সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৯

[ Andaman Nicobar Islands Tourism Informations ]

PAST HISTORY & SOME VALUABLE INFORMATIONS ABOUT  ANDAMAN AND NICOBAR ISLAND:-

                বঙ্গোপসাগরের ( Bay of Bengal ) বুকে ৫৭২ টি ছোট-বড়ো-মাঝারি দ্বীপ নিয়ে এই বিশ্ববিখ্যাত দ্বীপপুঞ্জ গঠিত। মহাকাশ থেকে এই সমস্ত দ্বীপ সমূহের বিস্তার দেখতে লাগে অনেকটা ধনুকের মতো। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে আমাদের দেশের দেবতুল্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইংরেজ শাসকেরা এই নির্জন ভয়ঙ্কর দ্বীপে নির্বাসনে পাঠাতো অথবা সেলুলার জেলে বন্দী করে রাখতো। সেদিনের সেই দ্বীপমালা আজ ভারত তথা বিশ্বের সমস্ত ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের এক পর্যটনস্থল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে তার অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও রহস্যময়তার জন্য। আগে যাতায়াত যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ও বিপদসঙ্কুল ছিল। কিন্তু, এখন আধুনিক ও জাহাজের দৌলতে অনেক কম সময়ে এবং কম খরচে এখানে পৌঁছনো যায়। আন্দামান ভ্রমণের অনুমতি সহজে মিললেও আদিবাসী অধ্যুষিত দ্বীপগুলিতে ভ্রমণ করতে হলে ভারত সরকারের বিশেষ অনুমতি বা RAP Permission লাগে।

HOW TO GET RAP ( ONLY FOR FOREIGNERS EASILY?

           এই  Permit পাওয়া যায় নিম্নলিখিত ঠিকানাগুলির (  Office Addresses ) যে কোন একটি থেকে:-
Deputy Secretary, Govt. of India, Ministry of Home Affairs, North Block, New Delhi - 1 বিদেশে আপনার কাছাকাছির কোন ভারতীয় দূতাবাস ( Indian Embassy ) থেকে। আর Port Blair পৌঁছে সেখানকার Immigration Office থেকে 30 Days Permit করে Deputy Superintendent of Police - এর অফিসে নাম নথিভুক্ত করাতে হয়। আবার, Foreigners Registration Offices of Kolkata, Delhi, Chennai and Mumbai - থেকেও আন্দামানের Port Blair, Havelock, Long Island, Neil Island, Mayabunder, Diglipur, Rangat - এ ঘোরার অনুমতি মেলে। দিনে দিনে সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে Jolly Buoy, South Cinque, Red Skin, Madhuban, Ross, Wandoor, Chindya Tappu - এই স্থানগুলিতে ঘোরার অনুমোদন মেলে বিদেশী পর্যটকদের।

             এই Union Territory - র রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ার ( Capital City is Port Blair )। মোট এলাকা ( Total Area ) বা আয়তন হ'ল ৬৪০৮ বর্গকিলোমিটার অর্থাৎ ২৪৭৪ বর্গ মাইল। মোট জনসংখ্যা ( Total Population ) ৩৪৩১২০ জন। জনঘনত্ব ( Population Density ) বা প্রতি বর্গ কিমিতে বাস করেন ৪৮ জন। প্রতি ১০০০ পুরুষে নারী আছেন ৮৭৮ জন ( Sex Ratio of Male & Female )। সাক্ষরতার হার ( Percentage of Literacy ) ৮৭%। মাথাপিছু বার্ষিক আয় ( Per Head / Per Capita Annual Income ) ১৫৯৬৬৫ টাকা।

            গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপসমূহ ( Major Islands ) হ'ল - North Andaman Island, Little Andaman, Middle Andaman, South Andaman. উচ্চতম স্থান ( Highest Point ) হ'ল সাডেল চূড়া ( Saddle Peak )। বিভিন্ন আদিম উপজাতির মানুষ এই দ্বীপগুলিতে বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই এখনো আদিম যুগের মানুষদের মতো জীবনযাপন করেন। এদের মধ্যে কয়েকটি সম্প্রদায় হলো ( Tribal Groups ) Bamar, Shompen, Mainland Indians, Jarawa, Onge, Sentinelese, Great Andamanese ইত্যাদি।

Official Website হলো -
http://www.and.nic.in

Tourism Related Government Portal -
https://www.andamantourism.gov.in

              প্রধান ভাষাসমূহ ( Main Languages ) - আন্দামানিজ, বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, নিকোবরিজ, তেলুগু, তামিল, মালয়ালম।

AVERAGE WEATHER OR CLIMATE. WHEN SHOULD YOU GO THERE? / BEST TIME TO VISIT OR TRAVEL THIS STATE:-

       নিরক্ষীয় জলবায়ুর ( Tropical Climate / Weather ) দেশ এটি। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এই স্থানগুলি ভ্রমণ করা উচিত। মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে অত্যাধিক গরম পড়ে। শীতের প্রভাব সেরকম দেখা যায় না এখানে। বাতাসের গড় আদ্রতা ৮০%। বছরে দুই বার বর্ষাকাল হয়। তবে বছরের অন্যান্য সময়েও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হয় এই স্থানগুলিতে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতটাই মনোমুগ্ধকর যে ৩০ দিনের জন্য ঘুরতে আসলেও শেষের দিকে মনে হবে আরও ৬০ দিন সময় নিয়ে এখানে থাকলে ভালো হতো।

ALL TOTAL LIST OF 12 VERY BIG, MOST POPULAR OR FAMOUS LOCAL FAIRS & MAJOR FESTIVALS:-

(1) Durga Puja, (2) Kali Pooja, (3) Island Tourism Festival, (4) Diwali / Deepavali, (5) Shiva Ratri, (6) Ganesh Chaturthi Puja, (7) Gurunanak Jayanti, (8) Holi, (9) Christmas, (10) Ramjan, (11) Eid Ul Fitr, (12) Beach Festival.

এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের যেকোন জায়গায় যাওয়া আসা, থাকা খাওয়ার ব্যাপারে আগে থাকতে অনলাইন বুকিং-এর জন্য নীচের বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে এক বা একাধিক ব্যবহার করতে পারেন। [ FOR ONLINE BOOKING OF FOODS / FLIGHTS, TRAIN / RAILWAY RESERVATION, HOUSES ON RENT/ FLATS RENTAL / LODGES / RESORTS / HOMESTAYS / TENTS / HOTELS ROOMS IN ANY PLACE WITH DISCOUNT, CHEAP AIR TICKETS, BUS BOOKING, CAR HIRE ]:-
1. https://www.trivago.in
2. https://www.goibibo.com
3. https://www.makemytrip.com
4. https://www.yatra.com
5. https://www.cleartrip.com
6. https://www.tripadvisor.in
7. https://www.ixigo.com
8. https://www.zomato.com

TOP PLACES TO VISIT OR MAJOR TOURIST ATTRACTIONS IN ANDAMAN AND NICOBAR ISLANDS WITH PROPER TOUR PLAN ON MAIN TRAVEL DESTINATIONS AND OTHER NEAREST BEAUTIFUL SPOTS :-

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রধান বন্দর শহর পোর্ট ব্লেয়ার ( Port Blair ) থেকে কলকাতার ( Kolkata) দূরত্ব ১৩০২ কি. মি., বিশাখাপত্তনম ( Visakhapatnam ) থেকে ১২২৪ কি. মি., চেন্নাই ( Chennai ) থেকে ১৩৬২ কি. মি., ইয়াঙ্গুনের ( Yangon ) দূরত্ব ৬৮৮ কি. মি., দিল্লি ( Delhi ) থেকে ২৪৯৬ কিলোমিটার। চারিদিকে সমুদ্র বেষ্টিত এই ভূভাগে জাহাজ ও বিমানের মাধ্যমে পৌঁছনো যায়। আকাশপথে গেটওয়ে হলো বীর সাভারকর বিমানবন্দর ( Veer Savarkar International Airport )। জলযান বন্দরের নাম হার্ডো হার্ফ জাহাজ বন্দর ( Haddo Wharf Ship Yard )। জাহাজে ৩ - ৯ বছরের শিশুদের অর্ধেক ভাড়া লাগে। অতিরিক্ত লাগেজের জন্য বেশি মাশুল লাগে। ভেজ ও ননভেজ দুইরকম খাবারের ব্যবস্থা  আছে। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ভাড়ার বিভিন্ন শ্রেণীর নানারকম সুবিধার হেরফেরে আপনি আপনার পছন্দসই শ্রেণীতে যাতায়াত করতে পারবেন। 

কলকাতা, দিল্লি ও চেন্নাই থেকে রোজ বিমান যাচ্ছে পোর্ট ব্লেয়ারে। বিমানবন্দর থেকে মূল শহরের দূরত্ব ৫ কি. মি.। তবে, ব্যস্ততা না থাকলে সি সিকনেস বাদ দিলে জলপথে অর্থাৎ জাহাজে করে আন্দামান যাওয়া অনেক বেশি আনন্দদায়ক। চলার পথে উড়ুক্কু মাছের সাথে ডলফিনের লাফালাফি, তিমি, হাঙর ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর সাক্ষাৎ, শুশুকের ঝাঁক, জলের রঙবদল, এছাড়া, পূর্ণিমা রাতের সমুদ্রের সৌন্দর্যের কোন তুলনাই হয় না। 

শহরে চলছে অটো, ট্যাক্সি ও সিটিবাস। এতে চেপেই শহরের দ্রষ্টব্য স্থানগুলি ঘুরে দেখতে পারবেন। মিটারের চল নেই, অটো ও ট্যাক্সি চুক্তিতে যেতে রাজি হয়। বাস, অটো ও ট্যাক্সি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভাড়ায় চলে। সাইকেল, মোপেড ও বাইক ভাড়া করে পোর্ট ব্লেয়ার ঘুরে দেখতে পারেন। আর দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ ইত্যাদি ফেরি সার্ভিস। এইভাবে আপনি Nicobar, Cholunga, Onge, Little Andamans, Rangat, Mayabunder, Diglipur, Yerewa ইত্যাদি স্থানগুলিতে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে ফেরি জাহাজ যাচ্ছে। এইসমস্ত Ferry Service / Ship বুকিং-এর জন্য যোগাযোগ করুন এই ঠিকানায় - Harbour Master / The Directorate of Shipping Services, Port Blair, Tel - 232528 / 234299. তাছাড়া, ভারতের এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারি পর্যটন দপ্তরও নানা মূল্যের ও আকর্ষণের প্যাকেজ ট্যুরে দ্বীপসমূহ ভ্রমণে নিয়ে যাচ্ছে। এদের মাধ্যমেও সরকারি অনুমতি আছে এরকম বেশকিছু সুন্দর দ্বীপ ঘুরে দেখে আসতে পারেন। এনাদের আদর-যত্ন অনেকদিন আপনার মনে গেঁথে থাকবে। 

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোনরকম তথ্য ও জাহাজ বুকিং-এর জন্য কলকাতায় যোগাযোগ করুন - দি শিপিং করপোরেশন অফ্ ইন্ডিয়া লিমিটেড, শিপিং হাউস, ১৩ স্ট্র্যান্ড রোড, কলকাতা - ৭০০০০১, Dial For Ship Booking - 22484921/2354/3510. চেন্নাইয়ের ঠিকানা হলো - The Shipping Corporation of India Limited, Jawahar Building, 6, Rajaji Salai, Chennai - 600001. Telephone - (044) 25231401/25220841/6873. ফেরার সময় Contact Here :- The Shipping Corpn. of India Ltd., Aberdeen Bazar, Port Blair - 744101. Tel. - (03192) 233347/590. অথবা The Harbour Master, Andaman and Nicobar Administration, Port Blair -এর সাথে। 

আগের প্যাসেজ বুকিং প্রথার পুরোপুরি বদল ঘটেছে। সরকারি কর্মচারী ও দ্বীপবাসীদের জন্য ৭০% নির্ধারিত। বাদবাকি ৩০% খবরের কাগজ বা রেডিওতে দেওয়া বিজ্ঞাপনের হিসেবে যাত্রার মাত্র ৪-৫ দিন আগে দি শিপিং করপোরেশন অফ্ ইন্ডিয়ার ( প্যাসেজ ডিপার্টমেন্ট ) কলকাতা বা চেন্নাই অফিসে গিয়ে বাঙ্ক ও কেবিন ক্লাসের টিকিটের জন্য নির্ধারিত ফর্মে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন। যাত্রার দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ফেরার জন্য রিটার্ন টিকিটও পেয়ে যাবেন এই দপ্তর থেকে। পরে উল্লিখিত দিল্লির ঠিকানা থেকেও এই আবেদনপত্র পেয়ে যাবেন। ঠিকানাটি হলো - Resident Commissioner, Andaman and Nicobar Administration, 12 Chanakyapuri, New Delhi - 110021, Dial - (011) 26878120. সরকারি কাজে বা ভি. আই. পি. সফরে যাওয়ার অন্ততঃ ৫ দিন আগেই টিকিটের জন্য যোগাযোগ করুন - Chief Liaison Officer, A & N Administration, 3A, Auckland Place, 2nd Floor, Kolkata - 700017 - এই ঠিকানায়। কর্মরত সরকারি কর্মীদের আইডেনটিটি কার্ডই ভ্রমণের অনুমতির পরিচয়পত্র হিসেবে কাজ করবে। ছাত্ররা জাহাজের ভাড়ায় ৫০% ছাড় ( Available 50% Student Rebate on Shipping Fare ) পেয়ে যাবেন। 

বাস স্ট্যান্ডের ( Central Bus Terminal ) পাশে রয়েছে ফিনিক্স বে ( Phoenix Bay ) অঞ্চল। ডানহাতি বাজার ছাড়িয়ে জিমখানা গ্রাউন্ড হয়ে জি বি পন্থ রোডের শেষ হয়েছে অ্যাবারডিন জেটি ও সেলুলার জেলে। এই জেটির দক্ষিণে অবস্থিত ফিশারিজ মিউজিয়াম, মেরিন পার্ক। আর বামদিকে পাহাড়ের উপর রয়েছে হাড্ডো। হাড্ডো যাওয়ার পথেই পরপর পেয়ে যাবেন অ্যানথ্রোপলজিক্যাল মিউজিয়াম, মিনি জ্যুলজিক্যাল পার্ক, ফরেস্ট মিউজিয়াম। শহরের প্রাণকেন্দ্র মিডল্ পয়েন্টে রয়েছে জ্যুলজিক্যাল মিউজিয়াম, কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ, খাদি গ্রামোদ্যোগ ভবন। এর কিছুটা দূরে আছে ডিলথামান ট্যাঙ্ক। শহরের একদম দক্ষিণে অবস্থিত করবাইনস কোভ সাগর সৈকত ( Corbyns Cove Sea Beach )। শহরের উত্তরে সাগরের উপরের সেতু পেরিয়ে পৌঁছে যান চাথাম দ্বীপে। 

অ্যাবারডিন বাজার, জেটি থেকে সূর্যোদয় দর্শন, মেরিন হিল থেকে সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা, বাম্বু ফ্ল্যাট, রাইট মাও, উইমকো দেশলাই ফ্যাক্টরি, বটানিক্যাল গার্ডেন, ফুচি চাঙ বৌদ্ধ মঠ, টাওয়ার ক্লক, কালীবাড়ি, শাদিপুর, বঙ্গাচঙ্গে সরকারি কয়ার ইন্ডাস্ট্রি, রামকৃষ্ণ মন্দির, মুরুগাঁও মন্দির, রাধাকৃষ্ণ মন্দির আপনার অবশ্যই দেখে নেওয়া উচিত হবে। ঠিক তেমনই উচিত হবে ফাইবার গ্লাস লাগানো নৌকায় জলিবয়, রেডস্কিন ও সিঙ্ক বা ডুবন্ত দ্বীপের অগভীর স্বচ্ছ জলে রঙবেরঙের প্রবাল, মাছ, নানাপ্রকার সামুদ্রিক প্রাণী দেখে নেওয়া। এই বন্দরশহরের নতুন পর্যটন আকর্ষণ হলো প্রতি ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া ১০ দিনব্যাপী পর্যটন মেলা উৎসব ( Tourism Fair Festival in Port Blair )। 

সারা আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর সমুদ্র সৈকত। বিশেষ করে কালীঘাট, লিটল আন্দামান, কাছাল, মালাক্কা সমুদ্রসৈকতের কোন তুলনা হয় না। কামোটার জেটিতে বসে স্বচ্ছ জলে হাজারো রকমের রঙিন মাছের জলক্রীড়া, মনোমুগ্ধকর প্রবাল, জলজ উদ্ভিদ দেখতে দেখতে আপনি বিভোর হয়ে পড়বেন। ফিনিক্স বে থেকে বোটে ( সপ্তাহে তিনদিন ছাড়ে ) কমবেশি ৮০ কিলোমিটার দূরের লালাজি উপসাগরের লং আইল্যান্ড সমুদ্র সৈকত ( Long Island Sea Beach, Lalaji Bay ) একবার ঘুরে আসা ঠিক হবে। একদিকে রুপোলি বালুকাবেলা আর অন্যদিকে আরণ্যক পরিবেশ নিয়ে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা এই স্থান এককথায় অনবদ্য। একটি প্লাইউড কারখানাকে ঘিরে মনুষ্য বসতি বা উপনিবেশ গড়ে উঠেছে। পর্যটকদের থাকার জন্য এখানে একটি অতিথিশালা বা গেস্ট হাউসও তৈরি হয়েছে।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সদর দপ্তর হলো চারিপাশে বঙ্গোপসাগরের কালচে নীল জলে ঘেরা, সবুজ অরণ্যে ছাওয়া উঁচুনিচু পাহাড়ি শহর পোর্ট ব্লেয়ার। কাঠের তৈরি বাংলো ঘরবাড়ি, বোগেনভিলিয়া দিয়ে সাজানো গেট যেন অতিথিদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। জাহাজ যাচ্ছে-আসছে, বিমান নামছে-উঠছে, বাস চলছে, অটো ও ট্যাক্সিও যথেষ্ট রয়েছে শহরের রাস্তায়। বেশিরভাগ পর্যটকদের যেন মনভোমরা হয়েছে অ্যাবারডিন বাজার এলাকা। কারণ, প্রচুর হোটেল, দোকান, শপিং মল, বাস স্ট্যান্ড, যাত্রী ডক, শিপিং কর্পোরেশন অফ্ ইন্ডিয়ার অফিস ইত্যাদি সবকিছুরই অবস্থান এই বাজার এলাকায়। 

বিমানবন্দর যেতে দক্ষিণমুখী VIP Road - এ রয়েছে Tourist Office of India Govt. জেটি থেকে শহরের দিকে দেড় কি. মি. যেতে Andaman and Nicobar Islands Administration and Secretariat Office পেয়ে যাবেন। শহরের বেশীরভাগ স্থায়ী বাসিন্দাই এসেছেন ভারতের মূল ভূখণ্ডের নানা প্রান্ত থেকে। বর্তমানে কলকাতা, চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম থেকে বিমান ও জলপথে যথেষ্ট ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে এই দ্বীপভূমির।

সেলুলার জেল ( Cellular Jail ) - কুখ্যাত এই কারাগারের প্রতিষ্ঠা করেন জেনারেল ক্যাদাল ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে। স্বাধীনতার পূর্বে এখানে রাজবন্দীদের অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বন্দী রাখা হতো। খাড়া পাহাড় গিয়ে সোজা সাগরে মিলেছে। প্রথম দিকে তিনতলা এই জেলে ৭ টি শাখায় মোট সারিবদ্ধ ৬৯৮ টি সেল ছিল। ১৯৪১-এর ভূমিকম্পে ও জাপানি হানায় ৭ টির মধ্যে ৪ টি শাখা ধ্বংস হয়। সেলের সংখ্যাও বর্তমানে ২৯৬-এ এসে দাঁড়িয়েছে। জানালাহীন সরু সেল অর্থাৎ কয়েদিদের কক্ষ। মেঝে থেকে ৩ মিটার উঁচুতে রয়েছে ছোট খুপরি জানালা। ফালক্রাম হয়ে সেন্ট্রাল টাওয়ার। অনুমতি সাপেক্ষে টাওয়ারের মাথায় চড়লে চারপাশের অতি মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করতে পারবেন। ১৮৫৮ থেকে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংরেজ শাসকেরা প্রবল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রাজদ্রোহের অপরাধে কালাপানির ( তখন বঙ্গোপসাগরকে কালাপানি বলা হতো ) ওপারে দ্বীপান্তরে সেলুলার জেলে পাঠাতো। ব্রিটিশের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অনেকেই বন্দীদশাতেই শহীদ হয়ে যান। টাওয়ারের দ্বিতীয় তলার দেওয়ালে ১৩ টি ফলকে নাম খোদাই করা রয়েছে এরকমই ৩৩৬ জন দেশবরেণ্য শহীদের। প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টার সময় ট্যুরিস্ট হোম টিল হাউসে পুরো বিনা পয়সায় এক ঘন্টার ভিডিও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রদর্শনীতে Man in Search of Man অর্থাৎ সেলুলারের অতীত আখ্যান ছাড়াও জারোয়া ও ওঙ্গিদের সমাজজীবনের নমুনা দেখে নিতে পারবেন। 

স্বাধীনতার পর এখানে গোবিন্দবল্লভ পন্থ হাসপাতাল হয়েছে। এছাড়া এই বিশাল ঐতিহাসিক জেলে একটি সাধারণ কয়েদখানা, জাতীয় স্মৃতি মন্দির, ন্যাশনাল মেমোরিয়াল আর্ট গ্যালারিও স্থাপিত হয়েছে বিগত কয়েক দশক ধরে। এই মিউজিয়ামে বিপ্লবীদের ব্যবহার করা অনেক স্মৃতি সামগ্রীই দর্শক সাধারণের জন্য খোলা স্থানে রাখা হয়েছে। সোমবার ও জাতীয় ছুটির দিন ছাড়া প্রত্যেক দিন সকাল ৯ টা থেকে বেলা ১২ টা ও বেলা ১ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত দর্শন করতে পারবেন। দর্শনী ও ক্যামেরার চার্জ দিতে হবে। Son-et-Lumiere প্রদর্শনীতে মাত্র সামান্য কয়েকটি টাকার টিকিট কেটে হিন্দি ও ইংরেজি ধারাভাষ্যে দেখে নিতে পারবেন ভয়ঙ্কর উত্তেজনায় ভরা বীর সাভারকর থেকে উল্লাসকরের আমৃত্যু সংগ্রাম থেকে আরম্ভ করে আমাদের সকলের নয়নের মণি ও ভারতমাতার সবচেয়ে প্রিয় বীর সন্তান নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আন্দামান আগমনের নেপথ্য কাহিনী। অগ্রিম টিকিট পাবেন - Tourist Information Centre, Teal House, Delanipur, Haddo. Tel - 232694/230933/232747. Cellular Jail চত্বর থেকেও এই প্রদর্শনীর টিকিট পাওয়া যায়। Tourist Office থেকে ৫ টা ১৫ মিনিটে Son-et-Lumiere দেখাতে বিশেষ বাস যাচ্ছে। 

আন্দামান ওয়াটার স্পোর্টস কমপ্লেক্স ( Andaman Water Sports Complex ) - সেলুলারের পাদদেশে দিলথামানে নানারকম জলক্রীড়ার ব্যবস্থা রয়েছে একই চত্বরে। সাড়ে ১২ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত নানারকম জলক্রীড়ার সাথে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা, পেডাল ও রোয়িং বোটে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। অনেক আগে শহরের পানীয় জলের একমাত্র উৎসও ছিল এই কমপ্লেক্সের দিলথামান ট্যাঙ্ক। এখানেই গড়ে উঠেছে সুনামি স্মারক স্তম্ভ ( Tsunami Memorial Statue )। প্রবেশদ্বারে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে ব্রিটিশ ও আন্দামানিদের যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন মেমোরিয়াল অব দি ব্যাটেল অব অ্যাবারডিন ( Aberdeen Memorial ) তৈরি হয়েছে। ডাইনে মেরিন পার্ক ( Marina Park ) আছে। এই উদ্যান দুপুর সাড়ে ১২ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত টয় ট্রেন থেকে নাগরদোলা ইত্যাদি নানাপ্রকার শিশুমনের বিনোদনের উপাচার নিয়ে প্রস্তুত থাকে। সেই অর্থে এটিকে একটি Children's Amusement Park-ও বলা চলে। 

চিলড্রেন্স ট্রাফিক পার্ক ( Children's Traffic Park ) - মেরিনা পার্কের ডাইনে অবস্থিত এই বিশেষ স্থানে ছোটদের ট্রাফিক আইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া, কমবয়সীদের মনোরঞ্জনের নানা বন্দোবস্ত আছে। বিকেল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৮ টা পর্যন্ত এখানে প্রবেশ করা যায়। এখানে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত একটি জাপানি মন্দিরও রয়েছে। পিকনিকের উপযুক্ত সুন্দর পরিবেশ আছে দিলথামানে। রবিবার ও ছুটির দিন সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১২ টা ও বেলা ২ টা থেকে সন্ধ্যা ৮ টা পর্যন্ত এই পুরো কমপ্লেক্স জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। পাহাড় বেয়ে সিঁড়িও উঠে গেছে সোজা সেলুলারে। নিকটে রয়েছে নেতাজি স্টেডিয়াম ( Netaji Stadium )। মেরিনার মাথায় রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন ( Ramakrishna Mission )। 

গান্ধী পার্ক ( Gandhi Park ) - এই শহরে যে সকল আকর্ষণীয় জায়গা রয়েছে যেমন চিলড্রেন্স পার্ক, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ডিয়ার পার্ক, ওয়াটার স্পোর্টস, জাপানিজ টেম্পল, লেক, গার্ডেন, লোভনীয় খাবারের রেস্টুরেন্টগুলো ছাড়াও ছোট থেকে বড়ো সকলের মনোরঞ্জনের নানা পসরা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই গান্ধী উদ্যান। রবিবার সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১২ টা ও বিকেল ৪ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত, এছাড়া অন্যান্য দিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে। এর ঠিক পাশেই রয়েছে রাজ ভবন ( Raj Bhavan / Government House )। 

মেরিনা পার্কের অদূরে সমুদ্রের পাড়ে ফিশারিজ মিউজিয়াম বা অ্যাকোয়ারিয়াম ( Fisheries Museum / Aquarium ) আছে। জলজ কুমির, হাঙর, ডলফিন, গলদা চিংড়ি, সামুদ্রিক কাঁকড়া ছাড়াও আরও অন্তত ৩৫০-এরও বেশি ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী ও প্রবালের সংগ্রহ উল্লেখ করার মতন। পোর্ট ব্লেয়ারের একটি অসাধারণ পর্যটন আকর্ষণও এই মাছের মিউজিয়ামটি। জাতীয় ছুটি ও সোমবার ছাড়া সকাল নয়টা থেকে একটা এবং দেড়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে। 

জিমখানা গ্রাউন্ড ( Gymkhana Ground ) - মেরিনা পার্কের বিপরীতে মহাবীর সিং রোডের এই মাঠটি বিখ্যাত হয়েছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পায়ের ছোঁয়া লাগার কারণে। আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক এই মহান বিপ্লবী ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে সেপ্টেম্বর স্বাধীন ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন অতীতের এই জিমখানা গ্রাউন্ডে। পুরো দ্বীপপুঞ্জ ও সমগ্র ভারতে সত্যিই সেটা ছিল এক স্মরণীয় ঘটনা। আর এই জায়গাটা পায়ে হেঁটে বেড়াবার জন্য সত্যিই আদর্শ স্থান। অসাধারণ পরিবেশ। 

জ্যুলজিক্যাল মিউজিয়াম ( Zoological Museum ) - মেরিনা পার্কের দক্ষিণ-পশ্চিমে শহরের প্রাণকেন্দ্রের মিডল পয়েন্টে ২০০ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর প্রদর্শন কেন্দ্র হলো এই বণ্যপ্রাণী সংগ্রহশালা। কাছের কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ এম্পোরিয়ামে দ্বীপবাসীদের হাতের তৈরি করা মুক্তো, শঙ্খ, ঝিনুক, কাঠের নানান সুন্দর জিনিস দেখার সাথে সাথে কিনতেও পারবেন। রবিবার ও ছুটির দিন ছাড়া রোজ সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা অবধি খোলা থাকে। 

মিডল পয়েন্টের মাথায় হাড্ডোমুখী রাস্তায় ফিনিক্স বে-তে রয়েছে অ্যানথ্রোপলজিক্যাল মিউজিয়াম ( Anthropological Museum )। সোমবার ও জাতীয় ছুটি ছাড়া অন্যান্য দিন সকাল নয়টা থেকে সাড়ে বারোটা ও দুপুর ১ টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে মডেল ও আলোকচিত্রের সাহায্যে এই বিশাল দ্বীপভূমির বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা তথা প্রকৃতি বিজ্ঞান দেখানো হয়েছে। আদিম উপজাতিদের নানা হস্তশিল্প দেখতে পাবেন। আন্দামান ভ্রমণে এসে অদেখা উপজাতি সমাজের জীবনযাত্রা, অস্ত্রশস্ত্র ও পোশাক-অলঙ্কার একই স্থানে দেখার অভিজ্ঞতা আপনার সারা জীবনের মানসিক সম্পদ হয়ে থাকবে। 

সমুদ্রিকা মেরিন মিউজিয়াম ( Samudrika Marine Museum ) - হাড্ডোর দেলানিপুরে টিল হাউসের বিপরীতে নাভাল মেরিন মিউজিয়াম তথা সমুদ্রিকায় সামুদ্রিক প্রাণীর সঙ্গে সমুদ্রজাত অনেককিছু প্রদর্শিত হয়েছে। বিশেষ করে কোরালের সংগ্রহ উল্লেখযোগ্য। এই মিউজিয়াম থেকে সমস্ত দ্বীপভূমি সম্পর্কে বিভিন্ন সঠিক তথ্যও পেয়ে যাবেন। সোমবার ও জাতীয় ছুটির দিন ছাড়া সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর ১২টা ও দুপুর ২ টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ টিকিট মূল্য মাত্র কয়েকটি টাকা। 

মিনি জ্যু ( Mini Zoo ) - সমুদ্রিকার কাছে হাড্ডো জেটির পথে এই মিনি জ্যু বা চিড়িয়াখানাটি অবস্থিত। সামুদ্রিক কুমির ফার্ম, দ্বীপপুঞ্জের দুশোরও বেশি প্রজাতির জীবজন্তু ও পাখি দেখে নিতে পারবেন। সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দর্শকের জন্য উন্মুক্ত থাকে। টিকিট মূল্য অতি সামান্য। 

এই পথেই আর একটু এগিয়ে গেলে পৌঁছে যাবেন শিক্ষামূলক ফরেস্ট মিউজিয়ামে ( Educational Forest Museum, Chatham Island, Foreshore Road, Haddo )। মডেলের পাখি ও জীবজন্তুর সাথে দ্বীপভূমির জঙ্গলভূমির বাহারি কাঠ প্রদর্শিত হয়েছে হাড্ডোর এই মিউজিয়ামে। রবিবার ব্যতীত অন্যান্য দিন সকাল আটটা থেকে দুপুর বারোটা ও দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল পাঁচটা অবধি খোলা থাকে। হাড্ডো থেকে বঙ্গোপসাগরের দৃশ্য সত্যি খুব সুন্দর। 

কাছে রয়েছে এশিয়ার প্রাচীনতম ও বৃহত্তম চাথাম শ্ মিল্ ( Chatham Saw Mill )। এখানে বিশাল বিশাল গাছের গুঁড়ি চেরাই করা হচ্ছে। চাথাম দ্বীপের নানারকম দুষ্প্রাপ্য ট্রপিক্যাল বৃক্ষের দেখা পেয়ে যাবেন। এখানে হাজারের বেশি কর্মী কর্মরত রয়েছেন। হাড্ডোতেও একটি শোরুম আছে এদের। তবে, ২০২০ সালে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এই সংস্থাকে অনেকটাই দুর্বল করে দিয়েছে। কলকাতা থেকে আগত জাহাজ চাথাম হয়ে যাচ্ছে। যদি এই  Saw Mill দেখতে যেতে চান তাহলে যেকোন ধরনের ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে ১২ টা আর দুপুর ২ টা থেকে বিকেল ৫ টার মধ্যে চলে যান। 

করবাইনস কোভ সাগরবেলা ( Corbyn Cove Sea Beach ) - শহরের দক্ষিণ প্রান্তে মেরিনা পার্ক, রামকৃষ্ণ মিশন ও কলেজের পাশ দিয়ে তাল ও নারকেল গাছে ছাওয়া পথ দিয়ে গিয়ে পৌঁছে যান নিরালা, নির্জন, শ্বেত-শুভ্র-মিহি বালির অনন্য সুন্দর সৈকতভূমি Corbyn's Cove. পুরোপুরি দূষণমুক্ত জায়গাটির আকাশ-বাতাস যেন সমুদ্র ও আকাশের নীলিমার ছোঁয়ায় নীলচে রূপ ধারণ করেছে। সমুদ্র স্নানে উপযুক্ত, অপরূপ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত, অজস্র সুন্দর জেলে নৌকার আনাগোনা - সত্যিই যেন পিকনিকের এক আদর্শ জায়গা। ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স ও এয়ার কন্ডিশনড্ রেস্টুরেন্ট তৈরি হয়েছে। খুব কাছেই আছে Black Island ও Snake Island. অনুমতি সাপেক্ষে ডিঙি নৌকায় করে এই দুটি ছোট মনোরম দ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে পারেন। খাওয়া-থাকার জন্য Hornbill Nest Resort, Peerless Resort, Government Guest House, Wave Restaurant ইত্যাদি রয়েছে। শহর থেকে অটো ও ট্যাক্সিতে করে এই বিশ্ববিখ্যাত সমুদ্রতট থেকে ঘুরে আসুন। বাসে করে গেলে শেষ এক কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে পেরোতে হবে। এখান থেকে বিমানবন্দরের দূরত্ব মাত্র চার কি. মি.। 

চিনকুই আইল্যান্ড ( North and South Cinque Island ) - পাশাপাশি অবস্থিত দুটি পাহাড়ি দ্বীপ, যার মধ্যে বালির চড়া যোগাযোগ গড়েছে। এরই নাম চিনকুই। এই অঞ্চলের সাগরের জলভাগ এতটাই স্বচ্ছ যে নিয়মিত ডলফিনের দেখা পাবেন। এই দ্বীপভূমি পোর্ট ব্লেয়ার থেকে সমুদ্রপথ অনুসারে প্রায় ৪০ কি. মি. দূরে অবস্থিত। সুন্দর সাগরসৈকত ও প্রবালের জন্য এই নতুন পর্যটন ক্ষেত্রের যথেষ্ট সুখ্যাতি আছে। প্রবাল বেশি দেখতে পাবেন ডানদিক দিয়ে সি-বীচ ধরে জঙ্গলের পথ দিয়ে যেতে যেতে। চিড়িয়াটাপু অর্থাৎ পাখির টিলা থেকে স্পিড বোটে করে মাত্র দু' ঘন্টায় এই জায়গা বেড়িয়ে নেওয়া যায়। ফিনিক্স বে থেকে বোটে ঘন্টা তিনেক সময় লাগে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি এখানকার কোন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে প্যাকেজ ট্যুরে এই দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে নেন। 

চিড়িয়াটাপু সৈকত ( Chidiya Tapu Sea Beach ) - পোর্ট ব্লেয়ার থেকে প্রায় ২৫ কি. মি. দূরে দক্ষিণ আন্দামানের শেষ প্রান্তে Chiriya Tapu অবস্থিত। এই শব্দটির অর্থ হলো পাখির টিলা। নির্জন অতি মনোরম এই সাগরবেলা। আর রয়েছে পাহাড়ি সবুজ ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ছাওয়া সরু খাঁড়ি। এখানে ১৫ টি দ্বীপ নিয়ে ২৮০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত জাতীয় উদ্যান। পুরো এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সত্যিই অতি মনোরম। অগভীর পান্না সবুজ জলে প্রবালের ফাঁকে ফাঁকে রঙীন মাছেদের হুটোপুটি, গাছের ডালে ডালে ও পাতার ফাঁকে রঙবেরঙের পাখি ও প্রজাপতি ইত্যাদি মনে এক স্বর্গীয় আবেশ এনে দেবে। পিকনিকের আদর্শ পরিবেশ। সূর্যাস্তের শোভা অতুলনীয়। বার্মা নালায় মাল বহনে দক্ষ হাতির কর্মকান্ড দেখলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। অ্যাবারডিন বাজার থেকে বেলার দিকে বাস, অটো, ট্যাক্সি ১ ঘন্টার মধ্যে আপনাকে চিড়িয়াটাপু পৌঁছে দেবে। পথ চলায় আলাদা রোমাঞ্চ অনুভব করবেন। রাত্রিযাপনের জন্য টিলার মাথায় Forest Guest House আছে। Contact For Online Booking :- Chief Wildlife Warden, Van Sadan, Haddo, Port Blair. Tel. - 233549. চাইলে দিনে দিনে ঘুরে শহরেও ফিরে আসতে পারেন। 

ভাইপার দ্বীপ ( Viper Island ) - পোর্ট ব্লেয়ার বন্দরের মুখে হাড্ডো জেটির কাছে আকর্ষণে অনন্য কিন্তু আকারে ছোট এই দ্বীপটি অবস্থিত। সেলুলার জেল তৈরির আগে রাজবন্দীদের কারাগার ছিল এই ভাইপার। একটি ডুবে যাওয়া জাহাজের নাম অনুসারে এই নামকরণ করা হয়েছে। সেই অভিশপ্ত জাহাজটি ডুবে যায় এই দ্বীপের কাছেই। এখানে অনেকেরই ফাঁসি সংঘটিত হয়েছিল। টিলার চূড়ায় থাকা ভাঙাচোরা ফাঁসিকাঠগুলি নীরবে আজও যেন সেই কাহিনীই সবাইকে শুনিয়ে চলেছে। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শোয়ে সেইসব অতীত যেন আরো জাগ্রত হয়ে উঠেছে। নিকটের দুগঙ ক্রিকে কাঠের বাড়ি করে ওঙ্গিদের উপনিবেশ গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন জঙলিঘাট থেকে প্রাইভেট বোটে করে যেতে পারেন। এছাড়া, বুধবার বাদে প্রত্যেকদিন বিকেল ৩ টার সময় ফিনিক্স বে জেটি থেকে এখানে নৌকা যাচ্ছে। 

লক্ষ্মীবাঈ দ্বীপ / রস আইল্যান্ড / নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আইল্যান্ড ( Lakshmibai / Ross / Netaji Subhas chandra Bose Island ) - Port Blair বন্দরের কাছে ছোট ছোট খাঁড়িতে ঘেরা প্রায় অর্ধ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে এই দ্বীপভূমি। আগে এর সরকারি নাম ছিল রস। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট এর নাম হয় লক্ষ্মীবাঈ বা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু দ্বীপ। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ডক্টর জেমস প্যাটিসন  ওয়াকারের হাত ধরে ব্রিটিশ শাসকদের পরিচালিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমন ঘটে। সেই সময় থেকে বহুদিন পর্যন্ত ব্রিটিশ প্রশাসনিক দপ্তর ও চিফ কমিশনারের বাসস্থান ছিল এখানে। ১৯৪২-এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানিদের দখলে আসে। আবার ১৯৪৫-এ পুনরায় ইংরেজদের দখলে আসলেও আর আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি। পুরোপুরি জনমানবশূন্য বসতিহীন হয়ে পড়ে। ব্রিটিশ ও জাপানি ঔপনিবেশিকতার চিহ্ন হিসেবে রয়েছে গেছে কঙ্কালসার লাইট হাউস, চার্চ, চিফ কমিশনার্স হাউস, হাসপাতাল, টেনিস কোর্ট ও সিমেট্রি বা সমাধিস্থল। যেগুলি শুধু আমাদের অতীত মনে করায়। ভারতীয় নৌবাহিনীর উদ্যোগে দ্বীপের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে স্মৃতিকা মিউজিয়ামে ( Smritika Museum )। আর আছে প্রাকৃতিক চিড়িয়াখানা ( Natural Zoo )। জনমানবশূন্য বসতিহীন ভূখণ্ডের গর্জন গাছের জঙ্গলে প্রচুর চিতল হরিণ ও ময়ূর রয়েছে। সৈকত সংলগ্ন উপকূলে প্রবাল ও ট্রকার্স শঙ্খও দেখতে পাবেন। দেশি-বিদেশি যেকোন পর্যটকই এখানে আসতে পারবেন। এখানে অপেক্ষারত গাইডকে সঙ্গে নিয়ে পায়ে হেঁটে মাত্র ২-৩ ঘন্টায় পুরো দ্বীপটি ভালো করে ঘুরে নিন। গাইডের কাছ থেকে এই জায়গার সমস্ত ইতিহাস খুব ভালো করে জেনে নিতে পারবেন। ক্যাফেটেরিয়াতে খাবার ও পানীয় জল পেয়ে যাবেন। গাইড, দর্শনী ও সঙ্গের ক্যামেরার জন্য আলাদা করে টিকিট কেটে নিতে হবে। একটি ট্যুরিস্ট ভিলেজ গড়ে উঠেছে। বুধবার ছাড়া প্রতিদিন ফিনিক্স বে জেটি থেকে লঞ্চে করে আধঘণ্টায় এখানে পৌঁছে যেতে পারবেন। সময় ও টিকিট মূল্য জেটি কাউন্টার থেকে জেনে নেওয়া সঠিক হবে। 

মাউন্ট হ্যারিয়েট ন্যাশনাল পার্ক ( Mount Harriet National Park ) - চাথাম দ্বীপের উল্টোদিকে এই সুন্দর প্রাকৃতিক পাহাড়ি বনাঞ্চলটি অবস্থিত। পূর্বে এটি ব্রিটিশ চিফ কমিশনারের গ্রীষ্মাবাস ছিল। পুরো এলাকাটি জনপ্রিয় তার অতুলনীয় নৈসর্গিক সৌন্দর্য, অসংখ্য রঙীন প্রজাপতি ও বিচিত্র ধরনের বন্যপ্রাণের জন্য। দক্ষিণ আন্দামানের উচ্চতম স্থান মাউন্ট হ্যারিয়েটের, যার উচ্চতা প্রায় ৩৬৫ মিটার, উপর থেকে সূর্যোদয়, সমুদ্র, পোর্ট ব্লেয়ার শহর দেখতে লাগে অপূর্ব। Picnic ও Photography-র জন্য আদর্শ জায়গা। বাস ও ট্যাক্সিতে করে যেমন পৌঁছতে পারবেন। তেমনি, মেরিন জেটি থেকে লঞ্চে ১০ মিনিটে হোপ টাউন পৌঁছে তারপর ট্রেক করে আধ ঘন্টার মধ্যে হ্যারিয়েটের শীর্ষে উঠতে পারবেন। গাড়ি ও ক্যামেরার ভাড়ার চার্জ মান অনুসারে দিতে হবে। এই স্থানের পূর্বে আছে হাতির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মধুবন ( Madhuban is The Elephant Training Centre in This Wildlife Sanctuary )। হ্যারিয়েট পাহাড় চূড়োয় থাকার জন্য আছে একটি ২ ঘরের ফরেস্ট রেস্ট হাউস। 

সিপ্পিঘাট ( Sippighat ) - পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ওয়ান্ডুরের পথে ১৫ কি. মি. দূরে প্রায় ৮০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে Sippighat Agricultural Farm Research Centre. এখানে নানা জাতের ফুল, ফল, মশলা, গাছপালার গবেষণা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। নারিকেল, লবঙ্গ, দারুচিনি, গোলমরিচ, রাবার, জায়ফল ইত্যাদি উদ্ভিদের চাষাবাদ হচ্ছে। ফার্ম থেকে বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যেতেও পারবেন। এক কি. মি. দূরে আছে Sai Water Sports Complex. এখানে কায়াকিং, বোটিং ও আরও অনেক রকমের জলক্রীড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতেও পারবেন। রবিবার ও অন্যান্য ছুটির দিন বাদে রোজ সকাল ৯ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কনডাকটেড ট্যুরে বা এককভাবে বাসে করে গিয়ে সিপ্পিঘাট ঘুরে আসতে পারবেন। 

ওয়ান্ডুর ( Wandoor ) - পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৩০ কি. মি. দূরে দক্ষিণ আন্দামানের পশ্চিমে নিরালা - নির্জন মহাত্মা গান্ধী মেরিন ন্যাশনাল পার্ক জাতীয় উদ্যানের প্রবেশ দ্বার হলো এই ওয়ান্ডুর। কমবেশি ২৮১ বর্গকিলোমিটার ব্যাপ্ত ছোট-বড়ো ১৫ টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই ন্যাশনাল পার্কটি। কোরাল আইল্যান্ড ও নানা সামুদ্রিক প্রাণী এই অরণ্যের মূল সম্পদ। প্রবাল দ্বীপে থাকে কাঁচের মতো স্বচ্ছ জলে রঙবেরঙের প্রবাল। এখানকার ম্যানগ্রোভ অরণ্যের খাঁড়িপথে নৌকায় চলার অভিজ্ঞতা সত্যিই রোমাঞ্চকর। 

গোলকধাঁধার মতো মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল পার্ক ( Mahatma Gandhi Marine National Park ) ১৫ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত হয়েছে। আকারে ছোট কিন্তু সৌন্দর্যে অতুলনীয়। পাহাড়ি এই দ্বীপপুঞ্জের সোনালী সৈকত, নীল অগভীর জলে প্রবাল প্রাচীর এই স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও উচ্চমাত্রা দিয়েছে। অ্যাঞ্জেল ফিশ্, স্টার ফিশ্, সবুজ জঙলী টিয়া, হলুদ প্রজাপতি, রুপোলি শিয়াল, কাঠবিড়ালি এই অরণ্যের প্রধান আকর্ষণ। জলে হাঙরও আছে। কোরাল দ্বীপ জলি বয়, যাকে প্রকৃতির গড়া অ্যাকোয়ারিয়াম বলা হয়, সত্যি খুব সুন্দর। ওয়ান্ডুর জেটি থেকে নৌকায় করে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে ছাওয়া সরু খাঁড়ি পথ ধরে এই পুরো জাতীয় উদ্যান এবং সামুদ্রিক অভয়ারণ্য দর্শন করে নিতে পারেন। 

ফাইবার গ্লাসে ঢাকা মোটর বোটে চড়ে দেখে নেওয়া যায় ৫০-এরও বেশি প্রজাতির প্রবাল ও নানা সামুদ্রিক প্রাণী জলি বয় দ্বীপের সাগর বেলায়। বাচ্চা থেকে বুড়ো সব বয়সী পর্যটকেরা এখানে স্নান ও ওয়াটার স্পোর্টসে মেতে ওঠেন। ভাড়া করে স্মরকেলিঙয়ের চশমা পরে জলে ডুব দিয়ে প্রবাল দেখার অনাবিল আনন্দে মেতে উঠুন। আর একটি বিখ্যাত প্রবাল দ্বীপ হলো রেড স্কিন। ভাটায় জল সরে যায় অন্ততপক্ষে ১৫০ মিটার দূরে। এই দ্বীপের উত্তরের পাহাড়ে আছে গুহা, পূর্ব ও দক্ষিণ জুড়ে রয়েছে চিরহরিৎ অরণ্য। রেড স্কিন দ্বীপে মিষ্টি জলের ঝর্ণা আছে। কোন জায়গায় কখন যাওয়া যাবে কি যাবেনা তা নির্ধারণ করবে পর্যটন দপ্তর ও স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন। যেখানেই যান না কেন সঙ্গে অবশ্যই লাঞ্চের প্যাকেট ও পানীয় জল সঙ্গে নিয়ে যাবেন। যত্রতত্র আবর্জনা ও প্লাস্টিক ফেলবেন না, কারণ এটি দন্ডনীয় অপরাধ। পুরোটাই প্লাস্টিক ফ্রি জোন। যাতায়াত, কোরাল দর্শন ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়েই ভাড়া ঠিক হয়। 

সকাল ৫ টা থেকে এক ঘন্টা বাদে বাদে ১০ টি বাস পোর্ট ব্লেয়ার বাস স্ট্যান্ড থেকে গোলঘর হয়ে মাত্র ঘন্টাখানেকের মধ্যে ওয়ান্ডুর পৌঁছে যায়। ওয়ান্ডুর বাসস্ট্যান্ডের পাশেই জেটি ঘাট ও সি বীচ আছে। জেটি ঘাটের কোরাল মিউজিয়ামটিও খুব সুন্দর। তবে এখানকার পর্যটনের মূল আকর্ষণ হলো মহাত্মা গান্ধী মেরিন ন্যাশনাল পার্কের জলিবয় ও রেড স্কিন দ্বীপ দু'খানি। প্রতিদিন অনেক প্রাইভেট বোট ও মিনি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে ও আসছে। থাকা-খাওয়ার জন্য Wandoor Bus Stand-এর আশেপাশে অনেকগুলি ভালো মানের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, রিসর্ট, গেস্ট হাউস রয়েছে। 

হ্যাভলক দ্বীপ ( Havelock Island ) - একে সূর্যোদয়ের দ্বীপও বলা হয়। এখন একে Swaraj Dweep নামেও অভিহিত করা হয়। পোর্ট ব্লেয়ারের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর মোট আয়তন ১০০ বর্গ কি. মি.। পাহাড়ি ভূপ্রকৃতির সবুজ বনানীতে ছাওয়া শ্বেতশুভ্র বালুকাবেলা এর বৈশিষ্ট্য। অগভীর স্বচ্ছ জলের নীচে প্রবাল রয়েছে। তারই ফাঁকে ফাঁকে রঙীন মাছেরা খেলে বেড়াচ্ছে। কিং কোকোনাট অর্থাৎ হলুদ ডাবের জল পান করতে করতে এই স্বর্গীয় শোভা উপভোগ করুন। এই দ্বীপে প্রচুর বাংলাদেশী শরণার্থী রয়েছেন। দেশি-বিদেশি যেকোন পর্যটকই এখানে সহজেই আসতে পারেন। কারণ, সেরকম কোন সরকারি বিধিনিষেধ নেই। ডাইরেক্টরেট অফ্ শিপিং সার্ভিসের ফেরি লঞ্চ রঙ্গত প্রতিদিন সকালে ফিনিক্স বে  ছেড়ে দুই ঘন্টায় হ্যাভলক যাচ্ছে। আবার সাড়ে ৯ টায় হ্যাভলক ছেড়ে পোর্ট ব্লেয়ার ফেরে এই রঙ্গত। রঙ্গত জলযানের যাত্রীদের একরাত রাধানগরে থাকা বাধ্যতামূলক। আর রয়েছে রামানুজন লঞ্চ। এটি প্রতি মঙ্গলবার সকালে সাড়ে তিন ঘন্টায় হ্যাভলক পৌঁছে পরদিন পোর্ট ব্লেয়ারে ফিরে আসে। এটি কেবলমাত্র রবিবার দিনে দিনে যাতায়াত করে। আর একটি জনপ্রিয় জলযানের উল্লেখ না করলেই নয়। ফিনিক্স বে জেটি থেকে M. V. Makruzz প্রত্যেকদিন সকাল ৮ টায় ছেড়ে দেড় ঘন্টায় গন্তব্যে যাচ্ছে। আবার বিকেল ৪ টায় হ্যাভলক ছেড়ে এরা পোর্ট ব্লেয়ার ফিরে আসছে। Do Enquary For Informations :- M/s Mak Logistics, Tel:- (03192) 236677. এদের সাথে গেলে ঘন্টা চারেকের মতো সময় পাবেন রাধানগর বীচ ( Radhanagar Sea Beach ) দর্শনের। জেটি ঘাট থেকে বাস, ট্যাক্সি, জিপে করে রাধানগর বীচে পৌঁছে যেতে পারবেন। যারা এক দিনেই এই ভ্রমণসূচী সারতে আগ্রহী, তাদের এই রবিবারের বিশেষ লঞ্চে যাওয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। একদিন আগে থাকতে Directorate of Shipping Service থেকে অগ্রিম টিকিট কিনে রাখুন। যাত্রার দিন জেটি থেকেও টিকিট কাটতে পারেন। সারা পথে ডলফিনেরা আপনার যাত্রাসঙ্গী হবে। দুর্দান্ত এক অভিজ্ঞতা। 

থাকার জন্য জেটি থেকে ৪ কি. মি. দূরে সমুদ্র ঘেঁষা Dolphin Resort. Tel. - ( 03192 ) 282411/235. ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে ডলফিনের দেওয়ালে। সুন্দর নীলাভ জল। নীলেরও রঙের তফাৎ রয়েছে। এছাড়া আরও অনেক কটেজ, রিসর্ট, গেস্ট হাউস আছে। হ্যাভলক থেকে বাস-অটো-ট্যাক্সিতে চলা যায় ২০ কি. মি. দূরের রাধানগর বীচ প্যাকেজে ( Radhanagar Beach Package )। অর্ধবৃত্তাকার সৈকত বেলা, পাহাড়- অরণ্য, সূর্যাস্তও অনুপম রাধানগরে। তবে, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের শোভা উপভোগ করার জন্য এক রাত রাধানগরে অবশ্যই থাকতে হবে। থাকা-খাওয়ার নানা হোটেল, রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ক্যাম্পিং-এরও সুবন্দোবস্ত রয়েছে এখানে। খাবারের জন্য হ্যাভলক জেটির কাছে থাকা Women's Cooperative Cafe-তে যেতে পারেন। 

নীল দ্বীপ ( Neil Island ) - পোর্ট ব্লেয়ারের পূর্ব দিকে অবস্থিত এটি একটি বাঙালি অধ্যুষিত খুব সুন্দর দ্বীপ। আকারে ছোট হলেও হ্যাভলকের মতো আকর্ষণীয়। পর্যটক সেরকম না হলেও এখানকার সীতাপুর সমুদ্র সৈকতটি ( Sitapur Sea Beach ) সত্যিই সুন্দর। প্রবালে ভরা অগভীর সমুদ্র, সোনালী সাগরবেলা যুক্ত সবুজ গাছপালায় ভর্তি ত্রিভুজাকৃতির দ্বীপভূমি এটি। চাষাবাদ হয়। সমুদ্রপথে পোর্ট ব্লেয়ার অথবা হ্যাভলক জেটি থেকে মোটর বোট ও লঞ্চে করে নীলে যাওয়া যায়। জেটি থেকে মাত্র ৫ মিনিটের হাঁটাপথে Tourist Complex-এ পৌঁছতে পারবেন। থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত রয়েছে APWD- এর Rest House - Hawabil Nest -এ। এছাড়া, প্রাইভেট লজ Tango Beach Resort, Coco Huts, Pearl Park Beach Resort, Hotel King Fisher -তেও থাকতে পারবেন। সস্তায় খেতে চাইলে বাজারের খাবার হোটেলে চলে আসুন। 

মায়াবন্দর ( Mayabunder ) - অবস্থান মধ্য আন্দামানের খুব কাছে হলেও আসলে উত্তর আন্দামানের অংশ হলো এই Maya Bunder. প্রশাসনিক দপ্তর রয়েছে এখানে। পোর্ট ব্লেয়ার বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন বেসরকারি ও সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সরকারি বাস Great Andaman Trunk Road ধরে ২৪০ কি. মি. পথ পেরিয়ে মাত্র ৮ ঘন্টায় এখানে পৌঁছে যাবেন। যাতায়াতের বৈচিত্র্যময় ঘন সবুজ পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য আপনাকে অবশ্যই মুগ্ধ করবে। বাস গাড়ির ধরন অনুযায়ী ভাড়ার তফাৎ ঘটে। দেড় ঘন্টায় ঝিরকাটাং চেক পোস্টে পৌঁছে সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা সুরক্ষিত হয়ে একসাথে সমস্ত বাস ও অন্যান্য গাড়ির কনভয় আরও দেড় ঘন্টা যায় জারোয়া রিজার্ভ ফরেস্টের মধ্য দিয়ে। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ১১০ কি. মি. দূরে প্রায় ৬৫৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে অরণ্যের মধ্যে রয়েছে এই জারোয়া লোকালয় ( Jarawa Reserve / Locality )। চলার সময় বাসে বসেই এদের দেখা পেয়ে যাবেন। দেখবেন বাসের অনেক যাত্রী এদের প্রিয় খাবার লেবু ও কলা দান করছেন। অনেকে আবার কাপড়ও দিচ্ছেন। আপনিও দিতে পারেন। তবে, ভুলেও এদের অতি পছন্দের লাল রঙের কাপড় পরিধান করে এদের সামনে যাবেন না। তবে, পথপাশে দেখা পাওয়া এই উলঙ্গ জারোয়ারা মোটেও হিংস্র নয়। এরা ছোট ছোট কুটিরে বাস করে। হিংস্র জারোয়ারা আজও লোকচক্ষুর অন্তরালে গভীর বনে বাস করে। যাত্রী ও বাস বার্জে করে সাগর পাড়ি দেয় মিডল স্ট্রিট জেটি থেকে নীলাম্বুর জেটি অথবা গান্ধীঘাট জেটি থেকে কদমতলা ঘাটের উত্তরা জেটি। 

রঙ্গত ( Rangat ) - বাঙালি প্রধান রঙ্গত বিখ্যাত এর সুন্দর সাগর সৈকতের জন্য। পোর্ট ব্লেয়ার (১৭০ কি. মি. ) থেকে মায়াবন্দর ( ৭০ কি. মি. ) যাওয়ার রাস্তায় পড়ে রঙ্গত বাসস্ট্যান্ড। গ্রেট আন্দামান ট্রাঙ্ক রোডও চলে এখানকার আমকুঞ্জ সৈকত ( Amkunj Beach ) ও কাথবার্ট বে সমুদ্র সৈকত, গাবলু বীচ ঘেঁষে। এই সৈকতগুলি থেকে দেখা সূর্যোদয়ের দৃশ্যও অনবদ্য। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত হাজার হাজার কচ্ছপেরা রঙ্গতের সী বীচে এসে ডিম পাড়ে। সেও এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য ও অভিজ্ঞতা। থাকা-খাওয়ার জন্য ভালো বন্দোবস্ত রয়েছে। যেমন, বাসস্ট্যান্ডের ২০ কি. মি. দূরে বাস রাস্তার পাশে Cut Bert Bay এলাকায় আছে আন্দামান পর্যটনের Hawksbill Nest. পাহাড়ের মাথায় আছে APWD Guest  House. এছাড়াও নানা মান ও ভাড়ার প্রাইভেট হোটেল পেয়ে যাবেন রঙ্গতে। যথাক্রমে - Priya International Hotel, চার্চ রোডের Avis Hotel, R. G. Lodge, R. K. Lodge, হরেকৃষ্ণ লজ, চন্দ্রমোহন লজ ইত্যাদি। আগে থেকে বলে রাখলে বাস কন্ডাক্টর হকস বিল নেস্টে নামিয়ে দেবে। এনারা প্যাকেজ ট্যুরে মায়াবন্দর, কারমাটাং, পোখাডেরা ঘোরার ব্যবস্থাও করে থাকেন। নিম্বুতলা অথবা মায়াবন্দরের বাসে করে আমকুঞ্জ বীচটি দেখে নেবেন। নিম্বুতলা বোট জেটির কাছে Sea Sore Lodge আছে। চাইলে এখানেও সস্তায় থাকতে পারেন। কাছেই পঞ্চবটী। এখান থেকে দেখা সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য বহুদিন ভুলতে পারবেন না। 

পথের চারপাশের অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে কখন যে বাসে করে পান্না-সবুজ জলে ঘেরা সদাব্যস্ত জনপদ মায়াবন্দরে পৌঁছে যাবেন তা নিজেও বুঝতে পারবেন না। এই শহরের নামকরণ হয়েছে একজন বাঙালি মহিলার নামে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্দর-শহর। স্কুল, কলেজ, বাজার, দোকান, হেলিপ্যাড, বড়ো বাড়িঘর সবই রয়েছে এখানে। আন্দামানের দ্বিতীয় কলেজটির রয়েছে এখানে। বাসস্ট্যান্ড অবস্থিত জেটি ঘাটের গা ঘেঁষে। মূল শহর থেকে ১২ কি. মি. দূরে ইংরেজি অক্ষর U আকারের সবুজ গাছপালায় ঘেরা নির্জন অতি মনোরম পরিবেশের Karmateng Sea Beach দেখতে ভুলবেন না। বাস-অটো-ট্যাক্সিতে করে এই কারমাটাং সৈকতে পৌঁছতে পারবেন। পথে ঘুরে নিতে পারেন বার্মিজ বসতি। অতীতের যাত্রীনিবাসটি এখন প্রাইভেট রিসর্টে পরিনত হয়েছে। এর ক্যান্টিনে খাবার পেয়ে যাবেন। এছাড়া দ্বিতীয় কোন হোটেল তো নেইই, দোকানপাটেরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে কারমাটাং-এ। 

মায়াবন্দর থেকে যন্ত্রচালিত ডুঙ্গি নৌকাতে করে সমুদ্র যাত্রায় পৌঁছে যান ৪৫ মিনিটে Bacon Bay, ২৫ মিনিটে Austin X, ২৫ মিনিটে নারকেল গাছে ছাওয়া রত্নদ্বীপ আভিসে। ২ ঘন্টায় কালীঘাট তথা দিগলিপুর। এছাড়াও এখান থেকে ঘুরে আসতে পারবেন রামপুর, পোখাডোরা, মাত্র ৫০ কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত ব্যারেন আইল্যান্ডও ( Barren Island )। তবে ব্যারেন দ্বীপে নামা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। 

মায়াবন্দরে থাকা-খাওয়ার জন্য অনেক হোটেল-লজ-রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাবেন। জেটি ঘাটের রাস্তায় অনতিউচ্চ টিলার উপরে যথেষ্ট ভালো মানের APWD-র রেস্ট হাউস রয়েছে। কাছেই রয়েছে Vanvikas Eco Tourism Rest House. উল্টোদিকে আছে Laxminarayan Lodge. বাজারের মধ্যে S. S. Lodge. বাজার ছাড়িয়ে ৪ কি. মি. দূরে আছে Sea N Sand Hotel and Restaurant. জেটি ঘাটের ক্যান্টিনে স্বল্পদামে ভালো মানের ও স্বাদের খাবার খেতে পারবেন। 

এখান থেকে ৫৪ কি. মি. দূরে আর একটি সুন্দর ভ্রমণস্থল হলো দিগলিপুর ( Diglipur )। এই স্থানটি বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত ও কমলালেবু চাষের জন্য। এখানে যেন দিনের শুরুর সাথে সাথে সমুদ্র ও সূর্যের লুকোচুরি খেলা আরম্ভ হয়। কালীঘাট ছাড়িয়ে ৩৬ কি. মি. দূরে আছে সুন্দর নিরালা রামনগর সমুদ্র সৈকত ( Ramnagar Sea Beach )। দিগলিপুর শহর থেকে বাস অথবা ট্যাক্সিতে যেতে পারবেন। শহর থেকে ২৫ কি. মি. দূরে রয়েছে কালীপুর সৈকত ( Kalipur Beach )। এখানে যাওয়ার জন্য বাস-ট্যাক্সিও পেয়ে যাবেন। কালীঘাট ছাড়িয়ে রামনগর যাওয়ার পথে দেখে নিন কালপঙ নদীর উপর তৈরি হওয়া আন্দামানের একমাত্র জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ( Hydro-electric Project on Kalpong River )। দ্বীপপুঞ্জের উচ্চতম শৃঙ্গ স্যাডেল পিকের ( Saddle Peak ) অবস্থান এই দিগলিপুরে। এরিয়াল বে জেটি থেকে বাসে ১০ কি. মি. দূরের কালীপুরে পৌঁছে ৫ কি. মি. ট্রেকিং করে দুই ঘন্টার মধ্যে চূড়ায় উঠতে পারবেন। সঙ্গে গাইড নিয়ে নেবেন। 

মায়াবন্দর থেকে লঞ্চে দুই ঘন্টায় কালীঘাট পৌঁছে বাস বা জিপে মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে বাণিজ্যিক শহর দিগলিপুরে যেতে পারবেন। থাকার জন্য স্বল্প ভাড়ায় ও ভালো মানের অনেকগুলো লজ-রিসর্ট-হোটেল পেয়ে যাবেন বাসস্ট্যান্ডের কাছে ও কালীপুরে। 

পোর্ট ব্লেয়ারের ১২০ কি. মি. দক্ষিণে নিকোবরের পথে আর এক দ্রষ্টব্য স্থান হলো লিটল আন্দামান দ্বীপ, হাট বে ( Little Andaman Island, Hut Bay )। অতীতের পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা বাঙালি উদ্বাস্তুদের কলোনি এলাকাগুলি ঘুরে বেড়িয়ে দেখে নিতে পারেন। তাঁদের সাথে কথাও বলতে পারেন। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে ফেরি জাহাজ যাচ্ছে লিটল আন্দামানে। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে হেলিকপ্টারেও হাট বে যাওয়া যায়। থাকার জন্য কয়েকটি গেস্ট হাউস-লজ-হোটেল পেয়ে যাবেন। 

নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ( Nicobar Islands ) - আন্দামান থেকে ৮ ঘন্টার জলপথে গেলেই পৌঁছে যাবেন এই দ্বীপপুঞ্জের সদর দপ্তর কার নিকোবরে ( Car Nicobar )। নেক অর্থাৎ উলঙ্গদের বাসভূমি ন্যাক্কোবর নাম সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে এই নাম ধারণ করেছে। বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের মিলনস্থল হওয়ায় এখানকার সমুদ্র সারা বছরই উত্তাল থাকে। মোট দ্বীপের সংখ্যা ২৮ টি। এরমধ্যে ১২ টিতে বসতি হয়েছে, আবার তারমধ্যে ১১ টি উপজাতি অধ্যুষিত। বিশেষ অনুমতি নিয়ে একমাত্র গ্রেট নিকোবর দ্বীপে ভারতীয়রা প্রবেশ করতে পারেন। তবে, প্রস্তুতি চলছে যাতে খুব শীঘ্রই আন্দামানের মতো পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর সামনে এখানকার সবকিছুকে তুলে ধরা যায়। 

কার নিকোবরে মঙ্গোলীয় গোষ্ঠীর নিকোবরিদের বসবাস।সংখ্যায় অল্প এরা। ফাদার রিচার্ডসনের উদ্যোগে এদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। মিশনারিদের সংস্পর্শে আসার পরে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এরা। স্বভাবে শান্ত-শিষ্ট-আবেগপ্রবণ ও নৃত্য-সঙ্গীতপ্রেমী হন এরা। সভ্য জগতের ছোঁয়া পাওয়া উপজাতিদের মধ্যে সবচেয়ে সভ্যও এই নিকোবরিরা। এদের প্রধান জীবিকা হলো চাষবাস ও পশুপালন। নারকেল, কলা ও মিষ্টি আলুর চাষই বেশি হয়। 

১৫ বছরের বেশি বয়সীদের ভোটে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এদের সমাজে দলপতি বা সর্দার নির্বাচিত হয়। পুরাতন ধাঁচের ৭ ফুট উঁচু Tochuvi Pati অর্থাৎ বৈচিত্র্যপূর্ণ কুটির বাড়ি আজ আর এখানে দেখা যায় না। বর্তমানে পাকা ভিতের উপর দেওয়াল গড়ে টিনের চালের বাড়ি তৈরি হচ্ছে নিকোবরে। সমাজের চিরাচরিত নিজস্বতার সাথে আধুনিকতা মিশে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন কৃষ্টি বা সংস্কৃতি। এরা যেমন নাচগান ভালোবাসেন তেমনি আবার কুস্তির লড়াই অর্থাৎ মল্লযুদ্ধ এবং নৌকাবাইচও এদের অতি প্রিয় খেলা। 

অন্ধবিশ্বাসে আচ্ছন্ন হওয়ায় এরা অপদেবতা তাড়াতে বাড়ির সামনে বল্লম হাতে ন্যুব্জ দেহের কারোর ( Kareau ) মূর্তি রেখে দিয়েছেন। কিছুটা সমতল আর ঝাউ-তাল-নারকেল গাছে ছাওয়া এই ভূখণ্ড। তবে, উত্তর-পশ্চিম দিক কিছুটা উঁচু। এখানে ঘুরতে আসলে দেখতে পাবেন নিকোবরিদের কুস্তি, নৌকাবাইচ, ইন্টারভিউ দ্বীপে বুনো হাতির দল, কাকানা-লাপাতি-মালাক্কার সমুদ্র সৈকত, কাছালে রবার চাষ, চ্যাম্পিনে মাতৃতান্ত্রিক সমাজের নমুনা ইত্যাদি। সবচেয়ে উচিত হবে, জাহাজ সার্ভিসে ৮ থেকে ১০ দিনের প্যাকেজ ট্যুরে হাট বে-কার নিকোবর-কাছাল-নানকৌড়ি-ক্যাম্পবেল বে-ইন্দিরা পয়েন্ট ঘুরে নেওয়া। 

কার নিকোবরের কিছুটা দূরে নীল সমুদ্রের মাঝে রয়েছে সবুজরঙা কোরাল দ্বীপ চাওরা ( Chaora )। হাজারের মতো সংখ্যক মানুষ বাস করেন এখানে। চাওরা পেরিয়ে ঘাসবনে ভরা টেরেসার ( Teresa ) পরে রয়েছে কাছাল দ্বীপ ( Kachhal )। মিলেনিয়াম ইয়ারে নতুন শতকের সূর্যোদয় দেখতে সমগ্র পৃথিবী থেকে প্রচুর প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ স্বরাজ দ্বীপ ( Swaraj Dweep ) থেকে জাহাজে চেপে কাছালে আসেন। তাই রাতারাতি এটি সুবিখ্যাত হয়ে ওঠে। দ্বীপটি খুব সুন্দর। বিস্তীর্ণ সোনালী বালির সৈকত আর জলে মনোমুগ্ধকর কোরাল। কমবেশি পাঁচ হাজার নিকোবরি বাস করেন এখানে। এর পূর্বে আছে নানকৌড়ি ( Nancowry )। নানকৌড়ির উত্তরে অবস্থিত আর এক অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধ কামোটা দ্বীপ ( Camorta Island )। এখানে হঞ্চু উপজাতির লোকেরা বাস করেন। এরা মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হন। প্রধান জীবিকা চাষবাস। গ্রামের মোড়ল বা প্রধানই হল এখানকার সমাজের হর্তাকর্তা বিধাতা। কামোটার ডানদিকে রয়েছে আরও কিছু ছোটখাটো দ্বীপ। যেমন ইতুই, মনার্ক, চ্যাম্পিন, চাঙ্গুয়া ইত্যাদি। চাঙ্গুয়াতে জাপানিদের মূল ঘাঁটি বসেছিল। ৭০ থেকে ৮০ ফুট উঁচু টিলার উপর ঘূর্ণায়মান কামানগুলো আজও সেই সময়ের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। নানকৌড়ি অতিক্রম করে লিটল আন্দামান ছাড়িয়ে আরও দক্ষিণেই আছে ভারতের শেষ ভূভাগ গ্রেট নিকোবর দ্বীপ ( Great Nicobar Island )। 

যেকোন জাহাজ এসে ভেড়ে গ্রেট নিকোবরের ক্যাম্বেল বে ( Campbell Bay ) জেটি ঘাটে। শুধু জেটি ঘাট নয়, অফিস-কাছারি-ব্যাঙ্ক-স্কুল-হাসপাতাল সব কিছু রয়েছে এই ক্যাম্বেল বে-তে। পুরো দ্বীপে খুব অল্প সংখ্যক লোক বসবাস করেন। উপকূল বরাবর নিকোবরি আর গ্যালাথিয়া নদীর দুই তীরে পাহাড়ি ঘন অরণ্যে লোকচক্ষুর আড়ালে আদিমতম উপজাতি মঙ্গোলয়েড ধরনের শাম্পেনদের বাস। এরা সাধারণতঃ জঙ্গলের ফল, মূল ও মধু খায়। একদম দক্ষিণ প্রান্তে আছে ইন্দিরা পয়েন্ট ( Indira Point )। সমুদ্রের ধার বরাবর বিস্তৃত বাস রাস্তা। সারা রাস্তার দুপাশে নজরে পড়বে অবসরপ্রাপ্ত পাঞ্জাবি ও দক্ষিণ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের বাড়িঘর। এই রাস্তাতেই পড়বে অসামান্য সুন্দর সাউথ বে সি বীচ ( South Bay Sea Beach )। শীতকালে বিশ্বের বৃহত্তম সামুদ্রিক কচ্ছপ জায়েন্ট লেদার ব্যাক টার্টলরা দূর দেশগুলোর সমুদ্র থেকে এই সৈকতে চলে আসে ডিম পাড়তে। এই সৈকতেই গ্যালাথিয়া নদী সাগরে এসে মিশেছে। এখান থেকে আরো ১০ কি.মি. গেলেই পৌঁছে যাবেন ইন্দিরা পয়েন্টে। পথে কিছুটা সময় দিয়ে গ্যালাথিয়া জাতীয় উদ্যান ( Galathea National Park ) দেখে নেবেন। ইন্দিরা পয়েন্টের পরে বিশাল জলরাশি অতিক্রম করে আরও দক্ষিণে সোজা এগিয়ে গেলে পৌঁছনো যাবে বরফের মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকায়। এই দ্বীপপুঞ্জে পর্যটন পরিকাঠামো সেরকমভাবে গড়ে ওঠেনি। টিকিট ও খবরাখবরের জন্য যোগাযোগ করুন - Directorate of Shipping Services, A & N Island, Phoenix Bay, Tel. - 232725 / 245555. - এই ঠিকানায়। 

বিশেষ অনুমতি নিয়ে জাহাজে করে মাত্র পাঁচ ঘন্টায় ওঙ্গিদের বাসভূমি ডুগঙ ক্রিক ( Dugong Creek ) ঘুরে নিতে পারবেন। এটি লিটল আন্দামানের হাট বে দ্বীপে ( Hut Bay Island in Little Andaman ) অবস্থিত। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এই দ্বীপে ওঙ্গিরা ছিলেন। সংখ্যায় দুশোরও কম হয়ে যাওয়ায় অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। এদের পূর্বপুরুষ হলেন আফ্রিকার ক্রিতদাসেরা। এখন হাট বে-তে বাঙালি উদ্বাস্তুদের উপনিবেশ গড়ে উঠেছে। বাসগাড়ি চলে, টেলিফোন যোগাযোগ হয়েছে, APWD-র গেস্ট হাউস আছে। এখানেই রয়েছে আন্দামানের একমাত্র জলপ্রপাত ( Water Falls )। ওয়েলকাম সি বীচটিও ( Welcome Sea Beach ) খুব সুন্দর। আর রয়েছে বাঙালি শরণার্থী অধ্যুষিত রামকৃষ্ণপুর বাজার ও বাঁধ ( Ramkrishnapur Market and Dam )। বাস বা জিপে করে বিবেকানন্দ ড্যাম, এগ্রিকালচার ফার্ম, নিকোবরি উপনিবেশও ঘুরে নিতে পারেন। এছাড়াও এই দ্বীপে আরও অনেক কিছু দেখার আছে। 

এখান থেকে কি কি জিনিস কেনা উচিত ? What are The Things You Should Buy ( Marketing ) While Traveling A & N Islands? 

ভ্রমণের স্মারক হিসেবে সঙ্গে করে নিয়ে যান দ্বীপবাসীদের হাতে তৈরি নানা সামগ্রী ( Handicrafts )। এর মধ্যে যেমন মুক্তো বসানো অলঙ্কার থাকতে পারে তেমনি আবার নারকেল, ঝিনুক ও শঙ্খ খোলের নানা কিছুও হতে পারে। কাঠ, বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসও কিনতে পারেন। বৃক্ষপ্রেমীরা বনদপ্তর থেকে কিং কোকোনাট, লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি, গোলমরিচ অথবা তেজপাতার চারাগাছও নিয়ে যেতে পারেন। তবে, ভুলেও প্রবাল আনতে যাবেন না। প্রবাল আনতে গিয়ে যদি ধরা পড়ে যান তাহলে জেল ও জরিমানা দুইই হতে পারে। কেনাকাটা করার সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হলো Government Cottage Industries Emporium. 

খাবার ( Foods ) - নানারকম সামুদ্রিক মাছসহ গলদা ও বাগদা চিঙড়ির স্বাদ গ্রহণ করুন এখানকার হোটেল-রেস্তোরাঁগুলিতে। অ্যাবারডিনে অবস্থিত ধনলক্ষ্মী হোটেলটি ভালো থাকা-খাওয়ার জন্য সুবিখ্যাত। এর কাছের কালটাপ্পাম্মান হোটেলে অল্প দামে খাবার খেতে পারা যায়। হাড্ডো যাওয়ার পথে নিউ ইন্ডিয়া ক্যাফেটি সুপরিচিত দক্ষিণ ভারতীয় খাবার পরিবেশনের জন্য। বাস স্ট্যান্ডের উল্টোদিকে রয়েছে অবন্তী রেস্টুরেন্ট। এক বার্মিজ দম্পতির হাতে গড়া পোর্ট ব্লেয়ারের চায়না রুম রেস্তোরাঁয় গিয়ে চীনা খাবার চেখে দেখে নিতে পারেন। অ্যাবারডিন বাজারে চায় কাফে, ম্যানিলা ক্যাফে সহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে চা ও জলখাবারের সুবন্দোবস্ত আছে। মাঝেমধ্যেই আন্দামানের বিখ্যাত ফল নারকেল, কলা ও পেঁপের স্বাদ নিন পথে চলতে চলতে। বাঙালি খাবারের জন্য বিখ্যাত স্থান হ'ল লাইট হাউস সিনেমার কাছে অবস্থিত আর. কে. সাহার নির্মিত আদি বেঙ্গলি হোটেলটি। 

কনডাকটেড ট্যুর প্রোগ্রাম ( Conducted Tour Programmes ) - আপনি সরকারি ও বেসরকারি ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবস্থাপনায় জলপথ ও স্থলপথে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সবকয়টি দ্রষ্টব্য খুব সুন্দরভাবে দেখে নিতে পারেন। বুকিং ও যেকোন তথ্যের জন্য নিচের এক বা একাধিক ঠিকানায় যোগাযোগ করে নিতে পারেন। 

(১) Directorate of Information, Publicity and Tourism, Secretariat, A & N Administration, Port Blair - 744101, Tel. - 232747/232694.

(২) Government of India Tourist Office, Junglighat, Tel. - 233006.

এছাড়াও প্রচুর বিশ্বস্ত বেসরকারি ট্রাভেল এজেন্ট আছে। এনাদের ব্যবস্থাপনাও যথেষ্ট ভালো মানের। 

কিভাবে যাবেন? How to Reach / Go? 

আমাদের দেশ ভারতের মূল ভূখণ্ডের কলকাতা, চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম জাহাজবন্দর থেকে জাহাজে করে বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে সহজে এই দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছনো যায়। এছাড়া কলকাতা, দিল্লি ও চেন্নাই বিমানবন্দর থেকে বিমানে করে সোজা গিয়ে পোর্ট ব্লেয়ার বিমানবন্দরে নামতে পারেন। 

কোথায় থাকবেন? Where to Stay? 

সমস্ত দ্বীপপুঞ্জের সবকয়টি শহর ও ভ্রমণ স্থলগুলি মিলিয়ে বিভিন্ন মান ও দামের হোটেল, লজ, গেস্ট হাউস ও রিসর্ট রয়েছে। সম্ভব হলে আপনি আপনি আগে থাকতে অনলাইনে থাকার ঘর বুকিং করে নিতে পারেন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please, Don't Spam.

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷