PAST HISTORY & SOME VALUABLE INFORMATIONS ABOUT PUDUCHERRY OR PONDICHERRY:-
পন্ডিচেরী বা পুদুচেরি শব্দটি শুনলে শুধু বাঙালি নয়, বিশ্ববাসীর মানসচক্ষে প্রথম যে ছবিটি ভেসে উঠবে সেটি হ'ল শ্রী অরবিন্দ ঘোষের যোগাশ্রম। তার আগে এই এলাকা ছিল ফরাসি উপনিবেশ। ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি স্থপতি ফ্রান্সিস মার্টিনের হাতে গড়ে ওঠে আজকের এই বিশ্ববন্দিত শহরটি। তামিল ভাষায় Pudu মানে নতুন আর Cherry মানে শহর। একে কেউ ডাকে পুদুচেরি আবার কেউ ডাকে পন্ডিচেরী নামে। আগে সরকারি খাতায় কলমে নাম ছিল Pondicherry কিন্তু ২০০৬ সালে একটি সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এর অফিসিয়াল নাম হয়ে গেল পুদুচেরি ( Official Name Puducherry )। এটি এখনও কেন্দ্র শাসিত ( Union Territory ) অঞ্চল হলেও অচিরেই এটি স্বতন্ত্র রাজ্যের রূপ পেতে চলেছে। এখানে তথাকথিত আধুনিকতা নেই, কোন সুন্দর রিসর্টও গড়ে ওঠেনি সৈকতে। তা সত্ত্বেও পর্যটন মানচিত্রে এই স্থানের একটি আলাদা গুরুত্ব আছে। এর মূল কারণ, ফরাসি সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন আর ঋষি অরবিন্দের আশ্রম। উত্তর থেকে দক্ষিণবাহী খালকে সীমান্ত ধরে এর পূর্ব দিকের সমুদ্র পাড় ঘেঁষা অংশই হলো মূল ফরাসি উপনিবেশ। এই এলাকার সবকয়টি বাড়ির রংই সাদা। এই অঞ্চলেই রয়েছে বিখ্যাত শ্রী অরবিন্দ যোগাশ্রম। খালের পশ্চিম পাড়ের অংশে স্থানীয়দের বাস। তাই অনেকে মজা করে খালের পূর্বের অংশকে বলেন সাদা শহর আর পশ্চিমের অংশকে বলেন কালা শহর। আজ প্রায় ৩০০ বছর হয়ে গেল ফরাসিরা এই শহর ত্যাগ করে চলে গেছেন, তবুও যেন এই শহরের অলিতে গলিতে ঘুরলে মনে হয় ফ্রান্সের পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। এখনও অনেক রাস্তার নাম ফরাসি ভাষায় রয়েছে।
এর রাজধানী অর্থাৎ Capital City পুদুচেরি ( Puducherry / Pondicherry )। মোট জনসংখ্যা ( Total Population ) ১২৪৫০০২। জনঘনত্ব ( Population Density ) বা প্রতি বর্গ কি.মি.তে ২৬০০ জন বসবাস করেন। প্রতি ১০০০ পুরুষ পিছু নারীর সংখ্যা ১০৩৮ জন ( Sex Ratio of Male and Female )। সাক্ষরতার হার ( Percentage of Literacy ) ৮৭%। সরকারি প্রধান ভাষা ( Main Official Language ) হ'ল তামিল ও ইংরেজি। অন্যান্য প্রচলিত ভাষাসমূহ ( Other Languages ) তেলুগু, ফরাসি ও মালয়ালম। এখানকার অধিবাসীদের বলা হয় পুদুচেরিয়ান ( Puducherrian ), পন্ডিচেরীয়ান ( Pondicherrian ) অথবা পন্ডিয়ান ( Pondian )। এদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ( Per Capita / Per Head Every Year Income ) ২২০৪৫০ টাকা।
এখানকার টেলিফোন কোড ( Telephone Code ) হ'ল -
International / ISD:- +91-413-
National / STD:- 0413-
AVERAGE WEATHER OR CLIMATE. WHEN SHOULD YOU GO THERE? / BEST TIME TO VISIT OR TRAVEL THIS STATE:-
এখানকার আবহাওয়া ট্রপিক্যাল ধরনের ( Tropical Type Weather / Climate ) হওয়ার কারণে শীত বা গ্রীষ্ম কোনটারই সেরকম কোনো প্রাবল্য নেই। শীতে ২১° আর গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ ৩৭° সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। তাই এখানে বছরের যে কোন সময় ঘুরতে আসা যায়। বছরের কোন সময়েই গরম পোশাকের প্রয়োজন হয় না। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু বা কন্যাকুমারী যখন ঘুরতে আসবেন তখন একসাথে এই জায়গার ভ্রমণও সেরে নেওয়াই একদম সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।
Pondicherry / Puducherry Municipality Official Portal -
http://www.pdymun.in
For Tourism -
http://www.pondytourism.in
প্রশাসনিকভাবে কতকগুলি এলাকাতে ( Areas ) ভাগ করা হয়েছে। যেমন, বাহৌর ( Bahour ), ওঝুকরাই ( Ozhukarai ), পুদুচেরি ( Puducherry ), ভিল্লিয়ানুর ( Villianur ), নেট্টাপক্কম ( Nettapakkam ), আরিয়ানকুপ্পম ( Ariyankuppam ), মান্নাডিপেট ( Mannadipet ), মানাভেলি ( Manavely )।
ALL TOTAL LIST OF 22 VERY BIG, MOST POPULAR OR FAMOUS LOCAL FAIRS & MAJOR FESTIVALS:-
(i) Pongal, (ii) Shivaratri, (iii) Mothers Birth Anniversary, (iv) Masi Magam, (v) Holi, (vi) Tamil New Year, (vii) Easter Festival, (viii) Akshaya Tritiya, (ix) Villianoor Temple Car Festival, (x) Bastille Day Festival, (xi) Adi Amavasya, (xii) International Yoga Utsav, (xiii) Art - Y - Fair, (xiv) Puducherry Local Fair, (xv) Fete De Pondicherry, (xvi) Bicycle Parade, (xvii) Ayudha Puja, (xviii) Sri Aurobindos Birthday, (xix) Veerampattinam Festival, (xx) Navaratri, (xxi) Milad Un Nabi, (xxii) Ganeshotsav / Ganesh Chaturthi.
TOP PLACES TO VISIT OR MAJOR TOURIST ATTRACTIONS IN PUDUCHERRY / PONDICHERRY WITH PROPER TOUR PLAN ON MAIN TRAVEL DESTINATIONS AND OTHER NEAREST BEAUTIFUL SPOTS:-
শ্রী অরবিন্দ আশ্রম ( Sri Aurobindo Ashram ) - পুদুচেরির রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ২ কি. মি. দূরত্বের মধ্যে শহরের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ ঋষি অরবিন্দ ঘোষের এই আশ্রমটি অবস্থিত। এখানে প্রবেশের নির্ধারিত সময়সীমা হলো সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১২ টা আর দুপুর ২ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে ৩ বছরের ছোট শিশুদের প্রবেশ নিষেধ। ছবি তুলতে হলে আশ্রম কতৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। এবার এই সাধকের জীবন সম্পর্কে কিছু তথ্য জানাবো।
শ্রী অরবিন্দ ঘোষের জীবনী ( Biography of Sri Aurobindo Ghosh ) - এই মহান সাধক ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত বাংলার কলকাতা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৯০-এ উচ্চশিক্ষার্থে ইংল্যান্ডে যান। কেমব্রিজ থেকে ICS পাশ করে ১৮৯৩ সালে বরোদা স্টেটের চাকরি নিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বরোদা স্টেটের চাকরি ছেড়ে কলকাতা ফিরে স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। আলিপুর বোমা মামলায় অন্যতম আসামি হিসেবে তিনি কারারুদ্ধ হন। কিন্তু, উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তিনি ১৯০৯-এ কারাগার থেকে মুক্তি পান। জেলে থাকতেই তাঁর মানসিকতার আমূল পরিবর্তন আসে। ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথেই আধ্যাত্মিকতায় সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করার জন্য তিনি ১৯১০ সালের ৪ঠা এপ্রিল ফরাসি উপনিবেশ পন্ডিচেরীতে। এখানেই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। গড়ে তোলেন অধ্যাত্ম ও যোগশিক্ষা কেন্দ্র। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ২৪ শে নভেম্বর তিনি সাধনায় পূর্ণসিদ্ধি লাভ করেন। ১৯২০ সালে ফ্রান্সের এক মহিলা চিত্রশিল্পী তথা সঙ্গীতজ্ঞা মিসেস মীরা আলফাসা ( Mirra Alfassa ) আশ্রমিক হয়ে আসেন। পূর্ণ সিদ্ধিলাভের পর এই আশ্রমের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে The Mother অর্থাৎ শ্রীমায়ের উপর। এই অরবিন্দ আশ্রমের উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান, ভক্তি ও কর্মসাধনার মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলা। শরীর-মন গড়ে তোলার প্রধান মাধ্যম যোগ নিয়ে এখানে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক যোগ উৎসব ( International Yoga Festival ) অনুষ্ঠিত হচ্ছে পন্ডিচেরীতে। নারী পুরুষ মিলিয়ে হাজার দুয়েক আশ্রমিক নিয়ে এই শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৪০০-এর বেশি সংখ্যক বাড়িতে চলছে রোজের কর্মকাণ্ড। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ৫ ই ডিসেম্বর শ্রী অরবিন্দ দেহত্যাগ করেন। তিনি যে গৃহে বাস করতেন সেই গৃহপ্রাঙ্গনের সেবাবৃক্ষতলে তাঁর পবিত্র মরদেহ সমাধিস্থ করা হয়। আশ্রমিকদের রোজের জীবনযাত্রা শুরু হয় এই শ্বেতপাথরের সমাধি বেদিতে ( Sri Aurobindo Samadhi ) পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে। এখানে আসা পর্যটকেরাও এই বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। রিসেপশন কাউন্টার থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে অরবিন্দের সিদ্ধিলাভ করা পবিত্র কক্ষটি দর্শন করতে পারেন। এই স্থান দর্শনে এক অদ্ভুত সুন্দর উপলব্ধি হয়। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই নভেম্বর ৯৬ বছর বয়সে শ্রীমা দেহ রেখেছেন। তাঁর মরদেহকেও পূর্ব পরিকল্পনা মতো শ্রী অরবিন্দের সমাধির উপরে সমাধিস্থ করা হয়। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত সমাধির দরজা খোলা থাকে দর্শকদের জন্য। ৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রবেশ নিষেধ। বিপরীতে রয়েছে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ( Cultural Centre ), যেখানে ফিল্ম শো, খেলার জগৎ, শিক্ষামূলক ভাষণের নিয়মিত আসর বসে প্রতি সন্ধ্যায়। এখানে প্রবেশ অবাধ হলেও ভিজিটর পাস সঙ্গে থাকা ভালো। এছাড়া, ২১ শে ফেব্রুয়ারি ( শ্রীমায়ের জন্মদিন ); ৪ ঠা এপ্রিল ( শ্রী অরবিন্দের পুদুচেরি আগমন ); ২৪ শে এপ্রিল ( শ্রীমায়ের পন্ডিচেরী আগমন ); ১৫ ই আগস্ট ( শ্রী অরবিন্দের জন্মদিন ); ১৭ ই নভেম্বর ( শ্রীমায়ের তিরোধান ); ২০ শে নভেম্বর ( শ্রীমায়ের সমাধি ); ২৪ শে নভেম্বর ( শ্রী অরবিন্দের পূর্ণ সিদ্ধিলাভ ); ১লা ও ২রা ডিসেম্বর ( আশ্রম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ); ৫ ই ডিসেম্বর ( শ্রী অরবিন্দের তিরোধান ); ৯ ই ডিসেম্বর ( শ্রী অরবিন্দের সমাধি ) - এই বিশেষ দিনগুলোতে সমস্ত পন্ডিচেরী উৎসবে মেতে ওঠে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তের দল এখানে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন।
পুদুচেরি সমুদ্র সৈকত ( Puducherry Sea Beach ) - শহরের পূর্বে বঙ্গোপসাগরের তীরে রয়েছে শান্ত, স্নিগ্ধ ও সুন্দর সৈকত। এর গা দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত আছে Beach Road বা Goubert Avenue. মোট ১.৫ কি. মি. দীর্ঘ এই রাস্তার উত্তরে আছে শ্রীমায়ের স্মৃতিধন্য টেনিস কোর্ট এবং দক্ষিণে আছে পার্ক গেস্ট হাউস। এই বীচ রোডের গায়ে রয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত বীর সৈনিকদের স্মরণে War Memorial. ১৪ ফুট উঁচু গান্ধী মূর্তিকে ঘিরে রেখেছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের স্মারকরূপে গড়া ৮ টি মনোলিথ স্তম্ভ। গান্ধী স্কোয়ারের এই Mahatma Gandhi Statue এই জায়গার মর্য্যাদাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জওহরলাল নেহেরুর স্ট্যাচু। পাশের ২৯ মিটার উঁচু লাইট হাউসটিও দেখার মতো। আর রয়েছে পন্ডিচেরী আকাশবাণী ভবন। সামান্য এগিয়েই পৌঁছে যাবেন সমুদ্রবক্ষে বসানো নতুন জেটি। ২৮৪ মিটার লম্বা বাঁধানো এই জেটিতে সানবাথ ও সমুদ্র স্নান করা যায়। মার্চ-এপ্রিল মাসে আসলে এখানকার সমুদ্রে ডলফিনও দেখতে পাবেন। তাই পর্যটকদের কাছে এই সৈকতের একটা আলাদা আকর্ষণ আছে।
প্রাচীনতম সড়ক Rue Dumas Road-এ ফরাসিদের প্রথম বসতি স্থাপিত হয়। এই রাস্তাতেই রয়েছে Hotel The Pondicherry বিখ্যাত হোটেলটি। প্রাচীন Hotel De Ville-তে শহরের মিউনিসিপ্যাল অফিস হয়েছে। এই এলাকাটি এখন গভর্নর প্লেস নামে সুবিখ্যাত। এখানে একটি সুন্দর ফোয়ারা রয়েছে। পুরো অঞ্চলে এখনও বেশ ভালো রকম ফরাসি ধাঁচ পাওয়া যায়। জিঞ্জি থেকে আনা অনেক ভাস্কর্য রয়েছে ফোয়ারাটিকে ঘিরে। এর উত্তরে আছে ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত রম্যাঁ রল্যাঁ লাইব্রেরি ( Romand Rolland Library )। পাশের Hotel De La Compagnie-তে ১৭৭০ পর্যন্ত ছিল রাজ নিবাস ( Raj Nivas ) অর্থাৎ গভর্নর হাউস। পশ্চিমে রয়েছে অরবিন্দ আশ্রমের Dining Room, Puducherry Head Post Office, ফরাসি সংস্কৃতির নানা স্মারক, পহ্লব-চোল-বিজয়নগর-রোমান সেটেলমেন্টের নানা সামগ্রী নিয়ে তৈরি হয়েছে মিউজিয়াম ( Puducherry Museum ), পাবলিক গার্ডেনে জোয়ান অফ আর্কের মূর্তি। সাগরপারে Goubert Avenue-তে রয়েছে Puducherry Tourism Development Corporation-এর অফিস। St. Louis Street-এ রয়েছে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে গড়ে তোলা ভারতীয় গবেষণা কেন্দ্র French Institute of Puducherry Research Centre. এখানকার রেস্টুরেন্টে ফরাসি খাবারেরও স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন। আর রয়েছে ফ্রেঞ্চ লাইব্রেরি, আর্ট গ্যালারি। বীচ রোডের গায়ে রয়েছে জওহরলাল টয় মিউজিয়াম ( Jawaharlal Toy Museum ), বাসস্ট্যান্ডের কাছে ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে ১৫০০ প্রজাতির গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে বটানিক্যাল গার্ডেন ( Botanical Garden ), মাছের অ্যাকোয়ারিয়াম, উসটেরী লেক, অডিটোরিয়াম, আশ্রমের বিভিন্ন দপ্তরও পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য।
এমনিতেই দক্ষিণ ভারতকে মন্দিরের দেশ বলা হয়। এই শহরও তার ব্যতিক্রম নয়। ৩৫০-এরও বেশি মন্দির রয়েছে সমগ্র পুদুচেরিতে। এর মধ্যে ৭৫ টিই বিনায়ক অর্থাৎ কার্তিকের মন্দির। মানাকুলা বিনায়ক মন্দিরে ( Manakula Vinayak Temple ) প্রতি শুক্রবার পূজা হয়। ১৯ শতকে নির্মিত ভাস্কর্য মন্ডিত এই মন্দিরে কার্তিক ছাড়াও লক্ষ্মী, গণেশ রয়েছে। শুভকামনায় সবাই প্রার্থনা করেন এখানে।
শহর থেকে ২৫ কি. মি. দূরে আছে ১০ম শতকে নির্মিত বাহুর মন্দির। এই মন্দিরে গ্রানাইট পাথরের মূর্তিতে ভারতনাট্যম নৃত্যের মুদ্রাগুলি যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ১২ শতকে নির্মিত ভিলিয়ানুর মন্দিরের আরাধ্য দেবতা হলেন তিরুকামেশ্বর শিব। গ্রানাইট পাথরের এই মন্দিরের সিলিং কারুকার্যময়। রথযাত্রার সময়ে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে তীর্থযাত্রীরা আসেন। Easwram Koil Street-এর ভেদাপুরেশ্বর গণেশ মন্দিরটিও উল্লেখযোগ্য। ভিলুপ্পুরমের পথে ১৩ কি. মি. দূরের ভিলিয়ান্নুর মন্দির ও চার্চ বেড়িয়ে আরও ১০ কিলোমিটার দূরের তিরুভান্ডার মন্দিরটিও দেখে ঐ একই দিনে ফেরা যায়। এখানকার উপাস্য দেবতা হলেন শিব। পন্ডিচেরী থেকে ১৬ কি. মি. দূরে সুন্দর মনোরম পরিবেশের ব্যাকওয়াটারে সামান্য অর্থের বিনিময়ে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত বোটিং করতে পারবেন। শহরকে ঘিরে বেশ কয়েকটি প্রাচীন সুন্দর চার্চও ( Beautiful Old Churches in Puducherry ) রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ১৬৯১-এর Jesuit Cathedral, ১৭০০ খ্রিস্টাব্দের Sacred Heart of Jesus, ১৮৫৫-এর Our Lady of Angels এবং Eglise De Sacre Coeur De Jesus ইত্যাদি। একটি বিখ্যাত মসজিদও রয়েছে, যার নাম Jamia Mosque.
শ্রী অরবিন্দ আন্তর্জাতিক শিক্ষাকেন্দ্র ( Sri Aurobindo International Centre Of Education ) - অরবিন্দের দেহত্যাগের পর তাঁরই প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শ্রীমায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ৬ই জানুয়ারিতে একটি উন্নতমানের আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ( University ) রূপান্তরিত হয়। দেশ-বিদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে পড়াশোনা করতে আসে।
অরোভিল ( Auroville City ) - অরোভিল শব্দটির অর্থ হল অরবিন্দ নগরী। শ্রীমায়ের আশীর্বাদপুষ্ট শ্রীঅরবিন্দ সোসাইটি দ্বারা রূপায়িত স্বপ্নের নগরী হলো এই Auroville অর্থাৎ City of Dawn. ইউনেস্কোর আর্থিক সাহায্যে, সমগ্র ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায়, পৃথিবীর ১২৬ টি দেশের সহযোগিতায় তামিলনাড়ু-পুদুচেরি সীমান্তে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মানের এই শহরটি নির্মিত। দক্ষিণ আর্কট জেলায় ১৯৬৮ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে ১২৪ টি দেশের প্রতিনিধিদের দ্বারা আনীত সেইসব দেশের মাটি দিয়ে এই শহরের যাত্রাপথের সূচনা হয়। এই নতুন শহর গড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় ফরাসি স্থপতি রগার অঙ্গারের হাতে। শ্রীঅরবিন্দের মূল আশ্রম থেকে ১০ কি. মি. উত্তর-পশ্চিমে পুদুচেরি-চেন্নাই সড়কের উপর ৫০ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে ৫০ হাজার বাড়ি নিয়ে ৪ টি এলাকায় বিভক্ত অরোভিল। এখানকার মূল লক্ষ্যই হলো প্রকৃত মানুষ তৈরি করা। "ব্যক্তিগত মালিকানা" শব্দটির কোন অস্তিত্ব নেই এখানে। এই জায়গাটি হলো আন্তর্জাতিক মানব ঐক্যের এক জীবন্ত উদাহরণ। রোজগারের মূল উৎস সমাজতান্ত্রিক প্রথায় কৃষি, শিক্ষা, উন্নয়নমূলক প্রজেক্ট, কম্পিউটার, হ্যান্ডিক্রাফটস, টেকনোলজি ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে। ঘরবাড়ির নামকরণেও অভিনবত্ব রয়েছে যেমন, Sincerity, Shanti, Horizon, Gratitude, Fertile - এরকম আরও যে কত তার কোন ইয়ত্তা নেই। প্রতিটি কমিউনে অতিথিদের জন্য Guest House রয়েছে। খাওয়া-থাকার যথেষ্ট ভালো বন্দোবস্ত রয়েছে।
এখানকার মূল আকর্ষণ ৩০ মিটার উঁচু গ্লোবের আকারের মাতৃমন্দির ( Matrimandir )। সিঁড়ি বেয়ে বৃত্তাকার মেডিটেশন হলে পৌঁছতে হয়। ২ টি কাঁচে সূর্যকিরণ প্রতিফলিত হয়ে জার্মানি থেকে আনা বিশ্বের বৃহত্তম ৬০০ কে. জি.-র ক্রিস্টালে বিচ্ছুরিত আলোয় আলোকিত হয় বিদ্যুৎহীন মাতৃমন্দির। এখানেই ধ্যানে বসেন ভক্তের দল। এখানে আসার জন্য টিকিট না লাগলেও আগাম অনুমতি নিতে হয়।
Sri Aurobindo Ashram Autocare প্রতিদিন ২.৩০ টায় Cottage Complex থেকে ২৫ জন যাত্রী নিয়ে অরোভিল দর্শনে যাচ্ছে। ৮ টা থেকে ৮-৪৫ ঘটিকার মধ্যে আশ্রম গেটে বুকিং করা যায়। এককভাবে দর্শনে গেলে মাতৃমন্দির রিসেপশন থেকে অনুমতি নিতে হয়। এর গায়েই রয়েছে অ্যাম্পিথিয়েটার অডিটোরিয়াম। ৩০০০ শ্রোতা এখানে মাইক ছাড়াই ভাষণ শুনতে পারে। ভারত নিবাস প্যাভিলিয়নে ( Bharat Nivas Pavilion ) ভারতীয় সংস্কৃতির আসর বসে। এখানকার গ্রন্থাগারে ( Library ) গবেষণা চলছে ভারতীয়দের ভাষার উপরে। অরোভিলের ইনফরমেশন তথা রিসেপশন সেন্টার বসেছে ভারত নিবাসে।
শহর থেকে ১০ কি. মি. দূরে ছুন্নাম্বার নদী ও সাগরের জলে তৈরি ব্যাকওয়াটারে ওয়াটার স্পোর্টস কমপ্লেক্স ছুন্নাম্বার বোট হাউসে এসে ( Chunnambar Boat House, Chunnambar River ) রকমারি বোটে জলে ভেসে বেড়ান। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৫ টা পর্যন্ত বোটিং করা যায়। নির্জন নিরালা গাছপালায় ছাওয়া ব্যাকওয়াটারের পাড়ে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে পারেন। খাবার পাবেন রেস্তোরাঁ ও বোট হাউসের ক্যান্টিনে। আগে থেকে পুদুচেরি পর্যটন দপ্তর থেকে অনলাইন বুকিং করে আসতে হবে। শীতকালে আসলে প্রচুর পরিযায়ী পাখি ( Migratory Birds ) ব্যাকওয়াটারের জলে ভেসে বেড়াতে দেখতে পাবেন।
কনডাকটেড ট্যুর প্রোগ্রাম ( Conducted Tour Programmes Arranged By Pondicherry Tourism Dept. ) - [ Director of Tourism, Government of Puducherry, 40 Goubert Avenue / Beach Road, 605001, Tel. - 0413 2339497, Fax - 3258389 ] - পর্যটন দপ্তরের এই ঠিকানা থেকে সকাল সাড়ে নয়টা হতে বিকেল পাঁচটার মধ্যে নামমাত্র কিছু টাকার বিনিময়ে পুডুচেরী ও অরোভিল দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। ছুন্নাবার নদীর বোট হাউসে নানারকম বোটিং-এর সাথে হাইড্রোপ্লেন, কায়াকিং-এরও ব্যবস্থা করেন এনারা। রবিবার ছাড়া প্রতিদিন আশ্রমের গাড়ি সমাধি মন্দিরের সামনে থেকে সকাল ৮টা বেজে ৪৫ মিনিট নাগাদ ছেড়ে তিন ঘন্টার কনডাকটেড ট্যুরে আশ্রমের বিভিন্ন দপ্তর ও অরোভিল শহর পর্যটকদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসেন। পর্যটন দপ্তর থেকে গাড়িও ভাড়ায় পেয়ে যাবেন। এছাড়াও এখান থেকে বেশ কয়েকটি ট্যুর প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জ করা হয়। যেমন,- প্রতি মাসের প্রথম শনিবার ৮ দিনের প্যাকেজে ব্যাঙ্গালোর অথবা গোয়া ভ্রমণ, প্রতি শুক্রবার কন্যাকুমারী ট্যুর, দ্বিতীয় ও চতুর্থ শনিবার ৭ দিনের দক্ষিণ ভারত সফর, তৃতীয় শনিবার ৮ দিনের কেরালা ও তামিলনাড়ু ট্যুর করানো হয় পুদুচেরি থেকে।
খাবারের সেরা জায়গা ( Best Places For Foods ) - এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রচুর খাবারের হোটেল রয়েছে। কিন্তু, এরমধ্যে বেশ কয়েকটি নিজগুণে খ্যাতি লাভ করেছে। যেমন, অ্যারিস্টো হোটেলে আগে থেকে অর্ডার দিয়ে দুশোরও বেশি রকমের সুস্বাদু খাবার পাবেন। ব্লিস, আশির্বাদ ও আশ্রমের ডাইনিং হলের খাবারও যথেষ্ট ভালো। টিফিনের জন্য বিখ্যাত জওহরলাল নেহেরু রোডের Indian Coffee House. এই রাস্তাতেই রয়েছে নিরামিষ খাদ্যের জন্য Priya Restaurant. Aristo Hotel-এর সুখ্যাতি তামিলীয় বিরিয়ানির জন্য। চাইনিজ ফুডের জন্য কয়েকটি জায়গার নাম না করলেই নয়। যেমন,- পার্ক গেস্ট হাউসের কাছের Blue Dragon Chinese Restaurant, রাজভবনের কাছে আছে Penguin, সাফরেন স্ট্রিটের China Town Restaurant. ফরাসি খাবারের স্বাদ নিতে হলে যেতে হবে Sea Side Snacks Bar-এ। খাঁটি বাঙালি খাবার খেতে হলে চলে যান সমাধি মন্দিরের পথের বিপরীতের বাঙালি রেস্টুরেন্ট আহার-এ ( Aahar Bengali Restaurant )।
আপনার কেনাকাটা ( What are The Things You Should Buy ( Marketing ) While Traveling in Puducherry and Auroville?
পুদুচেরি ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সিল্ক কাপড়ের উপরে অভিনব পদ্ধতিতে ছাপা মার্বেল প্রিন্ট, বোম্মাই বা পুতুল, আশ্রমে তৈরি করা ধূপকাঠি, রুমাল, আশ্রমের বিক্রয় কেন্দ্র থেকে শ্রীঅরবিন্দ ও শ্রীমায়ের লেখা অমূল্য গ্রন্থ, পত্র-পত্রিকা, অরোভিলের Boutique d' Auroville কাউন্টার থেকে স্থানীয় মানুষের তৈরি বিভিন্ন হস্তজাত সামগ্রী ( Crafts and Handlooms ) কিনে নিয়ে যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন? Where to Stay?
পন্ডিচেরী শহর জুড়ে অসংখ্য হোটেল, লজ, গেস্ট হাউস ও রিসর্ট রয়েছে। খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্টও আছে যথেষ্ট পরিমাণে। অরবিন্দ আশ্রমে স্বল্প সময় থাকার জন্য বেশ কয়েকটি অতিথিশালা বা গেস্ট হাউস আছে। আশ্রমের ডাইনিং হলে অল্প টাকার বিনিময়ে ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার অবধি সব সময়ের নিরামিষ খাবার পেয়ে যাবেন। অরোভিল নগরীতে ৩৩ টি গেস্ট হাউস আছে। এইসব জায়গায় বা অরবিন্দ আশ্রমে থাকতে হলে আগে থাকতে উপরিউক্ত Director of Tourism-এর Address-এ যোগাযোগ করে বুকিং করে আসবেন। আশ্রমের দেওয়া Visitor Pass সবসময় সঙ্গে রাখবেন। ৩ ঘরের রিটায়ারিং রুম রয়েছে পুদুচেরি রেল স্টেশনে। সেখানেও থাকতে পারেন।
কিভাবে যাবেন? How to Reach / Go?
পুদুচেরিতে একটি রেলস্টেশন ও দুটি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। কলকাতা থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনে করে সরাসরি পৌঁছতে পারেন। আবার ভায়া চেন্নাই হয়েও যেতে পারেন। এরোপ্লেনে করে যেতে হলে প্রথমে চেন্নাই এয়ারপোর্টে নামবেন। তারপর ভাড়ার গাড়ি বা বাসে করে সোজা পন্ডিচেরী এক্সপ্রেস বাসস্ট্যান্ডে নামুন। এখানকার দুটি বাসস্ট্যান্ডের মধ্যে একটি হলো এক্সপ্রেস বাসস্ট্যান্ড। এখান থেকে দক্ষিণ ভারতের যেকোন প্রান্তে যাওয়ার দূরপাল্লার বাস ছাড়ে। আর একটি থেকে মফস্বলের বাসস্ট্যান্ড। এইটি থেকে মফস্বলের স্বল্প দূরত্বের স্থানগুলোতে যাতায়াতের বাস ছাড়ে।
পন্ডিচেরী বা পুদুচেরি শব্দটি শুনলে শুধু বাঙালি নয়, বিশ্ববাসীর মানসচক্ষে প্রথম যে ছবিটি ভেসে উঠবে সেটি হ'ল শ্রী অরবিন্দ ঘোষের যোগাশ্রম। তার আগে এই এলাকা ছিল ফরাসি উপনিবেশ। ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি স্থপতি ফ্রান্সিস মার্টিনের হাতে গড়ে ওঠে আজকের এই বিশ্ববন্দিত শহরটি। তামিল ভাষায় Pudu মানে নতুন আর Cherry মানে শহর। একে কেউ ডাকে পুদুচেরি আবার কেউ ডাকে পন্ডিচেরী নামে। আগে সরকারি খাতায় কলমে নাম ছিল Pondicherry কিন্তু ২০০৬ সালে একটি সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এর অফিসিয়াল নাম হয়ে গেল পুদুচেরি ( Official Name Puducherry )। এটি এখনও কেন্দ্র শাসিত ( Union Territory ) অঞ্চল হলেও অচিরেই এটি স্বতন্ত্র রাজ্যের রূপ পেতে চলেছে। এখানে তথাকথিত আধুনিকতা নেই, কোন সুন্দর রিসর্টও গড়ে ওঠেনি সৈকতে। তা সত্ত্বেও পর্যটন মানচিত্রে এই স্থানের একটি আলাদা গুরুত্ব আছে। এর মূল কারণ, ফরাসি সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন আর ঋষি অরবিন্দের আশ্রম। উত্তর থেকে দক্ষিণবাহী খালকে সীমান্ত ধরে এর পূর্ব দিকের সমুদ্র পাড় ঘেঁষা অংশই হলো মূল ফরাসি উপনিবেশ। এই এলাকার সবকয়টি বাড়ির রংই সাদা। এই অঞ্চলেই রয়েছে বিখ্যাত শ্রী অরবিন্দ যোগাশ্রম। খালের পশ্চিম পাড়ের অংশে স্থানীয়দের বাস। তাই অনেকে মজা করে খালের পূর্বের অংশকে বলেন সাদা শহর আর পশ্চিমের অংশকে বলেন কালা শহর। আজ প্রায় ৩০০ বছর হয়ে গেল ফরাসিরা এই শহর ত্যাগ করে চলে গেছেন, তবুও যেন এই শহরের অলিতে গলিতে ঘুরলে মনে হয় ফ্রান্সের পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। এখনও অনেক রাস্তার নাম ফরাসি ভাষায় রয়েছে।
এর রাজধানী অর্থাৎ Capital City পুদুচেরি ( Puducherry / Pondicherry )। মোট জনসংখ্যা ( Total Population ) ১২৪৫০০২। জনঘনত্ব ( Population Density ) বা প্রতি বর্গ কি.মি.তে ২৬০০ জন বসবাস করেন। প্রতি ১০০০ পুরুষ পিছু নারীর সংখ্যা ১০৩৮ জন ( Sex Ratio of Male and Female )। সাক্ষরতার হার ( Percentage of Literacy ) ৮৭%। সরকারি প্রধান ভাষা ( Main Official Language ) হ'ল তামিল ও ইংরেজি। অন্যান্য প্রচলিত ভাষাসমূহ ( Other Languages ) তেলুগু, ফরাসি ও মালয়ালম। এখানকার অধিবাসীদের বলা হয় পুদুচেরিয়ান ( Puducherrian ), পন্ডিচেরীয়ান ( Pondicherrian ) অথবা পন্ডিয়ান ( Pondian )। এদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ( Per Capita / Per Head Every Year Income ) ২২০৪৫০ টাকা।
এখানকার টেলিফোন কোড ( Telephone Code ) হ'ল -
International / ISD:- +91-413-
National / STD:- 0413-
AVERAGE WEATHER OR CLIMATE. WHEN SHOULD YOU GO THERE? / BEST TIME TO VISIT OR TRAVEL THIS STATE:-
এখানকার আবহাওয়া ট্রপিক্যাল ধরনের ( Tropical Type Weather / Climate ) হওয়ার কারণে শীত বা গ্রীষ্ম কোনটারই সেরকম কোনো প্রাবল্য নেই। শীতে ২১° আর গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ ৩৭° সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। তাই এখানে বছরের যে কোন সময় ঘুরতে আসা যায়। বছরের কোন সময়েই গরম পোশাকের প্রয়োজন হয় না। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু বা কন্যাকুমারী যখন ঘুরতে আসবেন তখন একসাথে এই জায়গার ভ্রমণও সেরে নেওয়াই একদম সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।
Pondicherry / Puducherry Municipality Official Portal -
http://www.pdymun.in
For Tourism -
http://www.pondytourism.in
প্রশাসনিকভাবে কতকগুলি এলাকাতে ( Areas ) ভাগ করা হয়েছে। যেমন, বাহৌর ( Bahour ), ওঝুকরাই ( Ozhukarai ), পুদুচেরি ( Puducherry ), ভিল্লিয়ানুর ( Villianur ), নেট্টাপক্কম ( Nettapakkam ), আরিয়ানকুপ্পম ( Ariyankuppam ), মান্নাডিপেট ( Mannadipet ), মানাভেলি ( Manavely )।
ALL TOTAL LIST OF 22 VERY BIG, MOST POPULAR OR FAMOUS LOCAL FAIRS & MAJOR FESTIVALS:-
(i) Pongal, (ii) Shivaratri, (iii) Mothers Birth Anniversary, (iv) Masi Magam, (v) Holi, (vi) Tamil New Year, (vii) Easter Festival, (viii) Akshaya Tritiya, (ix) Villianoor Temple Car Festival, (x) Bastille Day Festival, (xi) Adi Amavasya, (xii) International Yoga Utsav, (xiii) Art - Y - Fair, (xiv) Puducherry Local Fair, (xv) Fete De Pondicherry, (xvi) Bicycle Parade, (xvii) Ayudha Puja, (xviii) Sri Aurobindos Birthday, (xix) Veerampattinam Festival, (xx) Navaratri, (xxi) Milad Un Nabi, (xxii) Ganeshotsav / Ganesh Chaturthi.
এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের যেকোন জায়গায় যাওয়া আসা, থাকা খাওয়ার ব্যাপারে আগে থাকতে অনলাইন বুকিং-এর জন্য নীচের বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে এক বা একাধিক ব্যবহার করতে পারেন। [ FOR ONLINE BOOKING OF FOODS / FLIGHTS, TRAIN / RAILWAY RESERVATION, HOUSES ON RENT/ FLATS RENTAL / LODGES / RESORTS / HOMESTAYS / TENTS / HOTELS ROOMS IN ANY PLACE WITH DISCOUNT, CHEAP AIR TICKETS, BUS BOOKING, CAR HIRE ]:-
1. https://www.trivago.in
2. https://www.goibibo.com
3. https://www.makemytrip.com
4. https://www.yatra.com
5. https://www.cleartrip.com
6. https://www.tripadvisor.in
7. https://www.ixigo.com
8. https://www.zomato.com
2. https://www.goibibo.com
3. https://www.makemytrip.com
4. https://www.yatra.com
5. https://www.cleartrip.com
6. https://www.tripadvisor.in
7. https://www.ixigo.com
8. https://www.zomato.com
TOP PLACES TO VISIT OR MAJOR TOURIST ATTRACTIONS IN PUDUCHERRY / PONDICHERRY WITH PROPER TOUR PLAN ON MAIN TRAVEL DESTINATIONS AND OTHER NEAREST BEAUTIFUL SPOTS:-
শ্রী অরবিন্দ আশ্রম ( Sri Aurobindo Ashram ) - পুদুচেরির রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ২ কি. মি. দূরত্বের মধ্যে শহরের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ ঋষি অরবিন্দ ঘোষের এই আশ্রমটি অবস্থিত। এখানে প্রবেশের নির্ধারিত সময়সীমা হলো সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১২ টা আর দুপুর ২ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে ৩ বছরের ছোট শিশুদের প্রবেশ নিষেধ। ছবি তুলতে হলে আশ্রম কতৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। এবার এই সাধকের জীবন সম্পর্কে কিছু তথ্য জানাবো।
শ্রী অরবিন্দ ঘোষের জীবনী ( Biography of Sri Aurobindo Ghosh ) - এই মহান সাধক ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত বাংলার কলকাতা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৯০-এ উচ্চশিক্ষার্থে ইংল্যান্ডে যান। কেমব্রিজ থেকে ICS পাশ করে ১৮৯৩ সালে বরোদা স্টেটের চাকরি নিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বরোদা স্টেটের চাকরি ছেড়ে কলকাতা ফিরে স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। আলিপুর বোমা মামলায় অন্যতম আসামি হিসেবে তিনি কারারুদ্ধ হন। কিন্তু, উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তিনি ১৯০৯-এ কারাগার থেকে মুক্তি পান। জেলে থাকতেই তাঁর মানসিকতার আমূল পরিবর্তন আসে। ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথেই আধ্যাত্মিকতায় সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করার জন্য তিনি ১৯১০ সালের ৪ঠা এপ্রিল ফরাসি উপনিবেশ পন্ডিচেরীতে। এখানেই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। গড়ে তোলেন অধ্যাত্ম ও যোগশিক্ষা কেন্দ্র। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ২৪ শে নভেম্বর তিনি সাধনায় পূর্ণসিদ্ধি লাভ করেন। ১৯২০ সালে ফ্রান্সের এক মহিলা চিত্রশিল্পী তথা সঙ্গীতজ্ঞা মিসেস মীরা আলফাসা ( Mirra Alfassa ) আশ্রমিক হয়ে আসেন। পূর্ণ সিদ্ধিলাভের পর এই আশ্রমের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে The Mother অর্থাৎ শ্রীমায়ের উপর। এই অরবিন্দ আশ্রমের উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান, ভক্তি ও কর্মসাধনার মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলা। শরীর-মন গড়ে তোলার প্রধান মাধ্যম যোগ নিয়ে এখানে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক যোগ উৎসব ( International Yoga Festival ) অনুষ্ঠিত হচ্ছে পন্ডিচেরীতে। নারী পুরুষ মিলিয়ে হাজার দুয়েক আশ্রমিক নিয়ে এই শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৪০০-এর বেশি সংখ্যক বাড়িতে চলছে রোজের কর্মকাণ্ড। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ৫ ই ডিসেম্বর শ্রী অরবিন্দ দেহত্যাগ করেন। তিনি যে গৃহে বাস করতেন সেই গৃহপ্রাঙ্গনের সেবাবৃক্ষতলে তাঁর পবিত্র মরদেহ সমাধিস্থ করা হয়। আশ্রমিকদের রোজের জীবনযাত্রা শুরু হয় এই শ্বেতপাথরের সমাধি বেদিতে ( Sri Aurobindo Samadhi ) পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে। এখানে আসা পর্যটকেরাও এই বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। রিসেপশন কাউন্টার থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে অরবিন্দের সিদ্ধিলাভ করা পবিত্র কক্ষটি দর্শন করতে পারেন। এই স্থান দর্শনে এক অদ্ভুত সুন্দর উপলব্ধি হয়। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই নভেম্বর ৯৬ বছর বয়সে শ্রীমা দেহ রেখেছেন। তাঁর মরদেহকেও পূর্ব পরিকল্পনা মতো শ্রী অরবিন্দের সমাধির উপরে সমাধিস্থ করা হয়। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত সমাধির দরজা খোলা থাকে দর্শকদের জন্য। ৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রবেশ নিষেধ। বিপরীতে রয়েছে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ( Cultural Centre ), যেখানে ফিল্ম শো, খেলার জগৎ, শিক্ষামূলক ভাষণের নিয়মিত আসর বসে প্রতি সন্ধ্যায়। এখানে প্রবেশ অবাধ হলেও ভিজিটর পাস সঙ্গে থাকা ভালো। এছাড়া, ২১ শে ফেব্রুয়ারি ( শ্রীমায়ের জন্মদিন ); ৪ ঠা এপ্রিল ( শ্রী অরবিন্দের পুদুচেরি আগমন ); ২৪ শে এপ্রিল ( শ্রীমায়ের পন্ডিচেরী আগমন ); ১৫ ই আগস্ট ( শ্রী অরবিন্দের জন্মদিন ); ১৭ ই নভেম্বর ( শ্রীমায়ের তিরোধান ); ২০ শে নভেম্বর ( শ্রীমায়ের সমাধি ); ২৪ শে নভেম্বর ( শ্রী অরবিন্দের পূর্ণ সিদ্ধিলাভ ); ১লা ও ২রা ডিসেম্বর ( আশ্রম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ); ৫ ই ডিসেম্বর ( শ্রী অরবিন্দের তিরোধান ); ৯ ই ডিসেম্বর ( শ্রী অরবিন্দের সমাধি ) - এই বিশেষ দিনগুলোতে সমস্ত পন্ডিচেরী উৎসবে মেতে ওঠে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তের দল এখানে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন।
পুদুচেরি সমুদ্র সৈকত ( Puducherry Sea Beach ) - শহরের পূর্বে বঙ্গোপসাগরের তীরে রয়েছে শান্ত, স্নিগ্ধ ও সুন্দর সৈকত। এর গা দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত আছে Beach Road বা Goubert Avenue. মোট ১.৫ কি. মি. দীর্ঘ এই রাস্তার উত্তরে আছে শ্রীমায়ের স্মৃতিধন্য টেনিস কোর্ট এবং দক্ষিণে আছে পার্ক গেস্ট হাউস। এই বীচ রোডের গায়ে রয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত বীর সৈনিকদের স্মরণে War Memorial. ১৪ ফুট উঁচু গান্ধী মূর্তিকে ঘিরে রেখেছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের স্মারকরূপে গড়া ৮ টি মনোলিথ স্তম্ভ। গান্ধী স্কোয়ারের এই Mahatma Gandhi Statue এই জায়গার মর্য্যাদাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জওহরলাল নেহেরুর স্ট্যাচু। পাশের ২৯ মিটার উঁচু লাইট হাউসটিও দেখার মতো। আর রয়েছে পন্ডিচেরী আকাশবাণী ভবন। সামান্য এগিয়েই পৌঁছে যাবেন সমুদ্রবক্ষে বসানো নতুন জেটি। ২৮৪ মিটার লম্বা বাঁধানো এই জেটিতে সানবাথ ও সমুদ্র স্নান করা যায়। মার্চ-এপ্রিল মাসে আসলে এখানকার সমুদ্রে ডলফিনও দেখতে পাবেন। তাই পর্যটকদের কাছে এই সৈকতের একটা আলাদা আকর্ষণ আছে।
প্রাচীনতম সড়ক Rue Dumas Road-এ ফরাসিদের প্রথম বসতি স্থাপিত হয়। এই রাস্তাতেই রয়েছে Hotel The Pondicherry বিখ্যাত হোটেলটি। প্রাচীন Hotel De Ville-তে শহরের মিউনিসিপ্যাল অফিস হয়েছে। এই এলাকাটি এখন গভর্নর প্লেস নামে সুবিখ্যাত। এখানে একটি সুন্দর ফোয়ারা রয়েছে। পুরো অঞ্চলে এখনও বেশ ভালো রকম ফরাসি ধাঁচ পাওয়া যায়। জিঞ্জি থেকে আনা অনেক ভাস্কর্য রয়েছে ফোয়ারাটিকে ঘিরে। এর উত্তরে আছে ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত রম্যাঁ রল্যাঁ লাইব্রেরি ( Romand Rolland Library )। পাশের Hotel De La Compagnie-তে ১৭৭০ পর্যন্ত ছিল রাজ নিবাস ( Raj Nivas ) অর্থাৎ গভর্নর হাউস। পশ্চিমে রয়েছে অরবিন্দ আশ্রমের Dining Room, Puducherry Head Post Office, ফরাসি সংস্কৃতির নানা স্মারক, পহ্লব-চোল-বিজয়নগর-রোমান সেটেলমেন্টের নানা সামগ্রী নিয়ে তৈরি হয়েছে মিউজিয়াম ( Puducherry Museum ), পাবলিক গার্ডেনে জোয়ান অফ আর্কের মূর্তি। সাগরপারে Goubert Avenue-তে রয়েছে Puducherry Tourism Development Corporation-এর অফিস। St. Louis Street-এ রয়েছে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে গড়ে তোলা ভারতীয় গবেষণা কেন্দ্র French Institute of Puducherry Research Centre. এখানকার রেস্টুরেন্টে ফরাসি খাবারেরও স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন। আর রয়েছে ফ্রেঞ্চ লাইব্রেরি, আর্ট গ্যালারি। বীচ রোডের গায়ে রয়েছে জওহরলাল টয় মিউজিয়াম ( Jawaharlal Toy Museum ), বাসস্ট্যান্ডের কাছে ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে ১৫০০ প্রজাতির গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে বটানিক্যাল গার্ডেন ( Botanical Garden ), মাছের অ্যাকোয়ারিয়াম, উসটেরী লেক, অডিটোরিয়াম, আশ্রমের বিভিন্ন দপ্তরও পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য।
এমনিতেই দক্ষিণ ভারতকে মন্দিরের দেশ বলা হয়। এই শহরও তার ব্যতিক্রম নয়। ৩৫০-এরও বেশি মন্দির রয়েছে সমগ্র পুদুচেরিতে। এর মধ্যে ৭৫ টিই বিনায়ক অর্থাৎ কার্তিকের মন্দির। মানাকুলা বিনায়ক মন্দিরে ( Manakula Vinayak Temple ) প্রতি শুক্রবার পূজা হয়। ১৯ শতকে নির্মিত ভাস্কর্য মন্ডিত এই মন্দিরে কার্তিক ছাড়াও লক্ষ্মী, গণেশ রয়েছে। শুভকামনায় সবাই প্রার্থনা করেন এখানে।
শহর থেকে ২৫ কি. মি. দূরে আছে ১০ম শতকে নির্মিত বাহুর মন্দির। এই মন্দিরে গ্রানাইট পাথরের মূর্তিতে ভারতনাট্যম নৃত্যের মুদ্রাগুলি যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ১২ শতকে নির্মিত ভিলিয়ানুর মন্দিরের আরাধ্য দেবতা হলেন তিরুকামেশ্বর শিব। গ্রানাইট পাথরের এই মন্দিরের সিলিং কারুকার্যময়। রথযাত্রার সময়ে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে তীর্থযাত্রীরা আসেন। Easwram Koil Street-এর ভেদাপুরেশ্বর গণেশ মন্দিরটিও উল্লেখযোগ্য। ভিলুপ্পুরমের পথে ১৩ কি. মি. দূরের ভিলিয়ান্নুর মন্দির ও চার্চ বেড়িয়ে আরও ১০ কিলোমিটার দূরের তিরুভান্ডার মন্দিরটিও দেখে ঐ একই দিনে ফেরা যায়। এখানকার উপাস্য দেবতা হলেন শিব। পন্ডিচেরী থেকে ১৬ কি. মি. দূরে সুন্দর মনোরম পরিবেশের ব্যাকওয়াটারে সামান্য অর্থের বিনিময়ে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত বোটিং করতে পারবেন। শহরকে ঘিরে বেশ কয়েকটি প্রাচীন সুন্দর চার্চও ( Beautiful Old Churches in Puducherry ) রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ১৬৯১-এর Jesuit Cathedral, ১৭০০ খ্রিস্টাব্দের Sacred Heart of Jesus, ১৮৫৫-এর Our Lady of Angels এবং Eglise De Sacre Coeur De Jesus ইত্যাদি। একটি বিখ্যাত মসজিদও রয়েছে, যার নাম Jamia Mosque.
শ্রী অরবিন্দ আন্তর্জাতিক শিক্ষাকেন্দ্র ( Sri Aurobindo International Centre Of Education ) - অরবিন্দের দেহত্যাগের পর তাঁরই প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শ্রীমায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ৬ই জানুয়ারিতে একটি উন্নতমানের আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ( University ) রূপান্তরিত হয়। দেশ-বিদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে পড়াশোনা করতে আসে।
অরোভিল ( Auroville City ) - অরোভিল শব্দটির অর্থ হল অরবিন্দ নগরী। শ্রীমায়ের আশীর্বাদপুষ্ট শ্রীঅরবিন্দ সোসাইটি দ্বারা রূপায়িত স্বপ্নের নগরী হলো এই Auroville অর্থাৎ City of Dawn. ইউনেস্কোর আর্থিক সাহায্যে, সমগ্র ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায়, পৃথিবীর ১২৬ টি দেশের সহযোগিতায় তামিলনাড়ু-পুদুচেরি সীমান্তে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মানের এই শহরটি নির্মিত। দক্ষিণ আর্কট জেলায় ১৯৬৮ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে ১২৪ টি দেশের প্রতিনিধিদের দ্বারা আনীত সেইসব দেশের মাটি দিয়ে এই শহরের যাত্রাপথের সূচনা হয়। এই নতুন শহর গড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় ফরাসি স্থপতি রগার অঙ্গারের হাতে। শ্রীঅরবিন্দের মূল আশ্রম থেকে ১০ কি. মি. উত্তর-পশ্চিমে পুদুচেরি-চেন্নাই সড়কের উপর ৫০ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে ৫০ হাজার বাড়ি নিয়ে ৪ টি এলাকায় বিভক্ত অরোভিল। এখানকার মূল লক্ষ্যই হলো প্রকৃত মানুষ তৈরি করা। "ব্যক্তিগত মালিকানা" শব্দটির কোন অস্তিত্ব নেই এখানে। এই জায়গাটি হলো আন্তর্জাতিক মানব ঐক্যের এক জীবন্ত উদাহরণ। রোজগারের মূল উৎস সমাজতান্ত্রিক প্রথায় কৃষি, শিক্ষা, উন্নয়নমূলক প্রজেক্ট, কম্পিউটার, হ্যান্ডিক্রাফটস, টেকনোলজি ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে। ঘরবাড়ির নামকরণেও অভিনবত্ব রয়েছে যেমন, Sincerity, Shanti, Horizon, Gratitude, Fertile - এরকম আরও যে কত তার কোন ইয়ত্তা নেই। প্রতিটি কমিউনে অতিথিদের জন্য Guest House রয়েছে। খাওয়া-থাকার যথেষ্ট ভালো বন্দোবস্ত রয়েছে।
এখানকার মূল আকর্ষণ ৩০ মিটার উঁচু গ্লোবের আকারের মাতৃমন্দির ( Matrimandir )। সিঁড়ি বেয়ে বৃত্তাকার মেডিটেশন হলে পৌঁছতে হয়। ২ টি কাঁচে সূর্যকিরণ প্রতিফলিত হয়ে জার্মানি থেকে আনা বিশ্বের বৃহত্তম ৬০০ কে. জি.-র ক্রিস্টালে বিচ্ছুরিত আলোয় আলোকিত হয় বিদ্যুৎহীন মাতৃমন্দির। এখানেই ধ্যানে বসেন ভক্তের দল। এখানে আসার জন্য টিকিট না লাগলেও আগাম অনুমতি নিতে হয়।
Sri Aurobindo Ashram Autocare প্রতিদিন ২.৩০ টায় Cottage Complex থেকে ২৫ জন যাত্রী নিয়ে অরোভিল দর্শনে যাচ্ছে। ৮ টা থেকে ৮-৪৫ ঘটিকার মধ্যে আশ্রম গেটে বুকিং করা যায়। এককভাবে দর্শনে গেলে মাতৃমন্দির রিসেপশন থেকে অনুমতি নিতে হয়। এর গায়েই রয়েছে অ্যাম্পিথিয়েটার অডিটোরিয়াম। ৩০০০ শ্রোতা এখানে মাইক ছাড়াই ভাষণ শুনতে পারে। ভারত নিবাস প্যাভিলিয়নে ( Bharat Nivas Pavilion ) ভারতীয় সংস্কৃতির আসর বসে। এখানকার গ্রন্থাগারে ( Library ) গবেষণা চলছে ভারতীয়দের ভাষার উপরে। অরোভিলের ইনফরমেশন তথা রিসেপশন সেন্টার বসেছে ভারত নিবাসে।
শহর থেকে ১০ কি. মি. দূরে ছুন্নাম্বার নদী ও সাগরের জলে তৈরি ব্যাকওয়াটারে ওয়াটার স্পোর্টস কমপ্লেক্স ছুন্নাম্বার বোট হাউসে এসে ( Chunnambar Boat House, Chunnambar River ) রকমারি বোটে জলে ভেসে বেড়ান। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৫ টা পর্যন্ত বোটিং করা যায়। নির্জন নিরালা গাছপালায় ছাওয়া ব্যাকওয়াটারের পাড়ে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে পারেন। খাবার পাবেন রেস্তোরাঁ ও বোট হাউসের ক্যান্টিনে। আগে থেকে পুদুচেরি পর্যটন দপ্তর থেকে অনলাইন বুকিং করে আসতে হবে। শীতকালে আসলে প্রচুর পরিযায়ী পাখি ( Migratory Birds ) ব্যাকওয়াটারের জলে ভেসে বেড়াতে দেখতে পাবেন।
কনডাকটেড ট্যুর প্রোগ্রাম ( Conducted Tour Programmes Arranged By Pondicherry Tourism Dept. ) - [ Director of Tourism, Government of Puducherry, 40 Goubert Avenue / Beach Road, 605001, Tel. - 0413 2339497, Fax - 3258389 ] - পর্যটন দপ্তরের এই ঠিকানা থেকে সকাল সাড়ে নয়টা হতে বিকেল পাঁচটার মধ্যে নামমাত্র কিছু টাকার বিনিময়ে পুডুচেরী ও অরোভিল দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। ছুন্নাবার নদীর বোট হাউসে নানারকম বোটিং-এর সাথে হাইড্রোপ্লেন, কায়াকিং-এরও ব্যবস্থা করেন এনারা। রবিবার ছাড়া প্রতিদিন আশ্রমের গাড়ি সমাধি মন্দিরের সামনে থেকে সকাল ৮টা বেজে ৪৫ মিনিট নাগাদ ছেড়ে তিন ঘন্টার কনডাকটেড ট্যুরে আশ্রমের বিভিন্ন দপ্তর ও অরোভিল শহর পর্যটকদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসেন। পর্যটন দপ্তর থেকে গাড়িও ভাড়ায় পেয়ে যাবেন। এছাড়াও এখান থেকে বেশ কয়েকটি ট্যুর প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জ করা হয়। যেমন,- প্রতি মাসের প্রথম শনিবার ৮ দিনের প্যাকেজে ব্যাঙ্গালোর অথবা গোয়া ভ্রমণ, প্রতি শুক্রবার কন্যাকুমারী ট্যুর, দ্বিতীয় ও চতুর্থ শনিবার ৭ দিনের দক্ষিণ ভারত সফর, তৃতীয় শনিবার ৮ দিনের কেরালা ও তামিলনাড়ু ট্যুর করানো হয় পুদুচেরি থেকে।
খাবারের সেরা জায়গা ( Best Places For Foods ) - এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রচুর খাবারের হোটেল রয়েছে। কিন্তু, এরমধ্যে বেশ কয়েকটি নিজগুণে খ্যাতি লাভ করেছে। যেমন, অ্যারিস্টো হোটেলে আগে থেকে অর্ডার দিয়ে দুশোরও বেশি রকমের সুস্বাদু খাবার পাবেন। ব্লিস, আশির্বাদ ও আশ্রমের ডাইনিং হলের খাবারও যথেষ্ট ভালো। টিফিনের জন্য বিখ্যাত জওহরলাল নেহেরু রোডের Indian Coffee House. এই রাস্তাতেই রয়েছে নিরামিষ খাদ্যের জন্য Priya Restaurant. Aristo Hotel-এর সুখ্যাতি তামিলীয় বিরিয়ানির জন্য। চাইনিজ ফুডের জন্য কয়েকটি জায়গার নাম না করলেই নয়। যেমন,- পার্ক গেস্ট হাউসের কাছের Blue Dragon Chinese Restaurant, রাজভবনের কাছে আছে Penguin, সাফরেন স্ট্রিটের China Town Restaurant. ফরাসি খাবারের স্বাদ নিতে হলে যেতে হবে Sea Side Snacks Bar-এ। খাঁটি বাঙালি খাবার খেতে হলে চলে যান সমাধি মন্দিরের পথের বিপরীতের বাঙালি রেস্টুরেন্ট আহার-এ ( Aahar Bengali Restaurant )।
আপনার কেনাকাটা ( What are The Things You Should Buy ( Marketing ) While Traveling in Puducherry and Auroville?
পুদুচেরি ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সিল্ক কাপড়ের উপরে অভিনব পদ্ধতিতে ছাপা মার্বেল প্রিন্ট, বোম্মাই বা পুতুল, আশ্রমে তৈরি করা ধূপকাঠি, রুমাল, আশ্রমের বিক্রয় কেন্দ্র থেকে শ্রীঅরবিন্দ ও শ্রীমায়ের লেখা অমূল্য গ্রন্থ, পত্র-পত্রিকা, অরোভিলের Boutique d' Auroville কাউন্টার থেকে স্থানীয় মানুষের তৈরি বিভিন্ন হস্তজাত সামগ্রী ( Crafts and Handlooms ) কিনে নিয়ে যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন? Where to Stay?
পন্ডিচেরী শহর জুড়ে অসংখ্য হোটেল, লজ, গেস্ট হাউস ও রিসর্ট রয়েছে। খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্টও আছে যথেষ্ট পরিমাণে। অরবিন্দ আশ্রমে স্বল্প সময় থাকার জন্য বেশ কয়েকটি অতিথিশালা বা গেস্ট হাউস আছে। আশ্রমের ডাইনিং হলে অল্প টাকার বিনিময়ে ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার অবধি সব সময়ের নিরামিষ খাবার পেয়ে যাবেন। অরোভিল নগরীতে ৩৩ টি গেস্ট হাউস আছে। এইসব জায়গায় বা অরবিন্দ আশ্রমে থাকতে হলে আগে থাকতে উপরিউক্ত Director of Tourism-এর Address-এ যোগাযোগ করে বুকিং করে আসবেন। আশ্রমের দেওয়া Visitor Pass সবসময় সঙ্গে রাখবেন। ৩ ঘরের রিটায়ারিং রুম রয়েছে পুদুচেরি রেল স্টেশনে। সেখানেও থাকতে পারেন।
কিভাবে যাবেন? How to Reach / Go?
পুদুচেরিতে একটি রেলস্টেশন ও দুটি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। কলকাতা থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনে করে সরাসরি পৌঁছতে পারেন। আবার ভায়া চেন্নাই হয়েও যেতে পারেন। এরোপ্লেনে করে যেতে হলে প্রথমে চেন্নাই এয়ারপোর্টে নামবেন। তারপর ভাড়ার গাড়ি বা বাসে করে সোজা পন্ডিচেরী এক্সপ্রেস বাসস্ট্যান্ডে নামুন। এখানকার দুটি বাসস্ট্যান্ডের মধ্যে একটি হলো এক্সপ্রেস বাসস্ট্যান্ড। এখান থেকে দক্ষিণ ভারতের যেকোন প্রান্তে যাওয়ার দূরপাল্লার বাস ছাড়ে। আর একটি থেকে মফস্বলের বাসস্ট্যান্ড। এইটি থেকে মফস্বলের স্বল্প দূরত্বের স্থানগুলোতে যাতায়াতের বাস ছাড়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please, Don't Spam.
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷