PAST HISTORY & SOME VALUABLE INFORMATIONS ABOUT DIGHA:-
একসময় ছিল যখন মধ্যবিত্ত বাঙালীর পকেটে একটু পয়সা থাকলে আর সপরিবারে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে জেগে উঠলে একটি শব্দ মস্তিষ্কে কিলবিলিয়ে উঠত। তা হ'ল "দিপুদা"। এটি কারও নাম নয়। এটি তিনটি বিখ্যাত সুন্দর ভ্রমণস্থানের নামের আদ্যক্ষর নিয়ে সংক্ষিপ্ত রূপ। 'দি' মানে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের সৈকত সুন্দরী দিঘা। 'পু' হ'ল পুরী। আর 'দা' হ'ল পাহাড়ের রাণী দার্জিলিং। এখন বর্তমানে বাঙালী পুরোপুরি ডিজিটাল হয়ে গেলেও ঘুরতে যাওয়ার জায়গা ঠিক করতে গেলে প্রথমেই আলোচনায় উঠে আসে সেই "দিপুদা" অর্থাৎ দিঘা-পুরী-দার্জিলিং। এখন আমি আমাদের দক্ষিণবঙ্গের সবার হাতের নাগালের সৈকত সুন্দরীর কথাই আলোচনা করবো। কেন দীঘা ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এত প্রিয়? এখানে ঘুরতে যাওয়া মানে কি শুধুই সমুদ্র সৈকত দর্শন আর সমুদ্র স্নান? না, আরও অনেক কিছু! পুরোটা ভালো করে পড়লে এই সুন্দর জায়গাটি ভ্রমণ ( Digha Tourism ) সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা হয়ে যাবে। আশা করি, আপনার আগামী ভ্রমণ আরও সমৃদ্ধ হবে।
সব জায়গা ও সবকিছুর মতোই এখানকারও একটা অতীত, একটা ইতিহাস ( History ) আছে। এই সৈকত আবিষ্কার করেন ওয়ারেন হেস্টিংস। প্রায় ২৫০ বছর আগে ১৭৮০ সালে প্রকাশিত বেঙ্গল গেজেটের এক সংস্করণ সূত্র অনুযায়ী প্রাচীন কালে এর নাম ছিল বীরকূল। পরে ১৮২৩ সালে নতুন করে এই বিচের আবিষ্কার করেন পথহারা এক ইংরেজ। এরপর স্বাধীনতার পর ১৯৪৭ সালে বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে এই আধুনিক সৈকত নগরীর পত্তন ঘটে এবং উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটতে ঘটতে শুধু দেশে নয়, সমগ্র বিশ্বের ভ্রমণ মানচিত্রে এক অনন্য স্থান আদায় করে নিয়েছে। ২০০৮ এ ভারতের পূর্ব উপকূলের শ্রেষ্ঠ পর্যটন কেন্দ্রের শিরোপাটিও ছিনিয়ে নেয়। সত্যিই সপ্তাহান্তিক ছুটি কাটানোর আদর্শ জায়গা ( One of The Top Tourist Destinations Near Kolkata )। তাই দিনদিন দেশী-বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর হবে নাই বা কেন? শুধু Old Digha - New Dighaই নয়। শহরের ভিতরে এবং কাছাকাছি কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে অনেক আকর্ষণীয় স্থান আছে যা দর্শন করলে আপনি আবার এখানে কিছুদিন বাদেই ছুটে আসবেন। আমি এখানে সেরা ২০ টি জায়গা সম্পর্কে জানাবো। এর মধ্যে কয়েকটি সৈকত নগরীর মধ্যেই রয়েছে, আর কয়েকটি পাশের রাজ্য উড়িষ্যাতে আর বাদবাকি রয়েছে কাছাকাছি কয়েক কি. মি.-র মধ্যে। একসাথে সবকয়টি জায়গা দেখে নিলে আপনার সময় ও পয়সা দুটোই সাশ্রয় হবে। তাই আসলে কয়েকদিনের ছুটি নিয়েই এখানে ঘুরতে আসা ভালো।
WHERE IS LOCATED?
এখন প্রশ্ন হল, দীঘা কোথায় অবস্থিত? এটি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহকুমার ( Contai Sub Division ) অন্তর্গত বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সৈকত শহর। এর ঠিক পাশেই রয়েছে উড়িষ্যা রাজ্য।
→ বর্তমান রাজ্য সরকার ( West Bengal Government ) ও দীঘা উন্নয়ন পর্ষদ ( Digha Development Authority ) যৌথ উদ্যোগে দীঘায় আসা সকল পর্যটকের জন্য বিশেষ করে বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হ'ল এয়ার ট্রিপ ( Air Trip ), রোপওয়ে ( Ropeway ), জলক্রীড়া ( Water Sports ), পাঁচতারা হোটেল ( Five Star Hotels ), দাদনপত্রবাড়-জলদা-চাঁদপুরে ( Dadan Patrabarh-Jalda-Chandpur ) বিলাসবহুল রিসর্ট নির্মাণ, উদয়পুর থেকে মন্দারমণি পর্যন্ত সমুদ্র পাড় দিয়ে পাকা রাস্তা তৈরি করা, প্রতিটি বিচে সুন্দর সাজানো পার্ক তৈরি, কলকাতা থেকে দীঘা পর্যন্ত প্রতিদিন হেলিকপ্টার পরিষেবা প্রদান ইত্যাদি। যার মধ্যে অনেকগুলিই ইতিমধ্যে রূপায়িত হয়ে গিয়েছে। অল্প কিছু বাকি আছে।
WHICH PLACES TO VISIT NEAR THIS SPOT? NEAREST TOP TOURIST ATTRACTIONS:-
এবার এক এক করে দর্শনীয় স্থানগুলি সম্পর্কে কিছু সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করবো।
→ (১) বাবা ভুষন্ডেশ্বর মন্দির ( Baba Bhusandeswar Temple, Balasore, Odisha ) - মাত্র ২২ কি. মি. দূরে ( Distance From Digha to Baba Bhusandeswar Temple is Only 22 K. M. ) উড়িষ্যার ( Odisha ) বালেশ্বর জেলার ( Balasore District ) ভোগরাই ( Bhograi Village ) গ্রামে এই পৌরাণিক ইতিহাস জড়িত মন্দিরটি অবস্থিত। পৃথিবীতে যে কয়টি বৃহদাকার শিবলিঙ্গ-রূপী শিব ( Lord Shiva ) পূজিত হন, তার মধ্যে এটি অন্যতম একটি। এই শিবলিঙ্গটি ( Shiv Linga ) কালো গ্রানাইট পাথরের। এই লিঙ্গটি তিন স্তরে বিভক্ত। শিবলিঙ্গের ( Shiva Lingam ) উপরের দৃশ্যমান অংশের আকার ( Size ) দেখলেই আপনার মাথা ঘুরতে শুরু করবে। অল্প লিঙ্গই দৃশ্যমান। ভূগর্ভস্থ অংশটি আরো চওড়া। লিঙ্গটি ডানদিকে সামান্য একটু হেলে আছে। ভূগর্ভে কতটা নীচে অবধি রয়েছে তা এখনও সঠিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি ( স্থানীয় সূত্র অনুসারে )। ইতিহাসের (History of Baba Bhusandeswar Temple ) গল্পটি হ'ল, রাক্ষসরাজ রাবণ ( Demon King Ravana ) ভগবান শিবের আশির্বাদ এবং একটি শিবলিঙ্গ উপহারস্বরূপ প্রাপ্ত হন। তারপর রাবণ লঙ্কায় ফেরার জন্য প্রস্তুত হন। শিব রাবণকে সতর্ক করে দেন যে তিনি যেন পথমাঝে কোথাও এই লিঙ্গটিকে না রাখেন। রাবণও তাতে সম্মতি দেন। তারপর লঙ্কেশ্বর রাবণ পুষ্পক বিমানে কৈলাশ থেকে রওনা দেন। ইতিমধ্যে তিনি শিবের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাটি ভুলেও যান। কোন ব্যক্তিগত কাজের ঠিক এই স্থানে তাঁর বিমানটিকে থামান এবং বিমান থেকে লিঙ্গটি নামিয়ে রাখেন। পরে পুনরায় যাত্রা শুরুর জন্য যখন লিঙ্গটিকে বিমানে তুলতে যান তখন দেখেন আশ্চর্যজনক ভাবে এটি অসম্ভব ভারী হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে এখানেই মহাপবিত্র শিবলিঙ্গটিকে ফেলে রেখে তিনি তাঁর রাজধানীতে ফিরে যান। এরপরে বহুযুগ ধরে এটি এই স্থানে গভীর জঙ্গলের মধ্যে লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিল। তারপর সবার নজরে আসার পর ইনি পূজিত হন। অবশেষে এটিকে ঘিরে মন্দির নির্মাণ করা হয় এবং এই এলাকাটি একটি পবিত্র তীর্থে পরিণত হয়। এই হ'ল বাবা ভুষন্ডেশ্বর মন্দিরের ( Baba Bhusandeswar Temple ) ইতিহাস।
পারলে সুবর্ণরেখা নদী তীরবর্তী এই মহাপবিত্র তীর্থে অবশ্যই একবার ঘুরে আসবেন। দীঘা থেকে যেতে গেলে প্রথমে ৭ কি. মি. দূরের চন্দনেশ্বর মোড়ে পৌঁছতে হবে। তারপর জলেশ্বর-চন্দনেশ্বর রোড ধরে জলেশ্বরের দিকে অল্প গেলেই পরবে জলেশ্বরপুর-ভোগরাই মোড়। এই মোড় থেকে বা দিকে ঘুরে ভোগরাই গ্রামের মধ্য দিয়ে কিছুটা গেলেই মন্দির চত্বরে পৌঁছে যাবেন। আশেপাশে প্রচুর খাবারের দোকান আছে। কাজেই ইচ্ছে হলে অনেকক্ষণ থাকতে পারবেন। কোন অসুবিধা হবে না। এখানে চৈত্র সংক্রান্তি ও শিবরাত্রিতে বিশাল জমকালো মেলা বসে।
→ (২) চন্দনেশ্বর শিব মন্দির ( Chandaneswar Temple, Balasore, Odisha ) - মাত্র ৭ কি. মি. ( Distance Between Digha and Chandaneswar Temple is 7 K. M. ) দূরে বিখ্যাত এই মন্দিরটি অবস্থিত। দিঘা থেকে ছোট গাড়ি বা টোটো-রিকশা ভাড়া করে ( Rent or Hire a Car ) এই মন্দিরটি ঘুরে আসতে পারেন। এই মন্দিরের সামনের রাস্তার বাম দিক দিয়ে গেলে সোজা তালশারি সমুদ্র সৈকতে পৌঁছে যাবেন আর ডানদিকের রাস্তা ধরে গেলে ভুষন্ডেশ্বর মন্দির এবং জলেশ্বর শহর যেতে পারবেন। এই মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। এখানে নিরাকার শিবের পূজা হয়। খুবই জাগ্রত মন্দির। দূর-দূরান্ত থেকে বহু পূণ্যার্থী আসেন পূজা দিতে। আমাদের বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসাবের চৈত্র সংক্রান্তিকে ওড়িয়া হিন্দু ও বৌদ্ধরা বলেন পানা সংক্রান্তি বা মহা বিষুব সংক্রান্তি। প্রতি বছর সেই সময় এই মন্দিরের ( Chandaneswar Temple ) এবং তার সামনের এলাকায় বিশাল জাকজমকপূর্ণ মেলা বসে। এখানে থাকতে গেলে আপনাকে পান্ডাদের বাড়িতে, সরকারি যাত্রী নিবাস অথবা সীতা হোটেলে থাকতে হবে। সবচেয়ে কাছের দুটি রেলস্টেশন হ'ল দীঘা (৭ কি. মি.) ও জলেশ্বর (৩৬ কি. মি.)। এখান থেকে বাসে করে বালেশ্বর শহর ( Baleswar City ) ও চাঁদিপুর সমুদ্র সৈকতও ( Chandipur Sea Beach ) ঘুরে আসতে পারেন।
→ (৩) তালশারি সমুদ্র সৈকত ( Talsari / Talasari Sea Beach, Balasore, Odisha ) - চন্দনেশ্বর মোড় থেকে ৪ কি. মি. এবং দিঘা থেকে ১১ কি. মি. দূরে বাংলা-উড়িষ্যা সীমান্তে এই নির্জন কোলাহল বর্জিত সুন্দর সি বিচটি অবস্থিত। এই সৈকতে ঢোকার মুখে একটি অস্থায়ী বাজার আছে। এখানে টুকিটাকি ঘর সাজানোর জিনিস কিনতে পারবেন। ইচ্ছে করলে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারও এই বাজারের অস্থায়ী হোটেল থেকে সেরে নিতে পারেন। এরা যথেষ্ট পরিষ্কার এবং সঠিক দাম নেন। তবে খাবারের স্বাদ দারুণ হলেও ঝাল একটু বেশি থাকে। শান্ত স্নিগ্ধ তালশারি অনেক পর্যটকের কাছেই পছন্দের জায়গা। একদিকে শাল, পিয়াল ও ঝাউয়ের বন। আর একদিকে সাগরতটে আছড়ে পরছে অনতিউচ্চ সফেন্ ঢেউয়ের সারি। সাগর-ঝাউবন-নির্জনতার মিশেল এখানে একধরনের রোমান্টিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। এখানে অনেক বেশি সময় ধরে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। ১২ কি. মি. দূরে সুবর্ণরেখা নদীর সঙ্গমস্থল। তবে কিছু বছর আগে সুবর্ণরেখা নদীর একটি শাখা এই সমুদ্রতটে চলে আসায় মাঝে বেশ বড়ো চরা তৈরি হয়েছে। তাই ভাটার সময় নৌকায় করে মূল সমুদ্রের কাছে যেতে হয়। ভাটার সময় পূর্ব দিকের অংশে প্রায় ২ কি. মি. জল সরে যায়। তখন পুরো সৈকত জুড়ে শুধুই রঙবেরঙের ঝিনুক ও লাল কাঁকড়া ( Red Crabs )। তালশারিতে ( Talsari / Talasari ) থাকার সেরা জায়গা হ'ল উচুঁ বালিয়াড়ির ঝাউবনের মাঝে গড়ে ওঠা উড়িষ্যা ট্যুরিজমের পান্থশালা ( Guest House Panthasala of Odisha Tourism Department )। থাকা ও খাওয়া উভয় সুবিধা আছে। মানও বেশ ভালো। এখানে থাকার জন্য বুকিং করতে পারেন নীচে উল্লেখিত দুটি ঠিকানার যে কোনো একটি থেকে।
(ক) Assistant Tourist Officer, Panthasala, Talsari / Talasari, P. O. - Chandaneswar, Odisha - 756085. Phone Number - 9438210562 / 09937222957
(খ) 55, Lenin Sarani, Kolkata - 13. Phone Number - 22654556
এছাড়া, একটি প্রাইভেট হোটেলও আছে। নাম হ'ল সাগর সৈকত ( Sagar Saikat )।
→ (৪) উদয়পুর - দত্তপুর সমুদ্র সৈকত ( Udaipur - Duttapur Sea Beach ) - তালশারি - চন্দনেশ্বর থেকে ফেরার পথে দত্তপুর মোড় থেকে ডানদিকে ২ কি. মি. গেলেই পৌঁছে যাবেন উদয়পুর সি বিচে সি বিচ অবধি যে রাস্তাটি গেছে, তার ডানদিকে উড়িষ্যা রাজ্য ( Odisha ) আর বামদিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ( West Bengal )। এই সি বিচটি কয়েক বছরের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই বেশ জমজমাট। ঢোকার মুখে সি বিচ মার্কেট ( Udaypur Sea Beach Market ) থেকে পছন্দসই জিনিস কিনতে পারেন। সি বিচে ঢুকেই দেখবেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মাছভাজা, হুকো টানা, মশলা দিয়ে কৎবেল-পেয়ারা-কামরাঙা মাখার দোকান। আর পাশে পাশে রয়েছে টাঙানো কাপড়ের ছাউনি, নীচে প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল পাতা। মাছ-কাঁকড়া ভাজা অথবা মশলা মাখা পেয়ারা-কৎবেল নিয়ে বসে বসে সমুদ্রের রূপ উপভোগ করুন। এই সৈকতটি স্নান করার জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। ভাগ্যে থাকলে সমুদ্র থেকে ফিরে আসা জেলেদের জাল থেকে মাছ বের করাও দেখে নিতে পারেন। এই সৈকতে প্যারাগ্লাইডিং, বাইক রাইডিং, ঘোড়ায় চড়া, ছোটদের জন্য রিমোট গাড়ি চড়ারও ব্যবস্থা আছে। এই সৈকতের বামপাশে ঝাউবন ও উচুঁ বালিয়াড়ির পিছনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস্যদপ্তরের Oceana Tourist Complex তৈরি হয়েছে। বুকিং নম্বর হ'ল - 9474599853/9434018849. এই কমপ্লেক্স অতিক্রম করে অনেকগুলি সিড়ি টপকে উচুঁ বালিয়াড়ির বাধেঁ উঠলে আর এক অপরূপ দৃশ্য আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে। চারিদিকে উচুঁ উচুঁ ঝাউগাছ আর তার মধ্য দিয়ে অনেকটা নীচে দেখা যাবে দিগন্ত বিস্তৃত সুনীল সাগর। শুনতে পাবেন সমুদ্রের শো শো আওয়াজ। আর সাগর থেকে আসা শীতল নোনা হাওয়া আপনার মনপ্রাণ জুড়িয়ে দেবে। যারা নির্জনতা এবং প্রকৃতির সান্নিধ্য একসাথে পেতে চান তাদের এই জায়গায় কয়েক ঘণ্টা কাটানো অবশ্যই উচিত।
→ (৫) নিউ দিঘা - এই সি বিচটি ( New Digha Sea Beach ) বেশ চওড়া আর সমতল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই বিচে ভিড় লেগেই থাকে। এককথায় এখানকার ব্যস্ততম সৈকত একমাত্র এইটি। পর্যটকদের সমুদ্রস্নান, খেলা, কেনাকাটা, ফটো-ভিডিও তোলা, আড্ডা, হাটা-দৌড়নো, হই-হট্টগোলে সবসময় সরগরম হয়ে আছে এই সৈকত ( New Digha Sea Beach )। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য সহজে ভুলতে পারবেন না। অস্তরাগের সোনালী সূর্যের আলোয় পশ্চিম দিকের সমুদ্রকে সাদা দেখায় আর পূর্বদিকের অংশকে নীলাভ দেখায়। সন্ধ্যার পর সি বিচ চত্বর রঙীন আলোয় ঝলমলে হয়ে মোহিনী রূপ ধারণ করে। খাবারের স্টলে, রকমারি জিনিসের দোকানে পর্যটকদের ভিড় চোখে পরার মত। মাঝে মাঝে রিমোট চালিত গাড়িতে শিশুরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। মিশকালো সাগরের জলেও তীরের আলোর ঝিকমিকানি রাতের বিচের সৌন্দর্যকে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এর কাছেই বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে, যেগুলো না দেখলে আপনার ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। যেমন, (৬) অমরাবতী পার্ক ( Amarabati Park ) - এই পার্কে বোটিং-এর ব্যবস্থা আছে। সুন্দর সাজানো বাগানটি সত্যিই দেখার মতো। বেশ সুন্দর সুন্দর কয়েকটি স্ট্যাচু আছে। এগুলির সামনে দাড়িয়ে সেল্ফি তুলতে পারবেন। (৭) কাজলদিঘি ওয়ান্ডারল্যান্ড ( Kajaldighi Wonderland ) - অমরাবতী পার্কের ঠিক পিছনে এটিও আর একটি খুব সুন্দর দর্শনীয় স্থান। এখানে রোপওয়ে আছে, টয়ট্রেন আছে চড়তে পারেন। (৮) সর্প উদ্যান ( Snake Garden By Snake Specialist Deepak Mitra ) - সর্প বিশারদ দীপক মিত্রের নিজের হাতে গড়া এই সর্প উদ্যানটি ( Snake Garden )। এখানে অনেক বিষধর ও বিরল প্রজাতির সাপ দেখতে পারবেন। সকাল ৭.৩০ টা থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আপনাকে কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে এই দুর্লভ জায়গায় প্রবেশ করতে হবে। (৯) মেরিন একুয়ারিয়াম ও রিজিওনাল সেন্টার ( Digha Marine Aquarium and Regional Centre ) - এটি এশিয়ার বৃহত্তম মেরিন অ্যাকুয়ারিয়াম। সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে এসে সামুদ্রিক প্রাণী ও জীবজগৎ সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। (১০) বিজ্ঞান কেন্দ্র ও সায়েন্স পার্ক ( Digha Science Center National Science Camp and Science Park ) - আর এক আকর্ষণীয় স্থান হ'ল ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজিয়ামের ( National Council of Science Museum ) বিজ্ঞান কেন্দ্র ( Digha Science Centre )। এখানে নানা মডেলের দ্বারা শিক্ষামূলক বিজ্ঞানকে আরও বেশি মজাদার ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা হয়েছে। আপনি ও আপনার সন্তান উভয়েরই খুবই ভালো লাগবে। আর আপনার শিশু সন্তানের বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি টান আরো বেড়ে যাবে। এর খুব কাছে যে সায়েন্স পার্কটি ( Digha Science Park ) আছে তাও বাচ্চাদের খুব ভালো লাগবে। অনেক রকম মজার উপাদান আছে শিশুদের বিনোদনের জন্য। এখানেই একটি নকল জুরাসিক পার্ক ( Duplicate Jurassic Park ) তৈরি করা হয়েছে। তাতে এই স্থানের আকর্ষণ বহুগুণ বেড়ে গেছে। কালীপূজা ও হোলি ছাড়া বছরের বাদবাকি সবকটি দিনই এই দুই Tourist Spots সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
→ (১১) ওল্ড দিঘা - এক সময় এটাই ছিল আপামর পর্যটকদের মূল আকর্ষণ স্থল। সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন অনেক স্নানযোগ্য সুন্দর সি বিচ আবিষ্কৃত হওয়ায়, তাছাড়া ভাঙনের কারণে স্নানের অযোগ্য ও নিরাপদ নয়, আস্তে আস্তে পর্যটকেরা এই সি বিচ ( Old Digha Sea Beach ) থেকে কিছুটা হলেও মুখ ফিরিয়ে নেন। বাসস্ট্যান্ডের কাছে এবং নেহেরু মার্কেটের ( Nehru Market ) বিপরীতে অবস্থিত এই সি বিচ। ঢোকার মুখেই রয়েছে গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা, তারপরেই সুন্দর করে সাজানো বিশ্ব বাংলা পার্ক। আর ডানদিকে আছে সারি সারি খাবারের দোকান। এগুলো পেরিয়েই ভাঙন রোধের জন্য কংক্রিটের চওড়া গার্ড ওয়াল। এর উপরে আছে সুন্দর টালি বসানো হাটার রাস্তা। তারপরেই দিগন্ত বিস্তৃত ঘন নীল সমুদ্র। জোয়ার হোক বা ভাটা এখানে সাগরের জল একদম কাছে থাকে এবং বাঁধের উপর আছড়ে পরে। বসে বসে সময় কাটানোর আদর্শ জায়গা। এই সি বিচ ( Old Digha Sea Beach ) বেশ খাড়া। স্নান করার জন্য একদমই নিরাপদ নয়। তবুও দুই এক জায়গায় কিছু সাহসী মানুষদের দল বেঁধে স্নান করতে দেখা যায়। এই বিচের আশেপাশে প্রচুর ভালো মানের হোটেল আছে। রামনগরের পরে মূল শহরে পৌছবার কিছুটা আগে যে বিশাল গেটটি ( Digha Gate ) আছে সেটিও দেখার মতো। (১২) আর একটি নতুন সংযোজন জগন্নাথ ঘাটের জগন্নাথ মন্দির ( Jagannath Temple at Jagannath Ghat ) সম্প্রতি পশ্চিম বাংলার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ওল্ড দিঘার জগন্নাথ ঘাটে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অনুপ্রেরণায় একটি সুন্দর জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রায় দুই একরের ( 2 Acres Land ) বেশি জায়গা জুড়ে এটি গড়ে উঠেছে।
→ গাড়ি ভাড়া ( Car Rental Agencies in Digha ) সৈকত শহর ও তার আশেপাশের এই সেরা ২০ টি স্থান ভ্রমণের ( These Top 20 Tourist Attractions Near Digha ) জন্য দরদাম করে ভাড়ার গাড়ি নেওয়াই ( Rent / Hire a Car ) বাঞ্ছনীয় হবে। নীচে কয়েকটি Govt. Registered Travel Agency এবং Government Authorised Car Rental Agency - র ঠিকানা ও ফোন নম্বর দিয়ে দিলাম। এছাড়াও আরো অনেক আছে। ২৪ ঘন্টা সপ্তাহের ৭ সাতদিনই পরিষেবা পাবেন।
(ক) Digha Car Rental Services.
Shibalaya Road.
Dial - 070634 75093
(খ) Shinjini Travels.
Neheru Market, Gobindabasan.
Dial - 081451 02012
(গ) Quick Travels.
Alankarpur.
Dial - 070197 89278
(ঘ) Maa Durga Travels Car Rental Service.
Dial - 097336 03579
(ঙ) Digha Unique Travel.
Taxi Stand.
Dial - 097330 57203
(চ) Badal Travels.
( Car Rental Agency in Digha, India )
Gadadharpur.
Dial - 096145 82797
HOW TO REACH OR GO? TRANSPORTATION BY BIKE / CAR / BUS / TRAIN / AIR LINES:-
→ কলকাতা থেকে এই স্থানে যাওয়ার জন্য বাসের চেয়ে ট্রেনই সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। আপনি হাওড়া স্টেশন থেকে রওনা দিয়ে অনেক কম সময়ে পৌঁছে যাবেন। হাওড়া থেকে রোজের ট্রেনগুলি হ'ল (অ) ১২৮৪৭ দিঘা এ.সি. সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, (আ) ১২৮৫৭ তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস, (ই) ২২৮৯৭ কান্ডারি এক্সপ্রেস, এছাড়া প্রতি শনিবার করে একটি অতিরিক্ত ট্রেন আছে, সেটি হ'ল (ঈ) ১৫৭২২ পাহাড়িয়া এক্সপ্রেস।
WHEN SHOULD YOU GO THERE? / BEST TIME TO VISIT OR TRAVEL THIS BEAUTIFUL PLACE:-
→ এখানে ঘুরতে আসার নির্দিষ্ট কোন সময় বা ঋতু নেই। সবসময় এবং সব ঋতুতেই ভালো লাগবে। তবে মার্চ - এপ্রিল মাসে গেলে আপনি ঢেউয়ের বৈচিত্র্য দেখতে পাবেন। আর খেয়ে ঘুরে সব দিক থেকে মজা পেতে গেলে শীতকালে আসাই শ্রেয়। যদি সমুদ্রের ভয়াবহ রূপ দেখতে চান তাহলে বর্ষাকালে বেড়াতে আসুন। সবসময়ই অনন্যা অপরূপা দিঘা আপনার সবরকম মনোরঞ্জনের জন্য প্রস্তুত আছে।
WHERE TO STAY? PLACES FOR STAYING WITH FOODING AND LODGING:-
→ থাকার জন্য আগে থেকে হোটেল, লজ ইত্যাদি বুকিং না করে আসলেও ঘর পাওয়ার জন্য দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই। এখানে মেইন রাস্তার দুই পাশে, অলিতে গলিতে বিভিন্ন মানের প্রচুর হোটেল, লজ ইত্যাদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সব এক সে বড়কর্ এক। যদি পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন দপ্তরের টুরিস্ট লজে থাকতে চান তাহলে বুকিং করতে হবে এই Phone Number এবং এই Website - এর মাধ্যমে ( 9732510134, https://www.wbtdcl.com )। আর https://www.benfishtourism.com - সাইট থেকে বেনফিশের মীনাক্ষী অ্যান্ড তরঙ্গ হোটেলের ঘর বুক করতে হবে। প্রাইভেট হোটেলের মধ্যে মাত্র কয়েকটিকে উল্লেখ করলাম। যেমন, হোটেল রিলুক ( Ph. 033-66007800 ), গীতাঞ্জলি আর. পি. এল. ( Ph. 7908804377 ), হোটেল জে. পি. ( Ph. 8017026092 ), সিগাল ( Ph. 9830038716 ), স্বপ্নদীপ রেসিডেন্সি, পার্ক গার্ডেন ( Ph. 9433813678 )। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও সরকারি-আধাসরকারি সংস্থার প্রচুর হলিডে হোমও আছে। আপনার একান্ত চেনাজানা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই পেয়ে যাবেন। হলিডে হোমে থাকলে নিজেরাই রান্না করে নিতে পারবেন। হলিডে হোমে ( Holiday Home ) রান্নার সমস্ত সরঞ্জাম থাকে।
কাছাকাছি অবস্থিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে আলোচ্য স্থানের দূরত্ব উল্লেখ করলাম ( Distance From Digha )। →
Kolkata 184 K. M..
Bhubaneswar 291 K. M..
Howrah Railway Station 178 K. M..
Garia ( South Kolkata ) 193 K. M..
Netaji Subhash Chandra Bose International Airport / Dumdum Airport 189 K. M..
Kharagpur 129 K. M..
→ (১২) দীঘা মোহনা সৈকত ( Digha Mohana Sea Beach ) (১৩) দীঘা মোহনা আন্তর্জাতিক মাছ বাজার ( Digha Mohana International Fish Market ) - ওল্ড দিঘা থেকে মাত্র ৩ কি. মি দূরে WBTDCL - পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তরের ট্যুরিস্ট লজের উল্টোদিকের রাস্তা ধরে ৫ মিনিট গেলেই এই বিখ্যাত মাছ বাজারে পৌঁছে যাবেন। ঠিক ভোর ৫ টার মধ্যে এখানে আসলে এই পাইকারি বাজারের ( Wholesale Fish Market ) আসল চেহারা দেখতে পারবেন। অনেক রকমের সামুদ্রিক মাছ-কাঁকড়া এবং এগুলির বাক্সবন্দী হয়ে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে চালান হওয়া দেখতে পারবেন। যদি খুচরো মাছ কিনতে চান তাহলে পিছন দিকে গেলে নিজেদের প্রয়োজনের তাজা অথবা শুটকি মাছ কিনতে পারেন। এখানেই এই মাছ ভাজা খেতে পারেন। আশেপাশের কিছু দোকান আছে যেখানে কিছু টাকা দিলে তারাই আপনার কেনা মাছ ধুয়ে ভেজে দেবে। এরপরে এই মাছ ভাজা নিয়ে ১০০ মিটার দূরের View Point ও Sea Beach - এ চলে আসুন। চেয়ার - টেবিল ভাড়া করে বসে তাড়িয়ে তাড়িয়ে মাছভাজা খান আর সূর্যোদয়ের স্বর্গীয় শোভা উপভোগ করুন। সূর্যাস্তের দৃশ্যও অতুলনীয়। গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, আপনার জীবনের হাতেগোনা সেরা মুহূর্তগুলির মধ্যে এটিও একটি হবেই হবে। মৃত্যুর আগে অবধি ভুলতে পারবেন না। এখানেই চম্পা খাল ( Champa River ) এসে বঙ্গোপসাগরে ( Bay of Bengal ) মিশেছে। অসামান্য সুন্দর জায়গা। এখানে কিছুক্ষণ থাকলে অনেক মাছধরার নৌকা ও ট্রলারের যাতায়াত দেখতে পারবেন। স্থানীয় মানুষজনের চম্পাখালের এখানে ওখানে ছিপ দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্যও অনবদ্য।
→ (১৩) শঙ্করপুর সমুদ্র সৈকত ( Sankarpur Sea Beach ) ও (১৪ ) মৎস্য বন্দর ( Shankarpur Fishing Harbour ) - রামনগর রেলস্টেশন থেকে মাত্র ৫ কি. মি. দূরে এই শঙ্করপুর অবস্থিত। নির্জন ও সুন্দর, পরিষ্কার হওয়ার কারণে প্রকৃতিপ্রেমীদের অনেকেই দীঘার পরিবর্তে এখানে থাকাই বেশি পছন্দ করেন। কলকাতার দিক দিয়ে আসতে গেলে কন্টাই রোডের চোদ্দমাইল মোড় থেকে বা দিকে টার্ন নিয়ে চম্পাখালের পাশ দিয়ে ৪ কি. মি. পেরোলেই শঙ্করপুর ভ্যান স্ট্যান্ডে পৌঁছে যাবেন। এখান থেকে ডানদিকের রাস্তা ধরে একটু গেলেই মৎস্য বন্দরে পৌঁছে যাওয়া যাবে। এখানে সবসময় প্রচুর সংখ্যক মাছ ধরার ট্রলার দাড়িয়ে থাকতে ও যাতায়াত করতে দেখা যায়। অনেকক্ষণ থাকলে ট্রলারে জ্বালানি ভরা এবং সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি সচক্ষে দেখা যায়। পাশেই বরফকল আছে। অনুমতি নিয়ে বরফ তৈরিও দেখে নিন। সব সেরে আবার ভ্যান স্ট্যান্ডে চলে আসুন। তারপর ডানদিকের রাস্তা ধরে সোজা সি বিচে চলে আসুন। সমুদ্রের পাড় কংক্রিটের। এর উপরের টালি বসানো রাস্তা সোজা চাঁদপুর হয়ে তাজপুরে পৌঁছে গেছে। সমুদ্রের পাড়ের বিশ্ব বাংলা পার্কের ছাউনির তলার বেঞ্চে বসে নোনা শীতল হাওয়া সহযোগে সমুদ্রের শোভা দেখা, গর্জন শোনা সত্যিই এক দারুণ অভিজ্ঞতা। প্রচন্ড গরমেও এখানে বসে অলস সময় কাটাতে বেশ ভালোই লাগে। আপনার মন যদি চায় তাহলে ডানদিকের ঝাউবনের মধ্য দিয়ে বিচে নেমে সাগর স্নানও সেরে নিতে পারেন। আপনার প্রিয়জনের সাথে ঝাউবনের মধ্যে হাত ধরে গল্প করতে করতে ঘুরেও বেড়াতে পারেন। এই সুন্দর ঝাউবনটি হ'ল বাচ্চাদের লুকোচুরি খেলার উপযুক্ত জায়গা। এখানে বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য একটি সুন্দর পার্কও আছে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাই মিলে সমুদ্রবাঁধের উপরের রাস্তা ধরে অনেক দূর পর্যন্ত চলে যেতে যেতে সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করুন আর অজানা মুক্তির আনন্দে নিজেকে ভাসিয়ে দিন।
এখানে থাকা-খাওয়ার জন্য অনেকগুলি রিসর্ট ও হোটেল আছে। আরও নতুন নতুন বিলাসবহুল হোটেল রিসর্ট গড়ে উঠছে। এখানে রেট একটু বেশি হলেও ব্যবস্থাপনা যথেষ্টই ভালো। আবার Fishing Harbour -এর উল্টো দিকের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস্য দপ্তরের ট্যুরিস্ট লজ মৎস্যগন্ধাতেও [ Matshagandhya ( WBFC Ltd. ) ] থাকতে পারেন। এদের অতিথি আপ্যায়নের যথেষ্ট সুনাম আছে।
→ (১৫) তাজপুর সমুদ্র সৈকত ( Tajpur Sea Beach ) - রামনগর রেলস্টেশন থেকে ছোট গাড়ি করে বালিসাই-আলমপুর ফিশারিজ মোড়ে পৌঁছে ডানদিক দিয়ে যে উচুঁ রাস্তা গেছে সেটি ধরে দুই পাশের অসংখ্য ভেড়ি ও জলাভূমি পেরিয়ে মোড় ঘুরে ঝাউবন ও কেয়াবনের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া পিচ রাস্তা দিয়ে কিছুটা গেলেই তাজপুর সি বিচে পৌঁছে যাবেন। সাদা বালির বিশাল সৈকতে শুধু অসংখ্য লাল সন্ন্যাসী কাঁকড়ার হুটোপুটি দেখা যায়। কিন্তু, সৈকতে মানুষের চলাচল শুরু হলেই সব মুহূর্তের মধ্যে গর্তে অদৃশ্য হয়ে যায়। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। পাশে আছে জলদা নদীর মোহনার বিশাল লেগুন। কিন্তু, ভুলেও সেখানে স্নান করতে যাবেন না। মোটেও নিরাপদ নয়। এই লেগুনে মাঝে মাঝে জেলে নৌকার আনাগোনা অনেকটা ছবির ফ্রেমের মতো এই জায়গার শোভাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এখান থেকে মন্দারমণির অল্প কিছুটা অংশ ছোট আবছা আকারে দেখা যায়। তাজপুরের সি বিচে অনেক অস্থায়ী দোকান আছে। এখানে ডাবের জলসহ সবরকম খাদ্য-পানীয় পাওয়া যায়। চাইলে দুপুরের লাঞ্চ এখানে সেরে দড়ির দোলনায় দোল খেতে খেতে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে ফিরতে পারেন। ভাটার সময় জল কয়েক মাইল দূরে চলে যায়। আবার জোয়ার বা ভরা কোটালের সময় ঢেউগুলো একদম দোকান গুলির দোরগোড়ায় আছড়ে পরতে থাকে। বর্তমানে এই সি বিচটি বাঁধানো হয়েছে। সরকারের উদ্যোগে একটি ডিয়ার পার্ক ও একটি চিলড্রেন পার্কও তৈরি করা হয়েছে। বিচের পিছনে একটি নজর মিনার ( Watch Tower ) আছে। অনুমতি নিয়ে এর উপরে উঠে পুরো অঞ্চলটাকে পাখির দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে নিন। অসাধারণ লাগবে। বালিসাই-আলমপুর ফিশারিজ মোড় থেকে তাজপুরের দূরত্ব ৫ কি. মি.।
এখানে থাকার জন্য আছে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র। ( বুকিং - https://www.wbfdc.com ), এছাড়াও বেশ কয়েকটি ভালো ভালো প্রাইভেট হোটেল - রিসর্ট ও আছে। যেমন, তাজপুর রিট্রিট ( Mob. - 90511 66563 ), সাগর কিনারে রিসর্ট ( https://www.tajpursagarkinare.com ), নিউ সোনার বাংলা রিসর্ট ( https://www.newsonarbanglaresort.com ), নেচার ক্যাম্প ( https://tajpurnaturecamp.com ), হলিডে ইন ( https://www.tajpurholidayinn.com )।
→ (১৬) চাঁদপুর সমুদ্র সৈকত ( Chandpur Sea Beach ) - তাজপুর সি বিচ থেকে দুই এক মিনিট সমুদ্রের পাড় ধরে হেটে পশ্চিমে একটু গেলেই আর একটি নতুন খুব সুন্দর সৈকতে পৌঁছে যাবেন। এরই নাম চাঁদপুর ( Chandpur Sea Beach )। এখানে শান বাঁধানো পাড়ে বসে সমুদ্রের শীতল হাওয়া ও সৌন্দর্য উপভোগ করুন। মাঝে মাঝে ঢেউয়ের ঝাপটা এসে আপনার শরীর ভিজিয়ে দেবে। এখানে সমুদ্রে নামা ও স্নান করা উচিৎ নয়। মৃত্যুও হতে পারে। মিশকালো পিচের রাস্তার ডানদিকের গ্রামটির নামই চাঁদপুর।
→ (১৭) মন্দারমণি ( Mandarmani Sea Beach ) - এক দশক বা তার একটু আগে থেকে মন্দারমণি সমুদ্র সৈকত কলকাতার মধ্যবিত্ত ও ধনী মানুষদের কাছে অতি পছন্দের ভ্রমণ গন্তব্য হয়ে উঠেছে। তা সে সপ্তাহান্তিক ছুটি ( Weekend Tour ) কাটানো হোক বা বিয়ের পরের মিষ্টি মধুর মধুচন্দ্রিমা যাপনই ( Honeymoon Destination ) হোক বা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে গাড়ি বা বাইকে করে গিয়ে সবাই মিলে হইহুল্লোড়, পিকনিক বা পার্টি করাই হোক ( Group Party or Picnic Celebration )। এখানে সমুদ্রের ধারের হোটেলগুলিতে পৌঁছতে গেলে সাগরতটের বালির উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে হয়। যখন জোয়ার আসে তখন পুরো তটই জলের তলায় চলে যায়। আর যেন এই রিসর্ট গুলির দরজায় এসে আছড়ে পরে সাগরের ঢেউ। এই সময় হোটেলের ঘরে বা আঙিনায় বসে সমুদ্রের সৌন্দর্যকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। ভাটার সময় সাগরের জল সরে যায় অনেকদূর। তখন রূপোলী বালির উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা রঙের ও গড়নের অসংখ্য ঝিনুক আর লাল কাঁকড়ার পায়ের ছাপের আলপনা দেখতে দেখতে ঘুরতে যান জলদা নদীর মোহনায়। ওপারেই তাজপুর। পুরো যেন ছবির মতো সুন্দর দৃশ্যপট। ইচ্ছে করলে জেলে নৌকা ভাড়া করে ওপারে ঘুরেও আসতে পারেন। কলকাতা থেকে মন্দারমণির ( Mandarmoni Sea Beach ) দূরত্ব ১৭৫ কি. মি.। পশ্চিমবঙ্গের যে কোন শহর থেকে গাড়ি বা বাইকে করে সরাসরি সড়কপথে চলে আসতে পারেন। কন্টাই হয়ে দীঘাগামী বাসে আসলে চাউলখোলায় নেমে মোটরচালিত ভ্যানে বা ছোট গাড়িতে কালিন্দী, দাদনপত্রবাড় হয়ে বা সরাসরি আসতে পারেন। আসার পথে কিছুটা সময় নিয়ে প্রাক স্বাধীনতার আমল থেকে চলা বেঙ্গল সল্ট ফ্যাক্টরি দেখে নিতে ভুলবেন না। এই কারখানায় এখনও সাবেকি পদ্ধতিতে লবণ প্রস্তুত করা হয়। এখানে ট্রেনে করে আসতে হলে কন্টাই স্টেশনে নামতে হবে। স্টেশনের বাইরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে ছোট গাড়ি ভাড়া করে মন্দারমণি আসতে হবে।
→ এখানে থাকার জায়গার কোন অভাব নেই। বহু হোটেল, রিসর্ট, লজ আছে। তবে দিঘার তুলনায় রেট একটু বেশিই। এর মধ্যে কয়েকটি হ'ল - সানা বিচ রিসর্ট ( https://www.thesanabeach.com ), শের বেঙ্গল বিচ রিসর্ট ( Mob. - 9735841584 ), হোটেল সি স্যান্ড ( Mob. - 9062764796 ), ঋভু রিসর্ট, গণপতি প্যালেস ( Mob. - 9830371744 ), দেবরাজ বিচ রিসোর্ট, হোটেল বেলাভূমি ( Mob. - 9874763053 )।
→ (১৮) জুনপুট ( Junput Sea Beach ) - কন্টাই থেকে মাত্র ৯ কি. মি. এবং দিঘা থেকে ৪১ কি. মি. দূরে জুনপুট সৈকতটি অবস্থিত। ভাটার সময় জল অত্যাধিক দূরে সরে যায়। তাই সৈকত শহর হিসেবে এই জায়গাটি সেরকম জনপ্রিয়তা পায় নি। এটি পূর্ব উপকূলের মৎস্য বন্দর ও বানিজ্যকেন্দ্র । এখানে শুটকি মাছের আড়ত ও মৎস্য গবেষণাগারও আছে। এছাড়া এখানকার মৎস্য দপ্তরের ভিতরে একটি মিউজিয়ামও আছে। সবুজে ছাওয়া, ঝাউগাছে ঘেরা বিশাল সৈকত আর নির্জনতা আপনার পছন্দ হলেও হতে পারে। ভাটার সময় সমস্ত বেলাভূমি জুড়ে শুধু লাল কাঁকড়ার লুকোচুরি-ছোটাছুটি দেখলে সত্যি সত্যি আপনার শৈশব ফিরে আসবে। একমাত্র অমাবস্যা ও পূর্নিমার ভরা কোটালে সাগরের জল আসে তীর ছাপিয়ে। যারা স্নান করতে চান তাদের উচিৎ হবে এখান থেকে ২ কি. মি. ডাইনের গোপালপুর সৈকত বা বামে ২ কি. মি. দূরে গিয়ে ঝাউগাছে ছাওয়া হরিপুর সৈকতে চলে যাওয়া। এখানকার জুনপুট রিসর্টে রাত্রিযাপন করতে পারেন। বুকিং নম্বর - (9831167537)। এই রিসর্টের ঝাউবনে গাছবাড়ি বা ট্রি হাউস আছে। আর আছে চিলড্রেন পার্ক, লেক। লেকের দ্বীপে আছে পাখিরালয় ও খেলার মাঠ।
→ (১৯) বাঁকিপুট ( Bankiput Sea Beach ) - জুনপুট থেকে মাত্র ৩.৫ কি. মি. দূরে আর একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত হ'ল বাঁকিপুট। পশ্চিমবাংলার পর্যটন মানচিত্রে এটি একটি নবতম সংযোজন। এখানে থাকার সবচেয়ে ভালো জায়গা হ'ল ঝিনুক রিসর্ট - Jhinuk Resort ( From Kolkata Booking - 9831167537 )। এছাড়া কাছের বড়ো শহর কন্টাইতেও থাকতে পারেন। এখানে প্রচুর হোটেল, তাছাড়া পূর্ত দফতরের বাংলোও আছে।
→ (২০) দরিয়াপুর ( Dariapur ) - বাঁকিপুট থেকে ৪ কি. মি. আর কন্টাই থেকে ১৪ কি. মি. দূরে এই ঐতিহাসিক ভ্রমণস্থলটি অবস্থিত। প্রথমে ১৮৬১ সালে নির্মিত লাইটহাউসটি ( Dariapur Lighthouse ) দেখে নিন। তারপরে সাহিত্যসম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কপালকুণ্ডলা মন্দিরটিও ( Kapalkundala Temple ) দেখে নিতে ভুলবেন না। কপালকুণ্ডলা মন্দিরের বিগ্রহটি এখন আর নেই। অনেকে বলেন যে দেবী বর্তমানে কন্টাই থেকে ৩ কি. মি. দূরে আর একটি মন্দিরে পূজিতা হচ্ছেন। দরিয়াপুরে বঙ্কিমচন্দ্রের বাংলোটি আজ কালের প্রভাবে মলিন হলেও প্রতি বছর ২৬ শে চৈত্র বিশাল বঙ্কিমমেলা বসে দরিয়াপুরে।
একসময় ছিল যখন মধ্যবিত্ত বাঙালীর পকেটে একটু পয়সা থাকলে আর সপরিবারে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে জেগে উঠলে একটি শব্দ মস্তিষ্কে কিলবিলিয়ে উঠত। তা হ'ল "দিপুদা"। এটি কারও নাম নয়। এটি তিনটি বিখ্যাত সুন্দর ভ্রমণস্থানের নামের আদ্যক্ষর নিয়ে সংক্ষিপ্ত রূপ। 'দি' মানে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের সৈকত সুন্দরী দিঘা। 'পু' হ'ল পুরী। আর 'দা' হ'ল পাহাড়ের রাণী দার্জিলিং। এখন বর্তমানে বাঙালী পুরোপুরি ডিজিটাল হয়ে গেলেও ঘুরতে যাওয়ার জায়গা ঠিক করতে গেলে প্রথমেই আলোচনায় উঠে আসে সেই "দিপুদা" অর্থাৎ দিঘা-পুরী-দার্জিলিং। এখন আমি আমাদের দক্ষিণবঙ্গের সবার হাতের নাগালের সৈকত সুন্দরীর কথাই আলোচনা করবো। কেন দীঘা ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এত প্রিয়? এখানে ঘুরতে যাওয়া মানে কি শুধুই সমুদ্র সৈকত দর্শন আর সমুদ্র স্নান? না, আরও অনেক কিছু! পুরোটা ভালো করে পড়লে এই সুন্দর জায়গাটি ভ্রমণ ( Digha Tourism ) সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা হয়ে যাবে। আশা করি, আপনার আগামী ভ্রমণ আরও সমৃদ্ধ হবে।
WHERE IS LOCATED?
এখন প্রশ্ন হল, দীঘা কোথায় অবস্থিত? এটি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহকুমার ( Contai Sub Division ) অন্তর্গত বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সৈকত শহর। এর ঠিক পাশেই রয়েছে উড়িষ্যা রাজ্য।
→ বর্তমান রাজ্য সরকার ( West Bengal Government ) ও দীঘা উন্নয়ন পর্ষদ ( Digha Development Authority ) যৌথ উদ্যোগে দীঘায় আসা সকল পর্যটকের জন্য বিশেষ করে বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হ'ল এয়ার ট্রিপ ( Air Trip ), রোপওয়ে ( Ropeway ), জলক্রীড়া ( Water Sports ), পাঁচতারা হোটেল ( Five Star Hotels ), দাদনপত্রবাড়-জলদা-চাঁদপুরে ( Dadan Patrabarh-Jalda-Chandpur ) বিলাসবহুল রিসর্ট নির্মাণ, উদয়পুর থেকে মন্দারমণি পর্যন্ত সমুদ্র পাড় দিয়ে পাকা রাস্তা তৈরি করা, প্রতিটি বিচে সুন্দর সাজানো পার্ক তৈরি, কলকাতা থেকে দীঘা পর্যন্ত প্রতিদিন হেলিকপ্টার পরিষেবা প্রদান ইত্যাদি। যার মধ্যে অনেকগুলিই ইতিমধ্যে রূপায়িত হয়ে গিয়েছে। অল্প কিছু বাকি আছে।
WHICH PLACES TO VISIT NEAR THIS SPOT? NEAREST TOP TOURIST ATTRACTIONS:-
এবার এক এক করে দর্শনীয় স্থানগুলি সম্পর্কে কিছু সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করবো।
→ (১) বাবা ভুষন্ডেশ্বর মন্দির ( Baba Bhusandeswar Temple, Balasore, Odisha ) - মাত্র ২২ কি. মি. দূরে ( Distance From Digha to Baba Bhusandeswar Temple is Only 22 K. M. ) উড়িষ্যার ( Odisha ) বালেশ্বর জেলার ( Balasore District ) ভোগরাই ( Bhograi Village ) গ্রামে এই পৌরাণিক ইতিহাস জড়িত মন্দিরটি অবস্থিত। পৃথিবীতে যে কয়টি বৃহদাকার শিবলিঙ্গ-রূপী শিব ( Lord Shiva ) পূজিত হন, তার মধ্যে এটি অন্যতম একটি। এই শিবলিঙ্গটি ( Shiv Linga ) কালো গ্রানাইট পাথরের। এই লিঙ্গটি তিন স্তরে বিভক্ত। শিবলিঙ্গের ( Shiva Lingam ) উপরের দৃশ্যমান অংশের আকার ( Size ) দেখলেই আপনার মাথা ঘুরতে শুরু করবে। অল্প লিঙ্গই দৃশ্যমান। ভূগর্ভস্থ অংশটি আরো চওড়া। লিঙ্গটি ডানদিকে সামান্য একটু হেলে আছে। ভূগর্ভে কতটা নীচে অবধি রয়েছে তা এখনও সঠিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি ( স্থানীয় সূত্র অনুসারে )। ইতিহাসের (History of Baba Bhusandeswar Temple ) গল্পটি হ'ল, রাক্ষসরাজ রাবণ ( Demon King Ravana ) ভগবান শিবের আশির্বাদ এবং একটি শিবলিঙ্গ উপহারস্বরূপ প্রাপ্ত হন। তারপর রাবণ লঙ্কায় ফেরার জন্য প্রস্তুত হন। শিব রাবণকে সতর্ক করে দেন যে তিনি যেন পথমাঝে কোথাও এই লিঙ্গটিকে না রাখেন। রাবণও তাতে সম্মতি দেন। তারপর লঙ্কেশ্বর রাবণ পুষ্পক বিমানে কৈলাশ থেকে রওনা দেন। ইতিমধ্যে তিনি শিবের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাটি ভুলেও যান। কোন ব্যক্তিগত কাজের ঠিক এই স্থানে তাঁর বিমানটিকে থামান এবং বিমান থেকে লিঙ্গটি নামিয়ে রাখেন। পরে পুনরায় যাত্রা শুরুর জন্য যখন লিঙ্গটিকে বিমানে তুলতে যান তখন দেখেন আশ্চর্যজনক ভাবে এটি অসম্ভব ভারী হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে এখানেই মহাপবিত্র শিবলিঙ্গটিকে ফেলে রেখে তিনি তাঁর রাজধানীতে ফিরে যান। এরপরে বহুযুগ ধরে এটি এই স্থানে গভীর জঙ্গলের মধ্যে লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিল। তারপর সবার নজরে আসার পর ইনি পূজিত হন। অবশেষে এটিকে ঘিরে মন্দির নির্মাণ করা হয় এবং এই এলাকাটি একটি পবিত্র তীর্থে পরিণত হয়। এই হ'ল বাবা ভুষন্ডেশ্বর মন্দিরের ( Baba Bhusandeswar Temple ) ইতিহাস।
পারলে সুবর্ণরেখা নদী তীরবর্তী এই মহাপবিত্র তীর্থে অবশ্যই একবার ঘুরে আসবেন। দীঘা থেকে যেতে গেলে প্রথমে ৭ কি. মি. দূরের চন্দনেশ্বর মোড়ে পৌঁছতে হবে। তারপর জলেশ্বর-চন্দনেশ্বর রোড ধরে জলেশ্বরের দিকে অল্প গেলেই পরবে জলেশ্বরপুর-ভোগরাই মোড়। এই মোড় থেকে বা দিকে ঘুরে ভোগরাই গ্রামের মধ্য দিয়ে কিছুটা গেলেই মন্দির চত্বরে পৌঁছে যাবেন। আশেপাশে প্রচুর খাবারের দোকান আছে। কাজেই ইচ্ছে হলে অনেকক্ষণ থাকতে পারবেন। কোন অসুবিধা হবে না। এখানে চৈত্র সংক্রান্তি ও শিবরাত্রিতে বিশাল জমকালো মেলা বসে।
→ (২) চন্দনেশ্বর শিব মন্দির ( Chandaneswar Temple, Balasore, Odisha ) - মাত্র ৭ কি. মি. ( Distance Between Digha and Chandaneswar Temple is 7 K. M. ) দূরে বিখ্যাত এই মন্দিরটি অবস্থিত। দিঘা থেকে ছোট গাড়ি বা টোটো-রিকশা ভাড়া করে ( Rent or Hire a Car ) এই মন্দিরটি ঘুরে আসতে পারেন। এই মন্দিরের সামনের রাস্তার বাম দিক দিয়ে গেলে সোজা তালশারি সমুদ্র সৈকতে পৌঁছে যাবেন আর ডানদিকের রাস্তা ধরে গেলে ভুষন্ডেশ্বর মন্দির এবং জলেশ্বর শহর যেতে পারবেন। এই মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। এখানে নিরাকার শিবের পূজা হয়। খুবই জাগ্রত মন্দির। দূর-দূরান্ত থেকে বহু পূণ্যার্থী আসেন পূজা দিতে। আমাদের বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসাবের চৈত্র সংক্রান্তিকে ওড়িয়া হিন্দু ও বৌদ্ধরা বলেন পানা সংক্রান্তি বা মহা বিষুব সংক্রান্তি। প্রতি বছর সেই সময় এই মন্দিরের ( Chandaneswar Temple ) এবং তার সামনের এলাকায় বিশাল জাকজমকপূর্ণ মেলা বসে। এখানে থাকতে গেলে আপনাকে পান্ডাদের বাড়িতে, সরকারি যাত্রী নিবাস অথবা সীতা হোটেলে থাকতে হবে। সবচেয়ে কাছের দুটি রেলস্টেশন হ'ল দীঘা (৭ কি. মি.) ও জলেশ্বর (৩৬ কি. মি.)। এখান থেকে বাসে করে বালেশ্বর শহর ( Baleswar City ) ও চাঁদিপুর সমুদ্র সৈকতও ( Chandipur Sea Beach ) ঘুরে আসতে পারেন।
→ (৩) তালশারি সমুদ্র সৈকত ( Talsari / Talasari Sea Beach, Balasore, Odisha ) - চন্দনেশ্বর মোড় থেকে ৪ কি. মি. এবং দিঘা থেকে ১১ কি. মি. দূরে বাংলা-উড়িষ্যা সীমান্তে এই নির্জন কোলাহল বর্জিত সুন্দর সি বিচটি অবস্থিত। এই সৈকতে ঢোকার মুখে একটি অস্থায়ী বাজার আছে। এখানে টুকিটাকি ঘর সাজানোর জিনিস কিনতে পারবেন। ইচ্ছে করলে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারও এই বাজারের অস্থায়ী হোটেল থেকে সেরে নিতে পারেন। এরা যথেষ্ট পরিষ্কার এবং সঠিক দাম নেন। তবে খাবারের স্বাদ দারুণ হলেও ঝাল একটু বেশি থাকে। শান্ত স্নিগ্ধ তালশারি অনেক পর্যটকের কাছেই পছন্দের জায়গা। একদিকে শাল, পিয়াল ও ঝাউয়ের বন। আর একদিকে সাগরতটে আছড়ে পরছে অনতিউচ্চ সফেন্ ঢেউয়ের সারি। সাগর-ঝাউবন-নির্জনতার মিশেল এখানে একধরনের রোমান্টিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। এখানে অনেক বেশি সময় ধরে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। ১২ কি. মি. দূরে সুবর্ণরেখা নদীর সঙ্গমস্থল। তবে কিছু বছর আগে সুবর্ণরেখা নদীর একটি শাখা এই সমুদ্রতটে চলে আসায় মাঝে বেশ বড়ো চরা তৈরি হয়েছে। তাই ভাটার সময় নৌকায় করে মূল সমুদ্রের কাছে যেতে হয়। ভাটার সময় পূর্ব দিকের অংশে প্রায় ২ কি. মি. জল সরে যায়। তখন পুরো সৈকত জুড়ে শুধুই রঙবেরঙের ঝিনুক ও লাল কাঁকড়া ( Red Crabs )। তালশারিতে ( Talsari / Talasari ) থাকার সেরা জায়গা হ'ল উচুঁ বালিয়াড়ির ঝাউবনের মাঝে গড়ে ওঠা উড়িষ্যা ট্যুরিজমের পান্থশালা ( Guest House Panthasala of Odisha Tourism Department )। থাকা ও খাওয়া উভয় সুবিধা আছে। মানও বেশ ভালো। এখানে থাকার জন্য বুকিং করতে পারেন নীচে উল্লেখিত দুটি ঠিকানার যে কোনো একটি থেকে।
(ক) Assistant Tourist Officer, Panthasala, Talsari / Talasari, P. O. - Chandaneswar, Odisha - 756085. Phone Number - 9438210562 / 09937222957
(খ) 55, Lenin Sarani, Kolkata - 13. Phone Number - 22654556
এছাড়া, একটি প্রাইভেট হোটেলও আছে। নাম হ'ল সাগর সৈকত ( Sagar Saikat )।
→ (৪) উদয়পুর - দত্তপুর সমুদ্র সৈকত ( Udaipur - Duttapur Sea Beach ) - তালশারি - চন্দনেশ্বর থেকে ফেরার পথে দত্তপুর মোড় থেকে ডানদিকে ২ কি. মি. গেলেই পৌঁছে যাবেন উদয়পুর সি বিচে সি বিচ অবধি যে রাস্তাটি গেছে, তার ডানদিকে উড়িষ্যা রাজ্য ( Odisha ) আর বামদিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ( West Bengal )। এই সি বিচটি কয়েক বছরের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই বেশ জমজমাট। ঢোকার মুখে সি বিচ মার্কেট ( Udaypur Sea Beach Market ) থেকে পছন্দসই জিনিস কিনতে পারেন। সি বিচে ঢুকেই দেখবেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মাছভাজা, হুকো টানা, মশলা দিয়ে কৎবেল-পেয়ারা-কামরাঙা মাখার দোকান। আর পাশে পাশে রয়েছে টাঙানো কাপড়ের ছাউনি, নীচে প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল পাতা। মাছ-কাঁকড়া ভাজা অথবা মশলা মাখা পেয়ারা-কৎবেল নিয়ে বসে বসে সমুদ্রের রূপ উপভোগ করুন। এই সৈকতটি স্নান করার জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। ভাগ্যে থাকলে সমুদ্র থেকে ফিরে আসা জেলেদের জাল থেকে মাছ বের করাও দেখে নিতে পারেন। এই সৈকতে প্যারাগ্লাইডিং, বাইক রাইডিং, ঘোড়ায় চড়া, ছোটদের জন্য রিমোট গাড়ি চড়ারও ব্যবস্থা আছে। এই সৈকতের বামপাশে ঝাউবন ও উচুঁ বালিয়াড়ির পিছনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস্যদপ্তরের Oceana Tourist Complex তৈরি হয়েছে। বুকিং নম্বর হ'ল - 9474599853/9434018849. এই কমপ্লেক্স অতিক্রম করে অনেকগুলি সিড়ি টপকে উচুঁ বালিয়াড়ির বাধেঁ উঠলে আর এক অপরূপ দৃশ্য আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে। চারিদিকে উচুঁ উচুঁ ঝাউগাছ আর তার মধ্য দিয়ে অনেকটা নীচে দেখা যাবে দিগন্ত বিস্তৃত সুনীল সাগর। শুনতে পাবেন সমুদ্রের শো শো আওয়াজ। আর সাগর থেকে আসা শীতল নোনা হাওয়া আপনার মনপ্রাণ জুড়িয়ে দেবে। যারা নির্জনতা এবং প্রকৃতির সান্নিধ্য একসাথে পেতে চান তাদের এই জায়গায় কয়েক ঘণ্টা কাটানো অবশ্যই উচিত।
→ (৫) নিউ দিঘা - এই সি বিচটি ( New Digha Sea Beach ) বেশ চওড়া আর সমতল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই বিচে ভিড় লেগেই থাকে। এককথায় এখানকার ব্যস্ততম সৈকত একমাত্র এইটি। পর্যটকদের সমুদ্রস্নান, খেলা, কেনাকাটা, ফটো-ভিডিও তোলা, আড্ডা, হাটা-দৌড়নো, হই-হট্টগোলে সবসময় সরগরম হয়ে আছে এই সৈকত ( New Digha Sea Beach )। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য সহজে ভুলতে পারবেন না। অস্তরাগের সোনালী সূর্যের আলোয় পশ্চিম দিকের সমুদ্রকে সাদা দেখায় আর পূর্বদিকের অংশকে নীলাভ দেখায়। সন্ধ্যার পর সি বিচ চত্বর রঙীন আলোয় ঝলমলে হয়ে মোহিনী রূপ ধারণ করে। খাবারের স্টলে, রকমারি জিনিসের দোকানে পর্যটকদের ভিড় চোখে পরার মত। মাঝে মাঝে রিমোট চালিত গাড়িতে শিশুরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। মিশকালো সাগরের জলেও তীরের আলোর ঝিকমিকানি রাতের বিচের সৌন্দর্যকে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এর কাছেই বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে, যেগুলো না দেখলে আপনার ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। যেমন, (৬) অমরাবতী পার্ক ( Amarabati Park ) - এই পার্কে বোটিং-এর ব্যবস্থা আছে। সুন্দর সাজানো বাগানটি সত্যিই দেখার মতো। বেশ সুন্দর সুন্দর কয়েকটি স্ট্যাচু আছে। এগুলির সামনে দাড়িয়ে সেল্ফি তুলতে পারবেন। (৭) কাজলদিঘি ওয়ান্ডারল্যান্ড ( Kajaldighi Wonderland ) - অমরাবতী পার্কের ঠিক পিছনে এটিও আর একটি খুব সুন্দর দর্শনীয় স্থান। এখানে রোপওয়ে আছে, টয়ট্রেন আছে চড়তে পারেন। (৮) সর্প উদ্যান ( Snake Garden By Snake Specialist Deepak Mitra ) - সর্প বিশারদ দীপক মিত্রের নিজের হাতে গড়া এই সর্প উদ্যানটি ( Snake Garden )। এখানে অনেক বিষধর ও বিরল প্রজাতির সাপ দেখতে পারবেন। সকাল ৭.৩০ টা থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আপনাকে কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে এই দুর্লভ জায়গায় প্রবেশ করতে হবে। (৯) মেরিন একুয়ারিয়াম ও রিজিওনাল সেন্টার ( Digha Marine Aquarium and Regional Centre ) - এটি এশিয়ার বৃহত্তম মেরিন অ্যাকুয়ারিয়াম। সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে এসে সামুদ্রিক প্রাণী ও জীবজগৎ সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। (১০) বিজ্ঞান কেন্দ্র ও সায়েন্স পার্ক ( Digha Science Center National Science Camp and Science Park ) - আর এক আকর্ষণীয় স্থান হ'ল ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজিয়ামের ( National Council of Science Museum ) বিজ্ঞান কেন্দ্র ( Digha Science Centre )। এখানে নানা মডেলের দ্বারা শিক্ষামূলক বিজ্ঞানকে আরও বেশি মজাদার ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা হয়েছে। আপনি ও আপনার সন্তান উভয়েরই খুবই ভালো লাগবে। আর আপনার শিশু সন্তানের বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি টান আরো বেড়ে যাবে। এর খুব কাছে যে সায়েন্স পার্কটি ( Digha Science Park ) আছে তাও বাচ্চাদের খুব ভালো লাগবে। অনেক রকম মজার উপাদান আছে শিশুদের বিনোদনের জন্য। এখানেই একটি নকল জুরাসিক পার্ক ( Duplicate Jurassic Park ) তৈরি করা হয়েছে। তাতে এই স্থানের আকর্ষণ বহুগুণ বেড়ে গেছে। কালীপূজা ও হোলি ছাড়া বছরের বাদবাকি সবকটি দিনই এই দুই Tourist Spots সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
→ (১১) ওল্ড দিঘা - এক সময় এটাই ছিল আপামর পর্যটকদের মূল আকর্ষণ স্থল। সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন অনেক স্নানযোগ্য সুন্দর সি বিচ আবিষ্কৃত হওয়ায়, তাছাড়া ভাঙনের কারণে স্নানের অযোগ্য ও নিরাপদ নয়, আস্তে আস্তে পর্যটকেরা এই সি বিচ ( Old Digha Sea Beach ) থেকে কিছুটা হলেও মুখ ফিরিয়ে নেন। বাসস্ট্যান্ডের কাছে এবং নেহেরু মার্কেটের ( Nehru Market ) বিপরীতে অবস্থিত এই সি বিচ। ঢোকার মুখেই রয়েছে গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা, তারপরেই সুন্দর করে সাজানো বিশ্ব বাংলা পার্ক। আর ডানদিকে আছে সারি সারি খাবারের দোকান। এগুলো পেরিয়েই ভাঙন রোধের জন্য কংক্রিটের চওড়া গার্ড ওয়াল। এর উপরে আছে সুন্দর টালি বসানো হাটার রাস্তা। তারপরেই দিগন্ত বিস্তৃত ঘন নীল সমুদ্র। জোয়ার হোক বা ভাটা এখানে সাগরের জল একদম কাছে থাকে এবং বাঁধের উপর আছড়ে পরে। বসে বসে সময় কাটানোর আদর্শ জায়গা। এই সি বিচ ( Old Digha Sea Beach ) বেশ খাড়া। স্নান করার জন্য একদমই নিরাপদ নয়। তবুও দুই এক জায়গায় কিছু সাহসী মানুষদের দল বেঁধে স্নান করতে দেখা যায়। এই বিচের আশেপাশে প্রচুর ভালো মানের হোটেল আছে। রামনগরের পরে মূল শহরে পৌছবার কিছুটা আগে যে বিশাল গেটটি ( Digha Gate ) আছে সেটিও দেখার মতো। (১২) আর একটি নতুন সংযোজন জগন্নাথ ঘাটের জগন্নাথ মন্দির ( Jagannath Temple at Jagannath Ghat ) সম্প্রতি পশ্চিম বাংলার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ওল্ড দিঘার জগন্নাথ ঘাটে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অনুপ্রেরণায় একটি সুন্দর জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রায় দুই একরের ( 2 Acres Land ) বেশি জায়গা জুড়ে এটি গড়ে উঠেছে।
→ গাড়ি ভাড়া ( Car Rental Agencies in Digha ) সৈকত শহর ও তার আশেপাশের এই সেরা ২০ টি স্থান ভ্রমণের ( These Top 20 Tourist Attractions Near Digha ) জন্য দরদাম করে ভাড়ার গাড়ি নেওয়াই ( Rent / Hire a Car ) বাঞ্ছনীয় হবে। নীচে কয়েকটি Govt. Registered Travel Agency এবং Government Authorised Car Rental Agency - র ঠিকানা ও ফোন নম্বর দিয়ে দিলাম। এছাড়াও আরো অনেক আছে। ২৪ ঘন্টা সপ্তাহের ৭ সাতদিনই পরিষেবা পাবেন।
(ক) Digha Car Rental Services.
Shibalaya Road.
Dial - 070634 75093
(খ) Shinjini Travels.
Neheru Market, Gobindabasan.
Dial - 081451 02012
(গ) Quick Travels.
Alankarpur.
Dial - 070197 89278
(ঘ) Maa Durga Travels Car Rental Service.
Dial - 097336 03579
(ঙ) Digha Unique Travel.
Taxi Stand.
Dial - 097330 57203
(চ) Badal Travels.
( Car Rental Agency in Digha, India )
Gadadharpur.
Dial - 096145 82797
HOW TO REACH OR GO? TRANSPORTATION BY BIKE / CAR / BUS / TRAIN / AIR LINES:-
→ কলকাতা থেকে এই স্থানে যাওয়ার জন্য বাসের চেয়ে ট্রেনই সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। আপনি হাওড়া স্টেশন থেকে রওনা দিয়ে অনেক কম সময়ে পৌঁছে যাবেন। হাওড়া থেকে রোজের ট্রেনগুলি হ'ল (অ) ১২৮৪৭ দিঘা এ.সি. সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, (আ) ১২৮৫৭ তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস, (ই) ২২৮৯৭ কান্ডারি এক্সপ্রেস, এছাড়া প্রতি শনিবার করে একটি অতিরিক্ত ট্রেন আছে, সেটি হ'ল (ঈ) ১৫৭২২ পাহাড়িয়া এক্সপ্রেস।
WHEN SHOULD YOU GO THERE? / BEST TIME TO VISIT OR TRAVEL THIS BEAUTIFUL PLACE:-
→ এখানে ঘুরতে আসার নির্দিষ্ট কোন সময় বা ঋতু নেই। সবসময় এবং সব ঋতুতেই ভালো লাগবে। তবে মার্চ - এপ্রিল মাসে গেলে আপনি ঢেউয়ের বৈচিত্র্য দেখতে পাবেন। আর খেয়ে ঘুরে সব দিক থেকে মজা পেতে গেলে শীতকালে আসাই শ্রেয়। যদি সমুদ্রের ভয়াবহ রূপ দেখতে চান তাহলে বর্ষাকালে বেড়াতে আসুন। সবসময়ই অনন্যা অপরূপা দিঘা আপনার সবরকম মনোরঞ্জনের জন্য প্রস্তুত আছে।
WHERE TO STAY? PLACES FOR STAYING WITH FOODING AND LODGING:-
→ থাকার জন্য আগে থেকে হোটেল, লজ ইত্যাদি বুকিং না করে আসলেও ঘর পাওয়ার জন্য দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই। এখানে মেইন রাস্তার দুই পাশে, অলিতে গলিতে বিভিন্ন মানের প্রচুর হোটেল, লজ ইত্যাদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সব এক সে বড়কর্ এক। যদি পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন দপ্তরের টুরিস্ট লজে থাকতে চান তাহলে বুকিং করতে হবে এই Phone Number এবং এই Website - এর মাধ্যমে ( 9732510134, https://www.wbtdcl.com )। আর https://www.benfishtourism.com - সাইট থেকে বেনফিশের মীনাক্ষী অ্যান্ড তরঙ্গ হোটেলের ঘর বুক করতে হবে। প্রাইভেট হোটেলের মধ্যে মাত্র কয়েকটিকে উল্লেখ করলাম। যেমন, হোটেল রিলুক ( Ph. 033-66007800 ), গীতাঞ্জলি আর. পি. এল. ( Ph. 7908804377 ), হোটেল জে. পি. ( Ph. 8017026092 ), সিগাল ( Ph. 9830038716 ), স্বপ্নদীপ রেসিডেন্সি, পার্ক গার্ডেন ( Ph. 9433813678 )। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও সরকারি-আধাসরকারি সংস্থার প্রচুর হলিডে হোমও আছে। আপনার একান্ত চেনাজানা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই পেয়ে যাবেন। হলিডে হোমে থাকলে নিজেরাই রান্না করে নিতে পারবেন। হলিডে হোমে ( Holiday Home ) রান্নার সমস্ত সরঞ্জাম থাকে।
কাছাকাছি অবস্থিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে আলোচ্য স্থানের দূরত্ব উল্লেখ করলাম ( Distance From Digha )। →
Kolkata 184 K. M..
Bhubaneswar 291 K. M..
Howrah Railway Station 178 K. M..
Garia ( South Kolkata ) 193 K. M..
Netaji Subhash Chandra Bose International Airport / Dumdum Airport 189 K. M..
Kharagpur 129 K. M..
→ (১২) দীঘা মোহনা সৈকত ( Digha Mohana Sea Beach ) (১৩) দীঘা মোহনা আন্তর্জাতিক মাছ বাজার ( Digha Mohana International Fish Market ) - ওল্ড দিঘা থেকে মাত্র ৩ কি. মি দূরে WBTDCL - পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তরের ট্যুরিস্ট লজের উল্টোদিকের রাস্তা ধরে ৫ মিনিট গেলেই এই বিখ্যাত মাছ বাজারে পৌঁছে যাবেন। ঠিক ভোর ৫ টার মধ্যে এখানে আসলে এই পাইকারি বাজারের ( Wholesale Fish Market ) আসল চেহারা দেখতে পারবেন। অনেক রকমের সামুদ্রিক মাছ-কাঁকড়া এবং এগুলির বাক্সবন্দী হয়ে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে চালান হওয়া দেখতে পারবেন। যদি খুচরো মাছ কিনতে চান তাহলে পিছন দিকে গেলে নিজেদের প্রয়োজনের তাজা অথবা শুটকি মাছ কিনতে পারেন। এখানেই এই মাছ ভাজা খেতে পারেন। আশেপাশের কিছু দোকান আছে যেখানে কিছু টাকা দিলে তারাই আপনার কেনা মাছ ধুয়ে ভেজে দেবে। এরপরে এই মাছ ভাজা নিয়ে ১০০ মিটার দূরের View Point ও Sea Beach - এ চলে আসুন। চেয়ার - টেবিল ভাড়া করে বসে তাড়িয়ে তাড়িয়ে মাছভাজা খান আর সূর্যোদয়ের স্বর্গীয় শোভা উপভোগ করুন। সূর্যাস্তের দৃশ্যও অতুলনীয়। গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, আপনার জীবনের হাতেগোনা সেরা মুহূর্তগুলির মধ্যে এটিও একটি হবেই হবে। মৃত্যুর আগে অবধি ভুলতে পারবেন না। এখানেই চম্পা খাল ( Champa River ) এসে বঙ্গোপসাগরে ( Bay of Bengal ) মিশেছে। অসামান্য সুন্দর জায়গা। এখানে কিছুক্ষণ থাকলে অনেক মাছধরার নৌকা ও ট্রলারের যাতায়াত দেখতে পারবেন। স্থানীয় মানুষজনের চম্পাখালের এখানে ওখানে ছিপ দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্যও অনবদ্য।
→ (১৩) শঙ্করপুর সমুদ্র সৈকত ( Sankarpur Sea Beach ) ও (১৪ ) মৎস্য বন্দর ( Shankarpur Fishing Harbour ) - রামনগর রেলস্টেশন থেকে মাত্র ৫ কি. মি. দূরে এই শঙ্করপুর অবস্থিত। নির্জন ও সুন্দর, পরিষ্কার হওয়ার কারণে প্রকৃতিপ্রেমীদের অনেকেই দীঘার পরিবর্তে এখানে থাকাই বেশি পছন্দ করেন। কলকাতার দিক দিয়ে আসতে গেলে কন্টাই রোডের চোদ্দমাইল মোড় থেকে বা দিকে টার্ন নিয়ে চম্পাখালের পাশ দিয়ে ৪ কি. মি. পেরোলেই শঙ্করপুর ভ্যান স্ট্যান্ডে পৌঁছে যাবেন। এখান থেকে ডানদিকের রাস্তা ধরে একটু গেলেই মৎস্য বন্দরে পৌঁছে যাওয়া যাবে। এখানে সবসময় প্রচুর সংখ্যক মাছ ধরার ট্রলার দাড়িয়ে থাকতে ও যাতায়াত করতে দেখা যায়। অনেকক্ষণ থাকলে ট্রলারে জ্বালানি ভরা এবং সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি সচক্ষে দেখা যায়। পাশেই বরফকল আছে। অনুমতি নিয়ে বরফ তৈরিও দেখে নিন। সব সেরে আবার ভ্যান স্ট্যান্ডে চলে আসুন। তারপর ডানদিকের রাস্তা ধরে সোজা সি বিচে চলে আসুন। সমুদ্রের পাড় কংক্রিটের। এর উপরের টালি বসানো রাস্তা সোজা চাঁদপুর হয়ে তাজপুরে পৌঁছে গেছে। সমুদ্রের পাড়ের বিশ্ব বাংলা পার্কের ছাউনির তলার বেঞ্চে বসে নোনা শীতল হাওয়া সহযোগে সমুদ্রের শোভা দেখা, গর্জন শোনা সত্যিই এক দারুণ অভিজ্ঞতা। প্রচন্ড গরমেও এখানে বসে অলস সময় কাটাতে বেশ ভালোই লাগে। আপনার মন যদি চায় তাহলে ডানদিকের ঝাউবনের মধ্য দিয়ে বিচে নেমে সাগর স্নানও সেরে নিতে পারেন। আপনার প্রিয়জনের সাথে ঝাউবনের মধ্যে হাত ধরে গল্প করতে করতে ঘুরেও বেড়াতে পারেন। এই সুন্দর ঝাউবনটি হ'ল বাচ্চাদের লুকোচুরি খেলার উপযুক্ত জায়গা। এখানে বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য একটি সুন্দর পার্কও আছে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাই মিলে সমুদ্রবাঁধের উপরের রাস্তা ধরে অনেক দূর পর্যন্ত চলে যেতে যেতে সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করুন আর অজানা মুক্তির আনন্দে নিজেকে ভাসিয়ে দিন।
এখানে থাকা-খাওয়ার জন্য অনেকগুলি রিসর্ট ও হোটেল আছে। আরও নতুন নতুন বিলাসবহুল হোটেল রিসর্ট গড়ে উঠছে। এখানে রেট একটু বেশি হলেও ব্যবস্থাপনা যথেষ্টই ভালো। আবার Fishing Harbour -এর উল্টো দিকের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস্য দপ্তরের ট্যুরিস্ট লজ মৎস্যগন্ধাতেও [ Matshagandhya ( WBFC Ltd. ) ] থাকতে পারেন। এদের অতিথি আপ্যায়নের যথেষ্ট সুনাম আছে।
→ (১৫) তাজপুর সমুদ্র সৈকত ( Tajpur Sea Beach ) - রামনগর রেলস্টেশন থেকে ছোট গাড়ি করে বালিসাই-আলমপুর ফিশারিজ মোড়ে পৌঁছে ডানদিক দিয়ে যে উচুঁ রাস্তা গেছে সেটি ধরে দুই পাশের অসংখ্য ভেড়ি ও জলাভূমি পেরিয়ে মোড় ঘুরে ঝাউবন ও কেয়াবনের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া পিচ রাস্তা দিয়ে কিছুটা গেলেই তাজপুর সি বিচে পৌঁছে যাবেন। সাদা বালির বিশাল সৈকতে শুধু অসংখ্য লাল সন্ন্যাসী কাঁকড়ার হুটোপুটি দেখা যায়। কিন্তু, সৈকতে মানুষের চলাচল শুরু হলেই সব মুহূর্তের মধ্যে গর্তে অদৃশ্য হয়ে যায়। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। পাশে আছে জলদা নদীর মোহনার বিশাল লেগুন। কিন্তু, ভুলেও সেখানে স্নান করতে যাবেন না। মোটেও নিরাপদ নয়। এই লেগুনে মাঝে মাঝে জেলে নৌকার আনাগোনা অনেকটা ছবির ফ্রেমের মতো এই জায়গার শোভাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এখান থেকে মন্দারমণির অল্প কিছুটা অংশ ছোট আবছা আকারে দেখা যায়। তাজপুরের সি বিচে অনেক অস্থায়ী দোকান আছে। এখানে ডাবের জলসহ সবরকম খাদ্য-পানীয় পাওয়া যায়। চাইলে দুপুরের লাঞ্চ এখানে সেরে দড়ির দোলনায় দোল খেতে খেতে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে ফিরতে পারেন। ভাটার সময় জল কয়েক মাইল দূরে চলে যায়। আবার জোয়ার বা ভরা কোটালের সময় ঢেউগুলো একদম দোকান গুলির দোরগোড়ায় আছড়ে পরতে থাকে। বর্তমানে এই সি বিচটি বাঁধানো হয়েছে। সরকারের উদ্যোগে একটি ডিয়ার পার্ক ও একটি চিলড্রেন পার্কও তৈরি করা হয়েছে। বিচের পিছনে একটি নজর মিনার ( Watch Tower ) আছে। অনুমতি নিয়ে এর উপরে উঠে পুরো অঞ্চলটাকে পাখির দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে নিন। অসাধারণ লাগবে। বালিসাই-আলমপুর ফিশারিজ মোড় থেকে তাজপুরের দূরত্ব ৫ কি. মি.।
এখানে থাকার জন্য আছে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র। ( বুকিং - https://www.wbfdc.com ), এছাড়াও বেশ কয়েকটি ভালো ভালো প্রাইভেট হোটেল - রিসর্ট ও আছে। যেমন, তাজপুর রিট্রিট ( Mob. - 90511 66563 ), সাগর কিনারে রিসর্ট ( https://www.tajpursagarkinare.com ), নিউ সোনার বাংলা রিসর্ট ( https://www.newsonarbanglaresort.com ), নেচার ক্যাম্প ( https://tajpurnaturecamp.com ), হলিডে ইন ( https://www.tajpurholidayinn.com )।
→ (১৬) চাঁদপুর সমুদ্র সৈকত ( Chandpur Sea Beach ) - তাজপুর সি বিচ থেকে দুই এক মিনিট সমুদ্রের পাড় ধরে হেটে পশ্চিমে একটু গেলেই আর একটি নতুন খুব সুন্দর সৈকতে পৌঁছে যাবেন। এরই নাম চাঁদপুর ( Chandpur Sea Beach )। এখানে শান বাঁধানো পাড়ে বসে সমুদ্রের শীতল হাওয়া ও সৌন্দর্য উপভোগ করুন। মাঝে মাঝে ঢেউয়ের ঝাপটা এসে আপনার শরীর ভিজিয়ে দেবে। এখানে সমুদ্রে নামা ও স্নান করা উচিৎ নয়। মৃত্যুও হতে পারে। মিশকালো পিচের রাস্তার ডানদিকের গ্রামটির নামই চাঁদপুর।
→ (১৭) মন্দারমণি ( Mandarmani Sea Beach ) - এক দশক বা তার একটু আগে থেকে মন্দারমণি সমুদ্র সৈকত কলকাতার মধ্যবিত্ত ও ধনী মানুষদের কাছে অতি পছন্দের ভ্রমণ গন্তব্য হয়ে উঠেছে। তা সে সপ্তাহান্তিক ছুটি ( Weekend Tour ) কাটানো হোক বা বিয়ের পরের মিষ্টি মধুর মধুচন্দ্রিমা যাপনই ( Honeymoon Destination ) হোক বা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে গাড়ি বা বাইকে করে গিয়ে সবাই মিলে হইহুল্লোড়, পিকনিক বা পার্টি করাই হোক ( Group Party or Picnic Celebration )। এখানে সমুদ্রের ধারের হোটেলগুলিতে পৌঁছতে গেলে সাগরতটের বালির উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে হয়। যখন জোয়ার আসে তখন পুরো তটই জলের তলায় চলে যায়। আর যেন এই রিসর্ট গুলির দরজায় এসে আছড়ে পরে সাগরের ঢেউ। এই সময় হোটেলের ঘরে বা আঙিনায় বসে সমুদ্রের সৌন্দর্যকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। ভাটার সময় সাগরের জল সরে যায় অনেকদূর। তখন রূপোলী বালির উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা রঙের ও গড়নের অসংখ্য ঝিনুক আর লাল কাঁকড়ার পায়ের ছাপের আলপনা দেখতে দেখতে ঘুরতে যান জলদা নদীর মোহনায়। ওপারেই তাজপুর। পুরো যেন ছবির মতো সুন্দর দৃশ্যপট। ইচ্ছে করলে জেলে নৌকা ভাড়া করে ওপারে ঘুরেও আসতে পারেন। কলকাতা থেকে মন্দারমণির ( Mandarmoni Sea Beach ) দূরত্ব ১৭৫ কি. মি.। পশ্চিমবঙ্গের যে কোন শহর থেকে গাড়ি বা বাইকে করে সরাসরি সড়কপথে চলে আসতে পারেন। কন্টাই হয়ে দীঘাগামী বাসে আসলে চাউলখোলায় নেমে মোটরচালিত ভ্যানে বা ছোট গাড়িতে কালিন্দী, দাদনপত্রবাড় হয়ে বা সরাসরি আসতে পারেন। আসার পথে কিছুটা সময় নিয়ে প্রাক স্বাধীনতার আমল থেকে চলা বেঙ্গল সল্ট ফ্যাক্টরি দেখে নিতে ভুলবেন না। এই কারখানায় এখনও সাবেকি পদ্ধতিতে লবণ প্রস্তুত করা হয়। এখানে ট্রেনে করে আসতে হলে কন্টাই স্টেশনে নামতে হবে। স্টেশনের বাইরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে ছোট গাড়ি ভাড়া করে মন্দারমণি আসতে হবে।
→ এখানে থাকার জায়গার কোন অভাব নেই। বহু হোটেল, রিসর্ট, লজ আছে। তবে দিঘার তুলনায় রেট একটু বেশিই। এর মধ্যে কয়েকটি হ'ল - সানা বিচ রিসর্ট ( https://www.thesanabeach.com ), শের বেঙ্গল বিচ রিসর্ট ( Mob. - 9735841584 ), হোটেল সি স্যান্ড ( Mob. - 9062764796 ), ঋভু রিসর্ট, গণপতি প্যালেস ( Mob. - 9830371744 ), দেবরাজ বিচ রিসোর্ট, হোটেল বেলাভূমি ( Mob. - 9874763053 )।
→ (১৮) জুনপুট ( Junput Sea Beach ) - কন্টাই থেকে মাত্র ৯ কি. মি. এবং দিঘা থেকে ৪১ কি. মি. দূরে জুনপুট সৈকতটি অবস্থিত। ভাটার সময় জল অত্যাধিক দূরে সরে যায়। তাই সৈকত শহর হিসেবে এই জায়গাটি সেরকম জনপ্রিয়তা পায় নি। এটি পূর্ব উপকূলের মৎস্য বন্দর ও বানিজ্যকেন্দ্র । এখানে শুটকি মাছের আড়ত ও মৎস্য গবেষণাগারও আছে। এছাড়া এখানকার মৎস্য দপ্তরের ভিতরে একটি মিউজিয়ামও আছে। সবুজে ছাওয়া, ঝাউগাছে ঘেরা বিশাল সৈকত আর নির্জনতা আপনার পছন্দ হলেও হতে পারে। ভাটার সময় সমস্ত বেলাভূমি জুড়ে শুধু লাল কাঁকড়ার লুকোচুরি-ছোটাছুটি দেখলে সত্যি সত্যি আপনার শৈশব ফিরে আসবে। একমাত্র অমাবস্যা ও পূর্নিমার ভরা কোটালে সাগরের জল আসে তীর ছাপিয়ে। যারা স্নান করতে চান তাদের উচিৎ হবে এখান থেকে ২ কি. মি. ডাইনের গোপালপুর সৈকত বা বামে ২ কি. মি. দূরে গিয়ে ঝাউগাছে ছাওয়া হরিপুর সৈকতে চলে যাওয়া। এখানকার জুনপুট রিসর্টে রাত্রিযাপন করতে পারেন। বুকিং নম্বর - (9831167537)। এই রিসর্টের ঝাউবনে গাছবাড়ি বা ট্রি হাউস আছে। আর আছে চিলড্রেন পার্ক, লেক। লেকের দ্বীপে আছে পাখিরালয় ও খেলার মাঠ।
→ (১৯) বাঁকিপুট ( Bankiput Sea Beach ) - জুনপুট থেকে মাত্র ৩.৫ কি. মি. দূরে আর একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত হ'ল বাঁকিপুট। পশ্চিমবাংলার পর্যটন মানচিত্রে এটি একটি নবতম সংযোজন। এখানে থাকার সবচেয়ে ভালো জায়গা হ'ল ঝিনুক রিসর্ট - Jhinuk Resort ( From Kolkata Booking - 9831167537 )। এছাড়া কাছের বড়ো শহর কন্টাইতেও থাকতে পারেন। এখানে প্রচুর হোটেল, তাছাড়া পূর্ত দফতরের বাংলোও আছে।
→ (২০) দরিয়াপুর ( Dariapur ) - বাঁকিপুট থেকে ৪ কি. মি. আর কন্টাই থেকে ১৪ কি. মি. দূরে এই ঐতিহাসিক ভ্রমণস্থলটি অবস্থিত। প্রথমে ১৮৬১ সালে নির্মিত লাইটহাউসটি ( Dariapur Lighthouse ) দেখে নিন। তারপরে সাহিত্যসম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কপালকুণ্ডলা মন্দিরটিও ( Kapalkundala Temple ) দেখে নিতে ভুলবেন না। কপালকুণ্ডলা মন্দিরের বিগ্রহটি এখন আর নেই। অনেকে বলেন যে দেবী বর্তমানে কন্টাই থেকে ৩ কি. মি. দূরে আর একটি মন্দিরে পূজিতা হচ্ছেন। দরিয়াপুরে বঙ্কিমচন্দ্রের বাংলোটি আজ কালের প্রভাবে মলিন হলেও প্রতি বছর ২৬ শে চৈত্র বিশাল বঙ্কিমমেলা বসে দরিয়াপুরে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please, Don't Spam.
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷