মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৯

[ Journey to All Tourist Spots Daman Diu Tourism ]

HISTORY & SOME VALUABLE INFORMATIONS ABOUT DAMAN DIU ( UNION TERRITORY OF INDIA ):-

            ১৯৮৭ সালের ৩০ শে মে গোয়া যখন স্বতন্ত্র রাজ্য হয়ে যায় তখন গোয়া থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে দমন ও দিউ পরিনত হয় কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে। দমন থেকে দিউর দূরত্ব ৮৪২ কি.মি.। একে অপর থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। জলপথেও এই দুই জায়গার মধ্যে কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। বাপী-র ( Vapi ) মাধ্যমে দমনের সাথে বাকি ভারতের সড়কপথে যোগাযোগ আছে। আর দিউর অবস্থান গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরের অনতিদূরে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে বিচার করলে দমনের থেকে দিউ আরো অনেক বেশি সুন্দর।

           রাজধানী বা প্রধান শহর ( Capital City ) হ'ল দমন। আয়তন বা মোট এলাকা ( Total Area ) ১১২ বর্গ কি.মি. বা ৪৩ বর্গ মাইল। মোট জনসংখ্যা ( Total Population ) ২৪২৯১১। প্রতি ১০০০ পুরুষ পিছু ৬১৮ জন নারী ( Sex Ratio of Male and Female )। জনঘনত্ব ( Population Density ) অর্থাৎ প্রতি বর্গ কি.মি.তে বসবাস করেন ২১৬৫ জন। সাক্ষরতার ( Percentage of Literacy ) হার ৮৭.০৫%। ( Languages ) দমনের প্রধান ভাষা গুজরাটি এবং মারাঠি আর দিউতে গুজরাটি। হিন্দিরও যথেষ্ট প্রচলন আছে এই দুই জায়গাতে। জনপ্রতি বার্ষিক আয় ( Per Capita / Per Head Yearly Income ) ৪০০০০০ টাকা।

AVERAGE WEATHER OR CLIMATE. WHEN SHOULD YOU GO THERE? / BEST TIME TO VISIT OR TRAVEL THIS UNION TERRITORY:-

            সারা বছরই নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া থাকে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮° এবং সর্বনিম্ন ১১° সেলসিয়াস। জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দমনে অত্যাধিক বৃষ্টিপাত ঘটে। প্রায় ১৫০০ মি.মি.। গুজরাটে ঘুরতে বেড়াতে আসলে একই যাত্রায় দমন ও দিউ ঘুরে নেওয়া সবচেয়ে ভালো হবে। সুরাট থেকে মুম্বাইগামী রাস্তায় বাপী ( Vapi ) থেকে দমন আর সোমনাথ মন্দির দর্শনে এসে দিউ ভ্রমণ করা উচিত হবে। নীচে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো। পড়তে থাকুন।

Daman & Diu Union Territory Official Website -  https://www.daman.nic.in

Travel & Tourism Department Official Website - (1) http://www.diutourismgov.in
  (2) https://www.daman.nic.in/tourism-dept-dd.aspx

ALL TOTAL LIST OF 8 VERY BIG, MOST POPULAR OR FAMOUS LOCAL FAIRS & MAJOR FESTIVALS:-

(i) Garba Festival, (ii) Christmas, (iii) Gangaji Fair, (iv) Nariyal Purnima, (v) Folk Dance Festival, (vi) Food Festival in Daman, (vii) Diu Beach Fest, (viii) Daman Carnival.


এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের যেকোন জায়গায় যাওয়া আসা, থাকা খাওয়ার ব্যাপারে আগে থাকতে অনলাইন বুকিং-এর জন্য নীচের বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে এক বা একাধিক ব্যবহার করতে পারেন। [ FOR ONLINE BOOKING OF FOODS / FLIGHTS, TRAIN / RAILWAY RESERVATION, HOUSES ON RENT/ FLATS RENTAL / LODGES / RESORTS / HOMESTAYS / TENTS / HOTELS ROOMS IN ANY PLACE WITH DISCOUNT, CHEAP AIR TICKETS, BUS BOOKING, CAR HIRE ]:-
1. https://www.trivago.in
2. https://www.goibibo.com
3. https://www.makemytrip.com
4. https://www.yatra.com
5. https://www.cleartrip.com
6. https://www.tripadvisor.in
7. https://www.ixigo.com
8. https://www.zomato.com

TOP PLACES TO VISIT OR MAJOR TOURIST ATTRACTIONS IN DAMAN AND DIU WITH PROPER TOUR PLAN ON MAIN TRAVEL DESTINATIONS AND OTHER NEAREST BEAUTIFUL SPOTS:-

দমন ( Daman ) - পর্তুগিজ শব্দ দামাও থেকে দমন নামের উৎপত্তি। কাম্বে উপসাগরের দক্ষিণে আরব সাগর পরিবৃত ১২ মিটার উঁচু দমনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোন তুলনা নেই। দমন-গঙ্গা নদী সহ্যাদ্রি পাহাড়ে উৎপন্ন হয়ে এই অঞ্চলকে দুই ভাগে ভাগ করে আরব সাগরে পড়েছে। উত্তরের অংশকে নানী ও দক্ষিণের অংশকে মোতি বলে। গোয়ার অনুরূপ এই জায়গাও ছিল পর্তুগিজ উপনিবেশ। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে পুরোপুরি পর্তুগিজ শাসনমুক্ত হয়ে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। পর্যটন দপ্তরের ঠিকানাটি হলো - Department of Tourism, Information Centre, 1st Floor, Nilkanth Building, Nani Daman - 396210. Tel- 0260 2255104. অতীতে যে জায়গা ছিল চোরাচালানকারীদের স্বর্গরাজ্য তা এখন সরকারি নেকনজরে ধীরে ধীরে পর্যটনের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হচ্ছে। উত্তর অংশে রয়েছে নানী দমন বা ছোট দমন দূর্গ ( Nani Daman Fort )। আকারে বেশ বড়ো। মোগল আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ১৬১৪ থেকে ১৬২৭ সালের মধ্যে নদী মুখে পর্তুগিজরা St. Jerome's Fort তৈরি করেছিলেন যা এখন একটি বিখ্যাত পর্যটন আকর্ষণ। এই দূর্গটিতে স্কুল ও সমাধিক্ষেত্র আছে। রেডিও-টি.ভি. স্টেশন, দোকান-বাজার, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ট্যুরিস্ট অফিস সবকিছুই রয়েছে নানী দমনে। রাজপথও সোজা গিয়ে শেষ হয়েছে নানী দমন সাগর সৈকতে। সবসময় পচা বিশ্রী গন্ধ থাকে এই বিচে। একটি শিশু উদ্যান নির্মিত হয়েছে দমন-গঙ্গা নদী মোহনায় জেটি ঘেঁষে।

সকাল সন্ধ্যায় নদীতে মাছধরার জেলে নৌকার আনাগোনা। দক্ষিণে মোতি দমন বা বড়ো দমন দূর্গ ( Hieronymus Fort, Moti Daman )। সারা দূর্গ জুড়ে প্রশাসনিক দপ্তর। আধিকারিকদের বাসস্থান। একটা পর্তুগিজ ভাব সুস্পষ্ট। ১৫৫৯ থেকে ১৬০৩ সালের মধ্যে পর্তুগাল স্থাপত্য শৈলীতে তৈরি বম জেসাস চার্চ ( Bom Jesus Church ), আর তার মধ্যেকার মাতা মেরী ও যীশুর সুন্দর মূর্তি দেখে নিতে পারেন। দ্বিতীয় চিত্তাকর্ষক চার্চটি হলো আওয়ার লেডি অফ দি রেমেডিওস ( Our Lady of Remedios Church )। এই গীর্জার দেওয়াল কাঠ ও ইটের গিলটি করা। কাঠের প্যানেলে কারুকার্য করে খোদাই করা যীশুর জীবন বৃত্তান্ত সত্যিই অনবদ্য। প্রার্থনা সভার সিলিং দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। নদীর ধারের জৈন মন্দিরটিও সুন্দর। এর উত্তর-পশ্চিমে সমুদ্রতীরে রয়েছে Daman Lighthouse. এতকিছু দ্রষ্টব্য থাকা সত্ত্বেও এখানকার সেরা পর্যটন আকর্ষণ নীল জলরাশির আরব সাগর। এই ক্ষেত্রে গোয়ার সাথে বেশ খানিকটা মিল রয়েছে। একদম দক্ষিণে আছে জামপোর সমুদ্র সৈকত ( Jampore Sea Beach )। দূর্গের সামনে থেকে জামপোর সি বিচ পর্যন্ত বাস নিয়মিত যাতায়াত করে। নানী দমন থেকে ট্যাক্সি বা অটোরিক্সাতেও সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন। তবে এখানে সমুদ্রস্নান পুরোপুরি নিষিদ্ধ। প্রচুর দোকানপাট ও হোটেল রয়েছে এই সাগরবেলার আশেপাশে। ছোট দমন থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে নারকেল ও ঝাউ গাছে ছাওয়া আর একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত অবস্থান করছে, যার নাম ডেবকা সি বিচ ( Devka Sea Beach )। এই পর্যটন কেন্দ্রে গান্ধী শিশু উদ্যান, অ্যামুজমেন্ট পার্ক, লাইট হাউস তৈরি করা হয়েছে। ভাঁটায় অনেক দূরে জল সরে যায়। তখন কালচে কর্দমাক্ত তট বেরিয়ে পড়ে। তবে, এই তট থেকে দেখা সূর্যাস্তের নৈসর্গিক শোভা অনেকদিন অবধি মনে থাকবে। এখানে পৌঁছবার পথের শোভাও অতুলনীয়। কোলক নদী পেরিয়ে বাজার এলাকা থেকে অটোরিক্সা ভাড়া করে উদওয়াড়ার পার্সী তীর্থস্থানটিও ঘুরে আসতে পারেন।

বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানও হয় খুব ধুমধাম করে। তবে, খ্রিস্টানদের বড়দিন, গুড ফ্রাইডে, ইংরেজি নববর্ষ, মচ্ছিমার সবচেয়ে জনপ্রিয়। মচ্ছিমার পালিত হয় শ্রাবণ মাসের নারিয়েল পূর্ণিমায়। এই সময় জেলে সম্প্রদায়ের মানুষেরা সমুদ্রদেবতার পূজা করে আশির্বাদ প্রার্থনা করে, যেন মাছ ধরে পরিবার নিয়ে সুখে-শান্তিতে-সম্পদে দিন কাটে। এই বিশেষ দিনে একদম ভোরবেলা থেকে স্থানীয় ধীবরদের বাড়িতে বাড়িতে আলপোনা আঁকা দিয়ে শুরু হয়। একে রঙ্গোলি বলে। তারপর সারাদিন ধরে একের পর এক নানা চমকপ্রদ অনুষ্ঠান চলতে থাকে। ঠিক তার পরদিন থেকে মাছধরা আরম্ভ করেন। ইংরেজি নববর্ষও আর এক উল্লেখযোগ্য উৎসব।

কোথায় থাকবেন? Where to Stay?

                  সি বিচ, ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ও বাজার এলাকায় প্রচুর হোটেল, লজ, রেস্টুরেন্ট ছড়িয়ে আছে। একটু দরদাম করে আপনার পছন্দের যেকোন জায়গায় থাকতে পারেন। চাইলে এই পেজের উপরের দিকের ওয়েবসাইট লিঙ্ক থেকে বুকিং করতে পারেন।

জনপ্রিয় খাবারগুলো কি কি? Which are The Most Favourite Local Dishes or Popular Street Foods?

                  এখানকার যেকোন হোটেল-রেস্টুরেন্টেই বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার পেয়ে যাবেন। তবে, তালিকায় সামুদ্রিক মাছ ও কাঁকড়ার লোভনীয় রেসিপির ছড়াছড়ি। এখানে বেড়াতে আসলে অবশ্যই গলদা চিঙড়ি ও সমুদ্রের বড়ো কাঁকড়ার পদ চেখে দেখবেন। খাবার হোটেল হিসেবে সবচেয়ে পুরাতন ডিউকস্ এর সুনাম সবচেয়ে বেশী। শীতকালে ঝাল-নোনতা-মিষ্টি স্বাদের মটরশুঁটির পাপড়িভাজার কোন তুলনাই নেই। এই জায়গা সুরাপ্রেমীদের কাছে অতিপ্রিয়। পার্শ্ববর্তী রাজ্য গুজরাট ও মহারাষ্ট্র থেকেও অনেকে বিভিন্ন ধরনের দেশী বিদেশী সুরাপান করতে এখানে ছুটে আসেন। কাজু বা নারকেলের ফেনী এবং তালের তাড়ি এখানকার মানুষদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আপনারও দারুণ লাগবে। এখানকার সমস্ত দোকানে বোতলবন্দী অবস্থায় কিনতে পাবেন। দামেও অন্য রাজ্যের তুলনায় কিছুটা কম। বাসস্ট্যান্ডের বিপরীতে একটি ছোট বাজার আছে যেখানে সস্তায় ডিউটি ফ্রি বিদেশী জিনিস কিনতে পাওয়া যায়।
               
কিভাবে যাবেন? How to Reach / Go?

                   মুম্বাই, সুরাট, আমেদাবাদ থেকে প্রথমে বাপী রেলস্টেশনে ( Vapi Railway Station ) পৌঁছতে হবে। তারপর সড়কপথে নানী দমনে পৌঁছে যান। বিমানে আসলে প্রথমে মুম্বাই, আমেদাবাদ বিমানবন্দরে তারপর জাতীয় সড়ক ধরে বা ট্রেনে করে প্রথমে বাপী / ভাপী হয়ে গন্তব্যে পৌঁছন।

কিকি কিনবেন? What are The Things You Should Buy ( Marketing ) While Traveling in Daman?

                    আপনার ভ্রমণের স্মৃতি হিসেবে বিভিন্ন স্থানীয় হ্যান্ডিক্রাফটস্, ফেনী মদিরা, ডিউটি ফ্রি বিভিন্ন বিদেশী জিনিস কিনে নিয়ে যান।

দিউ ( Diu Island ) - গুজরাট রাজ্যের দক্ষিণে সোমনাথ মন্দিরের নিকটে অত্যন্ত সুন্দর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হ'ল এই দিউ দ্বীপভূমি। যদিও আমরা দমন-দিউ একসাথে উচ্চারণ করলেও এদের মধ্যে স্থল-জল-আকাশ কোন দিক দিয়েই সরাসরি যোগাযোগ নেই। সাধারণতঃ সমস্ত পর্যটকেরা গুজরাট ভ্রমণে এসে সোমনাথ মন্দির দর্শনের সাথে সাথে এই স্থানে ঘুরতে আসেন। তাতে অর্থের যথেষ্টই সাশ্রয় হয়। আপনিও তাই করবেন। ( How to Reach / Go?) যেকোনো ভাবেই আসুন না কেন আপনাকে হয় উনা ( Una ) না হয় সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশন দেলওয়াদা ( Delvada ) হয়ে আসতে হবে। প্রথমে সোমনাথ মন্দির দর্শন করে তারপর উনা হয়ে এখানে চলে আসুন। ভিড়ভাট্টা সেরকম নেই। সুন্দর প্রকৃতির মাঝে নিরিবিলিতে কয়েকটা দিন নিশ্চিন্তে কাটিয়ে যান। গোয়ার সাথে ধরনে মিল যথেষ্টই রয়েছে। সারা বছরই বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনাও পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। কিন্তু, এখানে হিপিদের উৎপাত নেই। অনন্য সৈকতে শুধুমাত্র সূর্য-বালি-সমুদ্র-ঢেউ। শীতকালে আসলে প্রচুর পরিযায়ী পাখিও দেখতে পাবেন।

এই জায়গার পর্যটন আকর্ষণের মূল কেন্দ্র হলো সুন্দর প্রকৃতি। এই জায়গার সৌন্দর্য বহুগুণ বেড়ে গেছে ছোট ছোট খাঁড়ির মধ্যে আরব সাগরের জল ঢুকে পড়ায়। তিন দিকে আরব সাগর আর উত্তরে রয়েছে ব্যাকওয়াটার। অতীতে এর নাম ছিল সংস্কৃত শব্দ দ্বীপ। পরে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নাম হয় দিউ। শোনা যায় পান্ডবরা নাকি বনবাসের সময়ে কিছুদিন সোনালী বেলাভূমি সমৃদ্ধ এই অপরূপ স্থানে কাটিয়েছিলেন। মহাভারতের যুগে এর নাম ছিল মণিনগর।

এটিও আগে পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল। পরে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একসাথে গোয়া ও দমনের সাথে পর্তুগিজ শাসনমুক্ত হয়ে স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। দীর্ঘকাল পরাধীন থাকার কারণে রাস্তাঘাট থেকে বাড়িঘরসহ সকল কিছুতেই পর্তুগাল স্থাপত্যশৈলীর ছোঁয়া রয়েছে। পূর্বে আছে প্রাচীন দূর্গ Diu Fort. দ্বীপের পূর্ব সীমায় ঘোঘলা সমুদ্র সৈকত ( Ghoghla Sea Beach )। ভারতীয় মূল ভূখণ্ডের সাথে একটি সেতুর মাধ্যমে যোগাযোগ রয়েছে। সেতু পেরিয়ে বাস থেকে নেমেই সামনে জেটিঘাট। বাঁদিকে ট্যুরিস্ট অফিস। পূর্ব দিকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো আরব সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে আছে দিউ ফোর্ট। বিশাল প্রাচীর ও যত্রতত্র ফাঁকফোকর দিয়ে কামানের নল বের হয়ে এটি একসময়ে কতটা সুরক্ষিত ছিল সেটাই প্রমাণ করছে। তবে কালের প্রভাবে, অপারেশন বিজয়ের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণে ও ক্রমাগত সামুদ্রিক ঘাত-প্রতিঘাতে অনেকটা অংশই আজ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। কিছু কামানের গোলা এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। সামনের দেওয়ালে পাঁচটি বিশালাকৃতির জানালায় পাথরের গ্যালারি আছে। বাহাদুর শাহ ও পর্তুগিজ উদ্যোগে গড়া এই দূর্গ সংলগ্ন লাইট হাউস চত্বর থেকে আরব সাগরকে অপরূপ লাগে। বর্তমানে একটা অংশে জেলখানা হয়েছে। আর একটা অংশে হয়েছে মিউজিয়াম ( Diu Museum ) বা সংগ্রহশালা। সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত দূর্গ দর্শন করা যায়। পশ্চিমে শহরটিকে ঘিরে রয়েছে সিটি ওয়াল ( City Wall )। প্রধান বিশাল প্রবেশ দ্বারটি সুন্দর কারুকার্য মন্ডিত। সেন্ট পলস ও সেন্ট ফ্রান্সিস আসিসি ( St. Pauls and St. Francis of Assisi Church ) গীর্জা দুুুুটির সৌন্দর্যও অতুলনীয়। মাতরিজের পাশে নতুন করে গির্জা হয়েছে। এর ছাদ থেকে শহরের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করুন। ঘন্টা গেট, গুপ্ত প্রয়াগ, দিউ মার্কেট - এই স্থানগুলিও পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাস স্ট্যান্ড চত্বরে পোস্ট অফিস, নামীদামী শোরুম-দোকান, ব্যাঙ্ক ও বিভিন্ন ট্রাভেলসের দপ্তরও এই অঞ্চলে পেয়ে যাবেন। সারা সপ্তাহে কেবলমাত্র রবিবার এখানকার দোকানপাট বন্ধ থাকে। সারা বছরই এখানকার আবহাওয়া অত্যন্ত মনোরম থাকে। চাইলে, সোমনাথে থেকে বাসে বা ট্যাক্সিতে একদিনেই যাওয়া-আসা করে দিউ ভ্রমণ সেরে নিতে পারেন।

অনেক আগে ৭৬৬ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মুসলিমদের হাত থেকে নিজেদের ধর্ম বাঁচাতে সুদূর পারস্য থেকে জোরাথাস্ট্রিয়ানরা গুজরাটের দিউতে চলে আসেন। আমাদের ভারতবর্ষে এনারাই পার্সি নামে পরিচিত।

চারিদিকে সবুজে মোড়া এই পর্যটন কেন্দ্রে যে গাছগুলো সবচেয়ে বেশি সেগুলি হলো আফ্রিকা থেকে পর্তুগিজদের নিয়ে আসা হোকা তালগাছ, নারকেল, ঝাউ, কলা, পেয়ারা, আতা ইত্যাদি। মাছধরাই এখানকার অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা। এই জায়গা লবণ ও সুরা তৈরিতেও বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। আখ থেকে রাম পানীয়ও তৈরি হচ্ছে। যত্রতত্র লিকার শপও রয়েছে।

কি কি খাবেন? কোথায় এখানকার বিখ্যাত সুস্বাদু খাদ্যগুলো পাবেন?

 Best Tasty Foods are Available:- আপনা গেস্ট হাউসে আমিষ-নিরামিষ খাবার দিয়ে দুপুর ও রাতের খাবার খেতে পারেন। বাসস্ট্যান্ডের কাছে দীপী রেস্টুরেন্টে নিরামিষ খাবার দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারুন। কালেক্টরেট রোডে সম্রাট রেস্তোরাঁর খাবারও যথেষ্ট সুখ্যাত। স্টেট ব্যাংক অফ সৌরাষ্ট্রের কাছে Ram Vijoy তে গিয়ে ওখানকার বিখ্যাত কুলফি মালাই, পেস্তা-কাজু-কিশমিশ দেওয়া মিল্ক শেক ও ফালুদার স্বাদ একবার নিয়ে দেখুন। সত্যিই অপূর্ব। আর গোয়ানিজ বা পর্তুগিজ খাবারের স্বাদ গ্রহণের সেরা ঠিকানা হলো সেন্ট পলস চার্চের বিপরীতে অবস্থিত অ্যাপেলাইট রেস্টুরেন্ট। মদিরা প্রেমীদের কাছে সুখবর যে, যেখানে সেখানে সুরার দোকান রয়েছে। দামেও যথেষ্ট সস্তা। পান করাতেও কোন বিধিনিষেধ নেই। তবে, বর্ডার অতিক্রম করে অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়া যাবে না। খুব সাবধান। গুজরাটে মদ্যপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ। গুজরাট পুলিশের হাতে এখান থেকে কেনা মদ সমেত ধরা পড়লে নির্ঘাৎ জেল খাটবেন।

পর্তুগিজদের গড়া আর এক অদ্ভুত আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য হল পানিকোঠা দূর্গ ( Pani Kotha Fort )। এটির আকৃতি জাহাজের মতো। এটি উত্তর-পূর্বের ব্যাকওয়াটারে অবস্থিত। আগে নাকি সুরঙ্গপথে যাতায়াত করা হতো। এখন সেই পথ ধ্বংস হয়েছে। যদি যেতে চান তাহলে জেটি থেকে লঞ্চে করে ঘুরে আসতে পারেন। জনশ্রুতি আছে, এক রাতেই নাকি নির্মিত হয়েছিল এই ফোর্ট ডি মার ( Forte De Mar )। এর স্থপতিকে  নাকি হত্যাও করা হয়েছিল এই জায়গার নকশা প্রকাশের ভয়ে। রাতে দূর থেকে আলোক সজ্জায় সজ্জিত এই ফোর্ট ডি মার অর্থাৎ পানিকোঠা দূর্গটিকে দেখতে অপূর্ব সুন্দর লাগে।

Fort Road - এ অপারেশন বিজয়ে নিহত রাজপুত রেজিমেন্টের শহীদ সৈনিকদের স্মৃতিতে স্থাপিত হয়েছে সুন্দর শহীদ স্মারক পার্ক ( Sahid Smarak Park ) ও মারওয়ার স্তম্ভ ( Marwar Monument ) দেখে নিন। দেওয়াল ঘেরা শহরটির শুরুও ঠিক এখান থেকে। শহরের প্রবেশদ্বারটিও সুন্দর কারুকার্য করা। এই পার্কের উল্টোদিকের পথ ধরে সোজা চলে যান সেন্ট পলস চার্চে ( Saint Paul's Church )। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের গোয়ার বম জেসাসের আদলে গথিক শৈলীতে নির্মিত এই প্রাচীন চার্চটির বাইরের অংশ সত্যিই খুব সুন্দর। ভিতরে বার্মা কাঠের কার্ভিং-এর কাজ অতুলনীয়। এই সেন্ট পলস চার্চের উত্তরে অবস্থিত সমসাময়িক সেন্ট টমাস চার্চে গিয়ে ভিতরের মিউজিয়ামটি ( Museum at Saint Thomas Church ) দেখে আসুন। কাঠের মূর্তির জন্য এই মিউজিয়াম বিখ্যাত। সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত এটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। Saint Francis of Assisi Church - এ Old Government Hospital রয়েছে। এখান থেকে পায়ে হেঁটে একটু দক্ষিণে আসলেই পৌঁছে যাবেন জলন্ধর সমুদ্র সৈকতে ( Jalandhar Sea Beach )। খুব সুন্দর সি বিচ এটি। জলন্ধর রাজার নামে নামাঙ্কিত। লাগোয়া পাহাড়ের চূড়ায় একটি মন্দির ও সার্কিট হাউজ রয়েছে। এত উঁচু থেকে আরব সাগরের তীরে ক্রমাগত আছড়ে পড়ার নৈসর্গিক দৃশ্য সহজে ভোলার নয়। অদূরে আছে চন্ডিকা দেবীর মন্দির। আর আছে সামার হাউস ফুলের বাগান ( Summer House Park, Flower Garden, Way to Circuit House, Diu, Daman and Diu - 362520 )। শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে ডিম্বাকার রুপোলি বালির সাগর সৈকত চক্রতীর্থ বীচ ( Chakratirth Sea Beach )। এখান থেকে সূর্যাস্তের নৈসর্গিক শোভা দেখতে দারুণ লাগে।

Airport Road থেকে কিছুটা দক্ষিণে গিয়ে আরব সাগরের তীরে  Gangeshwar Mahadev Temple - এ অধিষ্ঠিত রয়েছেন দেবতা গঙ্গেশ্বর শিব। কিছুটা দূর হতে দেখলে মনে হবে জোয়ারের ঢেউ এসে সটান মহাদেবের পায়ে আছড়ে পড়ে মাথা ঠুকে প্রনাম করছে। আর ভাটায় জল সরে গেলেই সারি সারি লাল কাঁকড়ারা একত্র হয়ে নাগ দেবতা ( Statue of Nag Devta ) ও শিবের আরতি করছে। সত্যিই সুন্দর পরিবেশ। প্রায় আট ফুট উচ্চতার একটি নাগ রাজার মূর্তিও আছে।

এখান থেকে সাগর পাড় ধরে ডান-বাম যেকোন দিকেই তাকান না কেন দূর হতে দূরান্তরে দেখতে পাবেন শুধু চুনাপাথরের খুব ছোট ছোট পাহাড়, পাহাড়ি খাঁড়ি যার ভিতরে এসে সমুদ্র আছড়ে পড়ছে। আর রয়েছে সোনালী সাগর বেলা। Diu Airport-এর কাছে রয়েছে নাগোয়া সৈকত ( Nagoa Sea Beach )। শহর থেকে মাত্র ১০ কি. মি. দূরত্বের মধ্যে এই অশ্বক্ষুরাকৃতি, প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ সুন্দর, শান্ত, পরিচ্ছন্ন নাগোয়া বা Nagao Beach-টিও অন্ততপক্ষে কিছুক্ষণের জন্য কাটিয়ে যান। খুবই ভালো লাগবে। নারকেল ও আফ্রিকান হোকা গাছে ছাওয়া এই সৈকত সমুদ্রস্নানের পক্ষে সম্পূর্ণ নিরাপদ। যাতায়াতের জন্য বাস এবং অটো সার্ভিস যথেষ্ট পরিমাণেই রয়েছে। এখানে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল, রিসর্ট রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় কিছু বাড়িতে ভাড়ায় ঘর পেয়ে যাবেন অর্থাৎ বেশ কিছু হোমস্টেও আছে। এখান থেকে আরো কিছুটা পশ্চিমে গিয়ে জেলেদের গ্রাম ভানাকবারা ( Vanakbara Fishermen's Village ) ঘুরে আসুন, অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা হবে।

শহর থেকে বাস, অটো, ছোট গাড়ি বা মিনিবাসে করে ঘোঘলা সেতুতে ব্যাকওয়াটার পেরিয়ে ঘোঘলা ও আহমেদপুর মান্ডভি সৈকত ( Ghoghla and Ahmedpur Mandvi Sea Beach ) দেখে আসুন। ঘোঘলায় ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স, ট্যুরিস্ট অফিস ও চেকপোস্ট অবস্থান করছে। Where to Stay? - থাকা-খাওয়ার জন্য জুনাগড় নবাবের গ্রীষ্মাবাসে তৈরি হওয়া Toran Beach Resort, Jahajwada Road, Mandvi, Cottage No. 15-এ যোগাযোগ করতে পারেন। এখানে থাকলে সাগরে ঘুরে বেড়াবার জন্য ওয়াটার স্কুটার পাবেন। দিউ চেকপোস্টের গা ঘেঁষে আর একটি উত্তম মানের রিসর্টেও থাকতে পারেন। যোগাযোগের ঠিকানা হলো - Magico Do Mar, Ahmedpur Mandvi, Una Taluka, District - Junagadh. এই রিসর্টের নিকটেই সরকারি উদ্যোগে তৈরি হয়েছে একটি Tourist Complex - যেখানে শিশুদের মনোরঞ্জনের ( Children Amusement Programmes ) নানা ব্যবস্থা রয়েছে।

উদভাদা ও নওসারি ( Udvada & Navsari ) - দমনের উত্তরে আরব সাগরের তীরে তালগাছে ছাওয়া সুরম্য নির্জন একটি আকর্ষণীয় জায়গা হলো পার্সি উপনিবেশ উদভাদা ( Udwada )। এখানে Zoroastrian Museum and Information Centre আছে। এখান থেকে আপনি পার্সি সম্প্রদায়ের অনেক ইতিহাস জানতে পারবেন। এখান থেকে সোজা চলে আসুন আর এক সমৃদ্ধ পার্সি উপনিবেশ নওসারিতে। এই জায়গা ( Navsari ) বিখ্যাত পবিত্র পার্সি ফায়ার টেম্পল ও হিরে কাটিং শিল্পের জন্য। এই দুই স্থানেই থাকা-খাওয়ার হোটেল পেয়ে যাবেন।

নারগোল ( Nargol ) - মুসলিম হানাদারদের তাড়া খেয়ে নিজেদের মাতৃভূমি পারস্য ছেড়ে পার্সিরা সমুদ্রপথে সোজা ভারতের পশ্চিম উপকূলে সুরাটের কাছের একটি সুপ্রাচীন সমুদ্র বন্দরে পদার্পণ করেন। তারপর প্রথম বসতি স্থাপন করেন ঝাউগাছে ছাওয়া এই মনোরম নারগোল বিচ ( Nargol Sea Beach ) সংলগ্ন এলাকায়। পরে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েন। বাপী ( Vapi ) থেকে সড়কপথে মাত্র ৩১ কি. মি. দূরে অবস্থিত। বাপী রেলস্টেশন থেকে সোজা বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে এখানে চলে আসুন। সৈকত প্রধান পর্যটন আকর্ষণ হলেও এছাড়াও এখানে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেমন, Fire Temple, Fish Kata, Swaminarayan Mandir, Arvind Ashram, Samudra Narayan Temple, Radheshyaam Mandir, Umbergaon / Umargam Sea Beach etc. 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please, Don't Spam.

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷