামধনুর রঙের ছটা দেখা যায়। ডোঙায় চেপে ভেসেও পড়তে পারেন। এর চারপাশের পরিবেশও অত্যন্ত মনোরম। কিন্তু, সঠিক প্রচারের অভাবে এই অসাধারণ দর্শনীয় স্থানটি ভারত তথা বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে আজও অবহেলিত। এখানে থাকার জন্য সরকারি-বেসরকারি রেস্ট হাউস ও রিসর্ট রয়েছে। এখানে আসার পথে জগদলপুর থেকে ৮ কি. মি. দূরে আর একটি সুন্দর দেখার জায়গা হলো চিত্রধারা জলপ্রপাত ( Chitradhara Water Fall )। চিত্রকূট থেকে বারসূয়া যাওয়ার পথে আর একটি সুন্দর ঝরণা আছে যার নাম টমরাঘুমর ঝর্ণা। এটি টমরাঘুমর গ্রামে অবস্থিত।
জগদলপুর বাসস্ট্যান্ড বাজারের কাছে উনবিংশ শতকের প্রথম কাকাতীয় রাজাদের তৈরি সুচারু শিল্প ও ভাস্কর্য মন্ডিত প্রাসাদে বর্তমানে সরকারি দপ্তর বসেছে। এই প্রাসাদে প্রবেশ করতেই দেখতে পাবেন রাজপরিবারের কুলদেবী দন্তেশ্বরী মাতার মন্দির। এখানে দেবী দন্তেশ্বরী হলেন সিংহবাহিনী দূর্গা। ৫১ পীঠের এক পীঠ হলো এই দন্তেশ্বরী কারণ পুরাণ মতে এখানে সতীর দাঁত পতিত হয়। যদিও আসল পীঠস্থান দন্তেবাড়ায়। পাশেই রয়েছে ভুবনেশ্বরী দেবীর মন্দির। এখানকার বৃক্ষতলে সতীর পদচিহ্ন রয়েছে। এই দেবালয়ে পুরুষদের জামা ছেড়ে ধুতি বা লুঙ্গি পরে ঢুকতে হয়। দশেরাতে রথোৎসব অতি জনপ্রিয় উৎসব। এই শহরের অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে আছে গঙ্গামুন্ডা লেক, দলপতি সাগর লেক, ১৯৭২ সালে ধরমপুরায় প্রতিষ্ঠিত অ্যানথ্রোপলজিক্যাল মিউজিয়াম ( Anthropological Museum, Chitrakote Rd, Dharmapur, Chhattisgarh-494005 )। বস্তারের জেলাসদর ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ কিনে নিয়ে যান এখানকার বিখ্যাত কোসা সিল্ক, কাঠ ও পোড়ামাটির মনভোলানো কারুশিল্প। এখানে ঘুরতে আসলে অন্ধ্রপ্রদেশ সীমান্তে জগদলপুর-নিজামাবাদ সড়কপথে খানিকটা গিয়ে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পামেদ অভয়ারণ্যটিও ( Pamed National Park / Wildlife Sanctuary or Pamed Reserve Forest ) অবশ্যই দেখে নেবেন। এই নগরী থেকে ৪০ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে গেলে আর একটি অভয়ারণ্য পেয়ে যাবেন। সেটি হলো কাঙ্গেরঘাটি ন্যাশনাল পার্ক ( Kanger Ghati National Park )। অর্জুন, মহুয়া, কেন্দু, খয়ের, শাল, সেগুন গাছে ভরপুর ২০৫ বর্গকিলোমিটার ব্যাপ্ত এই অভয়ারণ্যে ধুরবা, মারিয়া, মুরিয়া, গোন্ড ইত্যাদি আদিম উপজাতি সম্প্রদায়ের আদিবাসী মানুষ বসবাস করেন। বন্যপ্রাণীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বাঘ, চিতাবাঘ, চিতল ও সম্বর হরিণ, বুনো শুয়োর প্রভৃতি। বিভিন্ন পাখিদের কলকাকলিতে পার্কটি মুখরিত হয়ে থাকে। একটি কুমির প্রকল্পও ( Kanger Crocodile Project ) হয়েছে। এই জাতীয় উদ্যানের বুক চিরে বয়ে চলেছে কাঙ্গের নদী ( Kanger River )। ফরেস্ট বাংলোয় থাকতে হলে আগে থেকেই বুকিং করে আসতে হবে। পার্কে ঘোরা ও বাংলোয় থাকার অনুমতি পেতে যোগাযোগ করুন DFO, Kanger Valley National Park, Jagdalpur - এই ঠিকানায়। গাইড, ক্যামেরা ও গাড়ির জন্য মান অনুসারে চার্জ দিতে হবে। ১লা নভেম্বর থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত এই পার্কটি অনুমতি সাপেক্ষে জনসাধারণের জন্য খোলা থাকে। মেইন গেটের বিপরীতে গ্রামের পথ ধরে প্রায় ৫ কি. মি. গেলেই আরণ্যক পরিবেশে মনোমুগ্ধকর তিরৎগড় জলপ্রপাত ( Tirathgarh Waterfall ) পৌঁছে যাবেন। এটি আসলে কাঙ্গেরের ছোট শাখানদী মুনাগাতার। যেটি ১১০ মিটার উঁচু থেকে প্রবলবেগে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য এই সুন্দর Tirathgarh Waterfall -এর সৃষ্টি হয়েছে। এটি ১৬০ মিটার চওড়া। আপনি যদি সাহসী এবং শারীরিকভাবে যথেষ্ট সক্ষম হন তাহলে ২১৪ ধাপের পিচ্ছিল সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামুন। আরও বিস্ময় আপনার অপেক্ষায় রয়েছে। ভয়ঙ্কর রূপসী তিরৎগড়ের সফেন জলধারার সঙ্গীতের আবহ আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে। আর আছে প্রকৃতির আপন খেয়ালে সৃষ্ট অদ্ভুত সুন্দর প্রাকৃতিক হলঘরে স্ট্যালাগমাইট ও স্ট্যালাকটাইট লাইম স্টোন অর্থাৎ চুনাপাথরের দন্ডের অফুরন্ত ভান্ডার। ত্রিভুবনেশ্বর মহাদেব ও লক্ষ্মী-নারায়ণের মন্দির আছে এখানে। কাছেই রয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার ( Watch Tower )। এরপর ১ কিলোমিটার দূরে প্রকৃতির আর এক অপরূপ সৃষ্টি কুটুমসর গুহা ( Kotamsar Caves ) দেখে নিন। এটিকে বোরা গুহার ছোট সংস্করণও বলা চলে। এটি প্রায় দেড় কি. মি. বিস্তৃত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গুহা। সঙ্গে একজন গাইড নিয়ে কপিকলের সাহায্যে ৩৫ মিটার গভীরে নেমে টর্চের আলোয় চুনাপাথরের শিবলিঙ্গ দর্শন করে আসুন। Kotamsar-এ একটি বনবাংলোও আছে। এই Forest Bunglow টি গুহা থেকে এক কি. মি. দূরে অবস্থিত। কুটুমসরের ১৮ কিলোমিটার দূরে আর একটি দেখার মতো গুহা আছে, তার নাম কৈলাশ গুহা ( Kailash Cave )। পথের নৈসর্গিক শোভার কোন তুলনা নেই। তবে বাঘসহ অন্য হিংস্র বন্য জীবজন্তুর আক্রমণের ভয় আছে। যথেষ্ট দুর্গম চুনাপাথরের এই গুহার সুরঙ্গপথে ওঠানামায় যথেষ্ট শিহরণযুক্ত উত্তেজনা বোধ হয়। সঙ্গের গাইডের কাছে পেট্রোম্যাক্স থাকলেও আপনার কাছেও একটি জোরালো টর্চ অবশ্যই রাখবেন। কালেক্টর বা ট্যুরিস্ট অফিস থেকে এই জায়গাগুলিতে যাওয়ার অনুমতি ও গাইড দুইই পেয়ে যাবেন। এই বনাঞ্চলে জঙ্গিদের হাতে পড়ারও একটু ভয় রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত জঙ্গিরা পর্যটকদের উপকার ছাড়া কোন ক্ষতি করেননি।
ইন্দ্রাবতী টাইগার রিজার্ভ ( Indravati Tiger Reserve / National Park ) - দান্তেওয়াড়া ( Dantewada ) থেকে মাত্র ১১০ কি. মি. দূরে মহারাষ্ট্র সীমান্ত ঘেঁষে ইন্দ্রাবতী নদীর চারপাশের প্রায় ২৮০০ বর্গ কি.মি. বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঘন অরন্য আর ছোট বড়ো টিলা পাহাড় নিয়েই এই ইন্দ্রাবতী টাইগার রিজার্ভ জাতীয় উদ্যান। এটি ১৯৮৩ সালে জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি পায়। এই অরণ্যাঞ্চলে শীত, গ্রীষ্ম দুইয়েরই প্রাবল্য বেশি। এই আদ্র পর্ণমোচী বনাঞ্চলে উদ্ভিদ বলতে শাল, পলাশ, সেগুন, শিমূল, আমলকি, হরিতকী, বাঁশ, বিস্তীর্ণ তৃণভূমি ইত্যাদি। আর প্রানী বলতে রয়েছে কয়েকটি বাঘ, চিতাবাঘ, গউর, চৌশিঙা, নীলগাই, শম্বর, বার্কিং ডিয়ার, বুনো মহিষ, বুনো কুকুর, হায়না, শ্লথ বিয়ার, অন্যান্য কয়েকটি প্রজাতির তৃণভোজী জীবজন্তু, একশোরও বেশি রকমের দেশী বিদেশী পাখি, কীটপতঙ্গ, সরিসৃপ প্রভৃতি।
কিরণডোল আকরিক লৌহ খনি ( Kirandul Iron Ore Mines ) - দান্তেওয়াড়া ( Dantewada ) থেকে মাত্র ৫০ কি. মি. দূরে গিয়ে এশিয়ার বৃহত্তম লৌহখনি কিরণডোল আয়রন ওর মাইন এলাকাটি ঘুরে দেখে আসতে পারেন। এখানে উচ্চমানের আকরিক লৌহ উত্তোলিত হয়। স্থানীয় মানুষজন একে বয়লাডিলা বলে থাকেন। চারিদিকে সবুজ অরন্য আর উঁচু নিচু পাহাড় শ্রেণী আর সুনীল আকাশ। পর্যটন মানচিত্রে সেরকম উল্লেখ না থাকলেও দূরদূরান্ত থেকে অনেক পর্যটকই আসেন এই সুন্দর প্রকৃতির নৈসর্গিক শোভা উপভোগ করতে। ম্যানেজারের অনুমতি নিয়ে আয়রন ওর প্রজেক্ট ( Kirandul Iron Ore Project ) দর্শন করা যায়। এই খনি থেকে মাত্র ৮ কি. মি. দূরে পাহাড়ের মাথায় অর্থাৎ হিল টপে আছে কৈলাশনগর ( Kailash Nagar )। ১২০০ মিটার উঁচু এই কৈলাশনগর হিল টপ থেকে বিস্তীর্ণ কিরণডোলের প্যানোরামিক ভিউ সত্যিই অনবদ্য। পাহাড়ি আঁকা বাঁকা পথ ধরে গাড়িতে করেই এই পাহাড় চূড়ায় পৌঁছতে পারবেন। যাওয়ার পথে মেঘের মুখোমুখি হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কাছাকাছি আরও দুই একটি সুন্দর জায়গাও দেখে নিন। একটি হলো, ১৪ কি. মি. অরন্যপথে গিয়ে মালাঙ্গবালী ( Malangwali )। এখানে ঝরনার জল বাঁধ দিয়ে আটকে একটি সুন্দর কৃত্রিম লেক তৈরি করা হয়েছে। আর দ্বিতীয়টি, ১০ কিলোমিটার দূরের বাচেলী ( Bacheli )। বাচেলীর মাথায় বস্তার রাজাদের মৃগয়াভূমি আকাশনগর ( Akash Nagar ) অবশ্যই দর্শন করবেন। Kirandul-এ বেশ কয়েকটি লজ, হোটেল ছাড়াও NMDC Project-এর Guest House আছে। Bacheli-তেও এদের একটি গেস্ট হাউস রয়েছে। বিশাখাপত্তনম থেকে সরাসরি সকালের ট্রেনে করেও এখানে পৌঁছতে পারবেন।
আদিম আদিবাসী জনগোষ্ঠী সমৃদ্ধ বস্তারের গ্রামীণ জীবনের ( Village Life ) একটি বড়ো ঝলক দেখতে গেলে অবশ্যই গ্রামীণ হাট ( Bastar Weekly Or Daily Rural Market ) দর্শন করতে হবে। পুরো বস্তার জেলা তথা ছত্তিসগড় রাজ্য জুড়ে সমস্ত বড়ো-মাঝারি-ছোট গ্রামাঞ্চলেই এলাকাভেদে সপ্তাহের বিভিন্ন নির্দিষ্ট দিনে হাট বসে। আবার কোন কোন এলাকায় প্রতিদিনই বড়ো হাট বসতে দেখা যায়। এই সমস্ত বড়ো হাটে গেলে ঘরকন্নার টুকিটাকি জিনিসপত্র কেনাবেচা যে কোন সময়ই দেখতে পাবেন। তবে এলাকাভেদে সাপ্তাহিক হাটগুলোর আলাদা ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য আছে। দিনক্ষণ জেনে এই সমস্ত সাপ্তাহিক গ্রামীণ হাটে চলে গেলে বস্তার ও ছত্তিসগড়ের মানুষদের জীবনযাপন ( Village Lifestyle ) সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা করতে পারবেন আর আপনার মনে অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি হবে। এই সুমধুর স্মৃতি আপনি সারা জীবনেও ভুলতে পারবেন না। প্রতিটি হাটের শুরু আর শেষের সময়সীমারও পার্থক্য রয়েছে। যেমন, জগদলপুরের কোন্দাগাঁও ও নারায়ণপুরে হাট বসে প্রতি রবিবার। মারডুমে বসে প্রতি শনিবার করে। দান্তেওয়াড়ার কাছে নাগারনারে প্রতি বুধবার। লোহান্ডিগুড়ায় সাপ্তাহিক বসে প্রতি শুক্রবার করে। বেশিরভাগই দুপুরে শুরু হয়ে সন্ধ্যায় শেষ হয়। আবার দক্ষিণ বস্তারের বেশকিছু হাট আছে যেগুলো খুব ভোরে আরম্ভ হয়ে সকাল ৯-১০ টা পর্যন্ত চলতে থাকে। বস্তার দশেরার টাইমে দান্তেওয়াড়াতে রাস্তার ধারে রাতে চাঁদের মায়াবী আলোয় জমজমাট হাট বসতে দেখা যায়।
এখানকার আদিবাসী জীবন উৎসব মুখর। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো মাটি পূজা, গোনছা, রথযাত্রা, নবখানা অর্থাৎ নবান্ন, দশেরা ( Dussehra in Bastar ) ইত্যাদি। তবে, রামচন্দ্রের অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিতে প্রতি বছর সারা ভারত জুড়ে পালন করা দশেরার সাথে এর বিশাল পার্থক্য রয়েছে। এই দশেরার মধ্যমণি হলেন মাতা দন্তেশ্বরী। ধর্মবিশ্বাসের সাথে আদিবাসী আচার আচরণের সুন্দর মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায়। শোনা যায়, চতুর্থ কাকাতীয় রাজা পুরুষোত্তম দেও পঞ্চদশ শতাব্দীতে এই দশেরার সূচনা করেন। বর্তমানে এটি এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। কচ্চনগাদি মন্দিরে প্রতিবছর শ্রাবণ বা ইংরেজি জুলাই মাসে হরিয়ালি অমাবস্যায় এর শুভ সূচনা হয়। উদ্বোধনে তন্তুবায় সম্প্রদায়ের কোন এক তরুণীকে কাঁটার দোলনায় চড়ানো হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস যে, দন্তেশ্বরী দেবীর আশির্বাদে সম্পূর্ণ অক্ষত থাকে সেই তরুণী। ৭৫ দিন ধরে চলে এই জনপ্রিয় উৎসব। সকল আদিবাসী সম্প্রদায়ই এই উৎসবে যোগদান করে। ওড়িশা রাজ্যের সাওরারা রথ তৈরি করেন। সেই কাজ দেখভাল করেন ঢাকডারা। রথযাত্রার পূর্বে দন্তেশ্বরী দেবীর পূজা করেন খাকিরা। রথের রশির জোগান দেন পারজারা। সেই রশি টানে মারিস ও ধুরওয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা। হালবা উপজাতির প্রধানেরা দেবীর আশিস সাধারণ পূণ্যার্থীদের বিলিয়ে যান। পুরো দশেরা উৎসবই নৃত্য, গীত, পান ভোজনে ভরপুর থাকে।
বিলাসপুর ( Bilaspur ) - জেলা ও জেলা সদরের একই নাম বিলাসপুর। হাওড়া থেকে রেলপথে দূরত্ব ৭১৭ কি. মি.। এক জেলে কন্যা বিলাসার নামেই এই শহরের নামকরণ। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে বিলাসপুর রেলস্টেশনের ওয়েটিং রুমেই অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ফাঁকি কবিতাটি রচনা করেন। পরবর্তীকালে ১ নম্বর প্লাটফর্মে তাঁর স্মৃতিতে একটি স্মারক স্তম্ভ স্থাপনা করা হয়েছে। শহর থেকে কিছুটা দূরে ইতিহাস নগরী রতনপুর ( Ratanpur ) দর্শন করে নিন। রতনপুরে ( Ratanpur ) অনেক পুরাতন মন্দির, মসজিদ, প্রাসাদ আছে। এখান থেকে ৫ কি. মি. গিয়ে কোটাঘাট বাঁধ ( Khutaghat Dam ) ও বিশাল জলাধার অর্থাৎ Khutaghat Lake দেখে আসুন। লেকে বোটিং করার সুবন্দোবস্ত আছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। পিকনিক করার আদর্শ জায়গা। পর্যটন দপ্তরের Gaura Gauri Lake View Tourist Cottage- এ থেকেও যেতে পারেন। এখান থেকে আধঘণ্টার পথ অতিক্রম করে পৌঁছে যান পালি-র সুন্দর কারুকার্য করা শিবমন্দিরে ( Mahadev Temple, Pali )। যাওয়ার পথে বন-জঙ্গল, পাহাড়ে ঘেরা প্রায় ধ্বংসের মুখে চলে আসা লাফাগড় দূর্গটি ( Lafagarh Fort ) দেখে নিন। বাঘের পিঠে অষ্টভুজা মেনকা দেবীর প্রাচীন মন্দিরও আছে এই দূর্গে। শহরে ফেরার পথে কোনীতে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমটিও ( Ramakrishna Mission Ashrama, Koni, Bilaspur ) দেখে নিন। এই আশ্রমে একটি গেস্ট হাউসও আছে। গাড়ি ভাড়া করে নিলে পুরো শহরের বেশিরভাগ দর্শনীয় স্থান একদিনেই দেখে নিতে পারবেন। প্রধান দেখার জায়গাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দুটি কালীমন্দির, জগন্নাথ মন্দির, রাম মন্দির, বালাজী মন্দির, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মিলন আশ্রম, অনুকূল ঠাকুরের সৎসঙ্গ আশ্রম, ১৯২০ সালে গঠন করা বাঙালি সমিতির নানা ক্রিয়াকলাপ ইত্যাদি। এই নগরী থেকে প্রায় ৩০ কি. মি. দক্ষিণে মনিয়ারি নদীর তীরে তালাগাঁও ( Talagao, Maniyari River ) গিয়ে দারুণ সুন্দর দেওরানি-জেঠানি মন্দির ( Dewrani Jethani Mandir ) দর্শন করে নিন। গ্যারান্টি দিয়ে বলছি দেবাদিদেবের এই বিরল ধরনের রুদ্র মূর্তি আগে কখনোই দেখেননি। এখানে ঘোরা শেষ করে Talagao থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরের মলহারে ( Malhar ) গিয়ে দিন্দেশ্বরী, পাতালেশ্বর, চতুর্ভুজ বিষ্ণু ও জৈন ইত্যাদি মন্দির দেখে নিন। এই সকল মন্দিরের মূর্তিগুলি মাটি খনন করে পাওয়া। প্রতি বছর এখানে জমকালো শিবরাত্রি মেলা ( Shivaratri Fair, Malhar ) বসে। মলহার থেকে গাড়িতে করে ৪৫ কি. মি. পথ অতিক্রম করে চলে আসুন হাসদেও নদীর তীরে জাঞ্জগিরের ( Janjgir, Hasdeo River ) চম্পাতে। চম্পা ( Champa, Janjgir ) বিখ্যাত তসর সিল্ক শাড়ি বা কোষার জন্য। তসর সিল্ক কিভাবে তৈরি হয় তা দেখে এবং পছন্দমতো কেনাকাটা সেরে ঐ গাড়িতেই সড়কপথে চলে আসুন ৩৬ কি. মি. দূরের শক্তি ( Sakti City ) শহরে। শক্তি ( Sakti ) শহরের দামৌদহরা, গিধাপর্বত, রাইনখোল, হরি, গুজর ছাতরি, মহামাঈ ইত্যাদি মন্দিরগুলি ও এই জায়গার আরো কিছু ছোটখাটো দ্রষ্টব্য আছে সেগুলো দেখে চলে যান ৬০ কি. মি. দূরের কেলো নদীর তীরে রায়গড়ে ( Raigarh, Kelo River )। এখানে মোতিমহল / রাজামহল রাজপ্রাসাদ, পুষ্প বাটিকা বাল উদ্যান ( Children Park ), লাল ট্যাঙ্কি, রাধাকৃষ্ণ মন্দির, ভূূূূূপদেওপুর ঝরণা, জুটমিল প্রভৃতি দেখে শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে ১৪-১৫ কি. মি. দূরে অবস্থিত সিংহানপুর গুহায় ( Singhanpur Cave ) চলে আসুন। Singhanpur Cave-এ মোট তিনটি গুহা আছে। তার মধ্যে দুটি ২৫-৩০ ফুট লম্বা। অন্যটিতে মানুষের জীবনের নানা পর্যায় বিভিন্ন ভঙ্গিমায় আঁকা রয়েছে। Raigarh-এ রকমারি হোটেল, লজ, রেস্টুরেন্ট আছে থাকা-খাওয়ার জন্য।
রায়গড় থেকে জাতীয় সড়ক ধরে চলে আসুন ৫২ কি. মি. দূরের সারংগড়ে ( Sarangarh )। এখানকার শ্যামলেশ্বরী দেবীর মন্দির ও দূর্গ প্রধান দ্রষ্টব্য। এছাড়া রয়েছে বহু প্রাচীন মহাপ্রভু মন্দির, কেভটিন মন্দির, রানীঝুলা মন্দির। সারংগড়কে কেন্দ্র করে গোমারধা অভয়ারণ্য ( Gomarda Wildlife Sanctuary / National Park ) ঘুরে দেখে নিন। চারিদিকের সবুজ পাহাড়, টিলা, ঝরণা নিয়ে গোমারধা সত্যিই অপরূপা। রায়গড় থেকে প্রায় ৮০ কি. মি. উত্তরে ধরমজয়গড়ের ( Dharmjaigarh ) নামডাক প্রাচীন দূর্গ-প্রাসাদ মধ্যেকার উষ্ণ প্রস্রবণের জন্য। এটিও খুব সুন্দর ছোট শহর। বিলাসপুর থেকে ৬৫ কি. মি. দক্ষিণে আর একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থান আছে যার নাম শিওরিনারায়ণ ( Sheorinarayan / Shivrinarayan )। এটি জাঞ্জগির-চম্পা জেলায় মহানদী, শিওনাথ ও জঁক - এই তিন নদীর সঙ্গমে অবস্থিত। কথিত আছে, এখানেই রামভক্ত শিবরি বা শিওরি স্বয়ং রামকে উচ্ছিষ্ট ফুল খাওয়ান। সেই শিওরির নাম অনুসারে এই জায়গার নামকরণ হয়েছে। এখানে পৌঁছে নরনারায়ণ-কেশবনারায়ণ-জগন্নাথ মন্দির, সঙ্গমস্থল ও অন্যান্য দ্রষ্টব্যগুলি দেখে নিন। প্রতি বছর মাঘী পূর্ণিমার বিশাল মেলার জন্য এই জায়গাটি এত বিখ্যাত। শিবরিনারায়ন থেকে ৫-৬ কি. মি. দূরের খারোদে ( Kharod ) এসে প্রথমে মধ্যযুগের বিখ্যাত লক্ষ্মণেশ্বর মহাদেব মন্দির ( Laxmaneshwar Mahadev Temple, Kharod ) দর্শন করে নিন। তারপর দেওরানি-জেঠানি মন্দির ও দেবাদিদেব মহাদেবের সুবিশাল মূর্তিটি দেখে আবার বিলাসপুর ফিরে আসুন।
অমরকণ্টক ( Amarkantak ) যাওয়ার পথে মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিসগড়ের সীমান্তে অচানকমার অভয়ারণ্য ( Achanaknar Wildlife Sanctuary ) অরন্যপ্রেমীদের আর এক স্বর্গরাজ্য। জঙ্গল-পাহাড় পরিবৃত এই Reserve Forest-এ বাঘ, চিতাবাঘ, গউর, ভাল্লুক, শুয়োর, চিতল, শতাধিক প্রজাতির পাখি, কীটপতঙ্গ, সরিসৃপ রয়েছে। ঘোঙ্গা ও খুড়িয়া ড্যাম - এই দুটি জলাধারের বিশাল লেক থাকা সত্ত্বেও এখানে জলাভাব আছে। অচানকমার চেকপোস্ট থেকে ১০-১২ কি. মি. দূরে ছাপরোয়ো ও আরো কিছুটা গিয়ে লামনি ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি দেখে নিন। অমরকণ্টকের বাস বিলাসপুর থেকে যাত্রা শুরু করে এই সমস্ত অরন্য ও জায়গার উপর দিয়ে যায়। এই সমস্ত অরণ্যাঞ্চলের গ্রামগুলোতে বৈগই, গোন্ড, ওরাওঁ উপজাতির মানুষেরা বাস করেন। রাস্তার দুধারে প্রচুর শালগাছ দেখতে পাবেন। আদিবাসীরা শালগাছকে দেবতা হিসেবে পূজা করেন। ১লা জুলাই থেকে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত অচানকমার পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকে। জঙ্গলে প্রবেশ করতে হয় গাইড নিয়ে। আলাদা করে ফি দিতে হয়। এই জঙ্গলে সাফারি করার যাবতীয় তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন - DFO, Bilaspur Division, Fax- 07752 226082 অথবা, Superintendent, Achanakmar Wildlife Sanctuary, Kota, Kargi Road, District - Bilaspur, Chhattisgarh - এই ঠিকানা গুলিতে। শুক্রবারের হাটও দেখতে পাবেন এই অরণ্যাঞ্চলে।
অম্বিকাপুর ( Ambikapur ) - সুরগুজা জেলার সদর শহর এটি। শহরের প্রধান দ্রষ্টব্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মহামায়া মন্দির, বাবা মুরাদ শাহ ও বাবা মহম্মদ শাহের সমাধিক্ষেত্র, শ্রী সাঁই বাবা মন্দির, সুরগুজা বা রঘুনাথ প্যালেস ইত্যাদি। এই শহর দর্শন করে ৩৬ কি. মি. পথ অতিক্রম করে পৌঁছে যান কবি কালিদাসের মেঘদূত খ্যাত রামগড়ে ( Ramgarh )। পাহাড়ের মাথায় রয়েছে মৌর্য যুগের গুহা। পাহাড় আর সবুজে মাখামাখি অপূর্ব প্রাকৃতিক নৈসর্গিক শোভা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন অ্যাম্পিথিয়েটার এখানেই আছে। দেবদাসী সুতনুকার জীবন সম্পর্কে জানতে পারবেন যোগীমারা গুহার মিউজিয়াম থেকে। প্রতি বছর বসন্তকালে Ramgarh-এ Dance Festival-এর আয়োজন করা হয়।সংস্কৃত গুরুরা এই নৃত্য উৎসবের আয়োজন করেন। এখানে গুহাকে বেঙরা বলা হয়। এখানকার কয়েকটি প্রধান দ্রষ্টব্য হলো - হাথি পোল, সীতাকুণ্ড, সীতা গুহা, রামগড় দূর্গ ( Ramgarh Fort ), কবিচৌরা, বশিষ্ঠ গুহা, লক্ষ্মণ গুহা, ঝাপি ও ফুলসুন্দরী গুহা, দরবার ফুফা ইত্যাদি।
Ambikapur থেকে ৫১ কি. মি. দূরে সুরগুজা জেলায় আর একটি মনোরম স্থান রয়েছে যার নাম মৈনপাট ( Mainpat )। একে ছত্তিসগড়ের সিমলা বলা হয়। এখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই তিব্বতী। দুটি বিশাল বৌদ্ধ মনাস্ট্রি, সারভাঞ্জা ঝরণা, টাইগার ইকো পয়েন্ট ও উল্টা পানি ( Ulta Pani ) অন্যতম দ্রষ্টব্য। আমরা জানি, জলের গতি সবসময় উপর থেকে নীচের দিকে। কিন্তু, এই Ulta Pani-র সরু নালার জল সবসময় নীচ থেকে উপর দিকে যায়। এইখানে সবকিছুই মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে কাজ করে। তাই বর্তমানে এই অতি আশ্চর্য জিনিস চাক্ষুষ করতে দেশ-বিদেশের প্রচুর পর্যটক এই Mainpat ভ্রমণে আসেন। এখানকার তিব্বতী কার্পেট ও কুকুরেরও যথেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে। এখানে অবস্থান করার জন্য দুটি স্থানের উল্লেখ করতে পারি। এক, Saila Tourist Resort এবং দুই, Forest Rest House - দুটি থাকার জায়গাই চমৎকার এবং সরকারি তত্ত্বাবধানে আছে।
দিপাদি ( Dipadih ) - অম্বিকাপুর থেকে মাত্র ৭৫ কিলোমিটার দূরের দিপাদি হলো এই রাজ্যের আর একটি সুবিখ্যাত ঐতিহাসিক ভ্রমণস্থল। এটি কানহার, সূর্য ও গালফুল্লা - এই তিন নদীর সঙ্গমে অবস্থিত। এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ খনন কার্যের ফলে প্রাপ্ত ভগ্নপ্রায় মন্দিরগুলিকে অত্যন্ত যত্নে রক্ষনাবেক্ষন করে চলেছে। Dipadih-তে একটি মিউজিয়াম আছে। সমস্ত মন্দির ও মিউজিয়ামটি ঘুরে সকল প্রাচীন মূর্তিগুলি দর্শন করে নেবেন। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশও অতি মনোরম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please, Don't Spam.
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷